একটা সময় চৈত্রসংক্রান্তি মানেই আমার কাছে ছিল কাঁচা হলুদ, নিমপাতার ঘ্রাণ। ভোর বেলা দিদি সারা শরীরে কাঁচা হলুদ আর নিমপাতা বাটা মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিতেন। শরীরজুড়ে তখন হলুদ আর নিমের মিশ্রণে অদ্ভুত গন্ধ। এরপর নতুন একটা কিছু পড়ে মামাকে নমস্কার করলেই পাওয়া যেতো ১০ টাকা। এই ১০ টাকার লোভে লোভে আমি চৈত্রসংক্রান্তির অপেক্ষায় সারাবছর কাটিয়ে দিতাম।
ভোরে মঞ্জু আন্টির সঙ্গে তুলতে যেতাম ফুল। ধান্দাই ছিলো পূজার ফুলে এগিয়ে থাকতেই হবে আমাদের। সারাপাড়া ঘুরে শুধু ফুল কুড়াও, যেখানে যা পাও। শিউলি, হাসনাহেনা, জবা, গন্ধরাজ, গাঁদা আরও কত কী! কখনো কখনো গোলাপও মিলতো। তবে সেটা চুরি করে। দিদি বলে দিয়েছিলেন, চুরির ফুল পূজায় লাগে না। কিন্তু ঈশ্বর তো আর আমার মনের ইচ্ছা বুঝতো না, ব্যাগ ভর্তি করতে তাই চুরিই ছিল আমার ভরসা। দুপুরে নতুন বাজারের দিকে শিব-পার্বতী আসতো গান গেয়ে টাকা তুলতে। সেটা দেখার জন্যও কী অধির অপেক্ষা! মাঝে-মাঝে চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন বাবার সঙ্গে মিরপুর-১ নম্বর বাজারে গেলে তো কথাই নেই। সেখানে শিব-পার্বতীদের ভিড় লেগেই থাকতো। চৈত্র এভাবেই বর্ণে-গন্ধে-ছন্দে-গীতিতে সংক্রান্ত হতো আমার।
আজ দিদিও নেই, আমার সেই ছোট্টবেলাও নেই। সপ্তাহের ক্লান্তিতে চৈত্র সংক্রান্তিটাকে কেবলই অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই লাগে। সকালে ঘুম ভাঙে না, ফুল দেখি না, পাচন খাই না আর শিব-পার্বতীরা বিসর্জনে!
তবু আজ ঘুম থেকে উঠে মানিব্যাগটা হাতে নিতেই আধপুরনো একটা ১০ টাকার নোট দেখে সব মনে পড়ে গেলো। আমার ছোট্ট বেলার গন্ধ যেন লেগে আছে আতিউর রহমানের স্বাক্ষর করা ওই নোটে। আমার দিদির কথা, মঞ্জু আন্টির কথা খুব মনে পড়লো। মনে পড়লো, সত্যিই আমি অনেক বড় হয়ে গেছি, কিন্তু স্মৃতিগুলো একটুও বড় হয়নি।