নির্জন আবাস ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া বিপর্যস্ত বানরের মতো চুপচাপ বসে আছে ফজলু। এতক্ষণ চুপচাপ থাকলেও এবার গলায় শেকলপরা বানরের মতো তার উৎকণ্ঠা বেড়েছে। কিছুতেই তার বাকি সময় কাটতে চায় না। ঘরে বারান্দায় বসেই সে মাথা উন্মুক্ত আকাশের দিকে উঁচু করে ধরে। চারপাশে কুয়াশা জমেছে, মনে হচ্ছে দূর সমুদ্রের পুঞ্জীভূত ঢেউয়ের ফেনা পাড় ছেড়ে এসে পড়েছে জমিনে। শীতের বড্ড প্রকোপ। শীতের অত্যাচারে হাত-পা জড়োসড়ো হয়ে আসে ফজলুর। পুরো শরীর জমে যেতে চায় বরফকলের বরফের মতো। বাইরের দিকে তাকিয়ে সে রাতের গভীরতা অনুমান করার চেষ্টা করে। ক্রমেই কুয়াশা বাড়ছে। আশি-ঊর্ধ্ব মানুষের মাথার চুলের মতো চারপাশ ধবধবে সাদা। ঝকমকে আকাশ, ঝিকিমিকি তারা কিংবা গাছের পাতার নাচন দেখা যায় না ঘন কুয়াশায়। তবে কুয়াশার জাল ভেদ করে মাঝেমধ্যে টিনের চালে টুপটাপ শিশির পড়ার শব্দ আসে কানে। ফজলু অনুমান করে রাত কেবল ১২টা।
ঘরের বারান্দা থেকে মাথা বাড়ালেও দুই হাত কিংবা চার হাত দূরে কিছুই দেখা যায় না। এমন অবস্থায় কান খাড়া করে ফজলু বিকট একটি শব্দ শুনতে পায়। বুঝতে পারে, এই মধ্যরাতে অসংখ্য যাত্রী নিয়ে দূর আকাশের বুক চিরে বিকট শব্দে উড়ে যাচ্ছে বিমান। অনেক মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে শহর-বন্দর ছেড়ে বিমানটি উড়ছে, এই সীমানা থেকে অন্য সীমানার দিকে। হুম। তাকেও আজ রাতের মধ্যেই ছেড়ে যেতে হবে সীমানা। ভোর হতে না হতেই তাকে পৌঁছাতে হবে নিজ দেশের মাটিতে। এই গ্রাম থেকে কিছুদূর এগুলেই কাঁটাতার। সে অপেক্ষায় আছে সুযোগের, আর পাঁচ ঘণ্টা পরেই সে বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়বে। কুয়াশামাখা রাতে সঙ্গে থাকা পুটলিটা ডান হাতে নিয়ে সে এড়িয়ে যাবে একদল সীমান্ত প্রহরীর চোখ। সুযোগ বুঝে সে সন্তর্পণে রওয়ানা দেবে কাঁটাতারের দিকে।
ফজলু কেবল একা নয়, সঙ্গে মেয়ে ফেলানীও আছে। দুজন কাঁটাতার পেরিয়ে সোজা চলে যাবে নিজ গ্রামের সীমানায়। কেবল মেয়ে নয়, ফজলুর সঙ্গে থাকবে মালেক ও তালেব। ফজলু চার হাজার টাকা বখশিসের বিনিময়ে মনে হয় এক রাতের জন্য দাস কিনেছে। মেয়ের কথা মনে পড়তেই মাথাটি বাইরে থেকে আবার বারান্দার দিকে ঝুঁকিয়ে নেয় ফজলু। ডানপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মেয়ে ঘুমে মগ্ন। গ্রামে ফেরার জন্য নির্ঘুম রাতের যন্ত্রণা সহ্য হয়নি তার।
গোঁফওয়ালা এক জওয়ান রাগে গজগজ করতে লাগলেন। সঙ্গে থাকা অন্য জওয়ানরাও উত্তেজিত বেশ। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিএসএফ হাফিজউদ্দীনের গোয়াল ঘরে এক চোরাকারবারিকে আটক করে।
রঙচটা পুরনো চাদরটা গায়ে দিয়ে মেয়ে ফেলানী ঢেকে রেখেছে তার গায়ের লাল জামা। বাম হাতের নিচে মাথাখানি রেখে পা দুটো গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। ঘণ্টা দুয়েক ঘুম চলছে তেরো বছরের মেয়ের। মেয়ের জন্য কলকাতা শহরের মুদি দোকান বন্ধ করে দেশের উদ্দেশে আজ চলে আসা তার। নানা বুদ্ধিফিকির করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সন্ধ্যা থেকে। ফজলু কিংবা তার মেয়ের জন্য বোঁ বোঁ আওয়াজ তোলা বিমান নেই, ভিসা নেই, নেই পাসপোর্ট। অন্যবার যেভাবে লোক ঠিক করে যাতায়াত করেছে এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না তার। ভরসা কেবল মালেক আর তালেব। তারাই মিলে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে বাবা-মেয়েকে এনে সীমান্তবর্তী এই গ্রামটির আধাভাঙা ঘরে ঠাঁই দিয়েছে। কুয়াশামাখা শীতের রাতে ফজলুর জন্য এ বড় আশীর্বাদ। এই ঘরটিতে কয়েক ঘণ্টার অতিথি সে। কেবল দয়াপরবশ হয়ে মালেক ও তালেব যে ফজলুকে ঠাঁই দিয়েছে তা নয়, দোকানের চালান বাদ দিয়ে ফজলু চার হাজার টাকাও দিয়েছে তাদের। তারাই ঘণ্টা পাঁচেক পর নিরাপদে সীমান্ত পারের ব্যবস্থা করবে। যাদের কাগজ নেই, ভিসা নেই, রাষ্ট্রদূত-দূতাবাস নেই, তাদের জন্য মালেক ও তালেবের মতো লোকই ভরসা। ফজলুকে তারা কথা দিয়েছে, চিন্তা কইরেন না মিয়া ভাই, তারের এ পারে মই লাগাইয়্যা দিমু। মই বাইয়্যা গেরামে গিয়া শীতের মিঠা রোদ পোহাবেন মিয়া ভাই।
ফজলু চিন্তা করে ‘ভালাই হবে। ফজলু চিন্তা করে কোনো গ্যানজাম নেই। সরকারি অফিস ভিসা-পাসপোর্ট কত কী? টাকা ঢালো, সাহেব গোরে দরখাস্ত দাও, সিল মারো কাগজে, এর থেকে বানরের মতো মই বেয়ে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে ব্যাঙের মতো লাফ দিলেই হবে।’
নিরাপদে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার আশ্বাস আরও প্রগাঢ় হয় মালেকের কথায়, ‘মিয়া ভাই আমরা অনেক কিছুই পারি। আপনার কাছ থিকা যে টাকা নিছি তা কি হুদাই? সীমান্তের ওপারে বড় বড় বন্দুক হাতে যারা খাড়াইয়া থাহে, তাগো বিড়ি-সিগারেট খাওনের জন্য দুই এক পয়সা দেওন লাগে। আমরা সব পারি মিয়া ভাই। ভোর আউক সূর্যের আলো পুব জামানায় ঝিলিক মারার আগেই দেশে পৌঁছায়া যাবেন গা।’
‘হ। মালেক মিয়া মিছা কথা কয় নাই। সীমান্তে যাদের কারবার, তাগো দিয়া সবই সম্ভব।’
০২.
আর বেশি সময় বাকি নেই। এখন ফজলুর হাতে মাত্র চারদিন। কেনাকাটা বাকি, দুই-একজন লোককে দাওয়াত দেওয়া বাকি, মেহমানদের খানা কি, তার চিন্তা তো আছেই। চারদিন পরেই মেয়ে ফেলানীর বিয়ে, স্বামী-সংসারে মগ্ন হবে সে। তের বছর ধরে অভাব-অনটনে মেয়েটিকে তিল তিল করে বড় করেছে সে। সেই মেয়ে বানারভিটা গ্রাম থেকে উঠবে শহরে। দেশের বাড়িতে ফজলু মিয়ার বড় ভাই বিয়ে ঠিক করেছে। পাত্রপক্ষ মেয়েকে দেখতে চায় না, ফজলুর ভাইয়ের কাছ থেকে যে বিবরণ শুনেছে তাতেই রাজি তারা। ছেলেও ভালো, কাজেকর্মে মনোযোগী। মাধ্যমিক পাস করে ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। ফলের ব্যবসা। শহরের পোস্ট অফিস এলাকায় ‘জাহিদ ফলপট্রি’ দোকানটি ফজলুর হবু জামাইয়ের। পাত্রপক্ষ অবশ্য মেয়ে দেখতে না চাওয়ার আরেকটি কারণ ফলের দোকানটি ঠিকঠাক করে দিতে হবে। এ ছাড়া হাজার পঞ্চাশেক টাকা দিতে হবে ফলের চালান বাড়াতে।
—হ, ফজলু জাহিদের ব্যাপারে কইছি মেয়েডারে আপনারা দেইখ্যা লন।
—কী কইছে হেতারারা’- বড় ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করে ফজলু।
—কইছে, পোলা তার ফলের ব্যবসা গোছাইবো। যদি কিছু টাকা আর দোকানডারে সাজানোর ব্যবস্থা করেন তয়অয়। বউমারে ভালোই ভালোই ঘরে লইতে চায়।
টাকা সঙ্গেই আছে ফজলুর। কাল সকালে গ্রামে পৌঁছে প্রথম কাজ বড় ভাইয়ের কাছে টাকাটি দিয়ে রাখা। যাতে তাড়াতাড়ি পাত্রের কাছে পৌঁছানো যায়।
চারদিন পরে মেয়ের বিয়ে। শীতের এ রাতে বারান্দায় বসে হঠাৎ ১৯৭৭ সালে মারা যাওয়া বাবা হাফিজউদ্দীনকে মনে করে ফজলুর। এতদিন তার বাবা বেঁচে থাকতেন কি না জানা নেই। বেঁচে থাকলে নাতনিটার বিয়ে দেখে যেতে পারতেন। বাবার কথা মনে হলেও এই ৪৮ বছরে ফজলু আর কাঁদে না। তবে তার বাবাকে এভাবেই মাঝে মাঝে মনে পড়ে তার। শিশির পড়া এই রাতে ফজলু মনে করে তার বাবা কুয়াশা হয়ে গেছে। সম্মুখে মায়ার চাদর বিছিয়ে কুয়াশা নয়, দাঁড়িয়ে আছে তার বাবা। তাই নির্ভার লাগে মনটা আবার বিষণ্নও। কুয়াশাময় এ রাতে ফজলুর সেই বিষণ্ন মুখ কারও চোখে পড়ে না। বারান্দায় বসেই ফজলু তার বুকের মাঝে খনন করে রাখা অতীতের পুকুরে হাবুডুবু খায়। বাবা-চাচার বাড়ি নাগেশ্বরীতে। খুব ভালোভাবেই চলত সংসার। কৃষিজমি থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল তাদের। বাড়ির পাশেই সীমান্ত, তবে ফাঁকা। ওই সময়ে কাঁটাতার ছিল না। সকাল-বিকাল দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত ছিল। তবে চোরাকারবারিদের আনাগোনা ছিল খুব। ১৯৭৭ সালে ফজলুর বয়স সবে মাত্র ৭ বছর।
একদিন দুপুরের ঘটনা। ওইদিন কী বার ছিল মনে নেই। হাফিজ উদ্দীন বাজার থেকে ফিরেছেন। পুঁটি মাছ এনেছিলেন। বেশ আনন্দ নিয়ে পুঁটি মাছ রান্নাও হয়। বাড়ির সবাই ঘরের বারান্দায় বসে ভাত খাচ্ছে। এমন সময় সীমান্তের ওপার থেকে আসে কয়েকজন বিএসএফ জওয়ান। ফজলুর বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুম হারে ঘর মে ঘুস গায়া। ও কাহা হে? হাম লোক উচে তুন রাহি হু। সাস মে বাতাও ও কাহা হে?’
ফজলুর বাবা হাফিজউদ্দীন বললেন, ‘আমরা তো দেখিনি। ভাত খাচ্ছি তো।’
সন্তুষ্ট হননি না তারা। দাগি আসামি খোঁজার মতো করে তারা যেন কাউকে খুঁজছেন। বিএসএফ জওয়ানদের চোখ শিকারি বিড়ালের মতো তীক্ষ্ণ, একবার হাফিজ উদ্দীনের চোখে তাকায় আরেকবার তাকায় গোটা বাড়ির এদিক-সেদিক। গোঁফওয়ালা এক জওয়ান রাগে গজগজ করতে লাগলেন। সঙ্গে থাকা অন্য জওয়ানরাও উত্তেজিত বেশ। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিএসএফ হাফিজউদ্দীনের গোয়াল ঘরে এক চোরাকারবারিকে আটক করে।
পরে একজন হাফিজকে বলে ‘তুম ঝুট কিউ বোল রাহি হো। মে তুমকো মার দেওঙ্গা। তুম উছে ছুপাক রাখখা।’
ফেলানী হা করে তাকিয়ে থাকে। মৃত পাখির ঠোঁটের মতো হা করে থাকা ফেলানীর মুখ। ফজলুর মনে হয়, ফেলানী এখন তার মেয়ে নয়। শীতের কুয়াশামাখা ভোরে তার মেয়ে পাখি হয়ে গেছে।
এ কথা বলেই বন্দুকের বাট দিয়ে হাফিজের পেটে জোরে আঘাত করেন। ভাত খেতে থাকা হাফিজ ভয় পাওয়া ব্যাঙের মতো ছিটকে পড়েন কিছুটা। এর কিছুক্ষণ পর ছটফট করে মারা যান তিনি। মুখ থেকে বের হয়ে যায় আধচিবানো ভাতের দলা, সঙ্গে কিছু রক্তবমিও। পুরো ঘটনাটি ঘটে ফজলুর চোখের সামনেই। বাবার কথা মনে করতেই হাফিজের চোখে যেন ভর করে শীতের কুয়াশা। চোখের কুয়াশা আর শীতের কুয়াশা একাকার হয়ে যায়। চোখ বুজে আসে হাফিজের। এমন সময়ে ডাক পড়ে হাফিজের।
০৩.
মালিক ও তালেব কুয়াশাময় এই আবছা ভোরে যেন দেবদূত হয়ে দেখা দেয় ফজলুর জীবনে। চলেন মিয়া ভাই। গুছিয়ে নেন। ফজলু এবার মেয়ে ফেলানীকে ডাকে। একবার, দুই, তিনবার ডাকার পর ফেলানী উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে। এরপর বাবার পথ অনুসরণ করে কুয়াশাময় ভোরে হাঁটতে থাকে চুপিচুপি। ফজলু পেছনে রেখে যাচ্ছে কলকাতা জীবনের মুদি দোকানের ব্যবসা, রেখে যাচ্ছে ভিন দেশের নানা স্মৃতি। সঙ্গে হাঁটছে নতুন স্বপ্ন, অনেক তো হলো এবার সে নিজ গ্রামেই থিতু হতে চায়।
সীমান্তের ওখানে গিয়ে দেখে বড় একটি মই বাঁধা। মইটি নুয়ে পড়া চিকন বাঁশের মতো এদিক সেদিক দুলছে। যখন মইটি শীতের বাতাস কমে গেলে স্থির হয় তখন ফজলুর মনে হয় কাঁটাতারের গায়ে মইটি যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমুচ্ছে। মালেক ইশারা দেয়, উঠে পড়েন মিয়া ভাই। দেরি কইরেন না। সময় বেশি নেই। মালেকের জোরাজুরিতে মেয়ে ফেলানীকে রেখেই মইয়ের দিকে উঠে পড়ে ফজলু। জমি যাওয়া হাত-পায়ের অবশভাব ঢেলে এতক্ষণে ফজলুর মনে হয় উঁচু এক পাহাড় ডিঙিয়ে গেল সে। শীতের এই ভোরে জবুথুবু এক বানর যেন কাঁটাতার বেয়ে চুপিসারে নামছে। এরপর থপাস করে লাফ দেয় ওপার জমিনে। সে পৌঁছে গেছে নিজ দেশের মাটিতে। কিছুক্ষণ পরই শীতের মিষ্টি রোদ ঝকমক করে উঠবে কুয়াশার জাল ভেদ করে।
তালেব তাগাদা দেয় ভোর ৫টা বাজে। দেরি হয়ে গেলো। এবার ফেলানীর পালা। ফেলানী মইয়ে উঠে পড়ে নীড়ে ঘুম ভাঙা ডানা ঝাপটানো পাখির মতো। ফেলানীকে মইয়ে তুলে দিয়েই মালেক আর তালেব অদ্ভুত ক্যারিশমায় দেবদূতের মতো হাওয়া হয়ে মিলিয়ে যায় কুয়াশায়। ফেলানী কাঁটাতার বেয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে ক্ষুধার্ত এক পাখি পোকা-মাকড়ের খোঁজে উঠে পড়ছে গাছের শীর্ষে। কাঁটাতারে পাখির ডানা নয়, ফেলানীর লাল জামাটি পেঁচিয়ে যায় তারের সঙ্গে। ঘুমকাতুরে মেয়েটি ভয় পায়। ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে জোরে চিৎকার করে ওঠে। সে আওয়াজ শীতের নির্জন ভোরে বহুদূর পৌঁছে যায়। পৌঁছায় ফজলুর কানেও।
হঠাৎ একটু পরপর উড়ে আসে গুলি। একটা, দুইটা, তিনটা গুলি। একটা লাগে ফেলানীর বুকে। ফজলু শুনতে পায় তার মেয়ে ‘বাবা’, ‘বাবা’ বলে ডাকছে। কিন্তু ফজলু কাঁটাতারের এপারে, মেয়ের কাছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
ফেলানী পানি খেতে চায়, ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করলে তার মুখে এসে পড়ে কাঁটাতারে জমে থাকা কয়েক ফোঁটা ভোরের শিশির। ফেলানী হা করে তাকিয়ে থাকে। মৃত পাখির ঠোঁটের মতো হা করে থাকা ফেলানীর মুখ। ফজলুর মনে হয়, ফেলানী এখন তার মেয়ে নয়। শীতের কুয়াশামাখা ভোরে তার মেয়ে পাখি হয়ে গেছে।