রাস্তাটা মুখস্ত। দিনের আলোয় চৌকাঠ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল। অন্দরমহলের জল-হাওয়া স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিল। মনে হয়েছিল, কিসের এত ভয়! সে তো বাঘ-ভাল্লুক নয়, জেলফেরত আসামি। অপরাধ যা ছিল, প্রায়শ্চিত্ত করেছে। অনেক হয়েছে; মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়েছে। সদ্যভুমিষ্ট শিশুর মতো নিষ্পাপ মনে হয় নিজেকে। কিন্তু পাপ তাকে হাতছানি দিচ্ছে। পুনরায় পাপ করবে সে। খুন করতেই এই নির্জনে ছুটে আসা!
বৃদ্ধের চোখে-মুখে যৌবনের আলো। টিলায় বসে ক্ষীণ দৃষ্টিতে ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে। খানিক বাদেই চরাচরে আঁধার নামবে। তার মনের মধ্যেও অন্ধকার। মেঘের ফাঁকে অস্পষ্ট চাঁদ। মেঘ-চাঁদের লুকোচুরি চলছে। সম্মুখে অশান্ত ও বিস্তৃত জলরাশি। সাপের মতো ফণা তুলে বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ছে—হায়, মেয়েটিও একদা ফণা তুলেছিল! বিষাক্ত ছোবলে শরীর নীল করে দিয়েছিল!
কক্সবাজারের হৃদয়গ্রাহী বালিয়াড়ি। খাঁখাঁ শব্দ করে মাথার ওপর দিয়ে শঙ্খচিল উড়ে যায়। নীড়ের সন্ধানে পাখিরা ব্যতিব্যস্ত। কেবল লোকটির মধ্যে ব্যস্ততা নেই। অন্য কোথাও টান নেই। বিশেষ এক টানে সমুদ্রের কাছে ফিরে এসেছে। পুনরায় ফিরে যেতে হবে তাকে। মাত্র একটি রাতের মেহমান সে, অনাহূত মেহমান!
মোটা মোটা ফোঁটায় দড়বড়িয়ে বৃষ্টি নামে। ক্ষণস্থায়ী বৃষ্টি। শেয়াল ভেজার মতো ভেজে। সঙ্গে বাড়তি কাপড় নেই। মাত্র তো একরাত্রি। কাপড়ের বিষয়টি মাথায় আসেনি। গুটিসুটি পায়ে প্রসস্থ গেট মাড়িয়ে সমুদ্রবিলাসে প্রবেশ করে। পেছন থেকে অল্পবয়সী দারোয়ানটি ডাক দেয়। লোকটি পেছন ফিরে তাকায়।
কিছু বলবে বাবা?
ছেলেটি অসংকোচে আমতা আমতা করে। চাচা, এখানে তো সাধারণ মানুষ আসে না।
বুড়ো একগাল হাসে। জানি বাবা, চিন্তা করো না; আমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে।
টাকার দাপটে চৌকাঠ মাড়িয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করে। কী সুন্দর, আলো ঝলমলে পরিবেশ! বৃষ্টির কারণে রাত্রি এখানে ভিন্ন মাত্রায়। উষ্ণতার জন্য শীতকাতুরে মানুষগুলোর ভিড় বাড়ছে। আলো ছুঁয়ে দেখার কথা ভাবে। সাধারণ পতিতালয়ের চাইতে সমুদ্রবিলাস সম্পূর্ণ আলাদা। নারীদের চোখে-মুখে আভিজাত্যের চিহ্ন। খদ্দের ধরার জন্য তাড়াহুড়ো নেই; টানাহ্যাচড়া নেই। রিসিপশনে দেশি-বিদেশি মানুষ। যে যার সঙ্গীকে নিয়ে আড্ডারত। ঠোঁটে মুখ গুজে ধ্যানমগ্ন। সময় বদলিয়েছে। প্রথম যৌবনে লোকটি যখন এসেছিল তখন সবাই আড়াল খুঁজতো। সঙ্গীদের নিয়ে ঝাউবনের আড়ালে হারিয়ে যেত। স্বল্প বসনে সময়-অসময়ে জলে নামতো। জলের সংস্পর্শে পাহাড়ি ঝর্ণার মতো দুরন্ত হয়ে উঠতো। ভেজা বালির ওপর সটান শুয়ে থাকার কী যে সুখ! নিঃসঙ্গ আকাশকেই পরম বন্ধু মনে হয় তখন। একটু একটু করে অতীতের পথে ফিরে যাচ্ছিল। বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে তাকায়—এই বয়সেও দেখি রস আছে।
বুড়োর রস নিয়ে রসিকতা! পদযুগল মুহূর্তের জন্য থেমে যায়। সে কি খুব বুড়িয়ে গেছে?
নিজের কাছে তা মনে হয় না। মনের জোর না থাকলে এতদূর আসা সম্ভব ছিল না। লোকের কথা গায়ে মাখে না। অবিচল সে। ঝিমিয়ে পড়া যৌবন জেগে উঠেছে। নারী শরীর নিয়ে খেলতে ভয় নেই। অষ্টাদশী একজন তরুণী তার কাঁধে হাত রাখে। চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, আমাকে চলবে দাদু?
না চলার কিচ্ছু নেই! অসম্ভব রূপবতী। একহারা গড়ন। চিকন নাক। গোলাপি ঠোঁট। চোখে মায়ার কাজল। হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে। লাল রঙের ব্রাতে চোখ আটকে যায়। টোলপড়া গালে আলতো হাত বুলিয়ে বলে, লক্ষ্মী মেয়ে!
মেয়েটি খুশি হয়। শরীরে শরীর মিশিয়ে বলে, আমার নাগর আজ আসবে না। বৃষ্টিতে আটকা পড়েছে। আপনি রাজি থাকলে আপত্তি নেই। সারারাত মজা লুটবেন। তবে রেট অনেক বেশি।
রেটের বিষয় তুচ্ছ। আগুনে পোড়ার আগে পতঙ্গরা অতসব ভাবে না। কিংবা এ-রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রাসাদ ছেড়ে রাজা রাজপথে নামে! সে নিজেও পথে নেমেছে। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। ধীরে ধীরে আড়ষ্টতা কেটে যাচ্ছে। বেয়ারা শরাব আনে। মুখোমুখি টেবিলে আয়েশ করে বসে আছে। যা ভাবার এরই মধ্যে ভেবে নেয়। জেলখানার ফিউজকাটা বাল্বের কথা স্মরণে এলে মনের মধ্যে অন্ধকার ভর করে। কামনার আগুন একবার জ্বলে একবার নেভে। নেভা-জ্বলার খেলা চলে। নিজের সঙ্গেই নিজের যুদ্ধ।
বুড়ো আনমনে কাঁধ ঝাঁকায়, না না, তাকে পারতেই হবে। এই একটি রাতের জন্য সে বহুদিন অপেক্ষা করছে। ক্যাটালগ হাতে ম্যানেজার আসে। অসংখ্য সুন্দর মুখশ্রী। কেউ কারো চাইতে কম নয়। নূপুর নামের মেয়েটিকে তার পছন্দ। সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলে ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। প্রায় মধ্যবয়সী এক রমণী। চোখে-মুখে বিরক্তির চিহ্ন। বয়সের কারণে নারী কি বিরক্ত! হতেই পারে। লোকটি দাড়িতে হাত বোলায়। সময়ের অনেক আগে তার জীবনে বার্ধক্য ভর করেছে। কেউ কেউ চুল-দাড়ি ছেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। রাজি হয়নি। স্মৃতিচিহ্ন থাক না কিছুকাল! এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে কামালেই ভালো করতো। নূপুরের চোখে ঘুমঘুম ভাব- ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
হুম। বৃষ্টির দিনে রাজ্যের ঘুম জড়ো হয়েছে।
লোকটি হেঁয়ালি করে, মেহমান রেখেও তাহলে ঘুম হয়! ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে না?
নূপুর তার মুখের পানে তাকায়। ঝাঁপসা চোখ। সরল স্বীকারোক্তি- ইদানিং মেহমান তেমন আসে না। লালবাতি জ্বলবে কি; অলরেডি জ্বলে গেছে। আপনার মতো বুড়ো-হাবড়ারা মাঝেমধ্যে পথ ভুল করে আসে।
লোকটার রাগ হওয়ার কথা। কিন্তু হয় না। অবাক হয়। নূপুর কি তাকে চিনতে পারেনি? না কি চিনেও না-চেনার ভ্যান করছে! লোকটির তাড়াহুড়ো নেই। সাবধানে পথ হাঁটে। পিতলের তৈরি ড্যাগারটা সাহস জোগায়। নূপুরের মুখে আক্ষেপ- আর যৌবন! বয়স হয়েছে। যৌবনে ভাটির টান। সবাই এখন জোয়ারে ডুবতে চায়!
সন্ধ্যার অসমাপ্ত বৃষ্টিটা পুনরায় নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে। এবার মুষলধারে। লোকটি খোলা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্ধকারের বুক চিরে বিদ্যুতের ঝলকানি। মেঘের গুঢ়গুঢ় গর্জন। উত্তাল সমুদ্র। তার নিজের মধ্যের উথাল-পাথাল ঢেউ। নূপুর নির্বিকার। চিনতে পারেনি সম্ভবত। তার পানে ওড়না এগিয়ে ধরে, ভিজে গেছেন। আপাতত এটা নিন। তা না হলে ঠাণ্ডা লাগবে। শরীর খারাপ হবে।
যাক, পতিতারা তাহলে শরীর নিয়েও ভাবে!
সমস্যা নেই। শরীর এমনিতেই খারাপ। আরেকটু খারাপ হলে ক্ষতি কি!
নূপুর লাভ-ক্ষতি নিয়ে ভাবিত নয়। নিজেই তার শরীর মুছিয়ে দেয়। ভেজা শার্ট খুলে ফেলে। বুকের কাছে হাত পড়লে মনে হয়, সত্যি সত্যি অসুস্থ। শুধুমাত্র মনের জোরে এতদূর ছুটে এসেছে। জেলে বসে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করেছে। কিন্তু এখন সে কি করবে?
উসকোখুসকো চুল। মুখভর্তি দাড়ি। কোঠরাগত চোখ। কত বদলে গেছে! নূপুরও বদলে গেছে। যৌবনের তেজ কমেছে বটে, তবে এখনো পুরুষের বুকে আগুন জ্বালাতে সক্ষম। আগুন জ্বালাতে চেষ্টা করে। উত্তপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাস মুখের উপর আছড়ে পড়ে। আগের মতো হলে এতক্ষণে বেসামাল হয়ে যেত। শরীর থেকে শেষ কাপড়টুকুন আলগোছে সরিয়ে ফেলতো। স্তনের বোটায় মুখ লাগিয়ে উত্যক্ত করতো। কিংবা বিছানায় নিয়ে শরীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। ঝাঁপিয়ে পড়ার দিনগুলো মনে হলে হতাশ হয়। একবার না, অসংখ্যবার। কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তারা!
মেয়েটি তার বুকে মাথা রাখে। গায়ে-মুখে হাত বুলায়। একান্তভাবে কামনা করে। হতে পারে কয়েকদিনের অভুক্ত শরীর। মাঝে মাঝে হয় এমন। কিন্তু বুড়ো পাত্তা দেয় না- এত অস্থির কেন; রাত কি ফুরিয়ে যাচ্ছে?
নূপুর মনে মনে অপমানিত।
লোকটি কি তাকে পছন্দ করেনি?
পতিতা বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং পেশা। অতি আধুনিকতার স্রোতে রক্ষণশীলরা বানের জলে ভেসে যাচ্ছে। নূপুরের মাঝে আন্তরিকতার ত্রুটি নেই। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে ছোট-খাটো অপমান পাত্তা দিতে নেই। তাছাড়া মেহমানের সেবা এ জগতে পরম ধর্ম।
সহানুভূতির স্বরে মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, মন খারাপ না কি?
লোকটি মাথা নাড়ে- হ্যাঁ।
কী হয়েছে?
নাহ, তেমন কিছু না। বৃষ্টির দিনে অকারণে মন খারাপ হয় আমার।
ওহ, বৃষ্টির দিনে কোনো কাছের মানুষ কি কষ্ট দিয়েছে?
কী করে বুঝলে?
দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে নারী বলে, এখন বুঝি না। অনুভূতি মরে গেছে। তবে আগে বুঝতাম।
গভীর দৃষ্টিতে নূপুরের পানে তাকায়। আর দশটা মেয়ের চাইতে আলাদা। চা বানায়। আজ সারারাত ওরা জেগে থাকবে। সুখ-দুঃখের গল্প করবে। সুখের কথা লোকটিকে ছুঁতে পারে না।
এখানে কেমন করে?
মেহমানের সঙ্গে সম্পর্ক মনের নয়, শরীরের। তবু প্রত্যেক মেহমান এখানে আসার গল্প শুনতে চায়। কেউ কেউ মানবিক হয়ে ওঠে। ঘর-সংসারের লোভ দেখায়। দু’একজন ওই ফাঁদে পা দেয়। নতুন করে সংসার পাতে। বিগত জীবনের কথা ভুলে যেতে চায়। কিন্তু পারে না। পুনরায় পথ হারায়। আশ্রয় হারিয়ে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঠাঁই নেয়। নূপুর মরতে রাজি নয়। অনেক মেহমানকে সে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে অপছন্দ করে। কিন্তু আজ ব্যত্যয় হয়। মনের দুয়ার খুলে যায়। জীবনের বিচিত্র চিত্র মনের পর্দায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে- ভালোবেসে বিয়ে করেছিল রিমনকে। সংসারী হতে পারেনি। তার স্বরূপ উদঘাটন করতে সময় লেগেছিল মাত্র ছয় মাস। ফিরে আসে বাবার সংসারে। জীবনের তখন চরম দুর্দিন। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। ঠিক সেই মুহূর্তে জীবনে নতুন রাজকুমারের আবির্ভাব। নতুন পথের ঠিকানা। হারুনকে নিয়ে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। উত্তাল মুহূর্তে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছিল তারা। ভেবেছিল থিতু হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পথ হারায়। ভালোবাসার দাবি নিয়ে পুনরায় রিমন তার দুয়ারে দাঁড়ায়। হারুনের অভিমানে জল অন্য পথে গড়ায়। নূপুরের ফেরার পথ প্রশস্থ হয়। সে আসলে ফিরতেই চাইছিল। পরের ঘটনা তো ইতিহাস- নূপুরের মিথ্যা সাক্ষীতে হারুন জেলের অন্ধকারে!
আজ বুঝতে পারে, সে ভুল করেছিল। তার ভুলেই ছেলেটি আলোর বিপরীতে। বস্তুত রিমন ও হারুন বন্ধু ছিল। আলমডাঙ্গার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদচারণা ছিল। বিভিন্ন জলসায় গান করতো। নূপুর নাচতো। নৃত্যশিল্পী সে। নেচে নেচে রিমনের আঙিনায় ফিরে গিয়েছিল। ফেরা নিয়েই সংঘাত। বিষয়টি হারুনকে জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু সাহসে কুলায়নি। জীবন তার সঙ্গে বারবার প্রবঞ্চনা করেছে। এক এক করে নিভে গেছে সব প্রদীপ। বাধ্য হয়ে নূপুর আজ সমুদ্র বিলাসে!
লোকটি এবার উচ্চস্বরে হাসে। নূপুর তাকে চিনতে পারেনি। পোশাকের অভ্যন্তরে হারুন হারিয়ে গেছে! না, সে ধরা দেবে না। বরং হারিয়ে থাকলে সুবিধা। প্রতিশোধ নিতে সহজ হবে। আর কেউ না জানুক অন্তত রাত জানে হারুন কেন এখানে! অপেক্ষার চোখে তের বছর সে রাতের পানে তাকিয়ে! মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খায়। দুর্ভাগ্যগুলো যেনো স্ট্রিট ব্রেকার! জীবনের গতিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। তা না হলে মেয়েটির জীবন অন্যরকম হতে পারতো। লোকটি তবু নিশ্চিত হতে চায়, তোমার পরিণতির জন্য কে দায়ী- হারুন না রিমন?
না না, হারুনের দোষ নেই। আমিই তার জীবনটা নষ্ট করেছি। ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় আমার।
বুকের পাষাণ প্রাচীর ভেদ করে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। মাথার চুল খামচায়। অসম্ভব যন্ত্রণা। থর থর করে হাত-পা কেঁপে ওঠে। নূপুর তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
খুব কি কষ্ট হচ্ছে?
সুখ-দুঃখের বোধ লোপ পেয়েছে। কর্তব্য সম্পর্কে ভাবিত। নূপুর বুঝতে পারে না এই মুহূর্তে তার কী করা উচিত! লোকটি ঝিম ধরে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকে। হয়তো ফেলে আসা স্মৃতি প্রচণ্ড জোরে নাড়া দিচ্ছে। রাত প্রায় শেষ শেষ। হারুন টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়। যেতে হবে। নূপুর আপত্তি করে। বাঁধা দেয়।
শূন্য হাতে বিদায় নিলে অমঙ্গল হয়।
সে পিছন ফিরে তাকায়, শূন্য কোথায়; বুক ভরে নিয়ে যাচ্ছি।
কী নিয়ে যাচ্ছেন?
তোমাকে। তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি নূপুর!
নূপুর অবাক হয়। লোকটির পরিচয় জানতে চায়, কে আপনি; আর আমাকেই বা চিনলেন কেমন করে?
নূপুরের চোখে চোখ রেখে বলে, আমার দিকে তাকাও। ভালো করে দেখ তো, চিনতে পার কি না? আমি হারুন।
কী বলে মানুষটা! মাথা খারাপ হয়েছে না কি? এও কি সম্ভব! শেষ কথাটি বুকের গহীনে বারবার প্রতিধ্বনিত হয়। অবিশ্বাসী চোখে তাকায়। ভয়-আতঙ্ক-উচ্ছ্বাস ক্রম পরম্পরায় তার চোখে আলো ফেলে যায়। অলস চোখ জানালার ফাঁক গলে সমুদ্রের পানে ছুটে যায়। ঢেউয়ের পরে ঢেউ এসে বালিয়াড়িতে আছড়ে পড়ছে!