একটু অলঙ্কারী আলাপ
শিশুসাহিত্য যখন ভূতের দখলে, ঠিক তখনই এই আনন্দ শিক্ষানীতি। যদিও সুকুমার রায় থেকে সুকুমার বড়ুয়া পর্যন্ত—ছড়ার একটি জমজমাট হাট বসেছে বাংলা সাহিত্যে। এটাও ঠিক যে, সেখানে নতুন ছড়া একেবারে অকেজো ও অদামি নিসন্দেহে! তাই নতুন চিন্তা না থাকলে যতই ছড়ার শরীর ভেঙে আধুনিক ছড়া গড়ার কসরত করা হোক না কেন, লাভ তত দেখি না। তাতে ছড়ার গুরু সাজার মঞ্চ হয়তো তৈরি হয়, কিন্তু অভিনয় তাতে জমে না! শিশুর আগে চাই আনন্দ। আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা। আর শিক্ষা যদি হয় নৈতিক, সৎ ও সত্য চিন্তার, তাহলে তো কথায় নেই। শিশু মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ‘প্রত্যেক মানুষের মানসিক বিকাশ ঘটে মাত্র পাঁচ বছর বয়সের মধ্যই। তারপর বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে একজন মানুষ পূর্ণবিকাশ লাভ করে। পরিবর্তিত হয় আচরণ।’ তাহলে ব্যাপারটা সেই শিক্ষার ওপর-ই নির্ভর করে। আপনি কেমন দেখতে চান আমার প্রিয় সন্তানকে? তা নির্ভর করে শিশুবেলায় আপনি তাকে কী কী শেখাচ্ছেন? যেমনটি মা-বাবা তার সন্তানের শরীর সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান, তেমনি মনের সুস্থতার জন্য আপনার করণীয় কী?
বাবা-মাকে ভাবতে হবে—কোমলমতি শিশুকে আপনারা ভূতের দেবতা উপহার দেবেন, না কি আনন্দ দেবেন। এটা সম্ভবত আমার ছড়ার প্রথম এবং শেষ বই। এটাকে শুধু ছড়া বলব না আমি। কিশোর কবিতাও বলা যেতে পারে। আমি চাই, আমার ছড়া শিশুর মানসিক বিকাশে হাওয়ার মতো কলকাঠি নাড়ুক। সেক্ষেত্রে শিশুর মা-বাবাই বড় প্ল্যাটফর্ম। কারণ শিশুদের পছন্দ করে দেওয়ার একমাত্র অবলম্বন তো তারাই। সুতরাং আপনার একটা ভুলই তার ভবিষৎকে নষ্ট করতে পিছপা হবে না। আমার ছড়ার বইটিতে মোট ১৪টি ছড়া থাকবে। ছড়াগুলোর শিরোনাম: পিঁপড়ে, প্রজাপতি, বৃষ্টি মেয়ে মিষ্টি মেয়ে, সুকুমার ছড়া, দাদির খোঁজে, ঈদ থইথই, সুন্দরবন, ঈদের ছড়া, পাটের ছড়া হাটের ছড়া, অনুশীলন, কেমন আছো লক্ষ্মী মা, লাল মোরগের পাখনা, খাঁ খাঁ ও মাইকেল মধুসূদনকে নিয়ে লেখা ছড়া মধুর নদী। ছড়ার সঙ্গে থাকবে মনকাড়া অলঙ্করণ। যা শিশুর আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। বইয়ের প্রতি অনীহা দূর করে বইটিকে সে নেড়েচেড়ে কাছে রাখবে। তার আগ্রহ তৈরিতে প্রকাশনাগুলো এমন ব্যবস্থাই করে রাখে।
দাদির খোঁজে
আকাশের চাঁদে বসে
দাদি মারে উঁকি
তাকে ধরা বড্ড যে
হয়ে গেছে ঝুঁকি
চাঁদ বলে—তোর দাদি আমি
এর চেয়ে নেই কিছু দামি
তবু আমি মনে মনে
মিথ্যেটা বুঝি
কুঁচকানো মুখে মুখে
দাদিকেই খুঁজি!
পিঁপড়ে
জানো না কি পিঁপড়ে কেন
লাইন ধরে চলে?
পরস্পরের মুখোমুখি
কী কথাটা বলে?
হঠাৎ যদি লাইনটাকে
ভেঙে দিলে তবে
খানিক পরে আবার দ্যাখো
লম্বা লাইন হবে!
লাইন বেঁধে চলা মানে
অনুসরণ করা
সবার শক্তি এককভাবে
বিশ্বকে যায় গড়া।
বাসা ছেড়ে অনেক দূরে
খাদ্য অন্বেষণে
জমা করে খাবার-দাবার
মণ কি মণ টনে।
পিঁপড়ে দেহে লেপ্টে আছে
সুগন্ধী হরমোন
চলার পথে তারা কি সব
সঙ্গী ও ভাইবোন!
যদি তুমি ভেঙে দিলে
সুদক্ষ তার লাইন
একটু পরে চলছে আহা
মাশ-আল্লাহ্ল কি—ফাইন।
ঈদ থইথই
কাস্তে চাঁদের হাসি নিয়ে সন্ধ্যেটা থইথই
আল্লাহ আল্লাহ উঠতো ধ্বনি আকাশে হইচই
মেঠোপথে মিছিল নিয়ে উঠতো কলোরব
তার মহিমা শুকরিয়াতে ভরতো হৃদয় সব।
প্রতিবছর এই দিনটা আসছে ঘুরেফিরে
বারো মাসের না পাওয়া আর দুঃখেরই পেট চিরে
নতুন জামা লুকিয়ে রেখে মেহেদি রঙ মাখা
ঈদের দিনে ঘুরব কোথায় এসব স্বপ্ন আঁকা।
দুষ্টুমী আর আনন্দে তাই রাতের শরীর শেষ
বাদাম ভাজার গন্ধ মেখে মা দিতো পায়েস
সেমাই মানে তারই ওপর এলাচি তেজপাতা
কোন ফাঁকে যে ভিজে গেছে পাঞ্জাবিটার হাতা।
বড়মামা সেলামি দেয় মন ভরে না তাতে
মেঝো মামির কাছে গেলেই আঁচলটা দেন হাতে
মা পরাতেন চোখের ডানায় ঝিনুক পোড়া কাজল
সেই কাজলের তেজে বুঝি নামতো চোখে বাদল?
শিমুল তুলো ভিজায়ে বাবা করতো বিলি আতর
কতটা দিন পাই না এসব মধুরমাখা আদর
নানা দিতো সাদা টুপি নানি রঙিন জামা
মা বলতো—কাঁদিসনে বাপ চোখের পানি থামা।
কিন্তু আমি কেন কাঁদি কেউ জানে না পাছে
ঈদ মানে তো বিলিয়ে দেয়া প্রতিবেশীর কাছে।
সমস্ত দিন পায় না খেতে একটি দিনের তরে
ঈদের দিনের অভিনয় আর করুণার হাত ধরে
ঈদের দিনে করুণা নয়, ভালোবাসা চাই
মাটির দেশে সাম্য নামুক—সবাই মুক্তি পাই।
সুন্দরবন
এই কবিতা ছড়া হলেও আমি তো ভাই কবি
ঘুম আসে না চোখে আমার সুন্দরবনের ছবি।
সে আমাকে ঘুমের ঘরে ডেকে বলে শোন্!
আমার ভেতর বাঘের বাসা কয়টা আছে গোন্!
গোলপাতারই শরীর আমার সুন্দরীটা মাথা
তোদের কাছে হয়ে আছি মস্ত একটা ছাতা।
পেটে আমার মাছের বাসা চোখে ঝরায় মধু
বাংলাদেশের কাছে আমি সবুজ একটা বধূ।
মধুর নদী
একটি নদীর কথা আমি ভাবি সারাক্ষণ
সকাল বিকাল তারই সাথে জমতো আলাপন।
যখন তখন যেতাম ছুটে সেই নদীটার পাড়
সেই নদীটার কাছে এখন হয় না যাওয়া আর।
প্রিয় নদী বুকের মাঝে তুলছে নতুন ঢেউ
নদীর মতো আমার আপন আর ছিলো না কেউ।
আমার মতো নদী পাগল ছিলো আরেক খোকা
মহাকবি মধুসূদন দূরন্ত একরোখা।
খুঁজে ফিরি মধুর চোখে প্রিয় নদীর জল
প্রিয় কবির স্মৃতিগুলো বুকেতে খলবল
অক্ষর দিয়ে শব্দ গাঁথি বানাই সরস কাব্য
আয়রে আমার মধুসূদন—হায়রে কপোতাক্ষ!
মানুষ হবো আগে : পলিয়ার ওয়াহিদ
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: আল নোমান
প্রকাশক: দোয়েল প্রকাশনী
প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা-২০১৭
মূল্য: ১০০ টাকা