গল্পের নেপথ্যকথন
নিজের গল্পের মধ্যে কোনটি প্রিয় তা বলা খুব কঠিন। সব গল্পই সংবেদনশীল হৃদয় দিয়ে লেখা, জীবন আলোড়িত করা তোলপাড় নিয়ে লেখা। অব্যক্ত বেদনা কিংবা প্রতিবাদ কলমের ডগায় নিয়ে লেখা। প্রতিটি চরিত্র আমার চেনা, আমার চারপাশে ঘুরঘুর করে তাদের নানাবিধ অসহায়ত্ব নিয়ে। আমার গল্প নিছক গল্প নয়। চরিত্রগুলো নেহায়েৎ গল্পকারের সৃষ্ট চরিত্র নয়। প্রতিটি চরিত্র আমার যাপিত, যখন কলম চালাই, এই নীতা কিংবা গল্পটির প্রটাগনিস্ট; এরা আমার খুব চেনা কিংবা আমিই তারা।
তবু এই গল্পটি পছন্দ, কারণ গল্পটিতে আমার চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া মেয়েদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনাগুলোকে একটি একক দুর্ঘটনায় না দেখে তার সমাজ ও পারিপার্শ্বিক রিয়েলিটি সুক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টিতে দেখেছি। গল্পটির শৈলীতে নিজের স্বকীয়তা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। সবশেষে এই সমাজে একটি মেয়ের বেড়ে ওঠার পেছনের সব অনুষঙ্গ কেমন তার সঙ্গে বিপরীত আচরণ করে, সেই ডিসকোর্সটাই মুখ্য করে রাখতে চেয়েছি।
একটি সন্ধ্যা যেভাবে রাত হয়
কালভার্টের পরে উপুড় হয়ে হুড়মুড় সন্ধ্যা নেমে গেছে। কালভার্টের দুই পাশে অনতিবয়স্ক গাছগুলোর ডালপালা পোঁচ-পোঁচ অন্ধকার আঁকড়ে ধরছে অন্য অনেক দিনের চেয়ে দ্রুত, নিশ্চল অভ্যস্ততায় মেনে নিচ্ছে নীড়েফেরা পাখ-পাখালির হল্লা, দু-একটা হোন্ডা অভ্যাসমতোই কালভার্ট পার হয়ে পাড়ামুখী হাওয়া হয়ে যায় চারপাশের উদ্দেশে নির্বিকার পাতা ধুলো বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে। কাছে-ধারে, দূরে-পিঠে বাসাবাড়িগুলোর রান্নাঘরে-স্নানঘরে বারান্দায় জ্বলে উঠতে থাকে নিত্যনৈমত্তিক আলো, দিনভর আত্মব্যস্ত মানুষগুলো ক্রমশ ব্যক্তিগত ঠিকানাগামী কোঠরে প্রবশ করতে থাকে অন্যান্য দিনের মতোই রাত ঘনিয়ে আসার প্রস্তুতিতে। ঘনায়মান রাতের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে থেমে যেতে থাকা পাখিদের হল্লা ক্রমশ গিলে খেতে খেতে কালভার্টের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো কিছু একটা দেখে নিতে চায় নিচু হয়ে, পাড়ার মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের মোহময় কণ্ঠ চরাচর ব্যাপ্ত করে আরও দ্রুত করতে থাকে রাতের আগমন।
ঠিক এ সময় আম্মার অস্থিরতা অসহ্য হয়ে উঠলে তিনি ঘর-বাইর করেন আশঙ্কাময় দু্শ্চিন্তায়। এটা তার রোগ। হাইপার টেনশন। গত জীবনের লড়াইজাত উৎকণ্ঠা থেকে উদ্ভূত। ঠিক এইসময় তার ব্লাডপ্রেসার মাপলে ওপর-নিচের রিডিং দেখলে নিশ্চিত পাড়ার ডাক্তার রনজিত কাকা চোখ বড় বড় করে নির্দেশ দিতেন, তাড়াতাড়ি ওষুধ খাইয়া ঘুমান গা যান। আর আমি ঝড়ের মতো তীব্রবেগে মাকে বাঁচানোর প্রচণ্ড আকাঙক্ষায় বাড়ি ফিরে ওষুধ খাইয়ে আলো নিবিয়ে দরজা ভেজিয়ে সোহাগকে মায়ের বিশ্রামে বিঘ্ন না ঘটানোর আকুতি জানাতাম ইশারায়। এসব ইশারা ইঙ্গিত-দু্শ্চিন্তা কিছুরই তোয়াক্কা না করে যদিও সোহাগ চিল্লানোর প্রয়োজন হলে চিল্লাতোই। তাই বলে আমার আকুতির আকুলতা ব্যাহত হতো না। কিন্তু আজ আমি সেই আকুলতা প্রকাশে অক্ষম।
কিন্তু কোনোভাবেই আমার হৃদয়ের দেয়াল ভেদ করতে না পেরে একদিন আবিষ্কার করি নিক্সন বেশ বদলে গেছে। পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ সব বদলে গেছে অ্যাবাউট টার্ন করে। প্যান্টের মধ্যে শার্ট গুঁজে, কোমরে চামড়ার বেল্ট বেঁধে সে মিছিলে স্লোগান দেয়।
অবশ্য আজ আমি যেটিতে সক্ষম ছিলাম, তা হলো এই যে, আম্মার এই উৎকণ্ঠাময় পায়চারীর সূত্র ধরে নির্দ্বিধায় সব কথা নিজেই বলে যেতে পারতাম। গল্পটি জমে উঠতো, হয়ে উঠতো, বেশ হয়ে উঠতো। কিন্তু বলবো না। এই ম্যাড়ম্যাড়ে ক্লিশে বহুল ব্যবহৃত আঙ্গিক হবে হয়ে ওঠার প্রবল সম্ভাবনা, যা লেখককে প্রভাবিত করছিল, তা সমূলে বিনষ্ট করে আম্মা মোবাইলে নম্বর টিপলেন নীতার। আর নীতাও মোবাইলের অন্যপ্রান্ত আম্মার তটস্থ কণ্ঠস্বর শুনে তার আম্মার পুনঃপুনঃ বারণ অগ্রাহ্য করে দ্রুত গায়ে বোরকা চাপিয়ে রিকশায় উঠে বসলো আমার বাসার উদ্দেশে ভর সন্ধ্যায় যাত্রার নানা বিপত্তির আশঙ্কা উপেক্ষা করে।
নীতার ভাষ্য
ঋতুদের বাসায় ঢুকতেই ঝিমরত সোহাগকে চোখে পড়লো বারান্দায়, দেখে সন্দেহটা স্থিতির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যায়। ক মাস ধরে সোহাগের কারণেই চরম অশান্তিতে ডুবে ছিল পরিবারটি, যার বৃত্তান্ত বলতে বলতে একান্ত এই বন্ধুটির কাছে চোখের জল লুকাতে পারতো না ঋতু। গেলো বছর ওর ষোলোতম জন্মদিনের কেক কেটেছিলাম না, ঋতুর আম্মার উদ্বিগ্ন আহ্বানের তাড়া, এই বয়সেই সোহাগের ঢুলুঢুলু দৃষ্টির রহস্য উন্মোচনের বেদনাময় প্রচেষ্টায় মুহূর্তের জন্য দিকভ্রষ্ট হয়ে যায়। বারান্দায় জ্বলতে থাকা টিমটিমে আলোর আবছায়ায় আমার দৃষ্টিগ্রাহ্য না হয়ে হঠাৎ হেচকা টানে টেনে নিয়ে যায় বারান্দালাগোয়া আট ফুট বাই আট ফুট কুটুরিতে। যে ঘরটিতে একটি চারপেয়ে আর টেবিল দাঁড়িয়ে থাকার পর আর কারও দাঁড়ানোর জায়গা অবশিষ্ট থাকে না, সে ঘরটিতে সোহাগের থাকার ব্যবস্থা। ছেলে বড় হলে মা আর বোনের মাঝখানের গুটিসুটি উষ্ণতা থেকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। ঘরটা অন্ধকার, কোনো আলো জ্বালানো নেই, শুধু ঋতু দরজাটা খুললো বলেই বাইরের বারান্দার টিমটিমে আলোটা ততধিক টিমটিমে হয়ে বাধ্য ছেলের মতো বিছানাটার ওপর চুপ করে শুয়ে থাকলো। ঋতু আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো, শোন, আম্মা যা যা জানতে চায়, হাছা হাছা সব কইয়া দিবি। এই সময়ে আম্মারে কিচ্ছু লুকাবি না।
এই সময়? মানে কোন সময়? প্রশ্নটা করার ঋতুকে করার আগেই খালাম্মা এক ঝটকায় টান দিয়ে আমাকে মূল ঘরে ঢোকায়। মূল ঘর আর বারান্দায় এই কুটুরি ঘর, পেছনে হাত দশেক দূরে কলতলা আর স্নানঘর কাম টয়লেট এই নিয়ে ঋতুদের অস্থায়ী নিবাস। খালু মানে ঋতুর আব্বা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর ঋতুরা যখন এ বাসায় ভাড়াটিয়া হয়ে আসে, তখন অবশ্য এই মূল ঘরটিই ছিল কেবল। মাস শেষে ভাড়া আসার উৎস যখন অনিশ্চিত আর বছর ছয়েকের সোহাগের যখন পিতা-মাতার বিচ্ছিন্নতার অব্যবহিত প্রতিকূলতা স্পর্শ করেনি বলে চুপচাপ গুটিসুটি মেরে মা বোনের মাঝখানে নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকতে পারতো, তখন এটুকুতেই সন্তুষ্টির অন্ত ছিল না খালাম্মার। তারপর যত দিন গড়িয়েছে, প্রতিকূলতার পাথর নানা রঙ, নানা মাত্রায় ক্রমাগত ভারী হয়ে মাথায় চেপেছে, ততই বারান্দা লাগোয়া কুটুরি, সীমান্ত ঘিরে কাঁটাতার বারান্দায় গ্রিলের খাঁচায় তালা কতশত প্রতিরক্ষার আয়োজন করতে হয়েছে।
মূলঘরের মাথার ওপর মাচাঙ থেকে ঘররঘর ঘররঘর ফ্যানের শব্দ আর এনার্জি বাল্বের ম্রিয়মান আলো, কে বেশি প্রয়োজনীয় এখন? ঘরখানার তুলনায় কম ঔজ্জ্বল্যের ছোপ ছোপ অন্ধকারে খালাম্মার মুখের উদ্বিগ্নতার দ্রুতগতিতে দুশ্চিন্তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাক্ষী হতে থাকি আমি। ঘররঘর মার্কা ফ্যানটার শব্দ যতই অসহনীয় হোক, বাতাস খুব কম নয়, তার নিচে বসে ঘামছেন খালাম্মা। হাছা কইরা ক ত মা, ঋতু কার লগে প্রেম করতো? কপালজুড়ে এবার আমার ঘামও টের পাই পেরে উঠছে না ঘররঘর মার্কা ফ্যানের অবিশ্রান্ত বিলিয়ে যাওয়া বাতাসের সাথে। ঋতুটার স্বভাব একটু পাতলা; শহুরে-গেয়ো-শ্রেণি-পেশা বিবেচনা না করে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা, নারীর জন্য নির্ধারিত প্রচলিত আচরণবিধি লঙ্ঘন করে একা একা নির্বিকার পথ হাঁটা ইত্যাদির কারণে ছোট্ট শহরটাতে সবাই কমবেশি চেনে ওকে। রিকশায় না চড়ে, হেঁটে চষে বেরানো ছাড়া পরিশ্রমের পয়সা কটা দিনমান ট্রেইলারি করা মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বিকল্প ছিল না ওর। আর তাতেই পাড়ার বখাটে থেকে শহরের উঠতি ছাত্রনেতা, সবার আড়চোখের লক্ষ্যবস্তু হতো ও। এলাকায় ওকে ছাতাওয়ালী একনামে সবাই চিনে। খালাম্মার পুনরায় তাড়ায় দুশ্চিন্তার ভয়ার্ত চাপ আর চাপা পড়ে না, অ মা নীতা হাছা কইরা ক। কী কই আমি, হাছাটাই কী কই আর মিছাটাই কী কই? ঘরে বাইরে প্রতিকূলতার সাথে যতটা যুদ্ধ উনি করেছেন, করে চলেছেনম ঋতুর কি তারচেয়ে কিছু কম?
ঘটনা-১
বেলা সাড়ে চারটায় আকতার স্যারের স্পেশাল ক্লাস। পাগলাটে স্যার ক্লাসটাইমে ক্লাস না নিয়ে এক্সট্রা টাইমে বিরতিহীন ক্লাস নেয় বলে সবচে বেশি সমস্যা হয় আমার। টিউশনির বাসাগুলোতে ফোন দিয়ে অজুহাত সাজাতে হাঁফিয়ে যাই, কত আর মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, মায়ের প্রেসার জাতীয় কারণের পুনরাবৃত্তি! তবু স্যারের ক্লাসটা করতে হয়। এই স্যারের ক্লাস করলে, কোর্সটার প্রস্তুতিতে তেমন আর না পড়লেও চলে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ঘড়িতে চারটে বেজে পনেরো মিনিট, হাতে পনের মিনিটের তাড়া। ব্যাগের কোনায় লুকিয়ে রাখা পাঁচ শ টাকার নোটটা আবার সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখি। বিশ টাকা রিকশাভাড়ার জন্য নোটটা খুচরো করার আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দেই, মাসের রয়ে গেছে আরও সপ্তাহখানেক। বলা তো যায় না কখন কী সে প্রয়োজন হয়। সোহাগের হাতটান থেকে বাঁচতে কত কায়দা করেই না লুকিয়ে রাখা নোটটা। পথ কমানোর জন্য পাড়ার পেছন দিয়ে ফাঁড়ি পথ ধরি, আর যথাসময়ে পায়ের দ্রুততার সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে যথাসময়ে পৌঁছে যাই। ক্লাস শেষে ফেরার সময় সহপাঠী নিক্সন আমার সঙ্গ নেয়, দুই-চারটি প্রয়োজনীয় ক্লাসনোট নেওয়ার প্রয়োজন কিংবা অজুহাতে। উদ্দেশ্যটা আমার কাছে খুব পরিষ্কার না হলেও আপত্তি করি না।
ফাঁড়ি পথে ঢোকার মুখেই আড্ডারত ছেলেগুলো পথ আটকায়, ওই খাড়া, এই হাইঞ্জাকালা পরপুরুষ লইয়া যাস কই? আমি পোড়খাওয়া মেয়ে। বাবা যার মেয়ের প্রাইভেট টিচারকে বিয়ে করে, প্রথম পক্ষের স্ত্রী সন্তান ফেলে দ্বিতীয় সংসার পাতে আর মা দুই বোনকে নিয়ে উদয়াস্ত ঘরে বাইরে লড়ে চলে কেবল মনের দাপটে, সেই মায়ের দাপট আর সাহসের সাক্ষী আমি। মায়ের কাছাকাছি এত বছর ঘুমানোর পরও কিছু বাতাস কি প্রতিস্থাপিত হয়নি মায়ের কাছ থেকে মেয়ের গায়ে আর মনে? এ রকম উৎপাত আম্মাকে দেখেছি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে, সেই অভিজ্ঞতা আমাকে সাহস জোগায়, আমি ঘাবড়ে না গিয়ে ক্ষিপ্ত উত্তর দেই, তোগো সমস্যা কী, রাস্তা ছাইড়া খাড়া, নইলে খারাপ কাজের লাইগ্যা পথ আটকাইছস কইয়া চিল্লাইয়া পাড়ার মানুষ দলা করুম। বীরপুরুষেরা উল্টো ঘাবড়ে যায়। এরা মানে এটা আমি পারবো। পুরুষ অভিভাবকহীন জানালায় উঁকি দেয়া শহরের প্রখ্যাত যুবনেতারে একদিন আম্মা যে দৌড়ানি দিয়েছিল তার স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বলে সবার কাছে। আম্মার চিৎকারে সেদিন পাড়া-পড়শীরা গভীর রাতে একত্রিত হয়েছিল আর পরদিন স্থানীয় পত্রিকায় হেডলাইন নিউজ হয়েছিল। ঘটনা শেষ হয়েছিল সেই যুবনেতা বহিস্কৃত হবার মধ্য দিয়ে। এই বীর পুরুষেরা সম্প্রতি সরকারি ছাত্রসংগঠনের অফিসে ঘনঘন যাতায়াত শুরু করেছে পতপ্রত্যাশী হয়ে কেন না সম্মেলন অতি নিকটে। দ্রুত পায়ে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাবার মধ্য দিয়ে ঘটনাটা শেষ হয়ে যেতে পারতো।
কিন্তু বেচারা নিক্সনের গোবেচারা চেহারায় ফুটে ওঠা প্রেমময় দৃষ্টিটা এই সন্ধ্যাটির দ্রুত রাতের দিকে এগিয়ে যাওয়া অবশ্যাম্ভাবী অন্ধকারেও আমার পড়তে ভুল হয় না। একা চলার বন্ধুরতাগুলোকে যেভাবে প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করি, নিক্সনকে ঘরে ঢোকার আমন্ত্রণ না জানিয়ে সেই উপেক্ষাটুকু আপদ নিক্সনকেও বুঝিয়ে দেই। কিন্তু বাসায় ফিরে মোবাইল খুলেই দেখি নিক্সনের এসএমএস, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। নীতাকে কল করে আমি হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ি। এইডা লইয়া কয়জনরে? আমার প্রত্যুত্তর না পেয়ে নিক্সন-পর্ব সমাপ্ত হয়ে যেতে পরতো, যা হয়েছে অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রজাপতি অন্য ফুলের সন্ধানে যেতে সময় ব্যয় করেনি। কিন্তু এই প্রজাপতি হাল ছাড়েনি একদিনেই। পরপর কয়েকদিন কলেজগেটে দাঁড়িয়ে থাকে। তার দৃষ্টি বুঝিয়ে দিয়েছে সারারাত ঘুমায় না সে। এসএমএস-এর ভারে আমার অসুস্থ মোবাইলটা কোঁকাতে কোঁকাতে বন্ধ হয়ে যায়। হাত কেটে নাম লেখা, ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে হাসপাতাল যাওয়া, কী করতে বাদ রেখেছে সে! কিন্তু কোনোভাবেই আমার হৃদয়ের দেয়াল ভেদ করতে না পেরে একদিন আবিষ্কার করি নিক্সন বেশ বদলে গেছে। পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ সব বদলে গেছে অ্যাবাউট টার্ন করে। প্যান্টের মধ্যে শার্ট গুঁজে, কোমরে চামড়ার বেল্ট বেঁধে সে মিছিলে স্লোগান দেয়।
ঠিক তখন নিক্সন পাতাল ফুঁড়ে দৈত্যের মতো হঠাৎ এসে জাপটে ধরে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে থাকে আমার গলায় কপালে ঠোঁটে। ভ্যাবাচ্যাকার প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েই আমি চিৎকার করি গায়ের সমস্ত শক্তি গলায় জড়ো করে। সম্মিলিত গানের সুরে আমার চিৎকার নিশ্চিহ্ন হয়ে মিশে যায়।
গ্রামের গোবেচারাকে মিছিলের সম্মুখভাগে বেশ অচেনা লাগলেও, আমার দিকে প্রতিফলিত ক্রুর দৃষ্টি তার মোটেই অচেনা লাগে না। আমিও যথারীতি পাত্তা না দিয়ে মনে মনে স্বস্তি পাই, যাক বাবা আমার মোবাইলে উৎপাত, বাসা পর্যন্ত পিছু নেওয়ার উৎকট উৎপাত, টিউশনির বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে থাকার দৃষ্টিকটু অত্যাচার থেকে তো বেঁচে গেছি!
পুনরায় নীতা
খালাম্মার লড়াইক্লান্ত চোখ অশ্রুতে টলটল করে, অ মা নীতা, আমি না তর আম্মার মতো, কিচ্ছু লুকাইস না তর পায়ে পড়ি মা। আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই। খালাম্মা এবার সত্যি কাঁদতে থাকেন। একটা সংকটে যেমন অতীতে মুখোমুখি লড়াই করে আসা সকল সংকট, যন্ত্রণা, সংকট থেকে উত্তরণ কিংবা অবতরণ যাবতীয় ইতিহাস চারপাশ থেকে জাপটে ধরে দুর্বহ স্মৃতি নিয়ে এক্ষেত্রেও তাই হলো, খালাম্মা বলতে থাকেন, দেহস ত মা কত ঝড়-ঝাপটা সামলাই নিত্য, এর মধ্যেই পোলাডা গেছে বিগড়াইয়া। হ্যাঁ মধ্যদুপুরে ঘুম থেকে জেগেই মা-বোনের সাথে হল্লা-চিল্লা, হাতখরচের টাকা না পেলে ঘরের গ্লাস-কাপ ভাঙা সব সাক্ষ্য দেয় সোহাগের অধপতনের। এই এক দুর্বিষহ যন্ত্রনা প্রতিদিন অনটনের সংসারে। এই সংগ্রামক্লিষ্ট মানুষগুলোর ওপর যন্ত্রণার পর যন্ত্রণার বোমা চাপিয়ে প্রকৃতি যেন দ্বিগুণ আনন্দ পায়। খালাম্মা বলতে থাকেনম বাপডার আর যাই হোক, এসব খারাপ অভ্যাস আছিল না, কারও দোষ দেই না রে মা, নিজের কপালরে ছাড়া! হ্যাঁ ঋতুর আব্বার আর কোনো অভ্যাস দূরে থাক, সিগারেটের নেশাও ছিল না। মুখচোরা লাজুক স্বভাবের লোকটা যখন ঋতুর কমবয়সী হাউস টিউটরের সাথে প্রেম করে খালাম্মার কাছে অসতর্ক মুহূর্তে ধরা পড়ে গেলেন, তখন খালু অস্বীকার করলেন না বটে, খালাম্মার হাতে পায়ে ধরে দিব্যি করলেন ফিরে আসবেন এই ভুলের মরিচীকা থেকে। এসেও ছিলেন। কিন্তু ফ্যাকড়া বাঁধালো সেই মেয়ে, বাড়ি এসে খালাম্মার আঁচলে ফুঁপানো কান্নার জল মুছে জানিয়ে গেলো, সে তিন মাসের প্র্যাগনেন্ট। অশ্রু মোছা ফোঁপানোর সাথে হালকা স্বরের হুমকিও ছিল, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ ডাকার। তার আর দরকার পড়েনি। খালাম্মার মতো তীক্ষ্ম আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মহিলা দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের হাত ধরে বিনাবাক্যব্যায়ে পথে নেমে গেলেন। খালুর হাজারটা দিব্যি তাকে আর ফেরাতে পারেনি, কিন্তু সত্যি খালাম্মা কারে দোষ দেবেন কপাল ছাড়া, যখন তার প্রাক্তন স্বামীর দ্বিতীয় সংসার এখনো সন্তানহীন।
খালাম্মা আবার কাঁদেন, ক ত মা ক, হাছা কইরা ক, কার লগে প্রেম করে মাইয়াডা। আমি তলপেটে চাপ অনুভব করি, ঠিক যেরকম পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে হয় আমার, অতিরিক্ত নার্ভাসনেসে। টয়লেটে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে পেছন দিকটায় যেতেই ঋতু আমাকে হ্যাঁচকা টানে নিয়ে যায় রান্নাঘর লাগোয়া নিমগাছটার নিচে ঝিম মারা অন্ধকারে, হাজার রঙ মেলে দেওয়া রাতের অন্ধকারে ততক্ষণে সন্ধ্যাটা মিশে গেছে। ঋতু আমার হাত ধরে বলে, কইয়া দে, কইয়া দে, হাছা কথাডা কইয়া দে। এই সময় আর লুকাইয়া কী করবি?
ঘটনা-২
আসলে নীতা ছাড়া তো ঘটনাটা আর কেউ জানে না। নীতা আমার সত্যিকারের বন্ধু, আমি ন্যায় করলেও বলে ঠিক, অন্যায় করলও বলে ঠিক। এই আমি যখন আকিব স্যারের সাথে অসম প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। নীতা বলে, প্রেম তো প্রেমই, পড়লে কী করবি, প্রেম কি এত বলে কয়ে হিসাব করে হয়? তাই তো প্রেম কি আর এত হিসাব করে হয়? নইলে আকিব স্যারের প্রেমে পড়বো কেন আমি? যে আকিব স্যার টেবিলের নিচে ১০ বছর আগে তার থেকে ১২ বছরের ছোট ছাত্রীর পায়ে পা ঘষিয়ে টিউশনি হারিয়েছিল, সেই আকিব স্যারের প্রেমে পড়ে গেলাম আমি?
নীতার মা আর আমার আম্মার আপত্তি সত্ত্বেও আমরা দুজন সেবার কলেজের রিহার্সেলে সন্ধ্যারাত অব্দি কোরাস, এসো হে বৈশাখ এসো এসো…গাই। চৈত্রের শেষাশেষি শেষ বিকালে সেদিন ঈশান কোন ঘনকালো হয়ে ডালভাঙা বাতাস ছেড়ে বৈশাখের আগাম বার্তা দিলে আমি আম্মার হাইপার টেনশনের কথা ভাবে ফোনটা নিয়ে রিহার্সেলের সম্মিলিত শব্দ থেকে নিরিবিলি দূরত্বে আসি, আম্মাকে একটা ফোন দিয়ে আমার নিরাপদে থাকার খবরটুকু জানানোর জন্য। ঠিক তখন নিক্সন পাতাল ফুঁড়ে দৈত্যের মতো হঠাৎ এসে জাপটে ধরে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে থাকে আমার গলায় কপালে ঠোঁটে। ভ্যাবাচ্যাকার প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েই আমি চিৎকার করি গায়ের সমস্ত শক্তি গলায় জড়ো করে। সম্মিলিত গানের সুরে আমার চিৎকার নিশ্চিহ্ন হয়ে মিশে যায়। তখন কোথা থেকে দেবদূতের মতো হাজির হয় আকিব স্যার, নিক্সনকে এক চড়ে মাটিতে ফেলে আমাকে আগলে নিয়ে বাসামুখী রওয়ানা হন রিকশা ডেকে। ইলেক্ট্রিসিটি গিলে খাওয়া, গাছ উপড়েপড়া কালবোশেখির তীব্র বাতাসে আমি রিকশায় কবুতরের মতো কাঁপতে থাকি। বিষণ্ন গম্ভীর মুখে আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই কর্তব্য সারেননি আকিব স্যার, ঘটনাটা বেমালুম চেপে গিয়ে লোকলজ্জার হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে বিশাল দায়িত্বেরও পরিচয় দেন।
কেউ তো আমাদের গলাগলি করা বন্ধুত্ব দেখবো না, আমার এই বীভৎস মৃতদেহ দেখবো, আর কষ্টকে পাত্তা না দিয়া তর জীবন দুর্বিষহ কইরা তুলবো। ভাগ। ভাগ।
আমি মনে মনে অনুতাপে ভুগি, বেসরকারি কলেজটিতে সদ্য যোগদান করা আকিব স্যারকে দেখেও না দেখার ভান করতাম। কৃতজ্ঞতায় নাকি মুগ্ধতায় আমি আকিব স্যারের প্রেমে হাবুডুবু খাই। এবার আকিব স্যারের মোবাইলে আমি ম্যাসেজ পাঠাই আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশ কদিন আকিব স্যার কোনো রিপ্লাই দেন না। বিয়ে-শাদি, ঘর-সংসার করে আকিব স্যার আমুল পাল্টে গেছেন, প্রথম যৌবনের লজ্জাকর অভিজ্ঞতা তিনি ভুলতে চান আমার এমন ধারণা পাল্টে দিয়ে স্যার একদিন আমাকে বাসায় ডেকে পাঠান। আমি জীবনে প্রথমবার সাজগোজ করি, মুখে পাউডার, নীতার কাছ থেকে ধার করে এনে লিপস্টিক, সবচেয়ে ভালো জামাটা পরি। স্ত্রীর উপস্থিতিহীন ঘরে তিনি আমাকে দোকান থেকে কেনা ডালপুরি আর চা খাওয়ান। হাতে ধরা আর কপালে একটা চুমু খাওয়া ছাড়া আর মোটেই সীমা লঙ্ঘন করেন না খালি বাসা পেয়েও। আমি আরও আরও গভীর প্রেমে নিমজ্জিত হয়ে ধুকধুক করতে থাকি, চোখের পাতা বন্ধ করলেই কপালে একজোড়া নরম ঠোঁটের স্পর্শের শিহরণে ধড়ফড় করে উঠি, গায়ের সমস্ত লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। গভীর রাতে স্যারকে মোবাইলে টেক্সট লিখি। স্যারও সাথে সাথে রিপ্লাই দেয়। এলাকার সীমিত সীমাবদ্ধতায় দু’চারদিন রেস্টুরেন্টের মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কেবিনে ঢুকে হাতে হাত রেখে হালিম খাই। এমন তুমুল হাবুডুবু খাওয়া প্রেমময় সময়ে স্যার একদিন খালি বাসায় জোর করে আমাকে এমনভাবে বিছানায় ফেলেন যে মুহূর্তে আমার গা রি রি করে ওঠে। প্রেমের স্পর্শে সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার বোধের বদলে আমার ভেতরে জাগ্রত হয় আত্মোপলব্ধি, শিকারের লক্ষ্য মাছটিকে আটকাবেন বলে তিনি ধীরে ধীরে জাল গুটাচ্ছিলেন! কোথা থেকে অতিমানবিক শক্তি পাই আমিও সেদিন, এক ঝটকায় তাকে মাটিতে ফেলে দরজা খুলে বাইরে আসি। ভীতি নয়, লজ্জা নয়, প্রতারণার লজ্জায় আমার গলা ধরে আসে, আমি চিৎকার করে বলি, আমার কথাডা কাউরে না জানাইয়া আপনে মহৎ হইছিলেন, আমি কিন্তু মহৎ হমুনা, প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে কমপ্লেন করুম। স্যারের দৃষ্টিতে ভেসে থাকা ভয়ার্ত দুর্বল ক্রুরতা পেছনে ফেলে আমি প্রেম থেকে ফিরে আসি।
সবশেষে পুনরায় নীতা
খালাম্মার চোখের অল্প সল্প অশ্রু স্রোতে পরিণত হয়। পাগলের মতো এখানে ওখানে ফোন করেন তিনি। ঋতু যে সব বাসায় টিউশনি করতে যায়, যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়, যে গানের দলটিতে রিহার্সেল করতে যায়। প্রত্যুত্তরে হতাশ হয়ে ফোন রেখে আমাকে উন্মাদের মতো জড়িয়ে ধরেন, অ মা নীতা, কিতা করতাম অহন, কস না ক্যান? মাত্রাতিরিক্ত ব্লাড প্রেসারের চাপেই সম্ভবত খালাম্মা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না, বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েন। পুনরায় প্রলাপ বকতে থাকেন অতীত সংকটকালের বৃত্তান্ত বয়ান করে, ট্রেইলারি করা আর্থিক অনটনের সংসারে টিউশনি করে অর্থের জোগান দিয়ে চলেছে মেয়েটা স্কুলের গণ্ডি পার হয়েই। কোনোদিন ভালো একটা মাছের টুকরা খায়নি, ভালো একটা জামা পরেনি, কোনো চাহিদা আবদার নেই মেয়েটার। খালাম্মার আহাজারিতে আমার চেপে রাখা অশ্রুও অবাধ্য হয়ে ওঠে।
বাইরে অনেক আগেই সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত নেমে এসেছে আরও গভীর হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে। ব্যাগের ভেতর মোবাইলফোনটা বেজে উঠে, বুঝতে পারি আমার মায়ের ফোন। ব্যাগ থেকে খুলে ফোনটা রিসিভ করার আগেই সাইরেনের মতো নিস্তব্ধতা খানখান করা ভোঁ ভোঁ শব্দে অন্তরাত্মা কঁপে ওঠে। পুলিশের গাড়ির রহস্যময় আলো খোলা দরজা দিয়ে ঘরে আছড়ে পড়ে ম্লান আলোর দুর্বহ দুশ্চিন্তাকে আরও অস্থির অসহনীয় করে তোলে। সাইরেনের শব্দটা থেমে যাওয়ার পর সোহাগের কণ্ঠাটা কানে আসে, আম্মাগো আফামনি। ধেয়ে আসা আশঙ্কার গভীর অন্ধকার চিড়ে দৌড়ে যাই আমরা কালভার্টের ওপরে, যেখানে পুলিশে মানুষে বেশ একটা জটলা, সোহাগের কণ্ঠের উৎপত্তিটা এখানেই। দুপাশের অনতিবয়স্ক গাছগুলোর মতো সবার দৃষ্টি কালভার্টের নিচে, ঝরাপাতা জংলি গাছের আড়ালে। পুলিশের ফোকাস করা কৃত্রিম আলো ছাপিয়ে ঋতুর দেহ গ্রাস করা ঘন অন্ধকারেও আমার কিংবা খালাম্মার ঋতুর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা নিষ্প্রাণ দেহটা চিনতে মোটেই বেগ পেতে হয় না। খালাম্মা নিমিষে মূর্ছা গিয়ে বেঁচে যান মুহূর্তের ভয়াবহ মানসিক চাপ থেকে, আমার মুঠোয় বাজতে থাকা মোবাইলফোনে আমার মায়ের ক্রমাগত তাড়া আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়তে অভিঘাত করে, আমি উপলব্ধি করি এখান থেকে সরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। সবার অলক্ষ্যে ভয়ডর উপেক্ষা করে ফাঁড়ি পথ ধরি। পাড়ার উঠতি ছাত্রনেতাদের হো হো হাসির শব্দ কাছেধারে কোথাও সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে মিশে যায়। আর আমি আকাশ-পাতাল ভাবনায় পাড়ার উঠতি মস্তান, নিক্সন, আকিব স্যার ইত্যাদি নানা মুখের মিছিলে হাবুডুবু খেতে থাকি, ঋতুর মৃত্যুর বিষাদ ছাপিয়ে কতগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন আমাকে চারপাশ থেকে বিপর্যস্ত করে তোলে। ঠিক তখন ঋতু আবার আমার হাত ধরে টান দেয়, ভাগ, ভাগ, তাড়াতাড়ি ভাগ। মোবাইলফোনের সিমটা পানিতে ফালাইয়া কয়েকমাস এই শহর ছাইড়া লুকাইয়া থাক। নইলে তোর এই প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলো নিয়ে পুলিশ, সাংবাদিক, উকিল তর জীবনডা ছ্যাড়াব্যাড়া করে ফেলব। কেউ তো আমাদের গলাগলি করা বন্ধুত্ব দেখবো না, আমার এই বীভৎস মৃতদেহ দেখবো, আর কষ্টকে পাত্তা না দিয়া তর জীবন দুর্বিষহ কইরা তুলবো। ভাগ। ভাগ।