স্বপন শর্মার ছড়া
বর্ষার কবিতা
সারা রাতে বৃষ্টি পড়ে জানলা গেছে ভিজে,
ভরে গেছে ডোবা পুকুর বাকি আছে কি যে!
জলে ভরা ছপ ছপে ওই উঠোনের পাশটা,
হেলে দুলে প্যাঁক প্যাঁকিয়ে চলছে পাতি হাঁসটা।
গোমরা মুখো সূর্যি মামা মুখেতে নেই আলো,
ঘরের কোণে, ছাতার তলে দিন কাটে না ভালো।
ঝোপে ঝাড়ে উঠোন দোরে ভরে আছে জলে,
গাঁয়ের বধূ পিচলা পথে কেমন করে চলে?
কোলা ব্যাঙে জলের ওপর দিল যখন লাফ,
ভয়ের ঘোরে পিচলে পড়ে বলে-বাপরে বাপ।
মৎস চাষের পুকুর আজকে জলে গেছে ভেসে,
মাছের শোকে সকল জেলে কষ্ট করেন শেষে।
সকাল হতেই বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে যে টুপ টাপ,
একঘেঁয়ে আজ শব্দ শুধুই, বাকি সব চুপ চাপ।
বিড়ালের মৎস্য চাষ
বিড়াল পুষি বেজায় খুশি বুদ্ধি পেয়ে মাথায়,
আর রবে না আর শোবে না পরের ছেঁড়া কাঁথায়
মৎস্য চাষের ঋণে—
করবে এবার মাছের চাষ একটা পুকুর কিনে।
স্বাবলম্বী এবার হবে নিজে,
ভাব না এলে ভালো লাগে কি যে!
ভাবনা যেমন কর্ম তেমন ছাড়ল মাছের পোনা,
অনেক হলো যায় না এখন গোনা।
আষাঢ় মাসে বন্যা এসে ভেসে গেল সব,
বিড়াল মাসির কান্নাই হলো রব।
পঙ্কজ চন্দ্র শীলের ছড়া
আজব কুকুর
কুকুরগুলি দুষ্টু যে খুব ঘটায় আজব কাণ্ড,
সুযোগ পেলেই বাড়ির জিনিস করে লণ্ডভণ্ড
একটা-দুইটা-তিনটা নয় ভাই গুনেছি দুই হালি!
তিনটারই পিঠ চামড়া ছাড়া, পিঠে কেবল কালি!
খুব সকালে উঠেই দেখি জুতো নেই এক জোড়া!
কুকুরগুলো মজা করে খেলো আগাগোড়া!
জুতো ছিলো রঙ-বেরঙের টিপ দিলে খুব নরম,
আরাম করে খেলো জুতা ছিল না তো শরম।
আমার গ্রামের সব জুতো খায় রাতে-সকাল-দুপুর,
কুকুর বংশের মাঝে যেন তারাই আজব কুকুর!
মামা সমাচার
ক্যালকুলেটর লাগতে পারে মামার হিসাব করতে
সপ্তাখানেক যেতে পারে আসল মামা ধরতে!
এই যে দ্যাখো মামার হিসাব দিলাম আমি নিচে,
এবার তোমরা ছুটতে পারো এই মামাদের পিছে।
ছোটমামা-বড়মামা লম্বা কিংবা বেটে,
তাদের প্রায়ই ঝগড়া যে হয় শুতে গিয়ে খাটে!
মেজো মামা- সেজো মামা তারা করে গল্প,
ঝগড়া হয় ভাই তখন তাদের খাবার পেলে অল্প।
কালো মামা- ধলো মামা ঝগড়া তাদের বর্ণে,
রেগে গেলে তাপ্পড় মারে একে-অন্যের কর্ণে!
মিষ্টি মামা- তেতো মামা তারা শুধু খায়তো
রাত জেগে ভাই সুযোগ খোঁজে বিয়ের দাওয়াত পায়তো।
বেক্কল মামা- আক্কল মামার হয় যে ঝগড়া- যুক্তি,
আক্কল মামার হিংসে বাড়ে দেখলে অন্যের বুদ্ধি!
পাঙ্কু মামা- ঝিংকু মামা চশমা পরে দামের,
ফ্যাশনেতে ব্যস্ত তারা নয় যে কোনো কামের!
নরম মামা- শরম মামা লজ্জাতে মুখ ঢাকে,
শালী তাদের কাছে এলে বিশ হাত দূরে থাকে!
চরম মামা- গরম মামা পড়লে কারও ছলে,
বারুদ ছাড়াই রেগে-বেগে আগুন হয়ে জ্বলে!
ইচ্ছে করে সবার সাথে করে তারা যা-তা,
গরম তেলে ভেজে খাব আমি তাদের মাথা!
আহমাদ স্বাধীনের ছড়া
খরগোস কাহিনী
লোকটার খরগোস ছিল এক হালি
সারাদিন তাদের সে করে গালাগালি,
ছোটাছুটি করে আর কাটে শুধু ঘাস
এইভাবে লোকটার যায় দিন- মাস।
একদিন খরগোস গেল মতিঝিলে
একটাকে ধরে নিয়ে উড়ে গেল চিলে!
হায় হায় লোকটার আহাজারি কি যে
শোক ঢাকে সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে।
একদিন বাকি তিন খরগোস, রাগে
চলে যায় মৌচাক আর মালিবাগে।
মালিবাগে তালেবালী হকারের হাকে
একটার হার্ট ফেল চিৎ হয়ে থাকে।
বাকি দুই খরগোস চুপিচুপি হেঁটে
লোকটাকে ফাঁকি দিয়ে যায় ফার্মগেটে।
ফার্মগেটে যানজটে মানুষের ভিড়ে
একটা হারিয়ে যায়, আসে না তো ফিরে।
বাকি খরগোস—
ফিরে এলে সেই লোক,
বলে ওরে হতভাগা—তোরও কিছু হোক।
খরগোস পুষব না আর কোনো দিন
এই বলে লোকটায় চলে যায় চীন ।
খাবার নিয়ে ভাবার আছে!
সবাই যখন ব্যস্ত, নিয়ে বায়োমেট্রিক সিম
ঘরে তখন হচ্ছে ভাজা কেমিক্যালের ডিম।
ভিজিটালের ভিড়ে যখন কোনটা ফেক আর ফাউল,
বোঝার জন্য ঘুরছি হয়ে ছন্নছাড়া বাউল,
গিন্নি তখন রাঁধছে বসে পেলাসটিকের চাউল।
পেলাসটিকের চাউল খাচ্ছি কেমিক্যালের ডিম খাচ্ছি,
খাওয়ার পরে পেটের ভেতর হজমে হিমশিম খাচ্ছি
ফরমালিনের ফল খাচ্ছি,
আর্সেনিকের জল খাচ্ছি
রাগ বাঁধিয়ে টগবগানো জলের মতো বলকাচ্ছি!
সুদ খাচ্ছি, ঘুষ খাচ্ছি,
রঙ মেশানো জুস খাচ্ছি,
মিথ্যে বিজ্ঞাপনের বানে খাবার জন্য উস্কাচ্ছি,
ভোর হতে রাত একজোড়া হাত ব্যস্ত নিয়ে খাবার
খাবার নিয়ে খুব প্রয়োজন একটু খানি ভাবার!
সৈয়দ শরীফের ছড়া
নদীর মৃত্যু
নদীর দেশে নদীই এখন
নানান রকম জ্বালায়
কান্না করে—জলেরা তার
সব শুকিয়ে পালায়।
পালায় জল ও নিচ্ছে সাথে
চিংড়ি, কাতল, পুঁটি
কত্ত আরও—এদের সাথে
খুব যে জলের ঝুটি!
মৃত্যু হলো মাছ, নদী ও
ঐতিহ্য এই দেশের,
মৃত্যুখেলা চলছে যেমন
পথ কি তবে শেষের?
শেষ পথে সব বিলীন হবে,
আমরা সাথে সাথে
আর রব না ঐতিহাসিক
‘বাঙাল মাছে ভাতে’!
দেশটা এবার ছাড়
একাত্তরে সবচেয়ে বেশি করলো ক্ষতি যারা
আজকে ওদের এত্ত সাহস দিচ্ছে বলুন কারা?
কোন দেশেতে থাকছে, ওদের হয় না মনে কি তা?
শেখ মুজিবকে মানতে নারাজ বঙ্গ-জাতির পিতা।
চেষ্টা চালায় অস্থিতিশীল করতে সোনার এ দেশ,
লাখ শহীদের প্রাণে এবং রক্তে কেনা যে দেশ।
স্বাধীনতার পক্ষে কেহ বললে কথা, তাকে
খারাপ দুটো চক্ষু দিয়ে লক্ষ্য করে রাখে।
ওরাই হলো একাত্তরের সবচেয়ে বড় কাল,
মুখটা আমার নষ্ট হবে ওদের দিলে গাল।
না পারি না চুপটি মেরে থাকতে বসে আর
‘পাকিস্তানি জামাইত্তারা দেশটা এবার ছাড়!’
রায়হান মুশফিকের ছড়া
বৈশাখী বৃষ্টি
বৈশাখী বৃষ্টি
আহা কি যে মিষ্টি!
গায়ে মেখে দুই ফোটা
কবিতার সৃষ্টি।
বৈশাখী বৃষ্টি
আহা কি যে মিষ্টি!
রূপো দানা ঝরে রে
কাড়ে মন দৃষ্টি।
বৈশাখী বৃষ্টি
আহা কি যে মিষ্টি!
রোদ্দুর সাথে সাথে
অপরূপ কৃষ্টি।
বৈশাখী বৃষ্টি
আহা কি যে মিষ্টি!
আহা কি যে মিষ্টি
বৈশাখী বৃষ্টি!
মানসুর মুজাম্মিলের ছড়া
ভাল্লাগেনা রে
রাজপথে চলতে চলতে
রাগে-ক্ষোভে জ্বলতে জ্বলতে
ভাল্লাগেনা রে
কটু কথা শুনতে শুনতে
মরণ-প্রহর গুণতে গুণতে
ভাল্লাগেনা রে
ভালো-মন্দ দেখতে দেখতে
জীবন কথা লিখতে লিখতে
ভাল্লাগেনা রে ।
আমি তুমি
তুমি আমার রূপের রানি
আমি তোমার রাজা
বন্ধু আমি ফলের মতন
সকল সময় তাজা।
তোমায় আমি নিয়ে যাব
তেপান্তরের মাঠে
তোমার আমার সময় যেন
দুষ্টুমিতে কাটে ।
দেখবে না কেউ শুনবে না কেউ
বুঝবে রাতের পরী
বলবে তুমি—
‘বন্ধু ওগো আমি লাজে মরি।’
আজহার মাহমুদ হাসানের ছড়া
বৃষ্টি
বৃষ্টি নামে
দৃষ্টি থামে
খোকন সোনার গাঁয়,
ঝুমুর ঝুমুর
নুপুর আওয়াজ
বাজলো যেন পায়।
বৃষ্টি নামে
সবুজ খামে
গাছ-গাছালি জাগে,
রিম-ঝিমিয়ে
বৃষ্টি বীণা
ভীষণ মধুর লাগে।