ঘটনাটা আমাদের পুরো পরিবারকে মুহূর্তের মধ্যে একটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিল।
কয়েক দিন ধরে কাজলের খুব জ্বর। শুধু জ্বর না। শরীর কাঁপিয়ে জ্বর। কিছু খেতে চায় না। খেলেই নাকি বমি ভাব হয়। কাজলকে নিয়ে মা বেশ চিন্তায় আছেন। এই বয়সের মেয়েদের নিয়ে যত সমস্যা। বন্ধু-বান্ধবের সাথে কোথায় গিয়ে কী করে, না করে ঠিকমতো বলেও না। জিজ্ঞেসও করা যায় না। ঝেঙ দেখিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে থাকবে। ভাত খাবে না। কয়েকদিন সবার সাথে কথা বলা বন্ধ। এইসব সমস্যা আর কি! অতিরিক্ত কিছু বললে, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ারও ভয় দেখায়। এ জন্য মা জোর গলায় কিছু বলেনও না। যদি সত্যি সত্যি চলে যায়। এই ভয়ে।
মা বাবাকে বলে বাজার থেকে কাজলের জন্য টক জাতীয় কিছু জিনিসপত্র এনেছেন। তার মধ্যে আমড়া, আনারস, আমলকি, জাম্বুরাসহ আরও কী কী যেন।
মা বাবাকে বলে, বিকেলে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেও। না খেয়ে না খেয়ে তো মেয়েটা ফলিমাছ হয়ে যাচ্ছে।
মার কথা মনে আমি খাটের ওপর শুয়ে নিঃশব্দ করে হাসছি। আমার হাতে হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি। বছর কয়েক আগে একুশে বইমেলা থেকে কিনেছিলাম। পড়া হয়নি। এক পৃষ্ঠা পড়ি তো আবার চারদিন টেবিলের ওপরেই রেখে দেই।
বাবা রাগ দেখিয়ে বলেন, তোমার মেয়েকে তুমিই নিয়ে যেও। আমি পারব না।
মা বলেন, হ। মেয়েতো একলা আমার। সব দায়ভার তো আমার।
এরপর মায়ের মুখ আর বিশ্রাম নেয় না। মা গজগজ করে বাবার চৌদ্দগুষ্টি তো উদ্ধার করেন। সঙ্গে আমাকে আর কাজলকে জড়িয়েও আরও কী কী সব বলতে থাকেন। আমি চুপ করে ঘরের এক কোনে বসে থাকি আর বাবা সেসবে কান না দিয়ে চেয়ারে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে চোখের সামনে পত্রিকার পাতা মেলে ধরেন।
কদিন ধরে না খেতে না খেতে কাজলের শরীরটা আসলেই অনেক শুকিয়ে গেছে। চোখগুলো গর্তে ঢুকে গেছে। ওর দিকে একবার তাকালে আর চোখ ফেরানো যায় না। অসম্ভব মায়াবী মুখ। এ জন্যই বুঝি পাড়ার ছেলেরা ওর পিছু পিছু লেগে থাকে।
দু’দিনের বৃষ্টির পর আজ রাতে খুব গরম পড়েছে। মা সারারাতই জানালা খুলে কাজলের পাশে বসে থাকে। জ্বর বেড়ে গেলে কখনো মাথায় জলপট্টি দেন। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপেন। একশোর ওপরে উঠে গেলে ঘুম থেকে বাবাকে জেগে তুলে জানান।
কাজলের সাথে রাত জাগতে জাগতে মায়ের অবস্থাও খারাপ। কাজলের সাথে একা একা মা কীসব কথাও যেন বলে।
আমি একদিন কাজলের রুমের পাশ দিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে শুনলাম, তোর সাথে কি কারো সম্পর্ক টম্পর্ক আছে?
কাজল জড়ানো গলায় বললো, না।
মা আবার বললো, সত্যি করে বল। কোন ছেলের সাথে মিছস নাই তো। মানে খারাপ কিছু করছ নাই তো? তাইলে আমারে ক, ভালো ডাক্তার দেখাই।
কাজল রাগ দেখিয়ে বলে, তুমি চুপ করো তো!
কাজল এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। আমার অনার্স ফাইনাল চলছে। আগামীকাল ‘প্রকল্প পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা’ পরীক্ষা। কদিন ফাঁকিবাজি করেছি বলে এখন রাত জেগে পড়তে হচ্ছে।
রাত আনুমানিক আড়াইটা। চোখে ঘুম ঝেঁকে ধরেছে। কোনোভাবেই আর চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। সহসা কাজলের চিৎকার। সঙ্গে মারও। আমি দৌড়ে কাজলের ঘরে যাই। পাশের ঘর থেকে কাঁপতে কাঁপতে ছুটে আসেন বাবাও। কাজল দু’ হাত দিয়ে মুখ চেপে গগনবিদারী আওয়াজ তুলে কাঁদছে। কাজলের এ অবস্থা দেখে মা যেন বধির হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় কী যেন বলছেন। কিছু বোঝা যাচ্ছে না। শুধু এতটুকুই বুঝলাম, কে যেন জানালা দিয়ে পানির মতো কিছু একটা ছিটিয়ে দৌড়ে চলে গেল। আমার বুঝতে বাকি থাকল না, কাজলকে কেউ এসিড মেরেছে।
গভীর রাত। এত রাতে গাড়ি পাওয়া দুস্কর। তবু গেট খুলে ছুটলাম যদি কিছু পাওয়া যায়। বেশ চড়া দামেই একটা সিএনজি পাওয়া গেল। আমার কোলের ওপর কাজলের মাথা। ওর চিৎকারে রাতের আকাশ ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে। গাড়ি ছুটছে, গন্তব্য ঢাকা মেডিক্যাল। এক জায়গায় নিয়েছিলাম। তারা রাখেনি। গাড়ি ছুটছে। আমি ওকে ধরে রাখতে পারি না। মা অজ্ঞানের মতো। বাবাও পাগলের মতো। আমার বুকের ভেতরটা ভাদ্র মাসের ভরা নদীর মত হু হু করলেও স্থির থাকার চেষ্টা করছি। রাতের বেলা জ্যাম না থাকাতে বেশ দ্রুতই পৌঁছে যাই। স্ট্রেচারে করে দ্রুত ডাক্তাররা নিয়ে যায় তাদের হেফাজতে। সঙ্গে আমি। মা-বাবাকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিছু ওষুধ লিখে দেয়, বাইরে গিয়ে দ্রুত নিয়ে আসি। পাগলের মতো ছোটাছুটি করছি। কাজলের চিৎকারে হাসপাতালের লোহার খাট নড়ে ওঠে। আমি ভয় পেয়ে যাই। তবু সেই ভয়ার্ত কণ্ঠেই কাজলকে শান্ত হতে বলি। কাজল শান্ত হয় না। ও কি করে শান্ত হবে! ওর সুন্দর মুখটি যে আর সুন্দর নেই। ওর চেহারাটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। ওর সুন্দর মুখশ্রী যে বখাটের ছোড়া এসিডে ঝলসে গেছে অনেক আগেই। কিভাবে ও শান্ত হবে। কোনো কথা দিয়েই তো আমি কাজলকে থামাতে পারি না। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে সে চিৎকার করে ওঠে। ওর চিৎকারে আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে। আমি শিউরে উঠি। মনে মনে বলি, কাজল আরও চিৎকার কর। এই পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে দে তারা এখনো সভ্য হতে পারেনি। তারা শুধু পোশাক পরিচ্ছদে সভ্য হয়েছে। জ্ঞানের দিক থেকে আদিম মানুষের মতোই রয়ে গেছে। আদিম যুগে যেমন গাছের লতাপাতা পরিধান করত মানুষ, নারীদের দেখলেই তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত, এখনো সেই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি মানুষ। তুই আরও বেশি করে কাঁদ। কেঁদে কেঁদে আকাশটাকে ফাটিয়ে ফেল। কেঁদে কেঁদে এই নিষ্ঠুর আর অমানবিক পৃথিবীটাকে জানিয়ে দে, এই পৃথিবী এখনো জানোয়ারের হাত থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এই দেশ এখনো রাজাকার মুক্ত হতে পারেনি। তুই কাঁদ। বেশি বেশি করে কাঁদ। আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে তোর কান্নার আওয়াজ সহ্য করে যাব। আমার মা-বাবা তোর কষ্টের তীব্রতায় ধুকে ধুকে মরবে। এই পৃথিবীর মানুষরা অবাক হয়ে তাঁকিয়ে দেখবে। আমাকে রাস্তায় মানুষেরা দেখে বলবে, ওর বোনকে এসিড মেরেছে। আমার ভাগ্য ভালো কেউ বলতে পারবে না ওর বোনকে ধর্ষণ করেছে। তুই অনেক ভাগ্যবতী বোন। ধর্ষণের দায় থেকে অন্তত বেঁচে গেলি। ধর্ষণের কলঙ্ক কাঁধে নিয়ে অন্তত তোর পরিবারকে বয়ে বেড়াতে হবে না। তুই সত্যিই ভাগ্যবতী। কাজল আবার সজোরে চিৎকার করে ওঠে। আমি আবারও ওকে থামতে বলি। কাজল এবার থামে। থামে ওর কণ্ঠস্বর। শুধু থামে না চোখের জল। বলে, ভাইয়া, খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। এই দেশ কি আমাকে ভালো করতে পারবে?
আমি গলার স্বর চেপে বলি, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই চিন্তা করিস না।
পুলিশ আসে। বাবা মামলা করার প্রস্তুতি নেন। কিন্ত এ দেশে মামলা করেও যেকোনো কাজ হয় না বাবা হয় তো এটা জানেন না। উল্টো মামলাকারীকেই হুমকি ধামকি সহ্য করতে হয়। শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। বাবা তবু মামলা করবেন। আমি না করি।
আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। থানা পুলিশ টাকার খেলা। টাকা দিলে পুলিশ নড়বে, না দিলে উল্টো আমাদেরই ফাঁসাবে। গলা ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেবে। কোর্টে গিয়ে কেউ সাক্ষ্য দেবে না। কেউ মুখ খুলবে না। কী হবে এসব করে। তুমি তো সারা জীবন মাস্টারি করেছ। তোমার ছাত্ররাই তো তোমাকে আজ গলাধাক্কা দিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। শাবিপ্রবিতে কী হচ্ছে, সেটা একবার মনে করার চেষ্টা করো। ড. জাফর ইকবালের মতো মানুষরা গলায় দড়ি দিয়ে মরতে চায়। তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদি, মালালার মতো মানুষেরা বেঁচে আছে শুধু ভাগ্যগুণে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা কী করে। তোমাকে যেদিন তোমার ছাত্ররা গলা টিপে ধরল সেখানেও তো পুলিশ প্রহরা ছিল। তারা কী করেছে তোমার জন্য? কাদের কাছে তুমি মামলা নিয়ে যাবে। হয়তো ধরবে। তবে তোমার আমার জন্য নয়। তাদের একটা ধান্ধা হবে। ধরতে পারলে বেশ মোটা একটা অঙ্ক পাওয়া যাবে। বউ বাচ্চা নিয়ে বেশ কিছুদিন আরাম আয়েশে থাকতে পারবে। স্ত্রী পরিজন নিয়ে বিদেশে ট্যুর দিয়ে আসতে পারবে। আমাদের কষ্টের টাকায় ওরা বাড়ি বানাবে। গাড়ি কিনবে। আমরা মধ্যবিত্ত থেকে নিন্মবিত্ত হয়ে যাব। তখনে কে আমাদের দেখবে। অনার্সের পর আমার মাস্টার্স করতে টাকা লাগবে। ইচ্ছে ছিল এমবিএ করব। সে অনেক টাকা। কোথায় পাবে তুমি এত টাকা বাবা? মামলা করা এত সহজ কাজ নয়। কে তোমাকে শেল্টার দেবে? কোনো নেতা মন্ত্রীর সাথে তো তোমার হাত নেই। থেকেই বা লাভ কী। কত বড় বড় নেতা হাজতের ভাত খাচ্ছে। তুমি আমি তো সাধারণ মানুষ। এসব ভেলকি বাজির মামলা করে কিছুই হবে না বাবা। ওসব বাদ দাও।
আমি কাজলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে জল। বাবা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। ইনিয়ে বিনিয়ে গেটম্যানকে অনেক কিছু বলছেন, তারা রাজি হচ্ছে না। মায়ের অবস্থা খারাপ বলে তাকেও বেডে আনা যাচ্ছে না। তারা দু’জনই প্রচণ্ড দুর্বল।
কাজল কোনো কথা বলে না। বুঝতে পারছি, ও আমার ওপর রাগ করেছে। রাগ তো করার-ই কথা। শত হলেও আমি ওর বড় ভাই। আমার তো কিছু দায়িত্ব ছিল। হয়তো আমি সেটি ঠিকমতো পালন করতে পারিনি। এটা আমার অক্ষমতা। আমার অক্ষমতা নিয়েই কাজলের মাথার পাশে বসে আছি। ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ওর বিকৃত মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। মলম লাগানো। কী করব। আমার কী করার কথা। আমার কী ভাবার কথা। সকালে পরীক্ষা। আমি এখন কী করব। ভোর হচ্ছে। কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। আমি কি ওদের মা-বোনের গায়ে এসিড ঢেলে আসব? তাহলে ওদের থেকে আমার পার্থক্য রইল কই? আমি তো ওদের মত জানোয়ারই হয়ে গেলাম। কই! আমি তো একটি মেয়েকে ভালোবাসতাম। এখন নেই। সে চলে গেছে। কই আমি তো তার মুখে এসিড ঢেলে দেইনি। আমি তো তাকে ধর্ষণ করিনি। আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। প্রথমে প্রত্যাখ্যাত হলে মানুষ কি এগুলোই করে? কই কাজল তো কখনোই বলেনি ওকে কেউ ভালোবাসে। কেউ ওর মসৃন পথ আগলে রাখে। কেউ ওকে যাত্রা পথে ডিস্টার্ব করে। কখনোই তো মা বাবাকে এসব বলেনি। কেন বলেনি। ওরও কি সম্মতি ছিল? তাহলে ছেলেটি কেন ওর গায়ে এসিড ঢেলে দিল। নাকি কাজল অন্য কোনো ছেলেকে ভালোবাসতো বলে!
আমার মাথা ধরে আসে। দু’চোখে প্রচণ্ড ঘুম। কাজল আবারও চিৎকার করে ওঠে। ভাইয়া জ্বলে যাচ্ছে। ভাইয়া পুড়ে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে ডিউটি নার্স ডেকে আনি। রাত হলে নার্সরা ঘুমিয়ে যায়। তাদের ঘুমানোর জন্য আলাদা রুম থাকে। আমার যখন অ্যাপেনডিকসের অপারেশন হলো তখন দেখেছি একজন নার্সকে রাত হলে সাথে ছোট বাচ্চা নিয়ে আসত। তার হাজব্যান্ড সম্ভবত আর্মিতে চাকরি করত। ভোর হওয়ার সাথে সাথে বউ বাচ্চাদের দেখতে আসত। আমি অপারেশনের ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে শুয়ে সেসব উপভোগ করতাম।
নার্স এসে সেলাইন লাগিয়ে দেয়। আমাকে ফিসফিস করে বলে, ঘুমিয়ে যাবে। আমি বুঝতে পারি কাজলকে প্যাথেড্রিন দেওয়া হয়েছে। আমার অপারেশনের সময়ও এমন হয়েছিল। গভীর রাতে জেগে যখন ডিউটি নার্সের কাছে ক্ষুধার কথা জানালাম, তখনও তিনি আমাকে এই কাজটাই করেছিলেন। অতপর কখন যেন অচেতন হয়ে যাই। ক্ষুধার কথা আর মনে থাকে না।
নার্স বললেন, এবার নির্জীব হয়ে যাবে। কাজলের মুখে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে। ওকে এখন আর চেনা যাচ্ছে না। ও যে আমার প্রিয় বোন সে কথা এখন আর কাউকে বলা যাবে না। কাজলের হাত আমার মাথা টেনে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে অনেক কষ্টে করে বলে, ভাইয়া, তুমি গিয়ে ওদের সবার গায়ে এসিড মারতে পারবা না?
না কাজল। ওরা দেশের শত্রু। পিচাশ। নরপশু। ওরা নর্দমার কীট। ওদের মা বাবার জন্মের ঠিক নেই। ওরা রাস্তায় বেড়ে ওঠা মানুষ। ওদের কোনো নির্দিষ্ট ঘরবাড়ি নেই। তোর ভাই ওদের মতো না। আমার মা বাবা তো এগুলো শিক্ষা দেয়নি আমাকে। তোর ভাই তো পশু নয়। ওগুলো পশুদের কাজ। তুই চিন্তা করিস না। তোকে আবার আমরা আগের মতো ভালো করে তুলব। তুই আবার আগের মতো সুন্দর হয়ে যাবি। দেশে এখন অনেক উন্নত চিকিৎসা হয়। তোকে সার্জারি করে তোর চেহারাই পাল্টে দেব। তুই দেখবি কেউ তোকে চিনতেই পারবে না। তুই টেনশন করিস না বোন। আমরা তোকে ভালো করবই।
কাজল চিন্তা করে কি না বোঝা যায় না। কিন্তু ওর চোখের জ্বল কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। মেঘে ঢেকে রেখেছে আকাশ। খুব স্পষ্ট করে তাঁকালে দু’ একটা তারা চোখে পড়ে। কোথাও কোথাও বজ্রপাতের আওয়াজও শোনা যায়। আগামীকাল সকালেও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বাইরে ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে। আমি হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কাজল, বাবা-মা আর আমার ভবিষ্যতের কথা ভাবছি।
মন্তব্য