তৃতীয় ঘরটাও ভেঙে যাওয়অর পর যখন চতুর্থবারের মতো ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে রওশন-আরা, তখনই মিরন উপলব্ধি করে, তার মায়ের কাছে ‘সন্তান’ অপেক্ষা ‘স্বামী’ শব্দটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনভর বিধাতাও তাকে নিয়ে করেছে সূক্ষ্ম উপহাস। প্রবল মেধাশক্তি দিয়েও প্রয়োগের সুযোগ দেননি। ফলে, চা-স্টলের সামান্য বেতনের কর্মচারী থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে রিকশাচালক, তারপর ইজিবাইকের ড্রাইভারের ফ্রেমে আটকে থাকে তার জীবন।
আমি যে শহরের সরকারি চাকুরে, মিরন সে শহরের ইজি-চালক। পাঠশালায় আমার চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া সেই ছাত্রটি জীবনশালায় এসে আমার চেয়ে যে কয়েক গুণ কম নম্বর পেয়েছে সেটা আর নতুন করে বলার দরকার হয় না। এখানেও সে আমার চেয়ে অধিক নম্বর পেতে পারতো। পায়নি। মায়ের বিবাহবিলাসিতা, পরপুরুষের বাতিক এবং দরিদ্র্য; সে পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। মিলন হেরে যায়নি। তাকে হারানো হয়েছে।
পরিবারের উদাসীনতা, অপর্যাপ্ত স্নেহ-শাসন, মায়ের নব্যপতিদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, সর্বোপরি অর্থকষ্ট মিরনকে শিক্ষা-দীক্ষার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই উচ্চমার্গীয় কোনো গ্রন্থশাস্ত্রের স্পর্শ না পেলেও, সহজাত-প্রবৃত্তি থেকে সে জেনেছে, ‘অবশেষে মানুষ একা/মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা।’
বংশ-পরম্পরায় নয়, মায়ের বিবাহসূত্রে জীবনের বেশির ভাগ সময় তাকে কাটাতে হয়েছে পাহাড়ি অঞ্চল চট্টগ্রামে। জীবনে অনেক উঁচু-উঁচু পাহাড়-পর্বত দেখেছে সে, আজ অব্দি উঁচু-মনের কোনো মানুষ দেখেছে কি না, জানে না। সুতরাং, পাহাড়ের সঙ্গে বসবাস করতে করতে আত্মনির্ভরতার দাওয়াইটুকুন ভালোই রপ্ত করেছে সে, হয়তো করতে বাধ্য হয়েছে। কর্মব্যস্ততা এবং লড়াই-সংগ্রাম ছাড়া আর যে কোনো ধর্ম নেই তার। অল্প বয়সে খেলার মাঠ ছেড়ে মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন ধরেছিল সেই যে কত আগে। আমরা যারা শৈশববন্ধু, তার জন্যে ব্যথিত হতাম, মন খারাপ করতাম। কিন্তু কোনোদিন উপকারে আসতে পারিনি।
কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে একটু আরাম-আয়েশে দিনযাপনের জন্যে সে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে আসতো। গ্রামে তার চাচা-চাচিরা থাকে, ফুফু-খালারাও থাকে। কিন্তু পিতৃহীন, জীবন্মৃত মায়ের এ-সন্তানটি যেন সবার সামনে ওলা-ওঠা অথবা করোনা ভাইরাসের মতোই ভয়ঙ্কর মহামারির রূপ নিয়ে হাজির হতো। তার গ্রামে ফেরাটা আমাদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও আত্মীয়-স্বজনের কাছে তা ছিলো একেবারেই গুরুত্বহীন, বিরক্তিকর। স্বজনদের অবজ্ঞা-অবহেলা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মুখে পড়ে, ষণ্ডা-ছেলে উপাধি নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে নিভৃতে একদিন চট্টগ্রামের পথ ধরতো। আমরাও তাতে আহত হতাম কিন্তু করতে পারতাম না কিছু; শুধু তার প্রত্যার্বতনের আশায় পথ চেয়ে থাকতাম। কদিন না যেতেই সেটাও ভুলে যেতাম।
মালিকের লগে কতা কইছি। কইলো, আইজ আর গাড়ি পামু না, কাইল বিহানে যেমুন যোগাযোগ করি। শুধু ভাড়ার টেকা লইয়া আইছি তো, খাওনের খরচ নাই।
প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর রং বদলায়, বদলে যায় মানুষ, অদল-বদল হয় মন ও স্নেহ-ভালোবাসা কিন্তু একজন মিরনের ভাগ্যের চাকা আটকা পড়ে থাকে জগদ্দল পাথরের সঙ্গে, এ চাকা ঘোরার শক্তি পায় না।
যেই আমি ছেলেবেলায় মিরনের দুঃখ-দুর্দশা দেখে অনেক মায়াকান্না দেখিয়েছি, সেই আমিও একদিন নিজের স্বার্থটুকু খুঁজে নিতে কুণ্ঠিত হইনি। জীবনের এতোটা বছর পেছনে ফেলে, কর্মজীবনে ঢোকার পর ভুলে গেছি উদ্বাস্তু এক বাল্যসঙ্গীর কথা; ছেঁটে ফেলে দিয়েছি অতীতের ডালপালা!
একদা, লাটিম ঘোরানো এবং ডাংগুলি খেলার ওস্তাদ মিরন নামের টগবগে কিশোর চট্ট্রগাম থেকে এলাকায় ফিরলে আমরা উল্লাসে ফেটে পড়তাম। ভাবতাম, নতুন কোনো খেলা নিয়ে অথবা মজার কোনো গল্প আমদানি করে তবেই এলাকায় ঢুকেছে সে। কখনো তার পোশাক-আশাকের দিকে নজর করতাম না। খেয়েছে কিনা সেটাও খেয়াল করতাম না। অবশ্য অতটা বোঝার বয়সও তখন ছিল না আমাদের।
সেই মিরনই একদিন ময়লাযুক্ত কাপড় শরীরের জড়িয়ে, সাধারণ স্যান্ডেল ও লুঙ্গী পরে আমার অফিসে এসেছিলো, তাকে দেখে পান্সার হওয়া চাকার মতো নিজেকে কেমন গুঁটিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম সেদিন। এ তো এক দুর্গন্ধময় আবর্জনা, আনস্মার্ট ক্ষেত। যতো তাড়াতাড়ি এ জঞ্জাল অপসারণ করা যায় ততই ভালো। থাকলে কেবল গন্ধ ছাড়াবে, ব্যক্তিত্ব নিয়ে টান দেবে। তাই কাজের ব্যস্ততা বাড়িয়ে দিলাম। নানান-রকম হতাশাব্যঞ্জক অঙ্গভঙ্গি করে ‘এটা পাইনি, ওটা হারিয়েছি’; এমন তালবাহানা জুড়ে বসলাম। নিজের মধ্যে কৃত্রিম একটা অস্থিরতাও সৃষ্টি করলাম। সবই ছিল মিরন চলে যাওয়ার ব্যাপারে শুভবুদ্ধি উদয় করার ফঁন্দি।
হ্যাঁ, মিরনের সুবুদ্ধি উদয় হলো। সে চলে গেলো। রেখে গেলো একগুচ্ছ শব্দমালা, যা আমার কানের মধ্যে বজ্রাঘাত করেছে, ভাবনার গোলকে লাত্থি মেরেছে। লজ্জা-কাতর মিরন দুই-হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলতে শুনেছি, ‘জিশান, একটু বেকাদায় পইড়া তোর ধারে আইছিলাম। অনেক টোগাইয়া তোর ঠিকানা পাইলাম। গেরাম থেইক্যা আইজগাই ফিরলাম। চিটাগাং ভাল্লাগে না আর। গেরামেও কয়দিন থাইক্যা টেকা-পয়সা সব খোয়াইয়া আইছি। তাই এই টাওনেই ফিরতে অইলো। মালিকের লগে কতা কইছি। কইলো, আইজ আর গাড়ি পামু না, কাইল বিহানে যেমুন যোগাযোগ করি। শুধু ভাড়ার টেকা লইয়া আইছি তো, খাওনের খরচ নাই। চিন্তা করলাম, তুই যকন এই টাওনে আছত তাইলে আর টেনশন কইরা লাভ কী। তোর ধারে তো একদিন থাকতামই পারি। তাই না। তুই তো…’
শুধু তাই নয়, বর্তমানে যে চাকরিটা করছি, সেটার পরীক্ষা দিতে গিয়েও একরাতে মিরনের জীর্ণকুটিরেই আশ্রয় নিয়েছিলাম।
কথা শেষ করতে না দিয়ে নিজের অভাব-অনটনের ফিরিস্তি ও সাংসারিক জটিলতার বয়ান টানা শুরু করলাম। অফিসিয়াল একটিভিটিজ বাড়িয়ে দিয়ে তাকে এড়িয়ে চললাম এবং চলে যেতে উৎসাহিত করলাম। অফিসে সবচেয়ে বড় ফাঁকিবাজ থেকে হঠাৎ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠলাম। দশ কথার জবাবে যখন একটা উত্তরও না মেলে, তখন তারই বা করার কী থাকে! আমাদের সামনে দাঁড়ানোর জন্যে কী যোগ্যতা লাগে এই গ্রাম্য খেঁকশিয়ালের মাথায় কি তা আছে? আবার ‘তুই-তাই’ করেও সম্বোধন করে! রাবিশ!
মিরন অফিসে ঢোকার পর তার চেহারাটা দেখে অনেকটা জোর করেই একটু হেসেছিলাম। এতটা থোড়াইকেয়ার ভাব দেখে হয়তো অবাক হয়েছে সে। হলেই বা কী? আমাদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কি এ মাল চলে? এক ফাঁকে মলিন মুখে তাকে চলে যেতে দেখেছি। মিরনের মলিন মুখটাই অনেক ভালো লেগেছিল তখন। সত্যিই মিরনের মুখে হাসি বড্ড বেমানান। যার কাছে আনন্দ একটি দুঃস্বপ্ন, হাসি তো তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্রের মতোই ভয়ঙ্কর।
মিরন চলে গেলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। চলে যাওয়ার ছোট কমদগুলো মুখস্ত করার চেষ্টা করলাম। তা এখনো বিদ্যুৎ চমকানোর মতো আমার চোখের সামনে জ্বলে ওঠে। কাজে মনোনিবেশ করতে চাইলাম কিন্তু বিষণ্ন একটা ছায়া আমার সর্বাঙ্গ দখল করে নিলো। ভেতরে-বাইরে সৃষ্টি হলো তুমুল অস্থিরতা।
সারাদিন মনটা ভালো যায়নি, ভীষণ খারাপ কেটেছে। কারো নিক্ষেপ করা পেট্রোল বোমার আঘাতে যেন দগ্ধ হয়ে গেছে আমার সর্বাঙ্গ। তারপর কত দিন, কত রাত যে মিরনের চলে যাওয়ার দৃশ্যটা আমাকে পুড়িয়েছে!
ভেবে অবাক হই, তখন কে আমাকে ভুলিয়ে রেখেছে, এক দুর্যোগকালীন মুহূর্তে চট্টগামের মাটিতে অশিক্ষিত এবং নোংরা কাপড়ের এই মিরনই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলাম সেদিন। গরিব ছেলে কিন্তু ছোট লোক না। সারারাত কত বিচিত্র গল্প যে আমাকে শুনিয়েছে সে। দুঃখের দিনে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। কাজকর্ম বন্ধ রেখে শহরময় আমাকে নিয়ে ঘুরেছে। পাহাড় দেখিয়েছে, টিলায় উঠিয়েছে, পার্কে নিয়েছে। টাকাপয়সাও কম খরচ করেনি। শুধু তাই নয়, বর্তমানে যে চাকরিটা করছি, সেটার পরীক্ষা দিতে গিয়েও একরাতে মিরনের জীর্ণকুটিরেই আশ্রয় নিয়েছিলাম।
ধল-কোমল কাশফুলের সামনে দাঁড়িয়ে সে মুহূর্তের মধ্যে সব কষ্ট ঝেটে ফেলে দিতে পারতো।
এখন মনে হচ্ছে, সত্যিসত্যিই মিরন একটা অপদার্থ ছেলে, নইলে আমার মতো অকৃতজ্ঞ, জ্ঞানপাপী ও অমানুষকে কেউ এত খাতির করে আশ্রয় দেয়? এটাই তো মূর্খ ও অথর্ব চরিত্রের মানুষগুলোর প্রধান দোষ। আমাদের মতো ভদ্র, মার্জিত ভালো মানুষেরা এসব কখনো করে নাকি? কথাগুলো ভাবতে গিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। রক্তচাপ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
স্মৃতির অভিঘাত আমাকে পিষ্ট করে দিলো। চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে ওঠে অতীতের স্মৃতি। শরতের দিকে মিরন যখন গ্রামে ফিরতো, তখন তাকে বেশিরভাগ সময় কাশবনে গিয়ে বসে থাকতে দেখতাম। তার চোখের পানিও আমরা অনেকবার মুছে দিয়েছি। কাশফুলের মতো কোমল একটি হৃদয়কে পাষাণ মানুষগুলো বারবার অদৃশ্য পাথর নিক্ষেপ করে ক্ষতবিক্ষত করে দিতো। আমি দেখেছি, কারও কাছ থেকে সামান্যটুকু আদর-আপ্যায়ন পেলে পরম শ্রদ্ধায় নেতিয়ে পড়তো সে। শিশুসূলভ হয়ে উঠতো আচার-আচরণ।
মিরনের কাকি-মা তার আগমন কখনোই পছন্দ করতো না। মুখ-রক্ষার্থে দুই-এক বেলা খোঁজ খবর নিলেও সেটা ছিল নিতান্তই অনিহায়। গ্রামে ফেরাটা কাকার কাছেও মঙ্গলজনক মনে হয়নি কখনো। আপদ যত তাড়াতাড়ি গ্রামছাড়া করা যায়, ততই হাফ ছেড়ে বাঁচা যায়। সম্পত্তি নিয়ে কবে আবার টানাহেঁচড়া শুরু করে কে জানে।
মিরনকে চট্টগ্রাম পাঠাতে কাকা-কাকি মরিয়া হয়ে উঠতো। মিরন এলাকায় ফিরে আসুক তা কখনোই চায় না তারা। এখানকার কারো সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠুক সেটাও চায় না। সারাক্ষণ তাকে ঝাটানোর ওপর রাখতো, তাড়িয়ে বেড়াতো। প্রায়ই সে কাকার তাড়া খেয়ে কাশবনে গিয়ে লুকিয়ে থাকতো। আমরা দেখেও না দেখার ভান করতাম। তার সুন্দর মুখের দিকে তাকালে কাশফুলের সৌন্দর্যতা অর্থহীন মনে হতো। কাশফুলের কোমল স্পর্শ মিরনকে ক্ষণিকের জন্য আনন্দ দিলেও সেটার স্থায়িত্ব ছিল না। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ফিরতেই হতো পাহাড়ের বুকে, অনিশ্চিত ঠিকানায়। মানুষ তাকে অবহেলা করলেও কাশফুল তাকে অবহেলা করেনি, অবাধে আশ্রয় দিয়েছে বুকে। ধল-কোমল কাশফুলের সামনে দাঁড়িয়ে সে মুহূর্তের মধ্যে সব কষ্ট ঝেটে ফেলে দিতে পারতো।
যাকে একদিন মানুষের মর্যাদা দেইনি। আমি নিশ্চিত, মিরনকে একদিন ওখানেই খুঁজে পাবো আমি…
বোধ করি, আমার আচরণে মনোক্ষুণ্ন হয়ে সে দূরে কোথাও কাশবনের আড়ালে গিয়ে নিভৃতে কাঁদছে। পুরো শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। বহু মানুষকে মিরন ভেবে ভুল করে ছুটে গিয়েছি। কাছে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরেছি। মিরনের মোবাইল ফোন আছে কি না, তাও জানি না। বিবেকের তাড়নায় গ্রামের বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছি। চট্টগ্রামেও গিয়েছি। কেউ তার খোঁজ দিতে পারেনি। বুঝলাম, তার খোঁজ-খবর রাখা পৃথিবীর মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ নয়। ফোন নম্বরটাও জোগাড় করতে পারলাম না তাই।
প্রযুক্তির পরম উৎকর্ষের দিনেও একজন মিরনকে আমি খুঁজে বের করতে পারিনি। ফেসবুকেও তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। মিরন নামের কাউকে দেখলেই ফেসবুকে-বন্ধু রিকোয়েস্ট পাঠাই। তাতে কেবল নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া যায়, মনের ভেতর লাফিয়ে ওঠা আগুনের লালাটা দমিয়ে রাখা যায় না। মিরনকে খুঁজে না পাওয়ার কষ্ট আমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখে। আজও তাকে খুঁজে বেড়াই দিনরাত।
চৈত্রের এই বিপন্ন রাত্রিতে দু’চোখের পাতা একত্র করতে পাচ্ছি না। আমি মনে হয় হেরে গেছি। মিরনেরই জয় হয়েছে। আমি আজও শিক্ষিত হতে পারিনি। মিরনই পেয়েছে প্রকৃত শিক্ষার পরশ। শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই আমি মিরনের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে গেলাম, এ দুঃখ কিভাবে ঘোচাবো?
রাত বাড়তে থাকে। ঘুম নামে না চোখে। ইট-পাথরের শহরে কোথাও কোনো কাশবন নেই, যেখানে মিরনকে গিয়ে খুঁজবো। নিরুপায় হয়ে আকাশের দিকে তাকাই। সেখানে শাদা মেঘের অবয়বে দোল খায় গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল। এছাড়া আর মিরনকে খুঁজে বের করার উপযুক্ত জায়গা কোথায়?
চৈত্রের পুরো আকাশটাই যেন বিশাল এক কাশবন। তার বুকে থোকা থোকা কাশফুল। এ যে চৈতি রাতের কাশফুল! এমন ঋতুতেও কাশফুল দেখে আমার বিশ্বাস গাঢ় হয়, আকাশের ওই কাশবনেই লুকিয়ে আছে আমার চিরচেনা বন্ধু মিরন। যাকে একদিন মানুষের মর্যাদা দেইনি। আমি নিশ্চিত, মিরনকে একদিন ওখানেই খুঁজে পাবো আমি…