এই মন কেন যে বিক্ষুব্ধ হয়! এর উৎস খুঁজে পাই না কিছুতেই। কখনো ঘুমের ঘোরে চমকে উঠি। কখনো আবার পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়াই। কিছুই ভালো লাগে না আমার! ঘর থেকে বাহির, সবুজ প্রান্তর। শস্যতে যেখানে বিস্তর ভালোলাগা ছিল। এখন সবই যেন ধূসর-বিবর্ণ। দিন শেষে পাখির নীড়ে ফেরার মতোই ঘরে ফিরে আসি। মনে হয় খোলা জানালার নিচে অন্ধকার। দিনেদিনে এই মনরোগ আমার বেড়েই চলেছে। মনে হয়, এখান থেকে কিছুতেই আমার নিস্তার নেই, কিছুতেই আমার মুক্তি নেই। সর্বপরি আমি একজন অসাড় নিঃস্তেজ মানুষ। আমার শরীরে যে রক্ত, সেখানে জীবাণুর বসবাস। ঘুণপোকার মতো আমাকে কুরে-কুরে খায়। এলোমেলো সংসার আমার। মনে হয় সেই যে একাকি জীবন, সেটাই ভালো ছিল। কত আবেগ ছিল, কত উচ্ছ্বাস ছিল। জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্নসাধ ছিল। চোখ বন্ধ করে রাখলে নানা ভাবনা এসে ভীড় করে। সারারাতে একটুও ঘুমুতে পারি না। অথচ আজকের রাতে ভোরের ট্রেনে আবার ঢাকাতে যেতে হবে আমায়। বিছানা ছেড়ে প্রস্তুতি নিতে থাকি। এখনো আমার হাতে ঘণ্টাখানিক সময়। ঘরে আলো জ্বালাই। কিছু সময় পর বারান্দায় এসে দাঁড়াই। আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকাই। পরিষ্কার আকাশ, মনে হয় সেখানে নক্ষত্রের মেলা বসেছে। পেছন ফিরে, রান্না ঘরের দিকে তাকাতেই হঠাৎ চমকে উঠি। এই এত রাতে রান্নাঘরে আবার আলো জ্বলছে কেন! সে দিকে পা বাড়াই।
অন্তরার মা তুমি?
কেন কী হয়েছে? আমি তোমার জন্য রান্না বসিয়েছি। এত দূরের রাস্তায় যাবে তুমি। না খেয়ে গেলে বুঝি আমার চিন্তা হবে না। তার ওপর তুমি আবার ক্ষুধা সহ্য করতে পারো না।
তুমি যে কি? আমি বুঝি বাহিরে থেকে কিছু একটা খেয়ে নিতে পারতাম না।
সেখানে আর সময় না দিয়ে আমি বার্থরুমে গিয়ে একটু ফ্রেস হই। ঘরে এসে কাপড়-চোপড় চেঞ্জ করি। ততক্ষণে অন্তরার মা আমার সামনে গরম ভাত এনে দেয়। তখনো ভাতের গরম ভাব উড়ছে। ফ্রেনের গতিটা একটু বাড়িয়ে দেই। তারপরও ভাত খেতে বেশ কিছু সময় লাগে। অতপর বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনের দিকে এগুতে থাকি। বেশ কিছু রাস্তা আমাকে এগিয়ে দিয়ে যায় আজ অন্তরার মা।
মুলাডুলি স্টেশনের প্লাটর্ফমজুড়ে তখন মানুষ গিজগিজ করছে। মনে হচ্ছে এতটুকু দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঈদের পরবর্তী দিনগুলোয় এমনই হয়। ঢাকাগামী দুটি ট্রেনের যাত্রী একত্রিত হয়েছে আজ। সেই মধ্যরাত থেকে লোকজন আসতে শরু করেছে। রাত্রী পৌনে চারটায় নীলসাগর এক্সপ্রেস আর সাড়ে চারটায় রাজশাহী এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ এখন সকাল ছয়টা বেজে দশ মিনিটি। বারবার স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে ছুটে যাচ্ছি আমি ট্রেনের খবর জানতে। তবে আজ নীল সাগরের আগেই রাজশাহী এক্সপ্রেস আসবে বলে জানিয়েছে স্টেশন মাস্টার। আমার গন্তব্য এয়ারপোর্ট। কোনোমতো এক দোকানের একটা বাঁশের মাচায় জায়গা হয়েছে আমার। সেখানে বসে বসেই রাজ্যের ভাবনা ভাবছি আমি। টিকিট ছাড়া মানুষ আমি, সেজন্য কোনো চিন্তা নেই আমার। যেকোনো ট্রেনে কোনো মতে উঠতে পারলেই হলো। একেবারে ফাঁকা হাত-পা। ব্যাগ বোচকা ল্যাগেজ থাকলে কিছুটা চিন্তা হতো। যেখানে মানুষের ট্রেনে ওঠাই দায়, সেখানে কী করে ব্যাগ বোচকা নিয়ে ট্রেনে উঠব আমি! কেউ কেউ আবার ট্রেনের ভেতরে ওঠার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে বসে আছে। স্টেশনে কয়েকজন মইওলা মানুষ আছে, কুড়ি টাকার বিনিময়ে তারা ট্রেনের ছাদে তুলে দেয়। কিন্তু আমার আবার ট্রেনের ছাদে উঠে ভ্রমণের সাহস নেই। এমনিতেই আমি ভীরু মানুষ। অল্পতেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।
সেও নিশ্চয় ট্রেন মিস করেছে
তখন কেবলই চোখে তন্দ্রার ভাব এসেছ। তখনই স্টেশনের ঘণ্টা বেজে উঠল। হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে রাজশাহী এক্সপ্রেস স্টেশনে এসে দাঁড়াবে। সব মানুষ যেন জেগে উঠল। সোরগোল আরম্ভ হলো। মানুষজন ছোটাছুটি করতে লাগল। অথচ তখনো আমি বসে আছি। আমার একটাই চিন্তা এত-এত মানুষের মধ্যে আমি কি ট্রেনে উঠতে পারব? কিন্তু আমাকে তো ঢাকাতে যেতেই হবে। কয়েক মিনিট পরেই ট্রেনের শব্দ শোনা গেল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। কিন্তু কিছুতেই এগুতে পারছিলাম না। চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। ট্রেন এসে স্টেশনে দাঁড়াল। আমি আমার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে এগুতে থাকলাম। কোনো মতে ট্রেনের দরোজার কাছে গিয়ে পৌঁছালাম। কিন্তু আর এগুতে পারলাম না। মনে হলো কে যেন আমাকে পেছন থেকে টেনে ধরেছে। সবারই উদ্দেশ্য দরোজার হাতলে হাত রাখা। এই ভীড়ের মধ্যেই কয়েকজন মানুষ টেনে হেঁচড়ে ট্রেনে উঠে পড়ল। এবার একটু ফাঁকা মনে হলো। আমি আমার হাত এগিয়ে দিয়েছি, তখনই হুইসেল বেঁজে উঠল। ধীরে ধীরে ট্রেন এগুতে থাকল। আমার চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না তখন।
একটা ট্রেন চলে যাওয়ার পরও মনে হলো একটুও ভীড় কমলো না। আমি সেই দোকানের দিকে এগুতে থাকলাম। যে বাঁশের মাচা ফাঁকা করে রেখে এসেছিলাম, এখন সেখানে অন্য মানুষ গিয়ে বসে আছে। দোকান থেকে একটা সিগারেট নিলাম। সিগারেট ধরিয়ে কেবল একটা টান দিয়েছি, তখনই একজন পেছন থেকে ডাকল, বকতিয়ার ভাই যে। ট্রেন মিস করে ফেললেন বুঝি?
আমি পেছন ফিরে তাকালাম। একটা ব্যাগ হাতে আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে খোরশেদ। সেও নিশ্চয় ট্রেন মিস করেছে।
ও, খোরশেদ ভাই যে। কী মনে করে, কোথায় চলেছেন?
ভেবেছিলাম ঢাকায় যাব! কিন্তু যে ভীড় দেখছি, মনে হয় আজ আর যেতে পারব না।
আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। এভাবে দু-চার জন করে কমতে থাকলে পরের ট্রেনে নিশ্চয় যেতে পারব আমি। এবার আমার নীল সাগরের জন্য অপেক্ষা। আশেপাশের লোকজন বলাবলি করছে, সকাল দশটার আগে নীল সাগর আসবে না। একটু বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসব কি না, ভাবতে থাকি। আবার এমনও মনে হতে থাকে। আমি বাড়িতে গেলে যদি ট্রেন চলে যায়। সে কারণে আপাতত সে চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে বসে থাকি।
আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালেন
রাতের বেলায় স্টেশনে কাউকে চেনা না গেলেও এখন আমার সামনে অসংখ্য চেনামানুষ। তাদের সঙ্গে গল্পগুজব আর চা সিগারেট খেতে খেতে সময় এগুতে থাকল। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় কিছুতেই যেতে চাইছিল না। তার ওপর নানা রকমের চিন্তা তো আছেই। বাড়িতে বউ আর একমাত্র সন্তানকে রেখে এসেছি। আর মেয়েটা তো! অন্তরার কথা মনে হতে বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। অদ্ভুত এক বেদনা খেলা করে যায়। তারপরও সব চেপে থাকার চেষ্টা করি। স্টেশনের বাইরে ফাঁকা ময়দানের দিকে এগুতে থাকি। একা থাকতে বড় ইচ্ছে করে আমার। সেখানে বৃক্ষের ছায়ায় বসে থাকতে ইচ্ছে করে। ধীর পায়ে এগুতে থাকি আমি। এত মানুষের কোলাহল আমার আর কিছুতেই ভালো লাগছে না। বারবার বাড়ির কথা মনে হচ্ছে। এখন কী করছে অন্তরার মা! সে কি আমার কথা ভাবছে এখন? তাকে একটা ফোন দেওয়া যেতে পারে। পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল ফোনটা বের করি। তাকে ফোন দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠি। কিন্তু তাকে ফোন দিতে পারি না। তার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। তার ফোন বন্ধ! হয়তো ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে এখন। কিন্তু তারপরও আমি বারবার চেষ্টা করে যেতে থাকি। এভাবে তো সে কখনো ফোন বন্ধ রাখে না। আমার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। কিছুতেই ঠিক থাকতে পারি না। অস্থির হই। অচেনা একটা যন্ত্রণা এসে ভীড় করে। ইদানিং হঠাৎ করেই আমি অন্য রকম হই। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় আমি যেন কবরে শুয়ে আছি।
মানুষের জীবন আশ্চর্য রকম ব্যথাতুর। অল্পতেই ভেঙে পড়তে চায়। মিথ্যে মনে হয় এই মায়ার সংসার। মিথ্যে এই বেঁচে থাকা। এ সময় আমাকে নানা রকম চিন্তা পেয়ে বসে। ইচ্ছে করে বাড়িতে ফিরে যাই। কিন্তু আমাকে যে ঢাকায় যেতেই হবে। ফাঁকা ময়দানের দিকে আমার আর যাওয়া হয় না। ফিরে আসি আমি। স্টেশন মাস্টারের কাছে আবার খবর নেই।
এই যে ভাইজান, কখন আসবে নীল সাগর? আর কত দেরি!
মনে হলো এত-এত মানুষের জবাব দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে পড়েছে স্টেশন মাস্টার। আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালেন।
যান তো এখান থেকে, ট্রেনের খবর হলে এমতেই জানবে পারবেন।
বিরক্তি মাখা কথা শুনেও, মানুষটার জন্য আমার মায়া হয়, বড় করুণা হয়। কত কত মানুষের কত প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে তাকে। এত মানুষকে সামলাতে একটু বিরক্ত তো হতেই পারে। আমি কিছু মনে না করে ফিরে আসি। এমন তো কত জনের সঙ্গে হয়। সবার সব কথা ধরলে, জগত-সংসারে বেঁচে থাকা কঠিন।
কী করে তার আশা আমি ভেঙে দেই
এখনকার দিনে আর বেশির ভাগ মানুষ হাতঘড়ি পরে না। সময় দেখার প্রয়োজন হলে মোবাইলেই সময় দেখে নেয়। মোবাইল ছাড়া মানুষ আর নেই বললেই চলে। আমি পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে সময়টা দেখে নিলাম। মাত্র নয়টা দশ। কম করে আরও ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। কিছুতেই আর স্থির থাকতে পারি না। আবার দোকানের দিকে এগুতে থাকি। চা-সিগারেট খেয়ে আরও কিছু সময় পার করতে হবে। চায়ের দোকানদার বড় ব্যস্ত সময় পার করছে এখন। দোকানে অনেক ভীড়। হয়তো এখানেও লাইন দিতে হবে। খুব একটা বেশি সময় দেরি হলো না। চা হাতে পেলাম। তবে বসার কোনো জায়গা নেই, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খেতে হবে চা। চা শেষ করে সিগারেট ধরিয়েছি মাত্র তখনই ট্রেনের ঘণ্টা বেজে উঠল। এবার আমার বুকের মধ্যে আবার সেই অস্থিরতা। আবার সামনে যুদ্ধ। যুদ্ধ করেই ট্রেনে উঠতে হবে। নিজেকে একটু সাহসী করার চেষ্টা করলাম। আগেভাগে প্লাটফর্মের একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেখি এবার আমারে কে ঠেকায়! সমস্ত স্টেশনে প্রাণ-চঞ্চলতা ফিরে এলো আবার। সব মানুষের ছোটাছুটি। দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল শোনা যাচ্ছিল তখন। আর কিছু সময় পরই স্টেশনে নীলসাগর ট্রেন এসে দাঁড়াবে। কত দূর থেকে আসে এই ট্রেন। কত মাঠঘাট পেরিয়ে, কত বৃক্ষরাজি রেখে। কত স্টেশনে কত মানুষকে রেখে। তবে খুব একটা বেশি স্টেশনে দাঁড়ায় না এই ট্রেন। নাটোর স্টেশনের পরে মুলাডুলিতে দাঁড়ায় মাত্র। রেল লাইনের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে একটা দানব ছুটে আসছে আমাদের দিকে। এই দানবে চড়ে আমরা অনন্ত দিনের দিকে ছুটে যাব। একটা অন্যরকম অনুভূতি হলো আমার। মনে পড়ে কতবার এই ট্রেনে ঢাকা গেছি। কিন্তু কখনো এমন হয়নি! এমন লাগেনি। এত ভীড় মাড়িয়ে কখনো যেতে হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন এসে দাঁড়ালো স্টেশনে। আমি ছুটে যাচ্ছি ট্রেনের দিকে। আমার সামনে ভীড়। আমার সামনে অসংখ্য মানুষ। কিছুতেই দরোজার হাতল ধরতে পারছি না। প্রাণপণ চেষ্টা আমার। আর একটু এগুলেই দরোজার হাতল পেয়ে যাব আমি। কিন্তু আর পারছি না। আমার মাথার মধ্যে ঘুরে উঠল। মনে হতে থাকল আমি এখনই পড়ে যাব। ট্রেনে না উঠেই ফিরে এলাম। ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে গেছে। তখন স্টেশন প্রায় ফাঁকা। তেমন একটা মানুষজন নেই। আমি চায়ের দোকানের দিকে এগুতে থাকলাম। আমার মাথায় একটু পানি দেওয়া প্রয়োজন। তারপর একটু বসতে হবে কোথাও।
বেশ কিছু সময় চায়ের দোকানে চুপচাপ বসে আছি। বাড়িতে ফেরার কোনো তাড়া নেই। আমি যেন বৃক্ষের মতো বোবা হয়ে গেছি। আমার কোনো ভাব নেই, ভাষা নেই। মাঝেমধ্যে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। এমন সময় আমার ফোনের রিংটন বেজে উঠল। আমি পটেকে হাত দেওয়ার মতোও শক্তি পাচ্ছিলাম না। তারপরও জোরে করে পকেটে হাত দিলাম। মোবাইল ফোনটা বের করলাম। অচেনা একটা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। কিছু সময় পর সেই নম্বর থেকে আবার ফোন এলো। অপর প্রান্তে অচেনা কণ্ঠ।
আমি আরিফ, দাশুড়িয়াতে বাড়ি আমার। এর আগে কয়েকবার আপনার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। হয়তো তা মনে রাখেননি আপনি। আমি মুলাডুলিতে এসেছি এখন। আপনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই।
আমার চোখের সামনে আরিফের চেহারা ভেসে ওঠে। শ্যামল রঙের লম্বা মতো ছেলেটা। দেখতে বেশ। মাকে সঙ্গে নিয়ে একবার এসেছিল আমাদের বাড়িতে। সামনা-সামনি বসে কথা হয়েছিল আমার আর অন্তরার মায়ের সাথে। অন্তরাকে তাদের বেশ পছন্দ। কিন্তু আমি এখন অন্তরাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম না। সবেমাত্র এইচএসসি দিয়েছে। লেখাপড়াটা শেষ করুক। তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। এখনো মেয়ে আমার বিয়ের কথা শুনতেই পারে না।
জি, আমি এখন মুলাডুলি স্টেশনে এক চায়ের দোকানে বসে আছি। তুমি এখানে আসলে আমার সঙ্গে দেখা হতে পারে।
আপনি ওখানেই থাকুন, আমি আসছি।
কিছু সময়ের মধ্যে নতুন একটা মোটরসাইকেল সামনে এসে দাঁড়াল। দু-জন মানুষ এগিয়ে আসতে থাকল আমার সামনে। তাদের একজনকে আমি চিনি। যে কিছু সময় আগে ফোন করেছিল। নাম আরিফ। পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। বাবা নেই, সংসারে একমাত্র সে। একবার এসে দেখেও গিয়েছিল অন্তরাকে। সে আবার কী মনে করে? আমাকে সালাম দিয়ে আমার সামনে বসল আরিফ।
আঙ্কেল কিছু মনে নেবেন না। আমি সরাসরি আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।
বলতে পারো কোনো সমস্য নেই।
বলতে ছিলাম কি, আপনার মেয়ে অন্তরাকে আমার খুবই পছন্দ। জানি আপনি আমাকে ফেরাবেন না। আমার সবকিছু জেনে আপনি আমাকে সম্মতি দিন আক্কেল।
আমি জেনো আকাশ থেকে পড়ি। আমার কণ্ঠ ভিজে যায়। বিবর্ণ হয় চারিপাশ। কিছুই বলতে পারি না আমি। এই চাওয়াতে তো কোনো অন্যায় নেই। আরিফ আমাকে সরাসরি বলছে এটুকুই মাত্র। কিন্তু এই ছেলেকে আমি কী করে জানাবো, অন্তরা আর আমার কাছে নেই। গত পরশু হঠাৎ করেই তার বিয়ে হয়ে গেছে। তাকে দেখার জন্যেই ঢাকাতে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু কিছুই বলতে পারি না। যে আশায় এসেছে আরিফ, কী করে তার আশা আমি ভেঙে দেই?