কী হইতে কী হইয়া গেল, গত রাত্রিতে মহাদেবের কালো পাথরের লিঙ্গে দুধ, সিঁদুর লেপিয়া গ্রামের মানুষ্যগণ যখন নিদ্রাদেবীর স্তব করিতেছিলেন, তখন এই ভোরবেলায় আলো ফুটিয়া উঠিবার আগেই কেমন শোরগোলে তা ভাঙিয়া গেল। গ্রামে ঢুকিবার মুহূর্তেই যে বিশালকায় বটগাছের ছায়ায় কালীদেবী জিহবা বাহির করিয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন গত শতাব্দী হইতে, তাহার পায়ের কাছে এখন পড়িয়া রহিয়াছে মেয়ে মানুষের লাশ। ইহা লইয়া সকাল হইতেই লোকজনের মধ্যে যথেষ্ট কানাঘুষা চলিতেছে।
ষাটোর্ধ্ব হারাধন বাগচী তাহার চুলবিহীন মাথায় হাত বুলাইতে-বুলাইতে ছেলের বউকে বলিতেছিল, মনে হয় লাশটা ওই পাড়ার যবন গ্রামের। দেকিস না হাতে শাঁখাও নেই, কপালে তো সিঁদুরের চিহ্নখানাও দেখা যাচ্ছে না।
ওদিকে প্রণব সর্দারের ছেলে বিনয় কেবল একখানা বাঁশের কঞ্চি দিয়া লাশখানা খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া দেখিতেছিল। মেয়ে মানুষটার পরনে ডুরে শাড়ি, তাহাও ভিজিয়া লেপটাইয়া রহিয়াছে গায়ে। শাড়ি বিনা গায়ে আনুষাঙ্গিক কাপড়চোপড় দেখা যাইতেছে না। শুধু প্রাণহীন হইবার দরুন বুঝি মেয়েটার দিকে কেহ অন্য উত্তেজনা লইয়া তাকাইতেছে না। তবু উপস্থিত পুরষ মানুষদের কোথায় যেন বাধো-বাধো ঠেকে, চোখের কোণা দিয়া বারবার দৃষ্টি চলিয়া যায় উন্নত বক্ষ যুগল আর ধবল বাহুর দিকে। তবে তাহা কামনার নয়, সকলের চোখে কেমন একখানা ভয় আর মায়া মিশ্রিত ঘৃণা। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুতে থাকে পবিত্রতা আর আধ্যাত্মিকতা কিন্তু অস্বাভাবিক অচেনা মানুষের মৃত্যুতে থাকে কেবল কৌতূহল, ফাঁসিয়া যাইবার উদ্বেগ আর শুচিবায়ুর ঘৃণা।
চ্যাংড়া একদল ছেলেপেলে চলিল লাশখানার জন্য চাটাই জোগাড় করিতে। যতই তাহা অচেনা হউক, শত হইলেও মানুষের লাশ। এইভাবে ফেলিয়া রাখিলে কখন শিয়াল কুকুর মুখ দিবে বলা যায় না। গ্রামের অন্য মেয়েরাও ভয় নিয়ে মুখে শাড়ি গুঁজিয়া আড়াল হইতে কর্মকাণ্ড দেখিতেছে। কেউ একজন প্রশ্ন করিল, কেমন করিয়া পাওয়া গিয়াছে এই লাশ? মা কালীর সামনেই বা আনিল কে? ইহার পরিচয়ই বা কী, কেহ কি চিনতে পারিয়াছে? তাহারপর শোনা গেল সেই লাশ প্রাপ্তির কাহিনী। শীব রাত্রির ফুর্তিতে গত সন্ধ্যায় হরলাল পোদ্দার আর বাসু খনকার সবার অগোচরে ভাঙ খাইয়া, গাঁজা টানিয়া ভোঁ হইয়া পড়িয়া ছিল মন্দিরের ওধারে। শেষ রাত্তিরে হরলাল প্রশ্রাব করিতে উঠিয়া ডোবার ধারে গেলে, জলের মধ্যে কী যেন ভাসিতে দেখে। সাহস করিয়া সে ডোবায় নামিয়া আকৃতিটা ডাঙার ধারে টানিয়া আনে। সেইখানেই মরা মেয়ে মানুষটার মুখ দৃষ্টিগোচর হইতেই সেই যে চেঁচাইয়া গ্রাম মাথায় করিল, তাহার পর এই অবস্থা। এক্ষণে অচেনা লাশখানা পড়িয়া রহিয়াছে গ্রামে ঢুকিবার মুখের মন্দিরে মা কালীর পায়ের নিচে। গ্রামের নেতা শ্রেণীর কেশববাবু চিৎকার করিয়া সকলকে বলিলেন, কেউ কি চিনতে পারিয়াছ লাশটাকে? তাহার কথায় কেহ উত্তর দেয় না। হারাধন বাগচী আগাইয়া আসিয়া বলিল, কেউ তো চিনিতে পারছে না কেশববাবু। কোনোদিন দেখেছি বলেও মনে পড়িতেছে না। তারপরও কেমন জানি চেনা চেনা ঠিকই লাগিতেছে।এইবার আরেকটি কণ্ঠও বলিল, আমিও মেয়েটারে কোথাও দেখিয়াছি বলিয়া মনে পড়ে না। তবে আমারও চেনা চেনা লাগিতেছে।
খানিকক্ষণ পর সকলেই একমত হইল, লাশ হওয়া মেয়ে মানুষটারে কেহই চিনিতে পারিতেছে না কিন্তু আবার সবারই চেনা চেনা মনে হইতেছে। যেন অদ্ভূত এক গাণিতিক ধাঁধায় বন্দি হইয়া হুটোপুটি খাইতেছে সকলের স্মৃতি। ধীরে ধীরে রোদ বাড়িতেছে। গত রাত্তিরে মাটি যতটুকু শিশির পাইয়াছিল, দিনের বাড়ন্ত রোদে তাহা এখন বাষ্প হইয়া উড়িয়া যাইতে যাইতে কেমন জানি সোঁদা গন্ধ ছড়াইতেছে। কিন্তু সকলেরই প্রশ্ন, মেয়ে মানুষটা ওই ডোবার ধারে আসিল কেমন করিয়া?
আরে, ভূতে আনিয়াছে। মানুষের কপালে মরণ থাকলি ভূতেও বারো বাজারে টানিয়া আনিতে পারে। না না, মনে হয় দস্যু ডাকাতের হাতে মরিয়াছে। গয়না, ধন-সম্পদ, ইজ্জত লুটিয়া গলা টিপিয়া মারিয়া ফেলিয়া গেছে ডোবায়।
আহা সোয়ামীর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া অথবা নাগরের পিছু পিছু ঘর ছেড়ে সব হারাইয়া জলে ডুবিয়া মরিয়াছে। এতে এত ভাবনার কী আছে? যবনের মেয়েগুলো এমনই হয়।
ঠিকই বলিছো, লাজও নাই, লজ্জাও নাই গরুখোরগুলোর। মেয়েগুলোও সব বেশরম। কিন্তু এই লাশটাকে খুব চিনা চিনা লাগিতেছে।
তোক কে বলিলো যে, ওটা যবনের মেয়ে, হিন্দুও তো হইতে পারে না কি? আমরাতো আর চিনিনে।
এই সকল সামান্য কথায় আর অহেতুক উচ্চবাচ্যে ঘটনাস্থলেই পিনাকি আর তার স্বামীর ঝগড়া লাগিয়া গেল। ওই দিকে কালীর পায়ের নিচে পড়িয়া থাকা লাশটিকে ঘিরিয়া মানুষের জটলা বাড়িতেছে। খবর পাইয়া পাশের গ্রাম হইতে মুসলমান প্রতিনিধিরা আসিয়াছেন। তবে তাহাদিগকে মন্দির হইতে দশ হাত দূর থাকিয়াই লাশখানা দেখিতে হইবে। গোল টুপি মাথায় সফেদ পাঞ্জাবি পরিহিত তিন চার জন লোক দূর হইতে লাশের মুখখানা দেখিল। তাহারাও শঙ্কিত, কার না কার লাশ। অনেকক্ষণ ভালো করিয়া দেখিয়া তাহারাও একমত হইল যে, এ মেয়ে তাহাদের গ্রামের নয়। তবে হঠাৎ করিয়া সত্যিই মুখখানা তাহাদেরও চেনা চেনা ঠেকিতেছে।
এ তো ভারী বিপদে পড়া গেলো। এখন এই মরা টানবি কে? আবার ফালাইয়াও তো দেওয়া যায় না, অপঘাতে মরা, সৎকার তো করিতে হইবে।
কী যে বলো বাপু, মাটি চাপা দেও, ওটা যবনের মেয়েই হবি।
কিন্তু যদি হিন্দু হয়, তালি তো মাটি দিলি পাপ হবি। তার দায়ভার কি তুমি নেবে?
হবি না, হবি না, অপঘাতে মৃত্যু, মাটিতে গেঁড়ে রাখাই উত্তম।
আহারে, কি সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটা। কোন মা-বাপের কোল খালি করেই না জানি এখন লাশ হয়ে পড়ি আছে…
কিন্তু, তোমার কী মনে হয়, যবন হোক আর হিন্দুই হোক। এমন নিষ্ঠুর অধর্মটা করিলো কে? আমাদের গাঁয়ের কেউ নয়তো?
কী করে বলি, কার মনে যে কী আছে! ওই হারামজাদা হরলাল আর বাসুকে বাঁধ। ওদের শক্ত করিয়া মার দিলিই হয়তো সব বেরুবে।
গ্রামবাসীর উত্তেজনা আঁচ করিয়া হরলাল আর বাসু আগেই ঘটনাস্থল হইতে ভাগিয়াছিল। উহাদের হাতের কাছে না পাইয়া, গ্রামবাসীর সমস্ত সন্দেহ যেন উহাদের উপরেই বদ্ধমূল হইল। এমনিতেই গত রাতে তাহারা ভাঙ ও গাঁজা টানিয়াছে।এখন সকলেরই বিশ্বাস, নেশার ঘোরেই ওই দুই পাষণ্ড এমন অধর্ম করিয়োছে। উৎসাহী পুরুষেরা ছুটিল তাহাদের ধরিয়া আনিতে। হরলালকে কোথাও পাওয়া না গেলেও বাসু ঠিকই লুকাইয়া ছিল জনার্দনের পাট ক্ষেতে। গ্রামবাসী তাহাকে খুঁজিয়া পাইয়া মারিতে মারিতে বাঁধিয়া আনিয়া মন্দিরের সামনে ফেলিল। কেশব বাবুর ছেলে শহরের কলেজে পড়া গোপালের হাঁকডাকই বেশি। এই সুযোগে সে গ্রামে বাবার প্রভাবখানা ঝালাই করিয়া নিতে চায়। সে কোমর বাঁধিয়া বাসুকে ইচ্ছামতো খানিকক্ষণ মারিলো। মার খাইয়া আধমরা বাসু তারপরও মা কালীর দিব্যি দিয়া কহিল, সে আর হরলাল মেয়েটাকে চেনে না। তাহাদের মারের ভয়েই হরলাল তাহাকে রাখিয়া পালাইয়াছে। ভোর রাত্রিতে যখন লাশখানা খুঁজিয়া পাইয়া হরলাল তাহাকে ডাক দিয়াছে, তখনই সে মেয়েটিকে প্রথম দেখে। লাশের চেহারাটা খুব পরিচিত মনে হওয়ায় তারা ভয় পাইয়া গ্রামবাসীকে জাগাইয়াছে। কেশববাবু ও গ্রামের অন্যরা বাসুর কথা বিশ্বাস না করিলে গোপালের নেতৃত্বে আরেক চোট মার হইয়া যায়। বাসু তবু দোষ স্বীকার করিল না।
আহারে, দেখো দেখো লাশটায় পিঁপড়ে ধরেছে। ওটাকে মাটি দেওয়া দরকার। কিন্তু মাটি যে দেবে, অপঘাতে মরাটাকে হাত দিয়ে ধরিবে কে?
ঠিকই বলিছো বাবা, পরে ভূত হয়ে ঘাড়ে চড়ুক আর কি….
তারপরও ধরিতে তো হইবে। ঠাকুর, যবন হলে ভালো আর হিন্দু হলে পাপ মাপ করি দিও।
গোপাল, যা তুই লক্ষণ ডোমকে খবর দে। ও ছাড়া এই কাজ কেই বা করবে।
গোপালের নেতৃত্বে একদল যুবক উত্তর গ্রাম হইতে লক্ষণ ডোমকে ডাকিয়া আনে। সে পৌরসভার সরকারি হাসপাতালে লাশ সরানো, মরা দেখভালের কাজ করে। এই দিনের বেলায়ও তাহার চোখ টকটকে লাল। কিসের নেশা করিয়াছে কে জানে! আশ্চর্যের বিষয় হইলো, ডোম বলিলেই আমরা মিশমিশে কালো রঙের কোনো লোকের কথা ভাবি। কিন্তু লক্ষণ ডোমের গায়ের রঙ দুধে-আলতা। তবে দশাশই একখানা ভুড়ি ঠিকই রহিয়াছে।সেও আসিয়া কেমন যেন চমকাইয়া উঠিল। মরা মেয়েটাকে তাহারও খুব চেনা চেনা মনে হইতেছে।
বিতর্ক শুরু হইল, পুরুষ মানুষ মেয়েটার লাশ স্নান করাইবে কি না। কিন্তু কেহ এই অপঘাতে মরা ধরিতে রাজি না। অবশেষে ভিক্ষুক শ্রেণীর এক মহিলাকে রাজি করাইয়া লক্ষণ ডোম লাশখানা সরাইলো। মহেষ চৌকিদারের বাড়ির পুকুরের কাছে কাপড় টাঙ্গাইয়া মরার স্নান সারা হইল। কেশব বাবু নিজের ঘর হইতে একখানা নতুন শাড়ি দান করিলেন মরাকে পরাইবার জন্য।অবশেষে নতুন শাড়ি পরাইয়া যখন মরা মেয়েটিকে আবার নিয়ে আসা হইল মা কালীর পায়ের সামনে, তখনই যেন সবাই হায় হায় করিয়া উঠিল। কি সুন্দর কাঁচা হলুদের মতো গায়ের রঙ, কি তার দেহ সৌন্দর্য। ভগবান, কোন নিষ্ঠুর মেয়েটার এমন ক্ষতি করিল! এমন সোনার মুর্তিকে মারিতে কি পাষণ্ডের এতটুকুও বুক কাঁপিলো না। এই চেহারা যেন গ্রামবাসীর খুব আপন। যেন কতদিন ধরে তারা চেনে মেয়েটিকে। গ্রামের যে মেয়েটি সবচেয়ে ঝগড়াটে বলিয়া পরিচিত , শ্বশুর-শাশুড়ির ওপর নিষ্ঠুর হইবার জন্য যে সুখ্যাতি পাইয়াছে, সেই কঠিন নিতাইয়ের মারও চোখে জল আসিল।
কেশব বাবু কার না কার মেয়ে, কোন ধর্মের কে জানে—এভাবে মাটি দেওয়া ঠিক হচ্ছে তো?
তা কি করিব? ফেলে রাখিব এইভাবে, মাটি তো দিতি হবে না কি।
আমার মনে হয়, মেয়েটা হিন্দুই হোক আর যবনই হোক, লাশ যেহেতু এই গ্রামেই পাওয়া গিয়াছে, সেহেতু আমরা হিন্দু মতেই দাহ করি।
কিন্তু অপঘাতের লাশ দাহের চেয়ে গেঁড়ে রাখাই ভালো।
দাহ নাকি লাশ গাড়িয়া রাখা হইবে—এই নিয়া গ্রামের জ্যেষ্ঠজনদের মধ্যে আরেকবার আলোচনা হইয়া গেল। অবশেষ ঠিক হইল, লাশখানা দহপোতা বিলের ধারে গাঁড়িয়াই রাখা হইবে। গোপালসহ আরও কয়েকজন দহপোতা বিলের ধারে লাগিয়া গেল গর্ত খুঁড়িতে। লাশখানা গর্তে নামাইবার আগে ঠিক হইলো পাপ কাটা যাইতে মৃতের কপালে মা কালীর চরণের সিঁদুর দিয়ে দেওয়া হইবে। কিন্তু সিঁদুর পরাইবার পর কাহারও মুখে যেন কথা সরিলো না। বিস্ফোরিত নেত্রে সবাই তাকাইয়া রহিল লাশখানার দিকে। রোদের ঝাঁজে কাহারও-কাহারও ঘাম টপ করিয়া মাটিতে পড়িল। মৃদু বাতাস দোলা দিয়া গেল মন্দিরের ওপরে বট গাছের পাতায় পাতায়। মা কালীর চরণে থাকা ফুল বাতাসে গড়াইতে গড়াইতে আসিয়া লাশের মাথার কাছে থামিল। সবার প্রথমে ষাটোর্ধ্ব হারাধন বাগচী, মা মা বলিয়া ডুগরিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া মাটিতে আছড়াইয়া পড়িল। তাহার পর কেশববাবুসহ আরও অনেকে হাউমাউ করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে আসিয়া পড়িল মাটিতে। আড়ালে দাঁড়ানো নারীগণের মধ্যেও কান্নার রোল উঠিল।
গ্রামবাসী অলক্ষুণে এক পাপের আশঙ্কায় কাঁদিয়া হায়-হুতাশ আর বিলাপ করিতে লাগিল। ঘটনা হইল, মা কালীর সিঁদুর লাগানোর পর গ্রামবাসী হঠাৎ চিনিতে পারিয়াছে মরা মেয়েটার চেহারা যে হুবহু একটু দূরেই জিহ্বা বাহির করিয়া দাঁড়াইয়া থাকা দেবীর মতন।
তাহলে কি দেবীই মর্তে নামিয়া আসিয়াছিল কাল রাত্তিরে! আসিয়াছিল এই মেয়ের রূপ ধরিয়া আমাদের গাঁয়ে! ও ঠাকুর, কোন পাপে কার ভুলে আজ দেবীকে এভাবে বিদায় জানাতে হচ্ছে।
গ্রামবাসীর ক্রন্দনরোল বাড়িতে থাকে। রৌদ্রমাখা বাতাসে বট পাতায় সরসর শব্দ হয়। কাঁদিতে কাঁদিতে হারাধন বাগচী কালী মুর্তির পায়ে পড়িয়া কাঁদিতে থাকে—মা, মাগো ক্ষমা করো মা, ক্ষমা করো। তোমাকে যে অসম্মান করিয়াছে তারে ঘোর নরকে নাও। ওই পাষণ্ডের গলা কাটি রক্ত খাও। ওই পাষণ্ডের মুণ্ডের মালা গলায় পড়ো মা….।
কেশব বাবু চোখের জলে ভাসিয়া অভিশাপ দেয়-ওর কুষ্ঠ হোক, ও নরকে যাক, রক্তবমি করিয়া মরুক ওই অসুর।
গ্রামবাসীর অভিসম্পাতেও মা কালী অবিচল হইয়া দাঁড়াইয়া থাকেন জিহ্বা বাহির করিয়া। কোথাও কিছুই বদলাইয়া যায় না। কেবল, দহপোতা বিলের ধারে লাশ গাঁড়িবার গর্ত খুঁড়িতে যাওয়া কয়েকজনের মধ্যিখানে হঠৎ করিয়া গোপালের রক্তবমি শুরু হইয়া যায়।