আধুনিক বিশ্ব-ব্যবস্থায় দাসপ্রথা নেই বলেই আমরা জানি। আমাদের এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। এই যুগের চাকরিজীবীরা হলো সভ্যসমাজের আধুনিক দাস অথবা তারচেয়েও নিকৃষ্ট কিছু।
পরাধীনতার শৃঙ্খল তাদের প্রাত্যহিক জীবনকে অক্টোপাসের মতো এভাবে ঘিরে থাকে যে, তারা অনেক সময় জীবনের প্রতি অনীহ হয়ে ওঠে। মেধা, মনন ও সৃজনশীলতায় কর্মস্থল-প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অসামান্য অবদান রাখলেও তারা পারিবারিক পরিমণ্ডল ও পারিবারিক-সামাজিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে কমই। অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয়ে থাকে, পুরো সপ্তাহেই প্রিয় সন্তানের সঙ্গেও চোখে চোখে দেখা হয় না। সন্তানের জেগে ওঠার আগেই তাকে বের হতে হয়েছে এবং সন্তান ঘুমিয়ে পড়েছে অথচ তার তখনো ঘরে ফেরা হয়নি। যাপিতজীবনের সুখ-দুঃখ চাপা পড়ে পাহাড় সমান পরাধীনতার নিচে। প্রতিষ্ঠানের কল্যাণচিন্তা ও ক্রমোন্নতি ভাবনাতাড়িত প্রাণে যান্ত্রিক চাপের প্রবল আঘাতে বিকলাঙ্গ হয় পারিবারিক-সামাজিক বন্ধন।
নিজেকে ভাবতে যাওয়ার ফুরসত যে ব্যবস্থায় থাকে না, সেটা যত বড় চাকরিই হোক অথবা যত বেশি মাইনেরই হোক, তা দাসত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়।