[বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার ও লোকসংস্কৃতিবিদ ড. তপন বাগচী (জ. ১৯৬৮ মাদারীপুর) বাংলাদেশে বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫৬। তিনি বাংলা একাডেমির উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত। সাহিত্যের জন্য তিনি জেমকন সাহিত্য পুরস্কার, মধুসূদন পদক (রাষ্ট্রীয়), মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য পুরস্কার, জসীমউদ্দীন গবেষণা পদক, অনুভব সাহিত্য পদক, অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, মহাদিগন্ত পুরস্কার, সাংস্কৃতিক খবর পদক, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। সংগীতের জন্য পেয়েছেন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক ২০১২ এবং স্টান্ডার্ড চার্টার্ড দি ডেইলি স্টার সেলিব্রটিং লাইফ লিরিক অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ ও ২০১৪। ফকির আলমগীর, কিরণচন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, ভূপতিভূষণ বর্মা, মোহাম্মদ আলী সম্রাট, শাহীন সরদার, সঞ্জয় রায়, অণিমা মুক্তি গমেজ, হাসান মাহমুদ, নির্ঝর চৌধুরী, এলিটা করিম, নীপ, নূসরাত নূরিতা খন্দকার প্রমুখ শিল্পী তাঁর লেখা গান পরিবেশন করেছেন। বাঙালির চিরায়ত লোকসংগীত নিয়ে তাঁর একাধিক গ্রন্থ ও গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সংগীতবিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে ‘বাংলাদেশের যাত্রাগান: জনমাধ্যম ও সামজিক পরিপ্রেক্ষিত’, ‘চলচ্চিত্রের গানে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের অবদান’, ‘লালন মতুয়া ও লোকসংগীত সন্ধান’, ‘রাধারমণের গান’, ‘লালন হাসন ও রাধারমণের নির্বাচিত গান’, ‘বুকের ভেতর বসত করে’ উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা ৫টি গান এখানে পত্রস্থ করা হলো।]
আমার এ-মন বলছে যে তুমি
আমার এ মন বলছে যে তুমি আসবে
আগে যত ছিল, তার বেশি ভালবাসবে
আশায় রয়েছি রাত জেগে একা একা
কখন আজকে পাব যে তোমার দেখা।
যত তুমি আজ যাও হেঁটে দূর পথে
ফিরেও আবার আসবে তো ঘুরপথে
মনের কোণায় জেগেছে স্বপ্নরেখা।
তোমার মনেও হয়তো-বা আমি আছি
সেই সুখে আজ একসাথে সবে বাঁচি
আজকে আমার সুরের গানের দিন
তাই কি তোমার মন হলো রঙ্গিন
জানি না কপালে, কতখানি সুখ লেখা!
তোমার কণ্ঠে বাজবে যেদিন
তোমার কণ্ঠে বাজবে যেদিন আমার লেখা গান
সেদিন আমি করবো শুধু সুরের সুরা পান।
তোমার বুকের জমাট ব্যথা
ফোটাই কথার ভাঁজে
আমার এ গান তাই তো বুঝি
তোমার কণ্ঠে সাজে
গাইলে তুমি আমার কথায় যুক্ত হবে প্রাণ।
কেউ না জানুক জানি আমি
এই অবেলায় কী পাগলামি।
আমার কথার ভেতর দিয়ে
বাঁচবো তোমার সুরে
কেমন করে ভুলবে বলো
এই কাঙাল বন্ধুরে
ভালবাসার জন্ম আছে, নেই তো অবসান।
তোমার কণ্ঠে সুধা ঝরায়
তোমার কণ্ঠে সুধা ঝরায় আমার গানের বাণী
হৃদয়জুড়ে বসত তোমার, ও গো সুরের রাণি।
গান গেয়ে যাও আপন মনে কেউ যদি না-ও শোনে
নদীর স্রোত কি চলার পথে ঢেউয়ের ফণা গোনে
নদী শুধু যায় বয়ে যায়, দুঃখ কি তার জানি!
পাখির কথা ভাবো যদি, দেখবে অকারণে
মনের সুখে গান গেয়ে সে দুঃখগাথা বোনে
সুরের মায়ায় ঘোচায় সবার ব্যথার আসনখানি।
পাখির মতো নদীর মতো, গান গেয়ে যাও তুমি
তোমার সুরে ধন্য হবে আমার জন্মভূমি
বুঝবে না কেউ কোন বিরহে ঝরছে চোখে পানি।
আশায় আশায় বসে থাকি
আশায় আশায় বসে থাকি তোমার টেলিফোনের
সব কিছুরই খবর রাখো—খোঁজ রাখো না মনের।
তোমার সাথে বললে কথা বাড়ে মনের জোর
কথায় কথায় কখন যে হয় রাত পেরিয়ে ভোর
মন চেনে না ঘড়ির কাঁটা—সময় নিয়ন্ত্রণের।
সব ভুলে যাই, তোমার মুখের ছবিই শুধু ভাসে
না-পাওয়ার যন্ত্রণা দেখি মুখ বাড়িয়ে হাসে
কে আছে দরদী পাশে এমন অভাজনের।
না-পাই যদি তোমার ভালোবাসা
না-পাই যদি তোমার ভালোবাসা
কেমন করে গাইব আমি গান
অন্য কোনো উপায় তো নেই আর
তোমার কাছে বান্ধা আছে প্রাণ।
আমায় তুমি ভুল বুঝে আজ যদি
যত্নে রাখো দূরের কোণায় ঠেলে
তোমার গানের কথায় লাগে জোড়া
এমন মধুর সুর পাব কই গেলে
তোমায় ছাড়া মন করে আনচান।
জানি আমার দিন ফুরালো বুঝি
কণ্ঠে তো নেই আগের মতো জোর
তাই কি তুমি চাইছ ছেড়ে যেতে
যতই কাটুক তোমার সুরের ঘোর—
ভালোবাসার হয় না অবসান।