এক.
মরা নদীর ঘাটে বসে মরে আসা বিকেলের ম্লান আলো দেখে মঈনুল। ঘোলাটে নদীর জলে সূর্যের প্রতিবিম্ব থিরথির কাঁপে। নদীর এ ঘাটলাটা পারিবারিক সম্পত্তি তাদের। ভেতর বাড়ি থেকে একটু দূরে, বাড়ির পেছন দিক দিয়ে খানিকটা গেলে তরতর নেমে গেছে বাঁধানো সিঁড়ি, পদ্মার বুক বরাবর। বর্ষায় নদীর জল ঘাট পেরিয়ে পৌঁছে যায় বাড়ির উঠোন পর্যন্ত। বাকি সময়ে জল থাকে মাঝ সিঁড়ি নাগাদ। ঘাটে ঝি-বউদের স্নান, আড্ডা, বুড়োদের খোশগল্প—সবই চলে। বিকেলটা থাকে মঈনুলের দখলে। ছুটিছাটায় গ্রামে ফিরলে বিকেলটা ঘাটের সিঁড়িতে বসেই সে কাটায়, অধিকাংশ দিনই। হাতে থাকে মেডিক্যালের মোটা বই। শল্যচিকিৎসায় তার তীব্র ঝোঁক, নেশার মতো প্রায়।
মঈনুলের হাতে শল্যচিকিৎসার ওপর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিদেশি জার্নাল। বিকেলের লাজুক রোদে শরীর মেলে সেটি ছড়িয়ে থাকে বাঁধানো সিঁড়ির একপাশের রঙচটা বেদীতে। মঈনুল কড়া পাওয়ারের চশমার ফাঁকে, খানিকটা সামনের দিকে ঝুঁকে, প্রায় উবু হয়ে বসে মগ্ন হয়ে পড়তে থাকে জার্নালটি। সদ্য এমবিবিএস শেষে ইন্টার্ন শুরু করেছে সে। এই অজপাড়াগাঁয়ের কোনো ছেলে এর আগে মেডিক্যালে পড়ার স্বপ্নও দেখেনি। মঈনুল যে পড়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে, তার পেছনে আছে হারান মাস্টারের নিরলস উৎসাহ-শ্রম। মঈনুলের পড়াশোনায় আগ্রহ আর চেষ্টা দেখে তিনি মঈনুলের পয়সাঅলা, মূর্খ বাপকে বলেছিলেন, আপনার ছেলের মাথা খুব পরিষ্কার। একটু চেষ্টা করলে ও অনেক দূর যাবে। ওকে পড়ান, ও ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে।
শুনে মঈনুলের মূর্খ বাপ ফ্যাকফ্যাক হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন গরিব হারান মাস্টারকে। বলেছিলেন, এইসপ কী কন, ও মাস্টের? দুই চাইর দশ গিরামে কত বালো বালো লোকের বাস, তারে কারুর ছাওয়াল আইজপন্তক ডাক্তার ওবের পারে নাইকো, আর আমি মূইরখো মানুষ, ক’র পিটি খ লেইকপের পারিনেকো, আমার ছাওয়াল অবি ডাক্তার, তেয় না? ওসপ গালগপ্প ছাড়েন তো। আমি ছাওয়ালেক বেশি লেহাপড়া হরাবো না। টাহাপয়সার হিসেপটা যাতে ঠিকমতো রাইকপের পারে, বিষয়সম্পত্তি যাতে আতছাড়া না অয়, খালি সিডা শিহেন। তার বেশি দরকার নাইকো আমার।
কিন্তু হারান মাস্টার দমবার পাত্র নন। দুই দিন পরপরই তিনি মঈনুলের গেরস্থ বাপের কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করেন, মঈনুলের নাকি বেজায় মাথা ভালো, পড়াশোনায় ভারী মন। শেষে মঈনুলের বাপ লোকটা বিরক্ত হয়ে ওঠেন ভীষণ। বলেন, ও আপনে যা পারেন করেনগা মাস্টের। আমি ওসপ কিচু বুজিনেকো। আপনে পারলি বানানগা উয়োক ডাক্তার। তয় না পারলি কলাম টাহাপয়সা যা খরচ অবি সপ ফেরত দিয়া লাগবি আমাক। বুজে দেহেন, সুময় আচে এহনও।
সিঁড়ির বেদীতে বসে মঈনুল হারান মাস্টারের পায়ের আওয়াজ পায়। পাশে এসে বসে থাকেন চুপচাপ। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। স্পষ্ট শোনে মঈনুল। কখনো কখনো কথাও বলেন দুই-চারটে। দুঃখিত, অনুতপ্ত কণ্ঠ তার। নিচু, অপরাধী মুখ। মঈনুলের খুব ইচ্ছে হয় বলে, স্যার, দুঃখ করবেন না, এর নাম আসলে নিয়তি। কিন্তু বাস্তবে কিছুই বলে না মঈনুল। বিকেলের মরে আসা আলোয় বরং উবু হয়ে বসে, মেডিক্যালের জার্নালে ঝুঁকে শল্যচিকিৎসার ওপর সদ্য প্রকাশিত একটা টপিক পড়ে সে।
দুই.
এ তল্লাটে একমাত্র দোতলা পাকা দালানটা তাদের। মঈনুল ডাক্তারের বাড়ি নামে একনামে চেনে সবাই। আগে চিনতো মজিবর বেপারির বাড়ি নামে। এখন মঈনুলের নামে বাড়ি চেনে সবাই, চেনে তার করুণ পরিণতির জন্যেও। সব নিয়তি, হারান মাস্টারকে মনে মনে এমন সান্ত্বনা দেওয়ার ইচ্ছে যদিও বা হয় মঈনুলের, তবু অপরাধবোধে নিজেই সিঁটিয়ে থাকে সে, প্রবল অনুতাপে আর শোচনায়, শোকে আর হতাশায় রোদহীন, আলো-বাতাসহীন তৃণের মতো ফ্যাকাসে, রক্তশূন্য হয়ে ওঠে নিজেই। আর তখন, তার কাঁধে হাত রাখেন সার্জারির প্রফেসর ডাক্তার অমলেশ বড়ুয়া। দুঃখিত, বিষণ্ন গলায় বলেন, ঈশ্বরকে ডাকো মঈনুল। তিনি তোমার বাবার আত্মাকে নির্বাণ দেবেন। তিনি যা করেন, সকলের মঙ্গলের জন্য করেন, মনে রেখো। কাঁধে হাত রাখেন সার্জারি বিভাগ প্রধান ডা. রিচার্ডসনও। ভরাট, ব্যথিত কণ্ঠে বলেন, কিপ ইউর পেশেন্স, মাই বয়! ডোন্ট বি সো আপসেট!
তখন গ্লাভস পরা, রক্তমাখা দুই হাতে মুখ ঢেকে, অপারেশন থিয়েটারে হাঁটুমুড়ে বসে হাউমাউ কাঁদে মঈনুল, প্রাণপণে চেষ্টা করে ডাক্তার বড়ুয়ার ‘ঈশ্বর যা করেন, সকলের মঙ্গলের জন্য করেন’ বাণীটি আত্মস্থ করার। চেষ্টা করে ডা. রিচার্ডসনের ভাষায় ‘পেশেন্স’ রাখারও। অদূরে, অপারেশন টেবিলে মজিবর বেপারির প্রাণহীন শরীর তখনো চোখ মেলে, প্রবল অবিশ্বাসে পৃথিবীতে নাই হয়ে যাওয়ায় বিহ্বল, বিস্মিত তাকিয়ে থাকে।
তিন
দোতলা বাড়িটা সুনসান, নীরব। মঈনুল সাবধানে হাঁটে, পা ফেলে সন্তর্পণে। তার বাপ মজিবর বেপারি প্রতিদিন নিয়ম করে দোতলার বারান্দায় আরামকেদারা পেতে দিবানিদ্রা দেন, এ সময় পুরো বাড়িটা যতটা সম্ভব নীরব রাখার নিয়ম।
মঈনুল পা টিপে হাঁটে। বাপজানের ঘুমে ব্যাঘাত সে কিছুতেই ঘটাতে চায় না। তাছাড়া বাপজানের শরীরটাও খারাপ যাচ্ছে ইদানীং। পেটে শূলবেদনা, যখন ব্যথা ওঠে, চিৎকারে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেন বাপজান, শিশুর মতো কান্না জুড়ে দেন, তার কষ্ট দেখে মঈনুলের চোখেও জলে এসে যায়। বাপজানের ঘুম না ভাঙিয়ে সে সাবধানে নিজের রুমে যায়। শল্যচিকিৎসার মোটা মোটা বইগুলো পাতার পর পাতা উল্টায়, সার্জারির ওপর ডিগ্রি নেবে সে, বাপজানের অপারেশন নিজের হাতে করবে।
ডাক্তার বড়ুয়া রোগলক্ষণ শুনে বলেছেন অপারেশন লাগবে। মেডিক্যালের এই ধাপটা পার হলেই স্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরবে সে, গ্রামের গরিব, অসহায় মানুষগুলোর চিকিৎসার ভার নেবে। টাকাপয়সা অনেক আছে তাদের পরিবারে, সে চায় গ্রামের মানুষগুলো সুচিকিৎসা পাক, বাপজানকে দিয়েই চিকিৎসা পেশায় হাতেখড়ি হবে তার, তেমন ইচ্ছে নিয়েই সে আরও বেশি মনোযোগী হয় পাঠে।
বাড়ির ঘাট থেকে পদ্মায় নৌকা ভাসায় কানু মাঝি। বৈঠা বায় ছপাৎছপ। নৌকার ভেতরে, ছইয়ের মধ্যে পা মেলে হেলান দিয়ে বসে একমনে পদ্মার ঢেউ গোনে মঈনুল। নৌকা স্টিমারঘাটে ভিড়লে সোজা স্টিমারে উঠে পড়ে মঈনুল, নদীপথে ভেসে চলে কলকাতার উদ্দেশে। রাস্তাঘাট কাঁচা, বর্ষায় কাদায় মাখামাখি, সড়কপথে যাওয়া-আসা বড়ই দুরূহ। নৌকা আর স্টিমারই ভরসা।
চার
হারান মাস্টার প্রতিদিন সন্ধ্যায় আসেন। স্কুলের সব পড়া পইপই করে বুঝিয়ে দেন। বারান্দায় রাখা চেয়ারটেবিলে বসে মঈনুল সুবোধ বালকটি হয়ে পড়তে থাকে। মা কাঁসার থালায় নাস্তা পাঠিয়ে দেন, ভেতর বাড়ি থেকে মাথায় আধহাত ঘোমটা টেনে জাহান বুবু সেই নাস্তা দিয়ে যান টেবিলে, সাথে ঝকঝকে কাঁসার বড় গেলাস ভরা পানি, হারান মাস্টার বলেন ‘জল’। নাস্তা শেষে একচুমুকে জল শেষ করেন হারান মাস্টার। তারপর বড় শ্বাস নিয়ে বলেন, খুব মন দিয়ে পড়তে হবে বাবা, খুব যত্ন নিয়ে। মনে রাখবি, তোকে ডাক্তার হতে হবে। গ্রামে ডাক্তার নেই, মানুষের বড় কষ্ট, বুঝলি?
মঈনুল ঘাড় কাৎ করে হ্যাঁ দেয়। বুঝেছে। পরক্ষণেই ঘাটের বেদীতে বসা বিষণ্ন, দুঃখিত হারান মাস্টারের দীর্ঘশ্বাসে সচকিত হয়, দুঃখ করিস না বাবা, সব নিয়তি, বলে সান্ত্বনা দিতে শোনে সে হারান মাস্টারকে। কিংবা সে নিজেই সান্ত্বনা দেয় হারান মাস্টারকে, বহুবছর পর্যন্ত চলমান এই দিনাতিক্রম, বিভ্রান্তির ঘোরে ঘুরপাক খায় মঈনুল। সারাবাড়ি ঘোরে। বাপজান, মা, জাহান বুবু, আরও আরও বাড়িভর্তি লোকজন সবাইকেই দেখে সে, কাউকেই দেখে না আবার।
পাঁচ
মা ব্যস্ত হয়ে পোঁটলাপুঁটলি বাঁধতে থাকেন, ছোটাছুটি করেন বাড়িময়। একমাত্র ছেলে মঈনুল বিরাট পাস দিয়েছে, ডাক্তারি পড়তে এবার সে চলেছে দূরের শহর কলকাতায়, চাইলেই সহজে বাড়ি আসা হবে না তার। তাছাড়া আসা-যাওয়ার ঝক্কিও বড় কম নয়। জন্মাবধি ছেলেকে প্রায় চোখরে আড়াল করেননি তিনি, এখন এই দীর্ঘদিনের সন্তান-অদর্শন চিন্তায় বারবার চোখ উপচে জল পড়ে তার। আঁচলে চোখ মুছে তিনি ছেলের জন্য নানান পদের খাবার তৈরি করেন, বাক্সপেটরা গুছিয়ে দেন সযত্নে। মজিবর বেপারিও চোখ মোছেন আড়ালে, বউ-ছেলের অগোচরে। মঈনুলেরও মন কেমন করে বাপ-মাকে, এতদিনের চেনাজানা পৃথিবীটাকে ছেড়ে যেতে। নতুন পরিবেশে পা দিতে যাওয়ার উত্তেজনায় কেমন একটু বুক ঢিবঢিবও করে তার। হারান মাস্টার যেন সর্বজ্ঞ ঈশ্বর তখন। মাথায় হাত রেখে বলেন, নার্ভাস হোসনে বাছা। সবে তো শুরু, আরও অনেক পথ যেতে হবে তোকে। সাহস রাখ, ওখানে গিয়ে মানিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে খুব মন দিয়ে পড়াশোনাটা করবি, আমার পরিচিত লোক আছে, ওরা তোকে সহযোগিতা করবে। আর আমি তো যাচ্ছিই সাথে। তোকে সব চিনিয়ে-পড়িয়ে দিয়ে আসবো।
স্টিমারে উঠে দূরে তাকিয়ে থাকে মঈনুল। দিন গড়িয়ে রাত নামে, স্টিমারের একঘেয়ে আওয়াজ ছাপিয়ে সে জলের বয়ে চলার শব্দ শোনে, জলরাশি দেখে, দূরের কূল দেখে, আকাশ দেখে। বুকের ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য লাগে। মায়ের মুখটা মনে পড়ে কেমন একটা কষ্ট ঢেউ তুলে ছড়িয়ে পড়ে বুকে। সাবধানে চোখ মুছে নেয় মঈনুল। বিদায়মুহূর্তে জাহান বুবুও কেমন করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে, ভেবে আরও করুণার্দ্র হয়ে ওঠে মন।
ছয়.
ওই তো, জাহানবুবু হারিকেন জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন মঈনুলের ঘরে। ঘাটের বেদী থেকে মঈনুলের দোতলার বারান্দা লাগোয়া দক্ষিনের রুমটা স্পষ্ট চোখে পড়ে। জানালা গ’লে হারিকেনের মৃদু আলোর রেশ পড়েছে বাইরে, জাহান বুবুর ছায়া সরে গেলো দূরে।
বেদী ছেড়ে উঠেপড়ে মঈনুল। মাথা নিচু করে বসে থাকা হারান মাস্টারকে খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত, চিন্তিত দেখায়। যেন মঈনুলের সঙ্গে যাবেন কী যাবেন না, সে নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে তার মনে। তার দীর্ঘশ্বাসও স্পষ্ট শোনে মঈনুল। সে পা বাড়ায় ধীরে। পেছনে হারান মাস্টারের পদশব্দ অনুসরণ করে তাকে। দোতলায়, নিজের রুমটাতে ঢুকে, টেবিলে মুখ গুঁজে মেডিক্যালের মোটা মোটা বইয়ের পাতা উল্টায় মঈনুল। অদূরে, দরজার পাশের চেয়ারটাতে বসে হারান মাস্টার তাকে পাহারা দেয়। পড়ায় যেন কোনো ফাঁকি না থাকে তার। ডাক্তারিবিদ্যায় ফাঁকি মানে মানুষের জীবন সংশয়, তার বাপ মজিবর বেপারির অপারেশন করতে হবে তাকে, ফাঁকি চলবে না কিছুতেই। নইলে পিতৃহত্যার পাপ বর্তাবে তাতে, সে বোঝা ভীষণ ভারী, বিষম ভয়ঙ্কর।
সাত
মেডিক্যাল কলেজের লাইব্রেরির এককোণে, নিভৃত, নীরব পরিবেশে বসে একমনে শল্যচিকিৎসার ইতিবৃত্ত মুখস্ত করে মঈনুল। পাশের চেয়ারে রেবতি তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে কী একটা খোঁজে, সেদিকে নজর দেওয়ার ফুরসত পায় না সে। রেবতির দিকে নজর দিলে তার আরাধ্য ডিগ্রি দূরে সরে যাবে, দূরে সরে যাবে তার গাঁয়ের মানুষের সুচিকিৎসার সুযোগ। মঈনুল তাই গভীর মনোযোগ দেয় পাঠে। ইন্টার্নিতেও দারুণ সুনাম কুড়িয়েছে সে। সামনে আর সামান্য পথ। তারপরই বাপজানের অপারেশনটা সে নিজ হাতে করবে, অতঃপর ফিরে যাবে গ্রামে, নিজেকে উৎসর্গ করবে মানবসেবায়।
আট
মজিবর বেপারির লাশের পাশে দুহাতে মুখ ঢেকে হাউমাউ কাঁদে মইনুল। আজীবন পিতৃহত্যার দায় বইতে হবে তাকে, পিতৃহন্তারক হিসেবে সমাজে পরিচিত হবে সে, ভেবে সন্তাপে, শোকে দিশেহারা হয়ে ওঠে সে। রেবতি সান্ত্বনা দেয়, আগলে রাখে স্নেহে।
হারিকেনের মৃদু আলোয় কড়া পাওয়ারের চশমায়ও বইয়ের লেখাগুলো কেমন ক্ষুদ্র, অচেনা দেখায়। মঈনুল উঠে দাঁড়ায়। কুঁজো, বিগতযৌবন, চিরকুমার মঈনুল উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। দূরে, ঝাপসা পদ্মা। তার বুকে সম্ভবত জোছনা নেমেছে আজ। চিকচিক করছে যেন। মঈনুল বুঁদ হয়ে দেখে। গঙ্গার পাড়ে রেবতি আর সে, পাশাপাশি। জোছনা ভেঙে পড়েছে গঙ্গায়। ভেসে যাচ্ছে চরাচর। রেবতি ফিসফিস করে কিছু একটা বলছে। কী বলছে, কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে মঈনুল।
ঠিক তখন পেছনে, দরজার ওপাশ থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে, দাদু, মা আপনার খাবার পাঠিয়েছে! ভেতরে আসবো?
চমকে পেছন ফিরে তাকায় মঈনুল। জাহান বুবুর নাতি রওশন, বিশ বছরের টগবগে যুবক। দুচোখে কেমন ভয় লেগে আছে তার। পাগলকে সবাই ভয় পায়। রেবতির চোখে চোখ রেখে বিহ্বল, বিবশ তাকিয়ে থাকে মঈনুল।