Indeed, under the law almost everything is purified with blood (Holy Bible, John 5:6)
নৈরাজ্যবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, নৈরাজ্যবাদ যখন প্রতিষ্ঠা চায়, তখন সেই উপায়টা ব্যক্তি নৈরাজ্যবাদী কিভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে, তথা নৈরাজ্যবাদের প্রতিষ্ঠার উপায় এই চিন্তা-কাণ্ডের (স্কুল অব থট) এখনো জানা হয়েছে কি! এক্ষেত্রে আমরা দেখি, একমাত্র ব্যক্তি নৈরাজ্যবাদীর আপন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই ধরনের ধারাবাহিক অস্বীকৃতির মধ্যে সমাজের আর কোনো উপকার লুকায়িত থাকতে পারে না। কেননা যে লোক প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করে সমাজ বিষয়টা ফালতু একটা ধারণা, তার সমাজ সংশ্লিষ্ট অজস্র অস্বীকারের অন্তরালে বৃহৎ কাচকলা ঝুলে থাকার বিষয়টা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।
অর্থাৎ, আপনি বলছেন, সমাজের কিছুই ঠিক হচ্ছে না, অথবা সমাজ বিষয়টাই তো কোনো ঠিক বিষয় না, এর কোনো প্রয়োজন নেই; সেক্ষেত্রে সমাজের কতটা হিত আপনার দ্বারা সাধিত হবে এবং সেটা কিভাবে ঘটে, এটি এক বিস্ময়বোধক চিহ্ন। এ থেকে আমরা লাভ করতে পারি, একমাত্র নিজের অস্তিত্ব ছাড়া আপনি জনাব আর কিছুই স্বীকার করছেন না, তথা আপনি এই গণ-অস্বীকৃতির দ্বারা শুধু নিজের প্রতিষ্ঠাই চাচ্ছেন, সেটা কিন্তু সেসব ব্যক্তি ও সংঘটিত শক্তির মধ্যেই যারা মূলত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও শক্তি হিসেবে সমাজে অবস্থিত। আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনি তো পৃথিবীর অভ্যন্তরে স্থাপিত যাবতীয় সংঘ, ব্যবস্থা ও স্থাপনা থেকে মুক্তি কামনা করেন, যেহেতু সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি নামক কোনো প্রতিষ্ঠানই আপনার দরকার নেই। সেহেতু ওহে নৈরাজ্যবাদ দাদা, আপনি নিজের প্রতিষ্ঠা তো জঙ্গলে গিয়ে করলেই পারেন! সেখানে নিশ্চয়ই কেউ আপনাকে বাধা দিতে আসবে না।
অবশ্যই আপনি সেটা করবেন না; কেন করবেন না? কারণ আপনি তো চালাক প্রাণী। খুব ভালো করেই জানেন, সব মধুই রয়েছে এই সমাজের অভ্যন্তরে, তাই বোকারাই আপনার চালে পা দেবে, যেহেতু আপনি বলছেন ফুস-মন্তর দিয়ে সবাইকে রাজা করে দেবেন। এবং ‘আমরা সবাই রাজা, আমাদেরই রাজার রাজত্বে’ এটা তো এক মহা ইউটোপিয়ারই নামান্তর এবং সত্যিই শিশুসুলভ চিন্তা।
তাহলে, এই যে চিন্তার ফাঁকি, এটা বেশ ভালো, সাধারণ মানুষকে ঘোল খাওয়ানোর এ আরেক নব্য পন্থা। আপনি যদি ভেবে থাকেন, অনেক নৈরাজ্যবাদী মিলে আপনারা ভাই-ভাই হয়ে যাবেন, ফলত, সমাজে হায়ারার্কির মতো কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না; শুধু শিশু-শিশু খেলা আর স্বপ্ন আর প্রেম আর সাম্য। আহা! চারিদিকে শান্তির সুবাতাস! একসময় এই হায়ারার্কি-ই ওই চরম নৈরাজ্যবাদী পৃথিবীতে ঠিকই সৃষ্টি হয়ে যাবে। (কেন হবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপে আমরা অবশ্যই বসব) এবং ওই স্থির, নিশ্চল জাগতিক স্বর্গীয় অবস্থাকে আমরা অবশ্যই মৌলবাদ বলবো, কেননা মানুষের চিন্তার জগৎ স্থির হওয়া মানেই সেটা মৌলবাদের ধ্বজা ওড়ানো বৈ আর কিছু নয়!