ফেসবুকের কল্যাণে আজকাল অনেককেই নিজের চেয়ে সহস্রগুণ বেশি সফল, গুণী ও বিখ্যাত মানুষের বিরুদ্ধেও ‘সমালোচনা’র নামে ইশারা-ইঙ্গিতে কুৎসা প্রচার করতে দেখা যায়। প্রায়ই দেখা গেছে, ধারাবাহিক কুৎসা রটনায় যারা লিপ্ত থাকেন, তারা কিন্তু নিজে অত আহামরি কিছুই নন। তবু অন্যের ‘সমালোচনা’ করে বেড়ান। কারণ, যেকোনোভাবেই হোক, তারা আলোচনায় আসতে চান। এজন্য তারা কোনও সফল ও বিখ্যাত মানুষের চরিত্রহননকেই সিঁড়ি হিসেবে বেছে নেন।
তারা আসলে এক ধরনের মেন্টাল ডিসঅর্ডারে ভোগেন। আজকাল এ ধরনের মেন্টাল ডিসঅর্ডারে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা মহামারী আকারে বাড়ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, কার কী দোষ আছে, এসব খুঁজে বেড়ানো! এমন অনেকেই আছেন, যারা কারণে-অকারণে অন্যের দুর্বল দিকগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করে খুব মজা পেয়ে থাকেন! কিন্তু তারা কখনোই নিজের সমালোচনা করতে পারেন না, অথচ অন্যদের আয়নার সামনে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বেড়ান ঠিকই!
এমন করে যারা বিকৃত সুখানুভূতি পান, তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তো, অন্যকে নিয়ে যে ‘সমালোচনা’ করছেন, আপনি আদৌ সে যোগ্যতা রাখেন কি না? ন্যূনতম বিবেকও যদি আপনার থাকে, বিবেক ঠিকই ঠিক উত্তরটিই দেবে। কারণ বিবেক সবসময় ঠিক দিকনির্দেশনাই দিয়ে থাকে।
যে কেউই যে কারও সমালোচনা করতে পারেন—আত্মপক্ষ সমর্থন করে আপনি হয়তো এ যুক্তি দেখাবেন। আপনার এ যুক্তির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেও বলা যায়, তার জন্যও কিছু শর্ত আছে। আপনি যে কারও সমালোচনা করতেই পারেন। সে সমালোচনা হতে হবে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক, গঠনমূলক ও যৌক্তিক। তবেই তা গ্রহণযোগ্য হওয়ার দাবি রাখে। যারা অন্যের সমালোচনায় মত্ত থাকেন, তারা নিজের সম্পর্কেই কতটা জানেন, তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? নিজেকে আগে এই প্রশ্নগুলো করে দেখুন—ব্যক্তি হিসেবে আপনি কতটা শুদ্ধ? আপনার নিজের কী কী ত্রুটি রয়েছে? তাহলেই দেখবেন একে একে নিজের খুঁত বা দুর্বলতা বের হয়ে আসছে এবং তা খুঁজে বের করাও কিন্তু খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তাহলে নিজের ত্রুটিগুলো খুঁজে নিয়ে তা সমাধান করতে কারও পক্ষেই খুব একটা কষ্ট হবে না।
নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধানের দিকে নিয়ে আসা একটু কঠিন হলেও অসম্ভব তো আর না! কেননা, আমরা নিত্য নৈমিত্তিক অন্যের যে দোষ-ত্রুটি দেখে/শুনে থাকি, সেগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখাই হচ্ছে নিজের সমালোচনা করার প্রথম ধাপ।
কারও সমালোচনা প্রকাশ্যে অন্যদের কাছে বলে না বেড়ানোর থেকে মনে মনে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলেই চলবে। এতে বিবেক যেদিকে সায় দেবে না, সেদিকে না চললেই হবে। আর এটাই হচ্ছে আত্মসমালোচনা, যা প্রত্যেকের জন্যই জরুরি। যিনি আত্মসমালোচনা করতে পারেন, তিনিই তো আসল বুদ্ধিমান। কারণ তিনি তার নিজের সম্পর্কে জানেন, তার দোষ-ত্রুটির খবর রাখেন। অন্যকে জানার আগে নিজেকে জানা কি কম গুরুত্বপূর্ণ?
‘সমালোচনা’র নামে অন্যের ধারাবাহিক কুৎসা প্রচার করে আপনি পার পেয়ে যাবেন, এটা ভুল ধারণা! একটা না একটা সময় আপনার চাদরে মোড়া খারাপ দিকগুলো অন্যের সামনে প্রকাশ পাবেই। তখন আর লজ্জার শেষ থাকবে না। তাই নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করে, তারপর অন্যকে বিচার করতে যাওয়াই ভালো।
তাই সবার আগে নিজেকে জানতে ও চিনতে হবে। এরপর বাইরের দুনিয়াকে জানার পালা। ‘সমালোচনা’র নামে কারও বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো থেকে নিজেকে বিরত রেখে আত্মসমালোচনায় মনোনিবেশ করলে নিজের জন্য যেমন মঙ্গল, তেমনি সুন্দর সমাজ গঠনেও ভূমিকা রাখা সম্ভব।
আর, অন্যের কিছু দিক খারাপ লাগতেই পারে। সেক্ষেত্রে, সেটা সরাসরি তাকে বলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।