তাস
তুমি আমার একান্ন তাস, আমি চিরার দুই
বাহান্ন তাস মিলে গেলেই, তুমি আমি শুই॥
তুমি তোমার একান্ন তাস।
কল ব্রিজের গেমে, চিরাবিহীন ট্রামে,
. তুরুপ দিলাম তিন।
জীবন আমার রেলগাড়ি নয়, দীর্ঘশ্বাসবিহীন
ঘুম জাগরণ এক সাথেই, পুড়ে কয়লা হই॥
প্রতিবারই আমিবিহীন, বাজাই সুরের বিণ;
. কাছে পেয়ে বিমলীন।
শেষমেষ খেলা জিতে, জিতেছি অযথাই ।
জীবন শুধু তাস খেলা নয়, চাষ ভরা এক ভুঁই ॥
ভুবন ডাঙার হাটে
ভুবন ডাঙার হাঁটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাঁটে
তুমি আমি শেষ বিকেলে এ ক্যামন যানজটে ।
জানালা সব খুলে দিয়ে ঘামছি অকপটে।
ভুবন ডাঙার হাটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাটে॥
একটি দুপুর রোদের পুকুর, দিগন্তে আকাশ।
নগর জীবন চাকার মতন, ইট পাথরের দাস॥
সামান্যতে জলের কলস, ঘুরছে নানান ঘাটে।
ভুবন ডাঙার হাটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাটে ॥
এমন করে আঁধার ভরে, চলছি ক্রমান্বয়;
যে যার কাজে সময় বাজে, হয় না সমন্বয় ॥
তবু দু’জন হারাই এখন, সবুজ ভরা মাঠে।
ভুবন ডাঙার হাটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাটে॥
নূপুর
ভালোবেসে পায়েল নয়রে নুপুর কিনে দিস;
গভির রাতে এই হৃদয়ের আওয়াজটা শুনিস ॥
রিনিঝিনি রিন ঝিনিঝিনি ঝিন ঝর্ণা জলের গান
জানিস না তুই আমার মনের কতটা তুফান ।
তুফান ভরা জলগুলোকে আপন করে নিস ॥
ভালোবেসে পায়েল নয়রে নুপুর কিনে দিস ॥
তোর কাছে আর নেই বলবার বলছি অহর্নিশ;
সকাল বেলায় দোয়েল যেমন, ত্রিতালে দেয় শিষ।
লেজের তালে দুলে ছিল যৌবনেরই বিষ,
তখন আমার বয়স ছিল আঠার কি বিশ ॥
ভালোবেসে পায়েল নয়রে নুপুর কিনে দিস ॥
নিমগ্নতা
সুখে দুঃখে জীবন সাজাই, শ্যামের বাঁশি কখন বাজাই,
. যখন আমার রাই থাকে না ঘরে।
আপন মনে খুব নিরালায়, খুঁজি সবার তরে॥
. যখন আমার রাই থাকে না ঘরে…
সে আমারে কোন আঁধারে,বন-বাদাড়ে ছাড়েনারে
. ভুল বাজারে ঘুরি।
আপন ঘরে ভেদের জ্বালা, নিগূঢ়তায় হারায় কালা
. দম সাধনে উড়ি।
ধ্যানের ঘোরে অপার ক্ষণে, ভাবছি নিজের করে॥
. যখন আমার রাই থাকে না ঘরে …
আমি কানাই মননে রাই, যখন তারে খুঁজে না পাই,
. খুঁজি আপনাতে।
অষ্টপ্রহর ভাসাই রাতে, না কাটলে তারই সাথে,
. কাটাই প্রতিরাতে।।
মাস কেটে যায় বছর পালায়, পেলে মনে পরে ॥
. যখন আমার রাই থাকে না ঘরে …
সমর্পণ
যে দেবী যে ফুলে রাজি, তারে সাজাই আমি সাজি।
যখন যা চায় চোখ ইশারায়, ভরে দেয় কাজেরও কাজি॥
যে দেবী যে ফুলে রাজি…
ডুব সাঁতারে নিজের ভেলায়, ভাসায় না সে;
হারাই মনে কার গহীনে, হারাই না-রে।
সন্ধ্যা-সাঁজে শুভ্র ফুলে, সুরভিতে উঠছে দুলে…
. বাজে না সে আমি বাজি॥
দেবীকে আজ সাজাই ফুলে, সুরের তালে
খোঁজে সূধায় কোন সে ক্ষুধায়, কোথায় কে যে।
আঁধারে আজ ঢাকের আওয়াজ, ধূপের ধোঁয়ায়
. চিনলে হাওয়া হয় যে রাজি॥
ভাঙন
আমার ডানে ভাঙন বাঁয়ে গড়ন, পদ্মা যমুনা।
(তুমি) হারাতে চাইলেও জলে, জল তো পাবে না।
জলে জলে জলজ হলে, হবো মোহনা ॥
বালু চরে জ্যোছনা হাসে, মোহনাতে নৌকা ভাসে
ভেসে ভেসে অবশেষে হারাবো দু’জন
তোমায় পেলে হেসে খেলে
স্মৃতির মেলায় খুব নিরালায়
. উড়াবো স্বপন॥
উজাড় করে ঢেলে দেবো, মনবাসনা॥
ভাঙনে ভাঙনে গড়ে, গড়ে রাত্রিদিন।
অথৈ জলে দেখেছি খেলা, সে তো অমলীন।
রাতে জোছনা করি ভজন, দিনেতে সাধন।
ভজ তত্ত্ব সকল সত্য, সাঁইয়ের ঘোষণা॥
আমার ডানে ভাঙন বাঁয়ে গড়ন, পদ্মা যমুনা॥