সন্ধ্যা, নওশাদ ও আমার মাঝে সালভাদর দালির গলিত ঘড়িটা ঢুকে পড়েছে। ফলে যা যা ঘটেছে, তা অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ কাল পরিক্রমায় ঠিকমতো বিন্যস্ত করা যাচ্ছে না। আর এর দোষ আমার বা নওশাদ বা সালভাদর দালির সময় গলে পড়া সেই ঘড়ির ছবি; ঠিক কার ওপর বর্তায় কেউ জানি না।
ছবিটির একটা রেপ্লিকা ওর চেম্বারের শোভাবর্ধন করছে সন্ধ্যার কপোলের কালো তিলটির মতোই। আমরা অনেকদিন অবশ্য বলার যোগ্য কথা না পেয়ে এর দিকে নির্বাক তাকিয়ে থেকেছি। আর আশ্চর্যরকমভাবে বর্তমানে বাস করে দুজনেই অতীত ভবিষ্যৎটাকে উল্টেপাল্টে দেখেছি আর কী হতে পারতো বা কী হতে পারতো না ইত্যাদি সম্ভাবনার হাবুডুবু ভাবনায় ঠিক কখন জানি ঘড়িটি সময়ের অনস্বীকার্য বহমানতার নিয়ম ভেঙে আমাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎকে তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে।
আসলে নওশাদের মাথা আউলে গেছে। উল্টাপাল্টা বলে তো বটেই, কাজও করে আউলা-ঝাউলা। দুপুরে খেয়ে-দেয়ে ডাক্তারের ওষুধের প্রভাবে নিজের অনিচ্ছায় অচেতনে ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় মানসিক বৈকল্যজাত নিয়ন্ত্রণহীন চিৎকার চেঁচামেচি, এত বেলা হয়েছে অথচ আমাকে কেউ এখনো খেতে দিলো না! সন্ধ্যা, সন্ধ্যা, সন্ধ্যা, সন্ধ্যার নাম ধরে অস্থির জীবনসঙ্গীর মতো ডাকাডাকি, এরপর কল্পিত অভিযোগের ঝুলি খুলে অর্থহীন বকবক। এত বেলা অব্দি সন্ধ্যা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, আর সবাই কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। সন্ধ্যার এই যখন-তখন ঘুমের অভ্যাসটা আর গেলো না। নওশাদের এসব অভিযোগ আমাদের মতো সুস্থ মানুষের কাছে অর্থহীন বটে, কিন্তু নওশাদ নিবিষ্ট তার মুহূর্তে, অভিযোগে, কোনো ভণিতা নয়। সে তখন সন্ধ্যার জীবনসঙ্গী, তার সব অভিযোগ যৌক্তিক।
ততদিনে ঝি, চাকররাও অতিষ্ঠ। ক্ষমতাহীন, পদ পদবিহীন, অকর্মণ্য একটা মানুষের অহেতুক উৎপাত কতটাই সহ্য করে সংসারের কর্মব্যস্ততা? ছাই ফেলতে কাজে কখনো কাজে লাগতে পারে ভেবে, এ যুগে ভাঙা কুলো কে যত্ন করে ঝুলিয়ে রাখে? উৎপাত বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে গেলে একমাত্র ছেলের বউ উপায়ন্তর না পেয়ে আমাকে ফোন দেয়। আসলে একমাত্র আমিই নওশাদের এই মানসিক বিপর্যস্ততার কারণ জানি। আমি গেলেই নওশাদ শান্ত হয়। খুব শান্ত হয়ে দায়িত্ববান স্বামীর মতো সব দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা সংহত করে সন্ধ্যার বর্তমান অবস্থা জানতে চায়, জানতে চায় ঠিক কতদিন লাগবে সন্ধ্যার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে। আত্মপ্রতারণা অস্বীকার করে কিংবা দক্ষ অভিনেতার মতো বিশ্বস্ততায় সত্য গোপন করে আমি ওকে সান্ত্বনা দেই, এই ধরো মাসখানেক। খুশি হয়ে যায় নওশাদ। ও সুস্থ হয়ে গেলে এবার কিন্তু নেপাল যাবো, তৈরি থাকিস। আমি আসলে নওশাদের জন্য সবসময় তৈরিই থাকি। নওশাদ আমার প্রিয়তম বন্ধু। সন্ধ্যাও।
আমি মানসিক রোগের ডাক্তার নই। সাইক্রিয়াটিস্ট রোগটিকে শনাক্ত করেছেন ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার। নওশাদ নিজেকে সন্ধ্যার স্বামী ভেবে সন্ধ্যার সঙ্গে জীবনযাপন করে। বর্তমানের দায় দায়িত্ব নির্দ্বিধায় অস্বীকার করে। ফলে তার মন্ত্রিত্ব যায়, মানসিক রোগী হিসেবে দলের পদও হারায়।
নওশাদ যখন আমাকে ফোন করে, তখন গভীর রাত। হাইপার টেনশনের কারণে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাই। আমার সচেতন অচেতনের তোয়াক্কা না করে ঠিক কখন ঘুমের ওষুধ আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, ঠাওর করতে পারি না। তবে মধ্যরাতের ফোনের আওয়াজে অবশ্যম্ভাবী অকল্যাণের সুর থাকে। তীব্র শব্দে হঠাৎ বুকের ধড়ফড় এড়ানো যায় না। ঘুমের গভীর স্থির জলে শব্দটা হঠাৎ যেন বিশালাকৃতির কোনো পাথর ছুড়ে দেয়। ঘুম ভেঙে যায়। কেননা স্বপ্নার জন্য নওশাদের জন্য প্রবল উৎকণ্ঠা আমার নিয়মের দিন যাপনকে অস্থির চঞ্চল করে রাখে, এমনকি ঘুমটাও নির্বিঘ্ন হয় না।
নওশাদ আমার একমাত্র বন্ধু। বয়সে যদিও দুই বছরের বড়। কিন্তু এক পাড়ায় একসঙ্গে ক্যারাম, দাড়াগুটি, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলে বড় হয়েছি।
আমি জানি, নওশাদ কেন ফোন দিয়েছে। নওশাদের কণ্ঠে প্রবল তাড়া, আসতে পারবি? আসছি এখনই আসছি, বলে ফোনটা দ্রুত কেটে দেই। মাঝরাতে এসির বাতাসে আমার শরীর ঘামতে থাকে, জিমে ওয়ার্কআউট করা তরুণের মতো। আমার চেম্বারের পাশেই একটা জিম, আসা যাওয়ার পথে প্রতিদিন দেখা হয় এদের সঙ্গে। জবজবে ঘামভেজা সুঠাম তারুণ্যের সঙ্গে।
আমার নার্ভাসনেস অস্বীকারের অহেতুক চেষ্টা করি না। সেতারা টের পায়, উঠে আমার দিকে টিস্যু বক্স এগিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পানির গ্লাসে পানি এগিয়ে দেয়। সান্ত্বনা দেয়, আরে সমস্যাটা নওশাদ ভাইয়ের। তোমার তো নয়। এত ঘাবড়াচ্ছ কেন?
সত্যি তো আমি কেন যে এত ঘাবড়াচ্ছি! সমস্যাটা তো আমার নয়। টিভিটা অন করি। টিভিতে ব্রেকিং হচ্ছে।
আবার বেজে উঠে মোবাইলটা। মাহীর ফোন। নওশাদের ছেলে। আমি রিসিভ না করে সেতারার হাতে দেই। সেতারা এপাশ থেকে বলতে থাকে, মাহী বাবা তোমার আব্বাকে খবরটা জানাও। লুকিয়ে লাভ নেই। সেতারা স্পিকার অন করে দেয়, আন্টি মিথ্যা বলেই পার পাওয়া যায় না। সত্য বললে তো রাস্তায় বেরিয়ে পড়বেন।
মাহী খুব অনুরোধ করতে থাকে। আন্টি একবার পাঠান না আংকেলকে। আমি মাহীর সঙ্গে সেতারার কথা শেষ করার অপেক্ষা করি না। বেরিয়ে পড়ি গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে। আমার বের হয়ে যাওয়ার উদভ্রান্তি আমার কাছেই অচেনা লাগে। হয়তো সেতারারও তাই লাগে। সেতারা পেছনে থেকে দুয়েকবার ডাকে, শোনো শোনো আমিও সাথে যাই। আমার শোনার সময় নেই। একদমই সময় নেই। আমাকে নওশাদের কাছে দ্রুত পৌঁছাতেই হবে।
আমি সবসময় নওশাদের সঙ্গে আছি। আজও আছি। রাস্তায় মধ্যরাতের গভীরতায় হাহাকার, কেবল আমি শুনতে পাই। নিয়ন বাতির সারি, ধুলোয় সাদা গাছের পাতায় আনন্দ হারিয়ে যাওয়া শূন্যতা। রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলতে থাকা কয়েকটা মালবাহী ট্রাকের বিকট শব্দ বরং যান্ত্রিক অসহ্যতাই ফিরিয়ে দিচ্ছে শহরের বুকে। হালকা পাতলা যাত্রীসহ দুয়েকটা অসহায় পাবলিক বাস, তাড়া নেই, অথচ জীবন চালিয়ে নিতে হবে অথর্ব কর্মক্ষমতাহীন বৃদ্ধের মতো। একটা প্রাইভেট কারে কয়েকজন তরুণ, উচ্চস্বরে বিটিএসের গান বাজিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় তারুণ্যের ধারাবাহিকতা ঘোষণা দিয়ে। পাঁচ লাখ বছরের হোমো সাপিয়েন্স কেবল প্রকৃতির ধারাবাহিকতা। এই শূন্যতা, এই হাহাকার এই মুহূর্তে যা পীড়িত করছে আমাকে এক সমাধানহীন জটিল রসায়ন বৈ নয়। হৃৎস্পন্দন থেমে গেলে পৃথিবীর কোনো কোণে এর আর কোনো হদিস থাকে না।
আমাকে দ্রুত পৌঁছাতে হবে নওশাদের কাছে। আমি সবসময় সব পরিস্থিতিতে নওশাদের সঙ্গে আছি। এই আজও দুপুরবেলা, শেষ যখন নওশাদ সন্ধ্যাকে দেখতে যায়, ঠিকমতো উঠে বসতে পারে না সন্ধ্যা। তবু নওশাদকে দেখে চোখেমুখে উপচে উঠছিল আনন্দ। ঠিকরে বেরোচ্ছে। তুমি এখনো আমাকে আগের মতো ভালোবাসো নওশাদ। আজীবন ভালোবাসাবঞ্চিত সন্ধ্যা, শুধু ভালোবাসা পেতেই ভালোবাসে। ভালোবাসাকেই ভালোবাসে। সন্ধ্যা কী বোকা! না কি ভাগ্যাহত? প্রকৃত ভালোবাসার ঝর্ণাধারা কখনো স্পর্শ করতে পারে না। কেবল মরিচীকাকে জল ভেবে হোঁচট খায় বারবার।
নওশাদ চেয়ার ছেড়ে বসে বিছানায়, যেন সন্ধ্যার উঠে বসার কষ্টটুকু করতে না হয়। মুঠোয় মুঠো পুরে দৃঢ়তার সঙ্গে বলে, হ্যাঁ আমি তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি সন্ধ্যা। আগের মতোই। সন্ধ্যার চোখে বিশ্বাসের তৃপ্তি। রোগযন্ত্রণার কষ্ট ছাপিয়ে বিগত জীবনের প্রতারিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোলা স্বস্তি। এই বা কম কী! মৃত্যুপথযাত্রী সন্ধ্যার শেষ স্বস্তি, কিন্তু সন্ধ্যার এই স্বস্তি আমাদের বাকি জীবনের তৃপ্তি, বেঁচে থাকা আমার কিংবা নওশাদের। সেই দুপুরে দুজনেই তো পড়তে পারছি রোগাক্লান্ত সন্ধ্যার গ্রীবার ভাঁজে লুকানো শান্তির ভাষা। শেষ মুহূর্তে। হয়তো আমাদের আগামী বেঁচে থাকায় সান্ত্বনার পর্দা হয়ে ঝুলবে সন্ধ্যার এই মুখের ভাঁজ।
এবার আমার মরেও শান্তি, সন্ধ্যার মুখে কথাটা সিনেমার ডায়লগের মতো শোনায়। যেসব সিনেমায় অভিনয় করে সন্ধ্যা। কিন্তু কথাটা কিংবা সিনেমার ডায়লগটা সন্ধ্যার স্বস্তিময় চোখের ঠিকরে পড়া আলোর সঙ্গে মিশে দালির দ্য পেসেন্স অব টাইমের একটা গলিত ঘড়ি হয়ে তিন দশক ফুঁড়ে চলে যায় কেএমডি সরকারি কলেজের বারান্দায়। কিশোরী মোহন দাস সরকারি কলেজ। ভাটি অঞ্চলের বিশাল এলাকার ধানী কৃষক কিশোরী মোহন দাস, লাঙলের ফলায় শ্রমে যার ভাণ্ড ভরেছে অর্থে, কিন্তু নিজেরা শিক্ষাদীক্ষার সুযোগ না পেলেও ভাটি সংলগ্ন প্রতিটি অঞ্চলে এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে গেছেন কেউ না কেউ।
স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র আন্দোলনে কলেজটি উত্তাল, সারাদেশের ধারাবাহিকতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের সভায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ। শামছুন্নাহার হলের জাসদ ছাত্রলীগের নেত্রী মুমূর্ষু হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ঢাকা মেডিক্যালে। প্রতিবাদে-বিক্ষোভে নওশাদের নেতৃত্বে তুমুল স্লোগানে স্লোগানে ফেটে পড়ছে কলেজ চত্বর। একদফা একদাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি। আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ঝাঁজালো ভাষণ দিচ্ছে নওশাদ। আমি নিরাপদ দূরত্বে অডিটোরিয়ামের বারান্দায় বসে শুনছি তার জ্বালাময়ী বক্তৃতা। আমার সঙ্গে সন্ধ্যা। মিটিং শেষ করে সন্ধ্যার সঙ্গে প্রেম করবে নওশাদ। আমাকে পাহারায় থাকতে হবে। মফস্বলের কলেজে প্রেম করা পলাশীর আম্রকাননের গোয়েন্দাগিরির মতো কঠিন।
আমি অবশ্য এই মিছিল-মিটিং-প্রেম; কিছুরই ধারে-কাছে নেই। আমি কলেজটির সেরা ছাত্র। স্কুলেও ছিলাম। প্রথাবদ্ধ প্রতিষ্ঠার অসম্ভব চাপ আছে আমার ওপর। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সহজাত আকাঙ্ক্ষা। আমাকে ডাক্তার হতে হবে। এখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে। নওশাদ আমার একমাত্র বন্ধু। বয়সে যদিও দুই বছরের বড়। কিন্তু এক পাড়ায় একসঙ্গে ক্যারাম, দাড়াগুটি, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলে বড় হয়েছি। নওশাদ আমার শ্রীকান্তের ইন্দ্রদাদা।
নওশাদের পেছনে সালভাদর দালির পেন্টিংয়ের রেপ্লিকা। সেদিকে তাকিয়ে আমার শোনার আগ্রহ কিংবা সন্ধ্যার বলে যাওয়া বেদনারা হুমড়ি খায়।
দেখতে দেখতে হঠাৎ ভাঙচুর শুরু হয় কলেজে, পুলিশ আসে। মিছিল নিয়ে কলেজ চত্বরের বাইরে যেতেই ধরা পড়ে জেলে যায় নওশাদ। সেই বিকালে ভারাক্রান্ত সন্ধ্যাকে আমি বাসায় পৌঁছে দেই এক রিকশায় পাশাপাশি বসে। সন্ধ্যা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। আমি নিরীহ ভালোছাত্রের সংজ্ঞা ভেঙে সামান্য একটু সাহস জোগাড় করে ওর ওড়নার খুঁট দিয়ে ওর চোখের জল মুছে দেই। মুখে কোনো কথা জোগায় না।
নিচ থেকে দেখা যায়। গভীর রাতেও আলো জ্বলছে নওশাদের ঘরে। আমি দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে নওশাদের ঘরে পৌঁছাই। আমাকে দেখে নওশাদ হাতের নাগালে সাত আসমান নয়, আমাকে নয়, যেন সন্ধ্যাকেই পায়। শান্ত হয়ে সোফায় বসে। আমিও পাশে বসি। আমি তো সবসময় নওশাদের সঙ্গেই আছি। এখনো আছি।
ওই সেদিন, শুরু করে নওশাদ, বল তুই ছিলি না যেদিন সন্ধ্যা আমার অফিসে এলো। হ্যাঁ আমি ছিলাম। বলেই সন্ধ্যাকে ডাকে নওশাদ, সন্ধ্যা, সন্ধ্যা আমাদের কফি দাও। দালির ঘড়িটি গলে গলে পড়ে। প্রায় বিশ বছর পর নওশাদের চেম্বারে সন্ধ্যার সঙ্গে হঠাৎ দেখা হওয়া রাতটা মধ্যরাতে নওশাদের অন্দরে ঢুকে পড়ে।
হ্যাঁ নওশাদের অফিসে বসে আছি। প্রতিদিন রাতে চেম্বার শেষ করে নওশাদের অফিসে যাওয়া আমার রুটিন। ওয়েটিং রুমের মুখগুলোর দিকে তাকানো আমার অভ্যাস নয়, কথাও নয়। নওশাদ তখন মন্ত্রী, কতজন কত ন্যায়-অন্যায় তদবিরে দিনভর বসে থাকে। আমার দেখে কী হবে! আর দেখলেই কী চিনতাম! আপাদমস্তক পর্দায় নিজেকে ঢেকে নওশাদের কক্ষে ঢুকে সন্ধ্যা। আমি এসির অতিরিক্ত শীতল বাতাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেয়ার ঘুরিয়ে নওশাদের টেবিলে রাখা বাংলা, ইংরেজি পত্রিকা উল্টাই। নওশাদের সামনে বসে মুখের পর্দা সরালে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে চিৎকার করে নওশাদ। ওর চিৎকারে চমকে উঠি আমিও। সন্ধ্যা। কত বছর পর!
দালির ঘড়িটি আবার গলে গলে পড়তে থাকে অতীত, বর্তমান ভবিষ্যৎ অগ্রাহ্য করে। নওশাদ জেলে যায় আর আমি চলে যাই ডাক্তারি পড়তে আর সন্ধ্যার বিয়ে হয়ে যায়। জানাই ছিল এই পরিণতি। অবস্থানের সঙ্গে বেমানান, বেয়াড়া রকমের সুন্দরকে বেশিদিন আগলে রাখার সাহস কম পরিবারেরই থাকে।
নওশাদ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আমার হোস্টেলে এসে সে কী কান্না। ছেলে মানুষ এভাবে কাঁদে! তাও নওশাদের মতো সাহসী নেতা! বাইরে যার বীরের ইমেজ। নওশাদকে কাঁদতে দেই, নিজেই নিজেকে অতিক্রম করার কোনো বিকল্প নেই। রাতে নওশাদ আমাকে পড়ার টেবিল থেকে তুলে নিয়ে যায় এক অন্ধকার গলিতে। গাঁজার পোটলা নিয়ে হোস্টেলের ছাদে। আমি সঙ্গে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নওশাদ। আরেকদিন আরেক অন্ধকার গলিতে কিছু উৎকট মেয়ের কাছে। আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। পরীক্ষা ড্রপ দিয়ে একবছর পিছিয়ে যাই আমি।
সন্ধ্যার সঙ্গে যখন আবার দেখা হয়, তখনো আমি নওশাদের সঙ্গে আছি। সন্ধ্যা রাণী দাস এখন আলেয়া বেগম। এই সন্ধ্যা থেকে আলেয়া হওয়ার প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক জানা নেই আমাদের। অনভ্যস্ত মুখে সন্ধ্যাকে কোনোভাবেই আলেয়া ডাকতে পারি না।
সন্ধ্যা কেঁদে জানায় তার একমাত্র ছেলে হত্যা মামলায় জেলে। মাস ছয়েক আগে এক রাতে রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পথচারী ভিক্ষুককে হত্যা করেছিল। নানা মানবাধিকার সংস্থা আর পেপার পত্রিকার অত্যাচারে বিপর্যস্ত ওর বেঁচে থাকা। উকিল, ব্যারিস্টারের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা চলে গেছে, কিন্তু না হচ্ছে ছেলের জামিন, না মিলছে একটু দমফেলার স্বস্তি। নওশাদের টেবিলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সন্ধ্যা, না কি আলেয়া! নওশাদ খুব ব্যস্ত হয়ে ফোন করে নানা জায়গায়। সন্ধ্যার অশ্রু যুবকবেলার মতো অস্থির করে নওশাদকে, আমাকেও।
আমরা হঠাৎ তাকে আবিষ্কার করি সিনেমার পোস্টারে। আমরা একসঙ্গেই। আমি ডাক্তার হয়ে বের হইনি। নওশাদ ঢাকায় এসে নেতার ডান হাত হয়ে যায়। নওশাদের ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাট, গাড়ি, টাকার কাড়ি সব সবে হওয়া শুরু। ওর সঙ্গে পার্টি অফিসে যাই। আড্ডা মারি। শাকুরায় যাই। টাকিলা আর ভাজা মুরগির ঠ্যাং খাই। অনভ্যাসের টলটলায়মান পা ধীরে ধীরে স্থির হতে শেখে। অন্যরকম জীবনে সন্ধ্যাকে ভুলে যায় নওশাদ। একদিন মল্লিকা সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে বিরাট পোস্টার চোখে পড়ে। হ্যাঁ সন্ধ্যা, সন্ধ্যাই তো। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে আমরা নেমে পড়ি। পাশের দোকানে হিমশীতল বাতাসে বরফকুচি দেওয়া, ঘেমে ওঠা নারীর শরীরের মতো বাঁকধরা গ্লাসে লাচ্ছি খাই। আর দুজনে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না সন্ধ্যার সিনেমাটা দেখতে যাবো কি না। বুঝতে পারি না সন্ধ্যা সিনেমায় নামলো কবে? কেন নামলো! শহরের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ঘরের সুন্দরী মেয়েটা শেষ পর্যন্ত সিনেমায় নামলো! আমরা আসলে দ্বিধাগ্রস্ত হই, নায়িকা হওয়ার সব যোগ্যতা নিয়ে সন্ধ্যার আসলে মিহির চৌধুরীর স্ত্রী হয়েই জীবন কাটানোই ভবিতব্য, না কি নিজের যোগ্যতার প্রতি সুবিবেচনা করে সিনেমায় নামাটাই ঠিক হয়েছে।
এরপর কয়েকবছর আমরা দেখি ঢাকা শহরের হলগুলোতে সন্ধ্যার বিশাল বিশাল পোস্টার। পত্রিকার খুললেই তার ছবি। ভাসতে ভাসতে আমাদের কানে আসে সন্ধ্যা এখন দেশের যুবকদের হার্টথ্রুব। গাড়িতে বসে পত্রিকার ছবি উল্টিয়ে নওশাদ হাসে আমার দিকে তাকিয়ে, আমি তার দিকে। আমরা দুজন রাত বারোটায় টিকিট কেটে সন্ধ্যার সিনেমা দেখি। পর্দায় ওর নাম আলেয়া। কক্সবাজারের ঝাউবনে গান গাইতে গাইতে যখন নায়কের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ক্যামেরা নানা অ্যাঙ্গেলে তার শরীরের বাঁকগুলো ক্লোজ শটে শত শত দর্শকের কামুক দৃষ্টির সামনে স্পষ্ট করে দেয়, দর্শকরা সমস্বরে সিটি বাজায়, আমি বুঝি নওশাদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমিও কি খোলা রাখি নাকি! বাসায় ফিরে নওশাদ ঘন ঘন সিগারেট টানে। রাতে ঘুমাতে পারে না। আমিও।
আমি জানি, নওশাদও জানে একদিন না হোক এক সপ্তাহেই সন্ধ্যার ছেলেকে মুক্ত করে আনা সম্ভব নওশাদের পক্ষে। কিন্তু সেটা হয় তিন মাসে। এই তিন মাসে আমাদের সঙ্গে সন্ধ্যার আবার যোগাযোগ পুনস্থাপিত হয়। ছেলের জামিনের জন্য পথের অসহায় ভিখারি, চতুর ধান্ধাবাজ কিংবা ধূর্ত পাতি নেতার মতো অন্য দশজন ভিজিটরের সঙ্গে নওশাদের ওয়েটিংরুমে সন্ধ্যার বসে থাকা আমার ভালো লাগে না। আমি ওকে চেম্বারে এনে বসাই। মহেন্দ্র আমাদের চা দেয়, পানি দেয়। আমি আর সন্ধ্যা বসে থাকি নওশাদের ফ্রি হওয়ার অপেক্ষায়। গুরুত্বপূর্ণ দফতরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিছুক্ষণ আবেগের কাছে স্থগিত রেখে নওশাদ সন্ধ্যার কথা শোনে। বাইরে থেকে দেখা রুপালি পর্দার ঝা চকচকে ঈর্ষণীয় জীবনের আড়ালে ঢাকা অসুখী অতৃপ্ত জীবনের রূপকথা। মিহির চৌধুরীর সন্দেহ বাতিক, অত্যাচার, সিনেমার পরিচালক এহসান আহমেদের সঙ্গে দেখা হওয়া, সিনেমায় নামা, এহসান আহমেদকে বিয়ে করা, স্ত্রীর মর্যাদা, সম্মান অর্থ-বিত্তের ভাগ কিছুই না পাওয়া। উল্টো ওর সব সাইনিং মানি আত্মসাৎ করা, কত গভীর দুঃখের খাদ খনন যাপনের বাঁকে বাঁকে। সন্ধ্যা থেকে আলেয়া হয়ে ওঠা সন্ধ্যার কথা হঠাৎ ব্রেক কষে থেমে পড়ে। নওশাদের পেছনে সালভাদর দালির পেন্টিংয়ের রেপ্লিকা। সেদিকে তাকিয়ে আমার শোনার আগ্রহ কিংবা সন্ধ্যার বলে যাওয়া বেদনারা হুমড়ি খায়। আমরা দুজনেই আটকে যাই অনর্থক দুঃখ খননের অর্থহীনতায়। এই মুহূর্তে সন্ধ্যার ছেলের জামিনটাই বেশি জরুরি।
সন্ধ্যা মারা গেছে মানে? আমি নিয়ন্ত্রণহীন ক্রোধে ফেটে পড়ি। বিশ্বের সব সেরা সেরা হাসপাতালের সেরা ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি আমি।
একবার নয়, কয়েকবারই বিদেশ ভ্রমণের সময় নওশাদ সন্ধ্যাকে সঙ্গে নিতে চায়। সন্ধ্যা সন্ধ্যার রোদগলা নরম বাতাসের মতো সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে। অনেক তো হলো, এবার একটু স্থিত হই। সন্ধ্যা আমাকে বলে চুপিচুপি। আর নওশাদকে বলে, থাকুক না, তোমার রেপুটেশনের ব্যাপার। আমার ভবিষ্যৎ না হয় শেষ, তোমার তো রয়েছে। তবু একবার কক্সবাজার অন্তত, রাজি হয়ে যায় সন্ধ্যা। প্রথম প্রেমের মোহ মানুষকে জীবনভর সুখ বিলিয়ে যায়। যে সুখে শেষ বিকেলেও ফেলে আসা দিনটাকে সফল মনে হয়, যে সুখের ডাক অগ্রাহ্য করা যায় না।
তাই মধ্যচল্লিশেও দরজা লাগিয়ে দেয় নওশাদ আর সন্ধ্যা। আমি সবসময় নওশাদের সঙ্গে থাকি। সেদিনও লনের সামনে বসে।
যথারীতি নওশাদ ব্যস্ত হয় নিজের জগতে। কমতো নয় দায়িত্ব, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী সে। বেশ অবহেলা হয়েছে কয়েক মাস। কিন্তু এরপর সন্ধ্যা নতুন করে নির্ভিরশীল হয়, কিংবা নতুন করে প্রেম আবিষ্কার করতে চায় সে নওশাদের কাছে। প্রথম প্রেমের মতো যখন-তখন যেকোনো আহ্লাদ, আবদারে ফোন করে নওশাদকে, নওশাদ ফোন ধরে না। বিরক্ত হয়। ফোনটা ধর তো তুই, আমাকে বলে। আরে আমার কাজ-কম্ম আছে না! এই বয়সে এমন ঝুলে পড়লে হয়? আমার বুকের ভেতরে কোথায় টনটন করে।
সময় আবার দালির ঘড়ি হয়ে পড়ে। এই সন্ধ্যার জন্য কী না করে নওশাদ! দেয়াল টপকে দেখা করতে গিয়ে পাড়ার ছেলেদের হাতে মার খায়। সন্ধ্যার ভাইয়েরা নওশাদকে বাড়ির আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে একদিন। দুই পাড়ায় মুরুব্বিদের বিচার বৈঠক, কত কী!
তুমুল নায়িকা সন্ধ্যা, একের পর এক হিট ছবি। আমি আর নওশাদ সিঁদকাটা চোরের মতো বুকে বল জমাই, চল সন্ধ্যার বাসায় যাই। নওশাদ ইচ্ছার তীব্রতা আর আহত হওয়ার দ্বিধায় দ্বিখণ্ডিত, যদি সন্ধ্যা আমাদের না চেনে, যদি বাসার দারোয়ান না ঢুকতে দেয়! আমি উৎসাহে টগবগ করি, আরে সন্ধ্যা আমাদের চিনবে না, তাই হয়? আমার উৎসাহে কিছু সাহস জমাটবাঁধা দইয়ের মতো সঞ্চিত হয় আমাদের হৃদয়ে। আমরা প্রবল আগ্রহে ওর বাসার সামনে যাই। আহা! নায়িকা সন্ধ্যার বাসার সামনে ভক্তকুলের ভিড়, আমরা সেই ভিড়ে যেকোনো যুবক। ভগ্নহৃদয়ে ফিরে আসা, একান্ত সন্ধ্যা এখন সবার। এই ভার কত দুর্বহ হয়ে বিঁধতে থাকে।
খবরটা প্রথম আমি নওশাদকে দেই, সন্ধ্যার লাস্ট স্টেজ ক্যান্সার। বাঁচবে না। তোকে একবার দেখতে চায় শেষবার। অসুস্থ সন্ধ্যাকে দেখে এসেই, আউলা হয়ে যায় নওশাদ। খালি বলে, আমি সন্ধ্যাকে ভালোবাসি। হ্যাঁ। বাসিস তো। আমিই ওকে অতীতের সব জ্ঞাত অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য দিয়ে নিশ্চিত করি।
তবে সুযোগটা কেন নিতে গেলাম? আমি নষ্ট হয়ে গেছি। তোরা ভেবেছিস আমি নেশা টেশা ছেড়ে ভালো হয়ে গেছি, আসলে আমি নষ্ট হয়ে গেছি। সুযোগ নেই মানুষের দুর্বলতার। আমি যাকে কক্সবাজার নিয়ে গেলাম, সে সন্ধ্যা নয় রে। যেকোনো মেয়ে। যেকোনো মেয়েকে আমি চাইলেই যেকোনো জায়গায় নিতে পারি। এই আত্মদহনের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে। আমি চুপ করে থাকি।
নওশাদ ডাকে, সন্ধ্যা সন্ধ্যা! চলো সিনেমা দেখে আসি। কই যাবি, মল্লিকায় না বলাকায়? আমাকেই অপশন দেয় নওশাদ। ইচ্ছে করে আমি ওকে বাস্তবতা জানাই। আরে হল নয়, এটা সিনেফ্ল্যাক্সের যুগ। সন্ধ্যাকে আমি মরতে দেবো না। বাঁচাবো। চঞ্চল হয়ে ওঠে নওশাদ। সময় তখন পুরোই দালির ঘড়ি। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব একাকার।
আমি আঁতিপাতি খুঁজি কোথায় সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হয় লিভার ক্যান্সারের। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ হয় এককালের তারকা আলেয়ার জন্য। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে হয় আমার কাছে।
বাঁচানো যায়নি সন্ধ্যাকে। খবরটা নওশাদকে জানানো দরকার। সবকয়টা টিভি চ্যানেল ব্রেকিং দেখাচ্ছে। নওশাদ স্মৃতিতে জাবর কাটে, সেদিন যেদিন আমি জেলে গেলাম, সন্ধ্যাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে…। কী বলছিস নওশাদ, আমি দৃঢ়ভাবে বাধা দেই, তুই কোথায় আমি তো সন্ধ্যার সঙ্গে, ওই যে দেখ, রাস্তায় সুনসান নীরবতা। পুলিশের টহলে বন্ধ হয়ে গেছে সব সারিবাঁধা সাটার। কোনো একটা বন্ধ সাটারের অবরুদ্ধতা ভেঙে ভেসে আসছে, ওই দুটি চোখ চিরদিন হয়ে থাক মোর গয়না…সিনেমার গান। আরে সন্ধ্যাকে যেদিন কক্সবাজার নিয়ে গেলাম, নওশাদের চোখে অশ্রু নয়, গভীর অনুশোচনা। এবার আর নওশাদের মিথ্যাচার সহ্য হয় না আমার, পাগল হয়েছে বলে সন্ধ্যাকে নিয়ে যা তা বলবে? তুই কোথায় আমি তো, এই তো ইনানী বিচের বালুচরে হাত ধরাধরি করে হাঁটছি সন্ধ্যার সঙ্গে। এত আমি, তুই কোথায়, সুদৃঢ় বিশ্বাসে প্রতিবাদ করি।
নওশাদ এবার সান্ত্বনার স্বর রাখে আমার প্রতিবাদে, জানিস সন্ধ্যা আজ মারা গেছে। সন্ধ্যা মারা গেছে মানে? আমি নিয়ন্ত্রণহীন ক্রোধে ফেটে পড়ি। বিশ্বের সব সেরা সেরা হাসপাতালের সেরা ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি আমি। মাউন্ট এলিজাবেথ অলরেডি বুকিং হয়ে গেছে। কাল ভোরে ওর ফ্লাইট। সন্ধ্যা মারা গেছে বললেই হবে? আমি ও নওশাদ, কে আসলে কাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি, বুঝতে পারি না।
আরও পড়ুন: চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৩ জন (ভিডিও)