ভুবন ডাঙার হাটে
তুমি আমি শেষ বিকেলে, এ ক্যামন যানজটে;
জানালা সব খুলে দিয়ে, ঘামছি অকপটে।
ভুবন ডাঙার হাটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাটে॥
একটি দুপুর রোদের পুকুর, দিগন্তে আকাশ।
নগর জীবন চাকার মতন, ইট পাথরের দাস।
সামান্যতে জলের কলস, ঘুরছে নানান ঘাটে।
ভুবন ডাঙার হাটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাটে॥
এমন করে আঁধার ভরে, চলছি ক্রমান্বয়;
যে যার কাজে সময় বাজে, হয়না সমন্বয়।
তবু দু’জন হারাই এখন, সবুজভরা মাঠে।
ভুবন ডাঙার হাটেরে ভাই ভুবন ডাঙার হাটে॥
প্রাপ্তি ও শূন্যতা
একজোড়া চোখ আকাশ দেখে, মেঘের ফালি-ফালি
সেই মেঘেতে বোধের খেলা, খেলছে লীলাবালি।
ভাবনাকাশে একমুঠো ছাই, আরেক মুঠো বালি॥
মেঘ চলছে মেঘ বলছে, মেঘ চলবে এভাবে রোজ;
ভাবতে পারো এভাবেই মেঘ, ভেসে ভেসেই নিখোঁজ।
নিখোঁজ মেঘের চলে যাওয়া দেখে, করছে বলাবলি;
অন্ধকারের তারাগুলো আজ, হাসছে খালি-খালি।
ভাবনাকাশে একমুঠো ছাই, আরেক মুঠো বালি॥
দুইজোড়া চোখ চাঁদের হাটে, দেখছে রুটিবেলা;
হাওয়ায় হাওয়ায় খেলছে দুজন, কানামাছি খেলা।
খেলতে খেলতে পাখা মেলতে, আটকালো চোরাবালি,
চারপাশে থাকা অজস্র লোক, দিচ্ছে হাতে তালি।
ভাবনাকাশে একমুঠো ছাই, আরেক মুঠো বালি॥
আমার ভেতর এক নদী
আমার ভেতর ও বাহিরে, বহিছে অন্তরে,
যৌবনা এক নদী
আসছি একা, যাব একা, থাকব নিরবধি
যৌবনা এক নদী…
এই নদীতে তুফান আছে, আছে ঝড়ো হাওয়া
যখন-তখন ঢেউ খেলে যায়, একাই বইঠা বাওয়া
আমার বইঠাখানা দেয় যে হানা, হারায়ে যায় যদি
যৌবনা এক নদী…
বয়ে চলছি একাই বাঁকে, চলছি শাখায় শাখায়
এই নদীরও সবটুকু জল, মিশেছে বাঁকায়।
উৎরে গেছে একুল-ওকুল, দুকূল ভরা নদী
আমার সবটুকু জল যাবে বিফল, সাগর না হয় যদি
যৌবনা এক নদী..
মালা
বকুল ফুলের মালা (আর) মায়ের হাতের বালা
কারে পরাই বলো আমায়, ওগো হিরণবালা॥
জল থৈ থৈ মনে, খুঁজি বৃন্দাবনে;
আপনালয় কোন মহাশয়, দিয়েছে এক তালা।
জল দিলেও নেভে না যে, কেমনে পাবো দেখিয়ে দে;
মিটবে মনের জ্বালা॥
মা মনষার লীলা, মনি করেছে নীলা;
দেবীর অভিশাপে কিসের পরিতাপে
ভাসছে নদীনালা।
লখিন্দর-বেহুলার ঘরে, বিষের জ্বালা কেঁদে মরে,
গাঙুর নদ নীলাভ ও নিরালা॥
মন খারাপের দিন
মন খারাপের দিন আজ মন খারাপের দিন
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর রিনিঝিনি ঝিন
মন খারাপের দিন আজ মন খারাপের দিন॥
স্মৃতির মেলায় ভাসছি ভেলায়,
উড়ছি আপসহীন
ছেলে বেলায় হেলায় ফেলায়,
দিন ছিল রঙিন
মন খারাপের দিন, আজ মন খারাপের দিন॥
শৈশব আর কৈশোর ছিল,
অবারিত অসীম
বৃষ্টির মাঝে অতীত খুঁজে
হচ্ছি বিমলীন
মন খারাপের দিন, আজ মন খারাপের দিন॥
মন
ওপারেতে বন্ধুর বাড়ি, ছোট্র ছনের ঘর।
শরৎ মেঘের ভেলায় চড়ে, হলাম যাযাবর।
কোকিলা এই মনটা আমার, উড়ছে নিরন্তর॥
তোমার বাড়ি আমার বাড়ি, আমি বাড়ি নাই;
আমার বাড়ি তাঁহার বাড়ি, করেছি কামাই।
নাই বললেই হয় কি-রে নাই, দেহটাই যে ঘড়ি;
আপন কক্ষে বিচরণে, গতি আড়াআড়ি।
দুই ভূবনের দুই বাসিন্দা, এক ঘরে বাসর।
কোকিলা এই মনটা আমার, উড়ছে নিরন্তর॥
সাঁজের মায়ায় বটের ছায়ায়, থেমে গেল পথ;
স্বরূপে তাঁর বনও বাঁদাড়, অরূপের স্বপথ।
যে চিনেছে আপন ভূবন, আপনার-ই ঘর;
জীবন ও যাপনে খোঁজে, খোঁজে দিন্তর।
ঘাটে মাঠে নিগুঢ় পাঠে, হারালে অন্তর।
কোকিলা এই মনটা আমার, উড়ছে নিরন্তর॥