প্রাককথন
আল্লাহ কলমকে আদেশ করলেন, ‘ওকতোব ইয়া কলম’। অর্থাৎ হে কলম তুমি সর্বপ্রথম আরশের চূড়ায় কালেমা লেখো। আল্লাহর হুকুম পেয়ে কলম চারশো বছর ধরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ লিখলো এবং এ পর্যন্ত লিখে কলম নতজানু হয়ে আল্লাহকে বললো, হে পরওয়ারদেগার! তুমি এক ও অদ্বিতীয়, নিরাকার কিন্তু তোমার নামের পাশে এই পবিত্র নাম কার? আল্লাহ জবাবে বললেন, এটা আমার প্রিয় পবিত্রাত্মা হাবিবে মোহাম্মদের নাম। তুমি লেখো, ‘মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’।
কলম যখন এই আদেশ শ্রবণ করলো, তখন ভয়ে তার মুখমণ্ডল ফেটে দুভাগ হয়ে গেলো। সেই অবস্থায় কলম অতি যত্নের সঙ্গে লিখলো, ‘মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। আর সেই থেকে কলমের মুখ দুভাগে ভাগ হয়ে গেলো এবং কিয়ামত পর্যন্ত কলম ওই অবস্থাতেই থাকবে।
মুন্সী জয়েনুদ্দিন যখন তেলচিটচিটে পাতলা কাগজে তাবিজ লিখত শুরু করবে তখন তার জন্য দরকার হয়ে পড়লো দ্বিমুখী কলমের অর্থাৎ ঝর্ণা কলমের। বলপেন আল্লাহর আদেশ মোতাবেক তৈরি নয়; কাজেই উহা হারাম। জয়নুদ্দিনের ঝর্ণা কলমের দ্বিমুখী নিবটি গতরাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অকেজো হয়েছে।
জনমজুর আক্কাস আলি ঝর্ণা কলমের খোঁজে তালুকদার বাড়ি বরাবর হাঁটা ধরলো। তার ছেলে বাসেদকে পরিতে আছর করেছে। ছেলের জন্য তাবিজ দরকার। অথচ মুন্সী জয়েনুদ্দিনের কলমে বিপত্তি। তালুকদার বাড়িতে কলম পাওয়া গেলো। তবে তা ঝর্ণা কলম ছিল না। ছিল তিন টাকা দামের একটা বলপেন। কাজেই পেরেসানির অবসান হল না।
বাসেদ আলির গল্প
নিশি পাওয়া বাসেদ আলি অন্ধ পেঁচার ডাক শোনে। ভেজা শুকনো কাঁচা পাতায় ঘেরা রাত। জলের পথে পা ভেজায় বাসেদ আর দেখে তার সঙ্গে ফকফকা চাঁদ লুকোচুরি খেলছে। চাঁদ তার এলানো আঁচল ছড়িয়ে জ্যোস্না-সাদা ঘোড়া আর রাজকন্যার স্বপ্ন দেখাতে থাকে পরিতে পাওয়া বাসেদকে। নদীর ধার ধরে যেন পরিতে পাওয়া রাজকুমার হেঁটে যায় দুলকি চালে। রাজকুমার ঘোড়া ছোটায়। আর খুব ভোরে নদীগর্ভ থেকে সূর্য ওঠে। রাজকুমার মুগ্ধ চোখে দেখে। তারপর ছুটে চলার প্রহর সমাগত। বাসেদ ছুটতে থাকে। হেসে ওঠে সকালবেলার ঝাঁকঝাঁক পাখি। খুশিতে লুটোপুটি খায় অসংখ্য শামুক-ঝিনুক আর আত্মহারা হয়ে দৌড় দেয় ভোঁদর খ্যাঁকশেয়াল। তা দেখে গম্ভীরভাবে হেসে ওঠে রাতের সেই অন্ধ ছাইরঙা লক্ষ্মীপেঁচা। সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে মাটি, ফেরেশতাকে জ্যোতি আর জিন ও পরিকে অগ্নিশিখা থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর গাঁয়ের যত মুরুব্বি পরহেজগার ব্যক্তি আছেন সকলেই বলেছেন যে আক্কাস আলির বেটা বাসেদ আলিকে সেই আগুনরূপী পরিতেই নাকি আছর করেছে! তাইতো বাসেদের ঘর নাই, স্কুল নাই, নাওয়া নাই, খাওয়া নাই, বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই, সে শুধু ছুটতেই জানে।
ঘুম থেকে জেগে উঠে আক্কাস আলি আশ্চর্য হয়। তেলের কুপি বাতিটা এখনো জ্বলছে। আগুনের এক চিলতে শিখা থেমে থেমে দপদপ করে উঠছে। শুনেছে এই আগুনের শিখা থেকেই নাকি পরি জাতির জন্ম। বাসেদ বিছানায় নাই। ঘরের পেছনে পেচ্ছাবের ছরছর শব্দে শুনশান ভাঙি যায়। হাজামাজা মরা পাতার উপরদি ইন্দুর চিকা দৌড়ায় বলি শুনশান পরিবেশের মধ্যে একটা বেদিশার ভাব জাগে। কেমন বা ছমছম করি ওঠে আক্কাস আলির গাওখান। আক্কাস আলি দরজায় এসে খাড়ায়।
মান্দারের বনত ঘুরপাক খায় আলো। ঝকঝকা হয়া ওঠে চিকন বাঁশের শরীর। আলোঘেরা এমন বাঁশঝাড় রাইতের আন্ধাইরে কেমন স্বপ্নপুরীর মতন দেখায়। কেমন বা শুন্যি হয়া যায় শরীরের ভিতরখান; হালকা হয়া আসে। ঘিরি ধরা আন্ধার জোর প্যাঁচ কসি যেন বা পাকদি তুলি নিবার চায় আকাশত। ঘোর কেটে গেলে আলোর নিশান যেন বা শূন্যে মিলায়। মায়া ধরা রাত। সবই মায়া। এই মুনিষ্যিজীবন মায়া। বড়ো অসহায় আর বড়ো নিথর হয়া যায় শরীর। তারপর ভোরের আলো ফুটে উঠলে চরকরমপুরের মানুষ কলমিপুকুরের কাদায় খুঁজে পায় আক্কাস আলির বেটা বাসেদ আলির উলঙ্গ দেহ। জিনে ধরেছে বলে বদনাম রটি যায়।
আসগর মুন্সি মুখিয়ে ওঠে, কী হইছে তোমার বাহে? আল্লাহর বান্দা, তোমার তানে তোমার পুব্বপুরুষ থুই গিছে কুণ্ঠে বা নুকেয়া আছে মেলা মেলা চান্দির ট্যাকা বাসনকোসন, সোনার গয়নাপাতিও থাকিবা পারে কিছু।
বাসেদ আলি ফ্যালফ্যাল করি তাকায়। তারপর ঘামদি ভারি হয়া যায় শরীর। হিড়হিড় করি থমকি যাবা চায়। পড়ি যাবা চায় গাবগাছের মগডাল ভাঙ্গি।
আনছারুদ্দিন হাক দিয়ে ওঠে, ছোওয়াখান তোর মানুষ না হয়; অয় শয়তান, শয়তান জিনে ধইছে অক; কাটি ফ্যালা, নইলে নিস্ফলা হোবে, সব্বনাশ হোবে, পুড়ি ছাই হয়া যাবে তোর ফসল-আবাদ। নদী শুকায়া যাবে, বেইট ছাওয়ালের বুক শুকাবে, মাটি বন্ধ্যা হোবে, ফসল দিবে নাই। কাটি ফ্যালা অক।
অতপর মহান আল্লাহপাক রাব্বুলামিন চারজন ফেরেশতা বানালেন। প্রথমজন মনুষ্যাকৃতি, দ্বিতীয়জন ব্যাঘ্রাকৃতি, তৃতীয়জন শকুনাকৃতি এবং চতুর্থজন গাভীর আকৃতি বিশিষ্ট। আর তাদের স্কন্ধ অর্থাৎ গর্দান আল্লার আরশের নিম্নদেশ পর্যন্ত স্পর্শ করে আছে এবং তারা প্রত্যেক পদক্ষেপে সাত বৎসরের পথ অতিক্রম করে থাকে। আমাদের বাসেদ আলি অতপর স্বপ্নে এই চারজন ফেরেশতার সাক্ষাৎ লাভ করলো এবং সেইসঙ্গে প্রচণ্ড রকম শারীরিক ও মানসিক বিকারে উপনীত হলো। এবং জ্বরতপ্ত দেহে সে পাঠ করতে থাকলো, সপ্ত ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চে বাস করেন ফেরেশতাবৃন্দ, ষষ্ট জগতে শয়তানবৃন্দ, পঞ্চম জগতে দেও দৈত্য, চতুর্থ জগতে অজগরবৃন্দ, তৃতীয় জগতে জীবজন্তু, দ্বিতীয় জগতে পরিবৃন্দ এবং প্রথম জগতে মানুষ।
অথচ এই সপ্ত জগৎ অপেক্ষা অর্থাৎ আসমান ও দুনিয়া অপেক্ষা মৃত্যু অধিক শক্তিশালী। অতপর আল্লাহ আদেশ করলেন, ওহে মৃত্যু তুমি তোমার পক্ষ সমুদয় বিস্তার করে উড্ডীয়মান হও এবং অগ্নি সদৃশ চক্ষুসমূহ উন্মোচন করো।
অনন্তর আল্লাহর হুকুমে মৃত্যু তার অনল সদৃশ চক্ষু উন্মীলন করে পক্ষ বিস্তার পূর্বক উড্ডীয়মান হলে ফেরেশতাকুল ভয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেন এবং অজ্ঞান অবস্থায় এক হাজার বছর পড়ে রইলেন। তৎপর চৈতন্য লাভ করে বললেন, এলাহি! মৃত্যু ছাড়া বলবান বিক্রমশালী আপনি আর কাউকে সৃষ্টি করেছেন কি?
রাজকুমারের আদলে বাসেদ যাত্রা করে পাতালপুরীতে। অন্ধকার সয়ে আসে চোখে। ঘোড়ার খুড়ের আঘাতে পাতালপুরীর জল দুভাগ হয়ে সোনালি সিঁড়ি বের হয়ে আসে। যোজন যোজন লম্বা ঝলমলে সিঁড়ি নেমে গেছে পাতালে। অপরিচিত সুর কানে বাজে। আর চোখের সামনে এক এক করে খুলে যায় লৌহদণ্ডে মোড়ানো সব ভারী ভারী দরজা। উজির নাজির মন্ত্রী কোতোয়ালরা ঘুরে বেড়ায় চারপাশে। আর এক সময় সরাবান তহুরার কাছে পৌঁছতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সুরার লহরে। সাঁতার কাটতে কাটতে ক্ষীণ স্বরে শুনতে পায় বাসেদের মা অছিমন বিবি ওর নাম ধরে ডাকছে। অথচ সেই অতি চেনা ডাকও যেন বা অনেকগুলো কণ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর এক সময় গোয়ালে গরুর বিশাল হাম্বা ডাক শুনে বাসেদের ভীষণ হাসি পায়। জলের কুলকুল শব্দে বাসেদ যেন চারিদিকের অতিচেনা নিজের বাড়ির আঙিনার মানুষগুলোর কথা ঠিকমতো শুনতে পায় না অথবা পাতালপুরীর দৃশ্য ছাড়া অন্য কোনো দুনিয়াবি দৃশ্য চোখে পড়ে না। মাথার ভেতরে পাতালপুরীর আজব বেচাইন পরিবেশের দমকে যেন চোখে ঘোর লাগে। ঘোর স্বপ্নের মতো তলাতে তলাতে জলের একেবারে তলে মাটির স্পর্শে পাতালপুরী! নুড়ি আর বালু, বালু আর ছোপ ছোপ শ্যাওলা! শ্যাওলাজলের লতাপাতা আর রাশি রাশি রঙবেরঙের চোখ ধাঁধানো শামুক ঝিনুক প্রবাল।
আক্কাস আলির গল্প
দুই পহরের আন্ধার-কালা শুনশান পাকদি ঝুপঝুপ করি নামে সন্ধ্যা। সেও কবরের ভেতরকার হসকি পড়া মাটির মতন। রাইত কুন পাখ থাকি নামে টের না পাওয়া যায়। যেমন টের না পাওয়া যায়, কবর খুঁড়ি মাটির তলা থাকি যেই পানি ভেইরায় তার ওইপাখে পাতালপুরী আছে কী নাই। কায়া নাই, ছায়াখান আছে। দৃষ্টি নাই, চোখ দুইডা আছে। তাই না দেখা যায় কখন ঝুরঝুর মাটির শব্দ করি নামি যায় রাজকুমার সেই আন্ধাইর পাতালত। কায়া নাই বলি রাজকুমার যে নামি যায়, কায়ও না দেখা পায় অক। রাজকুমার টাট্টুঘোড়ায় চড়ি চলি যায় কোন বা সুদূর পাতালপুরীতে। যেইঠে সাত-সমুদ্দর তেরো-নদী পার হয়াও রাজকন্যাকে খুঁজি না পাওয়া যায়। বারো বছর ছদ্মবেশ পরি মিলি যায় সাত রাজার ধন মানিক রতন আদ্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা।
রাত তখন গভীর। রাজকুমার বাসেদ আলিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘরে ছিকল তুলে দেয় আক্কাস আলি। তারপর রাত তখন ভাটার দিকে। আক্কাস আলি বউয়ের ধারে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে একমাত্র পুত্র বাসেদের কথা। অতঃপর অতীতকথা। জমি, জমির ফসল; পুকুর, পুকুরের মাছ; গাছ, গাছের ফল। অতঃপর আধ-ন্যাংটা বুড়িয়ে যাওয়া বউয়ের গতরখান কাথা দিয়ে ঢেকে পাশ ফিরে শোয়। এবং তারও অনেক পর আক্কাস আলির ঘুম ভাঙ্গে রাজকুমার বাসেদের ঘোড়ার খুরের আওয়াজে। খাঁচা থেকে মুরগি-হাঁস উড়ে পালায়। গোয়ালের গরু ডাক ছাড়ে। আক্কাস আলির ভালো লাগে না এই ঘোর কেটে যাওয়া। অতপর দিনভর খেতে নিড়ানি দিতে দিতে ঘামে ধুয়ে যায় শরীরের যত ভালোলাগা আর রাজ্যির যত দুশ্চিন্তা। আক্কাস আলির তেষ্টা লাগে প্রচণ্ড। দূরের ফাঁকা জমি-মাঠ এতটাই ঝলসে ওঠে রৌদ্রে যে বিরান মাঠ জুড়ে যেন অট্টহাসি শোনা যায়। খোয়াব দেখে আক্কাস, সার সার ধানচারার কচি কচি শরীর সরাই হাঁটি আসে ছোট্ট ছোট্ট ফেরেস্তারা। অপরূপ দর্শন তেনাদের। দুই ডানায় নাগি থাকে ধানবীজের সবুজ অঙ আর সোনালি ধানফুলের মউল। চৌখত অপূর্ব এক দৈব ঝলকানি। ফেরেস্তার ছাওগুলো অস্তে অস্তে আইলের ধারে এসে দাঁড়ায়। তারপর বলতে থাকে, কিবা হবে এই আবাদ রে! নিস্ফলা হোবে, পুড়ি ছাই হয়া যাবে মাইনষের দুনিয়া। এলাও সময় আছে খুঁজি দেখ আল্লাহ মাবুদরে। খালি খুঁজে দেখিবার আলস্য। তুই পাবু, তুই পাবু খোঁজ খোঁজ।
ফেরেস্তার ছাওগুলো শুভ্র দাড়ি নাড়িয়ে মিলিয়ে যাবার আগে চোখ রাঙিয়ে বলতে থাকে, সবই মায়া! তোর ছোওয়াখান মায়া! ছোওয়াখান তোর মানুষ না হয়; অয় শয়তান, শয়তান জিনে ধইছে অক; কাটি ফেলা অক, কাটি ফেলা; নইলে সব্বনাশ হইবে, আল্লাহ নারাজ হইবেক, কাটি ফেল। আর ঠিক তখনই পিছনে মুন্সি জয়েনুদ্দিনের কণ্ঠস্বর শোনা যায়, কী বা ভাবেছিরে আক্কাস? কার বা স্বপন দেখছ?
আক্কাস হড়বড়িয়ে বলতে থাকে, স্বপন, কুণ্ঠে স্বপন? স্বপন কহেছি ক্যান, মুই যে দেখিনু পশটো করি; এইল্যা কী এই যে দিনের আলোত পশটো।
এলা আক্কাস কী দেখছো, হামাক সব ভাঙ্গি ক।
আক্কাস আপন মনে বিড়বিড় করতে থাকে। তারপর মুন্সি জয়েনুদ্দিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে একটা লটকন গাছের তলাত গিয়া বসে পড়ে। একে একে সব খুলে বলে। আল্লাক খুঁজি পাওয়ার কথা। তারপর ফেরেশতারা তার ছোওয়া বাসেদ সম্পর্কে কী মত দিয়েছে তা বলতে গিয়ে যেন বা একটু হোঁচট খায়। আক্কাস আলি চুপ মেরে যায়। জয়েনুদ্দিন উসখুস করে ওঠে, হামাক ক; সব ভাঙ্গি ক আক্কাস।
আক্কাস আস্তে আস্তে বলতে গিয়েও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কাটি ফেলার কথা বলার পর বাসেদকে জিনে ধরার পর থেকে এ যাবৎকাল বাসেদের কাণ্ডকারখানা একে একে বলে গেলো আর চোখ দুটো পিটপিট করতে থাকলো। মুন্সী জয়েনুদ্দিন সব শুনে মন্তব্য করলো, গত দু’বছরের মতো এবারে আর বন্যা হবে না। এবারে হবে খড়া। দাউদাউ আগুন জ্বলবে চারিধার। সবই ওই দুষ্ট জিনের কারসাজি। আর আক্কাসের ওই অপয়া শয়তানে ধরা ছোঁয়া যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিন এই চরকরমপুরের বান্দারা এই দোজখের আজাব ভোগ করতে থাকবে। আক্কাস তুই আল্লার পথেত বাহির হয়া যা, সব মুশকিল আহসান হবেক।
মুন্সী জয়েনুদ্দিন চলে গেলে আক্কাস আলি কী সব আকাশ পাতাল মাথামুণ্ডু ভাবতে থাকে। ভাবতে থাকে আর বিরান মাঠের দিকে অর্থহীন তাকায়। তাকায় আর ভাবে। ধল্লা নদীর তখন উথাল-পাথাল যৌবন। ধল্লা নদীখান দিয়া অছিমন বৌ সাজি আসিছিলো পরথম। নৌকার ছইয়ে বান্ধা আছেলো নালরঙা কাপড়ার ঘের। তিনখানা ইস্কা ভাড়া করেছিনু। ইস্কাত নালরঙা কাপড়ার ঘের। সেই ঘেরের ফাঁক দি টুকরা সবুজ জমি, মাটির আল, কতো নোকের মুখ নতুন বৌ দেখিবার তানে। ইস্কাত আক্কাসের বউ। আর নানি, ছোটো শালাশালি আর আক্কাসের বুড়হা বাপখান আরও কতো মানুষ হাঁটি চলিছে আক্কাসের বাড়ির গোড়ত।
সইরসা ফুলের গন্ধ আর কাঁচা কাটারির সবুজ নিয়া অছিমন বৌ সাজি আসিছিলো। তখন বর্গাচাষির সম্মানও আছিলো। নিয়ামত তালুকদার দাওয়াত করি নতুন বৌকে মুরগি আর সোনামুগের ডাল দি খাওয়াইছিল। আর নতুন ধানের গন্ধের মতন একখানা তাঁতের নকসাশাড়ি কিনে দিছিলো অছিমনকে। তখন একখান ছোটো মতন গোয়াল আছিলো। এখন নাই। নদীত মাছ আছিলো। মাছ আছিলো পুকুরগুলাত আর খালগুলাত। বৈরালি, কৈ, কানাকৈ, ঝাঁকিকৈ, পুটি, সিঙ্গি, পাবদা, চিতল, রাইখর, আইড়, টেংরা, মাগুর, বাইং, বাঁশপাতা, রাণী, সাতি, চ্যাঙ, দাইড়কা, পোয়া, কোইয়া, গোচি, মেনি, কালাবাইশ, কালারুই। এখন এইগুলান মাছ আল্লার দুনিয়াত মনে লয় নাই। কুচিয়া আর পুটি ছাড়া পাওয়া যায় না কিছু। কাঠারি, কালাজিরা, ভাদই কতো কীবা হইতো। এখন ইরি। ইরি আর ইলিভেন, আটাশ, সাতাশ। বাসেদ হইলো যেই বছর বান হইলো সেই বছর। নদীর বুক শুকাই গিছে টের পাওয়া যায় নাই। বুকের দুধ না পাইলে হামার বাসেদ। বান যে আসছে টের পাওয়া যায় নাই। সেই বানের পানিত কিবা কিবা ভাসি আসিছে, মরা গরু, মরা কুকুর, মরা শিয়াল আর বুড়ি মাইনসের মাথার চুল। নদীর বুক শুকাইলে বান তো আসিবেই। কিন্তুক মাগির বুক শুকাইলে, শইল শুকাইলে ছাওয়া আসিবে কুস থাকি? কিবা হয়া গেলো। গেরস্থ ঘরের সবুজ ধান আর কী রকম এক ছটফটানি নদীর বানে কুঠে ভাসি গেইল কায় কহিবা পারে? বান ডাকি আইনলো ওই ছোওয়া, বাসেদ।
পরপর তিন বছরের বানে নদীর বুক শুকাইলো। অছিমনের বুক শুকাইলো। বরগা জমি আরো টুকরা টুকরা হয়া গেলো। আর বরগাচাষি জনমজুর হই গেইল হে। আক্কাস আলি খেতে বসে থাকে। সুনসান দুপুরের মাঠ। আর এমন সময় বাসেদ রাজকুমার যেন বা তার পঙ্খিরাজ ঘোড়াসহ উড়াল দিয়া সামনে এসে দাঁড়ায়। রাজকুমার চেঁচিয়ে ওঠে, চাল নি বাড়িত যাইস, মাও ভাত আন্ধে নাই, জলদি যাইস মাও খেপি আছে। ঘোর দুপুরে যেন আক্কাসকে ভূতে পায়। কাদামাখা শইলে উঠে দাঁড়ায়। তারপর মাঠচরের পানে তাকিয়ে চিৎকার করে। কাদা দিয়ে ঢেলা মারে।
এ, এ আবাগির পুত, এ খানকির ছোওয়া কুঠে গেলু, মোক হুকুম করিছে?চাউল কিনি নিয়া যাবা পারিন না। মোক কহেছি, তোর মাও খেপি গিছে? তোর মাও খেপিলে মোর কিরে, চাউল কিনি নিয়া যাবা কহেছি, ধোন্দা ছাওয়া ঘরত বসি বসি খাছি, ইস্কুল নাই, মোক হুকুম করিছে। শোরের বাচ্চা, শয়তানের বাচ্চা।
রাত যখন গভীর হয়া আসে তখন শইলে এক রকম ঘাম হয় আক্কাসের। তারপর বলহীন নির্লিপ্ত ভারি মাথা অনুভূতি ভোতা। বেড়ার খোলা ফোঁকর দিয়া বাইরের আকাশটা আরও পরিষ্কার আরো জ্বলজ্বলা লাগে। আক্কাস ফিসফিসায়া ডাকে, অছিমন উইঠেক, ডাকিছে, উনি আইছে। উঠেক চুদির বেটি, গোঙ্গছি কেনে?
অছিমন উঠে তার আধনেংটা শইল ঢাকতে থাকলে আক্কাস চেচিয়ে ওঠে, ওই ওই দেখ মাগি উনি আইছে; আমারে দ্বীনের কথা কহিছেন, এলেমের কথা কহিছেন।
অছিমন এই দৈব দর্শনের কিছুই বুঝপার পারে না। তারপর ওরা ঘুমায়। ঘুমের মদ্যি আক্কাস অছিমনকে ঠেসে ধরে বিড়বিড়িয়ে ওঠে, তোর বুকত মাংস নাই কেনে, ওই মাগি তোর দুধ টিপিয়া মুই মজা পাওনা কেনে?
ঘামে ভেজা শইল নিয়া আক্কাস বিড়বিড় করতে থাকে, জমিজমা নিষ্ফলা হইবেক, মাটির রস চুষি নিছে, মাটি আর বাচ্চা দিবেক নাই, নদীর জল চুষেছে কায় বা জানে। দুধত মাংস নাই, নদীত জল নাই, নিষ্ফলা হইবে তামান আবাদ।
ঘটনার শুরু
ওই রাতেই আক্কাস স্বপ্নে দেখে যে সে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আর বিশালকায় এক ফেরেশতা একটি বিশাল পাথর দিয়ে তার মাথা থেতলে দিচ্ছে। অথচ আক্কাসের মরণ হয় না। বরং মাথা আবার আগের মতন অক্ষত হয়ে ওঠে আর আবারো সেই বিশালকায় ফেরেশতা পাথর খণ্ড দিয়ে আক্কাসের মাথায় আঘাত করে আর আক্কাসের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে চারপাশে ছিটিয়ে পড়ে। অতপর আবারও আক্কাসের মাথা ঠিক হয়ে ওঠে আর আবারও আঘাত আবারও চূর্ণ-বিচূর্ণ এবং অতপর অক্ষত এবং আঘাত এভাবে চলতেই থাকে এক অখণ্ড সময় যাবৎ বিরাম নাই বিশ্রাম নাই। পাথর খণ্ডের মতো ভারী দবদবে মাথা নিয়ে আক্কাস আলি ঘুম থেকে বিকট চিৎকারে জেগে উঠলো। আর তখনই ফজরের আজান শোনা গেলো। আক্কাস আজ অনেক দিন পর অতি প্রত্যুষেই গোসল করার পর ওজু বানালো। এরপর মসজিদের উদ্দেশে যাত্রা করলো। নামাজ শেষে ইমাম জয়েনুদ্দিন মুন্সীর কাছে তার স্বপ্নবৃত্তান্ত বয়ান করলো।
জয়েনুদ্দিন মুন্সী সব কিছু শোনার পর আলহাজ মৌলানা মোহাম্মদ রৌশন আলির ইহকাল ও পরকাল নামে একখানি পুস্তক নিয়ে এসে পুস্তকের ২৭০ পৃষ্ঠা মেলে ধরলো। তারপর পাঠ করলো, ঐ ব্যক্তি, আল্লাহ যাকে কোরআনের এলেম দান করেছিলেন কিন্তু সে আলস্যবশত রাতে তেলওয়াত করেনি দিনেও আমল করেনি। তাকে মৃত্যুর পর এই আজাব কেয়ামতের দিন পর্যন্ত দেওয়া হতে থাকবে। আক্কাস আলির কপালে ভাঁজ পড়ে। চোখে ফুঠে ওঠে ভয়। আনমনে দাড়ি হাতাতে থাকে। অতঃপর জয়েনুদ্দিন মুন্সির কথায় সে আরও বেশি মনোযোগ দেয়। জয়েনুদ্দিন তাকে বোঝাতে থাকে যেহেতু আক্কাস আলি মাদ্রাসায় কোরান শিক্ষা করে হাফেজ হয়েছিল এই শেষ বয়েসে তা কাজে লাগানো জরুরি, নিজেকে কোরবানি করেক আক্কাস, সব মুশকিল আহসান হবেক। আক্কাস আলি শোনে আর চোখ পিটপিট করে। তারপর দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।
তারপর লোকটা মরা মানুষের মতো দিনে দিনে নির্জন হতে থাকে আর বাসেদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকায় আর ভাবে। ভাবে আর রাতে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে আগুন আর আগুন। বড় বড় অজগর সাপ। চোখ দিয়ে মুখ দিয়ে আগুন ছুটছে। ধেয়ে আসছে ওর দিকে। বড্ড তেষ্টা পায়। একজন বিকটকায় ফেরেশতা। ফেরেশতার প্রতিটি আঙুলে সত্তুর হাজার বিষাক্ত বিচ্ছু। ফেরেশতা তাকে পানি খেতে দেয়। চুমুক দিতেই দুর্গন্ধ। রক্ত। পুঁজ। রক্ত-পুঁজের তরল গড়িয়ে পড়ে পায়ের ওপর। আক্কাস আলি বেহুশ অবস্থাতেই খুব জোরে একটা চিৎকার দেয়। ঘুম থেকে জেগে ওঠে। এবং আবারও মসজিদে যায়। মনে মনে তওবা করে। পরকালের পথ নিশ্চিত করতে হবে। মনে মনে তওবা করে আর পরকালের স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে আর ধানকাটা হাসুয়াটা ধার দেয়। ধার দেয় আর তওবা করে। পরকালের কথা ভাবে। ভাবে আর ধানকাটা হাসুয়াটা ধার দেয়।
অতপর ইদ-উল-আজহা। ফজরের আজানের আওয়াজে আক্কাস উঠে আসে বিছানা থেকে। বাসেদের ঘরের শেকল নামিয়ে ওকে বিছানা থেকে তুলে এনে গোসল করায়। ওজু করায়। ওজু করা অবস্থায় বাসেদ দেখতে পায় একটা উজ্জ্বল তারা আকাশের কোল হতে খসে পড়ছে আন্ধারে বাড়ির পেছনের মান্দার গাছের ভিড়ে। ঘনঘন ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজে খুঁজে পাওয়া যায় না সেই উজ্জ্বল তারকা। রাত শেষ হয়ে আসায় শেষ বারের মতো শেয়ালেরা ডেকে নেয় দূরে। তারপর হঠাৎই অন্ধ পেঁচা ডেকে ওঠে। হারিয়ে যাওয়া নীল আকাশের তারা, জোনাক পোকা আর আবছা আলোয় দেও দৈত্যরা ভিড় জমায়। রাজকুমার বাসেদ টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে দেও দৈত্যদের কাছে গিয়ে হাঁক ছাড়ে, তোমরা কুণ্ঠে যাবে বাহে? দেও দৈত্যগুলো সব শাকচুন্নিতে বদলাতে থাকে আর বলতে থাকে, হাও মাও খাও মানুষের গন্ধ পাও।
বাবার হাত ধরে বাসেদ মান্দার গাছের দিকে এগুতে থাকে। তারপর কিছুক্ষণ আগে আকাশ থেকে ছিটকে পড়া তারাটা ঠিক যেখানটায় হারিয়ে গেছে সেখানে গিয়ে বাপ-বেটা দাঁড়ায়। রাজকুমার স্পষ্ট চোখে তাকাতে পারে না। গোসলের পরও চোখে ঘোর লেগে থাকে। চোখ যেন তার বাবাকে দেখতে পায় না বরং দেখতে পায় এক ছাগলদাড়িমুখো দৈত্যকে। দৈত্যকে ভয় করে না রাজকুমার। তার আছে পঙ্খীরাজ ঘোড়া। তারপর আধো আধো অন্ধকারে ঘাসের ওপর বাপ-বেটা বেশ কিছুটা সময় চুপচাপ বসে থাকে। আক্কাস আলি কোনো কথা বলে না। নিথর দুইটা মানুষ বসে থাকে যেন প্রাণ নাই শরিলেত। বেঙের চোখের মতন তাকেয়া থাকে ওরা। কার বা অপেক্ষা। কিসের বা অপেক্ষা। জল না গড়ায় সেই চোখ থাকি। দৃষ্টি না ফুটে সেই চোখ থাকি। এক সময় ছেলেকে আরও খানিকটা কাছে টানে আক্কাস। ছেলের চোখের দিকে তাকায় আর বলতে থাকে, এ’বা তুই এই রকম পাগেলা কেনে, দিন রাইত নিজের মনত বিড়বিড় করেছি, কিবা কী কহেছি আর দৌড়ি বেড়াছি সারা পাথারত।
বাসেদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। কথা খুঁজে পায় না, একদৃষ্টে বাপের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার এই বাপ কোনোদিন এই বিহানে তার ঘরে আসে নাই। এমন আদর করে কথা বলে নাই। বসেদ জানতে চায়, তোর কী হইছে বাপ, তুই অ্যাংকরি কথা কহেছি ক্যানে? আক্কাস যেন বা বেচাইন হয়, কী খাবু ক; খিদা নাগিছে?
রাজকুমার যেন বা ভীত হয়। চারপাশে তাকায়। মাকে খোঁজে। আক্কাসের চোখ দুইটা রাইত জাগা টকটকা জবা ফুল। তফনের গিট থেকে তামাক বের করে হাতের তালুতে ডলতে থাকে। ডলার নেশা শেষ হলে জিহ্বার তলায় তর্জনি দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে বসে থাকে। কেমন যেন বা একটু অস্থির অস্থির ঠেকে। আপন মনে বিড়বিড় করে, ছোওয়াখানা হামার বেহেশতো নসিব হবেক।
তারপর ঘাড়ের গামছাখানা হাতে নিয়ে বাসেদের কপালসহ চোখদুখানা বাঁধতে থাকে আর অছিমনের জেগে ওঠার দুশ্চিন্তায় যেন বা হাত দুখানা কেঁপে কেঁপে ওঠে। বাসেদ তখন পঙ্খীরাজে উঠে উড়াল দেওয়ার আনন্দে মশগুল। রাজকুমার যেন বা একটু বেশামাল হয়। চোখে আন্ধার দেখে আর খোয়াব দেখে। খোয়াব দেখে আর আন্ধার দেখে। কিছুক্ষণ আগে ঠিক যে জায়গায় আকাশ থেকে ছুটে আসা তারা হারিয়ে গেলো ঠিক সেই জায়গাটিতেই যেন বাসেদ তারকাটিকে দেখতে পায় আর আহ্লাদে চোখ বোজে। আর মুন্সী জয়েনুদ্দিনের দেওয়া পবিত্র কেতাব থেকে মুখস্থ করা পরিষ্কার বাংলায় আক্কাস আলি পাঠ করতে থাকে, হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সৃষ্টি। তোমার দিকেই আমাদের শেষ গতি। সুতরাং আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার বেঁচে থাকা, মৃত্যুবরণ সকল কিছুই তুমি বিশ্বপালক আল্লার জন্য। তুমি অদ্বিতীয়। যেহেতু আমি আত্মসমর্পণকারী মুসলিম, তাই এই কুরবানির ব্যাপারে আমি আদিষ্ট হয়েছি। অতএব হে খোদা, তুমি মালেক আলির পুত্র আক্কাস আলির পক্ষ থেকে এই কুরবানি কবুল করো। আমি তোমার নামে কুরবানি করতেছি, আল্লাহ আকবর।
অতপর বাঁ হাতে বাসেদকে ঝাপটে ধরে শুইয়ে দিতেই ডান হাতের হাসুয়া রাজকুমারের কণ্ঠ বরাবর অনবরত চলাচল করতে থাকে; চলাচল করতে থাকে কণ্ঠের আরও গভীরে। আর ভেসে আসতে থাকে গরু জবাইয়ের মতো একটা অসম্ভব রকম কষ্টকাতর মায়াবি আর ভারী আওয়াজ। রক্তের ছুটে চলা গতি আক্কাস আলিকে যেন বা আরও খানিকটা অস্থির করে তোলে। অবশেষে আক্কাস উঠে দাঁড়ায়। উঠে দাঁড়ায় যখন মুসুল্লিরা নামাজ শেষে ঘরে ফিরছিল।
আক্কাস আলি সোজা ডোবা বরাবর হেঁটে গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পানিতে নেমে গতর ধুয়ে নেয়। তারপর ভেজা শরীরে হাঁটতে থাকে উত্তর দিক বরাবর। আক্কাস আলি হাঁটতেই থাকে। আরও খানিকটা পথ হাঁটার পর কিছুটা দূরে দেখা গেলো গৃহত্যাগী মানুষের একটা দল। জোব্বা পাঞ্জাবি পরনে। হাতে মাথায় মাজায় বোচকা-বুচকি। মুখে দাড়ি। মাথায় টুপি। কারো বা পাগড়ি। গৃহত্যাগীগণ সার বেঁধে চলেছেন দ্বীনের পথে। আরও অনেকটা পর সূর্যের তাপ যখন আরও খানিকটা তাতিয়ে উঠলো, তখন আক্কাস আলি দলটার সঙ্গে গিয়ে মিশে গেল।