আমরা যদি সৎভাবে নিজের চিন্তাভাবনার বিচার করি, তাহলে সে সবের মধ্যে অনেক অসঙ্গতি দেখতে পাব। যদিও কোনোভাবে এই চিন্তার মধ্যে একটা সঙ্গতি আনতে পারি, তা হলেও দেখব যে জীবনধারণের সময় আচরণগুলোয় আমরা আমাদের এসব চিন্তা পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারি না, তবে হয়তো অনেকটাই পারি।
এই পারা ও না-পারার মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিক্ষণই প্রাতিস্বিক হয়ে উঠছি এবং এই প্রাতিস্বিক রূপে বিকশিত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমরা সারাক্ষণ বন্দি। হয়ে ওঠার অর্থ এক অজানার অভিমুখে অভিযান। অজানার দিকে, কারণ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি একটা কথার কথা, ভবিষ্যৎ কখনো অতীতের অনুকৃতি হয় না, বড় জোর অতীত ইঙ্গিত দিতে পারে ভবিষ্যতের। আবার পুরোপুরি সমস্ত দিক বিবেচনা করে আমরা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তও নিতে পারি না, কারণ পুরোপুরি সমস্ত দিক বিবেচনা করার মতো বিশুদ্ধ অবস্থায় আমরা কখনোই পৌঁছতে পারি না। যা সম্ভব, তা হলো একটা বিমূর্ত, একান্ত যুক্তিসঙ্গত চিন্তাপ্রণালীতে গিয়ে পৌঁছুব, যার মধ্যে অতীত থেকে পাওয়া মূল শিক্ষা ও সূত্রগুলো কাজ করে।
কিন্তু জীবন সমানে সামনের দিকে ঠেলছে এবং সামনের দিকে রয়েছে সর্বদাই নতুন নতুন সম্ভাবনা আর তার থেকে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত বেছে নেওয়ার দায়িত্ব। তা ছাড়া সামনের পথেও প্রত্যাশিতভাবে একইসঙ্গে রয়েছে প্রচুর বিভেদ ও প্রচুর বিরোধ, যেগুলো এক মহান ঐক্যে ও সংহতিতে ধারণ করার মতো কোনও নিখুঁত বিশুদ্ধ চিন্তা-ব্যবস্থা নেই। সুতরাং নান্দনিক নাট্যমঞ্চের ওপর প্রাতিস্বিক অস্তিত্ব কোনও অবস্থাতেই একটা যথার্থ সুসমঞ্জস ব্যবস্থা হতে পারে না।
এখানে আমাদের বুঝে নিতে হবে, মঞ্চ মানে একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্র। সেটা কালগত হতে পারে, স্থানগত হতে পারে আবার মনোগতও হতে পারে। রূপকথা, পুরাণ, কাব্য ইত্যাদির ভেতর দিয়ে মানবশিশু যাত্রা শুরু করে পৌঁছয় নান্দনিক মঞ্চে এবং এই মঞ্চে প্রাতিস্বিকের অন্তর্মুখী পরিচয় স্থির হয় শুধু নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে।