[পর্ব-৩৩]
সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ নেই আজ। সেই যে গেছে, আর আসার নাম নেই তার। অন্ধকার একদম ভালো লাগে না রতনের। দীপন জানে সেটা। রতনের রুমে সে তাই অটো চার্জার লাইট লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ এত লম্বা সময়ের জন্য গেছে যে চার্জারের লাইটটা ম্লান হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। দীপন হাঁসফাঁস করে। মশাও বেড়েছে খুব। ময়না কয়েল জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে ঢের আগে। কয়েলের গন্ধ সহ্য হয় না রতনের। দমবন্ধ লাগে। জানালার পাশে বসে একা একা আকাশ দেখে রতন। তারা গোনে আনমনে। মাথাটা ফাঁকা। জ্বরটা সেরে ওঠার পর থেকে মাথাটা কেমন হালকা লাগে ইদানীং। মনে হয় কী একটা ভারী বোঝা যেন চেপে ছিল তার মাথায়, সেটা নেমে গেছে হঠাৎ। শান্তি শান্তি লাগে। অতীত মনে পড়ে না, বর্তমানটাও অর্থহীন তার কাছে, আর ভবিষ্যৎ বলে যে আদৌ আছে কিছু সেটা তো সে ভুলে গেছে ঢের আগেই। রতনের মনে হয় এই বেশ আছে সে, অতীত নাই, বর্তমান ঝাপসা আর ভবিষ্যতের ভাবনাহীন এই জীবনে সেঁধিয়ে বেশ আছে রতন।
এখানে, এই স্থবির, স্রোতহীন, ঘটনাহীন জীবনের চোরাগলিতে সেঁধিয়ে দিব্যি পার করে দিচ্ছে সকাল, দুপুর, রাত্তির। মাথার ভেতর ঝিঁঝিটার দেখা নেই অনেকদিন। আছে যে, সেটাই প্রায় ভুলতে বসেছে রতন। তবু সে জানে, আছে, ঘাপটি মেরে আছে সে রতনের করোটির ভেতরের কোনো এক অন্ধকার কোণে। হুট করে ডেকে উঠবে একদিন তারস্বরে। তখন তাকে থামানো যাবে না কিছুতেই। তখন সে পাগল হয়ে যাবে আবার। মাসছয়েকের জন্য আবার শুরু হবে তার একাকী, বন্দী জীবন। অন্ধকার, ভীষণ যন্ত্রণাময় সময়টা কবে যে আসবে, মনে মনে এখন তারই অপেক্ষা করে রতন। ভাবনাটা মনে আসতেই ম্লান একটু হাসে রতন। এই যে সে নিজেকে নির্ভাবনার সান্ত্বনা দিচ্ছিল এতক্ষণ, ভবিষ্যতের ভাবনা নেই, এমন ভাবনায় গা ছেড়ে দিচ্ছিল নিশ্চিন্তির স্রোতে, সে আর তাহলে হচ্ছে কই হে বাপু রতন? প্রশ্নের ঢিলটা নিজের দিকেই ছুড়ে দিল সে, দ্রুতগতিতে। তারপরই মাথার ভেতর নড়েচড়ে উঠল ঝিঁঝিটা। চেনা সুরে ডেকে উঠল হুট করে। ডেকে উঠেই নীরব হয়ে গেল আবার। জানিয়ে দিল, আছে সে, ভোলেনি রতনকে, ভোলেনি কিছুই। সময়মতো আবার সে শুরু করবে সঙ্গীতসাধনা। আবার সে জুড়ে দেবে একঘেয়ে তান। অন্ধকারের চোখে চোখ রেখে অতীতের দিকে মনোযোগের তীব্র আলো ফেলে রতন।
প্রাণপণ চেষ্টা করে হারানো স্মৃতি মনে করার। হঠাৎ হঠাৎ দুয়েকটা মুখ, বিশেষ কোনো স্মৃতি ঝলকে ওঠে মনের কোণে। বিদ্যুচ্চমকের মতো মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া দুচারটে স্মৃতি। তখন কেমন বেসামাল লাগে রতনের। খেঁই হারিয়ে ফেলে। খানিক বাদেই আবার স্মৃতি থেকে হারিয়েও যায় সেটা দ্রুত। সে তবু চেষ্টা চালায় পুনরায় মনে করার। চেষ্টা করে স্মৃতির ফ্রেমে আরও কোনো সোনালী অতীতের সোনাআলোটুকু আটকে ফেলার। এ যেন এক দৈনন্দিন খেলা তার এখন। নিজেকে সে আজকাল ব্যস্ত রাখে অনুক্ষণ এই শিশুতোষ খেলায়। জানে, খেলাটা ভয়ঙ্কর। প্রতিবারই এমন হয়। এই নির্দোষ খেলাটা খেলতে খেলতে একসময় হুট করে পুরনো সব কথা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার স্মৃতির পর্দায়, একে একে সব মনে পড়ে যায় তার। চোখের ওপর ধীরলয়ে ভেসে ওঠে শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের সোনালী দিনগুলো। মোহাবিষ্ট রতনের মনে হয়, চোখের সামনে সিনেমা দেখছে সে। আর তারপরই ঝুপ করে একতাল অন্ধকার এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার মনের ভেতর। তখনই তারস্বরে তান জুড়ে দেয় ঝিঁঝিটা। আবার অন্ধকারে ডুবে যায় পৃথিবী। তাকে গ্রাস করে নেয় এক জমাট অন্ধকার।
রতন ধ্রুবতারাটাকে খোঁজে। ওই তো। আকাশের এককোণে জ্বলছে। উজ্জ্বল। দুম করে মেয়েটার মুখটা ভেসে ওঠে চোখে। কী যেন নাম ছিল মেয়েটার? সেই যে, পড়ত তার সাথে! খুব জ্বালাত তাকে, মনে পড়ে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় সব। মাধবী! মাধবী নাম ছিল মেয়েটার! ভার্সিটিতে একসাথে পড়ত তারা। রতনকে জ্বালাত খুব। নাকি ভালোবাসত রতনকে? খিকখিক হাসে রতন। ভালোবাসা! ফুঃ। আচ্ছা, ভালোবাসা জিনিসটা আসলে কী? জীবনে কত কত বই পড়ল রতন! পাগল হওয়ার পর থেকে আর তো কোনো কাজ নেই তার। একটু যখন সুস্থ থাকে সে, মাসছয়েক প্রায়, সেই সময়টায় যতটা পারে বই পড়ে। কে যেন একটা লোক আছে এ বাড়িতে, দীপন নাম তার, সে কোত্থেকে রাজ্যের সব বই এনে দেয় তাকে। রতন পড়ে। কিন্তু কই! কোনো বই পড়েই ভালোবাসার সংজ্ঞাটাতো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারল না সে! সেই যে, কী যেন নাম লোকটার, ফ্রয়েড সম্ভবত! সে লোকটা ভালোবাসাটাকে যৌনতা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন না? রতনের স্মৃতি কেমন এলোমেলো হতে থাকে আবার।
যৌনতাই যদি হয় ভালোবাসার আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা মুখ, ভালোবাসা তাহলে মুখোশ। হাহাহা। মাধবী তাহলে তার কাছে ভালোবাসা নয় যৌনতা চেয়েছিল আসলে! ভালোবাসার সুন্দর মোড়কে মুড়িয়ে সে আসলে রতনকে দিতে চেয়েছিল যৌনতার আদিম গন্দম! নিতেও চেয়েছিল নিশ্চই! হাহাহা। গলা ছেড়ে হাসে রতন। ভালোবাসা! ভালোবাসা! মোহন মুখোশের আড়ালে তাহলে আছে যৌনতার সেই কুৎসিত কংকাল! পরক্ষণেই থমকায় আবার। চোখ-মুখ কুঁচকে ভাবে। আচ্ছা, যৌনতাকে সে কুৎসিতই বা ভাবছে কেন! প্রকৃতি তো প্রত্যেক প্রানির ভেতর সেটা দিয়েছে খুব স্বাভাবিক, সহজ একটা ব্যাপার হিসেবে। তাকে এমন গোপনীয়তার মোড়কে পুরে, নিষিদ্ধতার মুখোশে মুড়ে, অশ্লীলতার তকমা এঁটে বিকৃত, বিতর্কিত করারইবা চেষ্টা কেন তবে? মানুষের এই এক বাজে স্বভাব। সহজ, স্বাভাবিক ব্যাপারটাকে সে জড়ায় শঠতার আস্তরণে, মোড়ে কপটতার মেকি রাঙতায়। আচ্ছা, মাধবী যদি সরাসরি তাকে বলত এসে, আমি যৌনতা চাই রতন! তোমার সাথে যৌন সম্পর্ক চাই আজীবন! –কেমন হতো? রতন কি হজম করতে পারত ব্যাপারটা সেই বয়সে? হাহাহা। হাসতে হাসতে চোখে জল এসে যায় রতনের। নাহ। অতটা সহ্য হতো না আসলে। হয় না।
একটার পর একটা সমস্যা লেগেই আছে। আগে সুস্থ হলে সবাইকে চিনতে পারত অন্তত। এবার মাঝে মাঝেই ভুলে যাচ্ছে সব। যখন তখন নাকি এমন ভয়ার্তস্বরে চিৎকার করেও উঠছে।
মানুষ মাত্রই কপট। সে চায় শিল্পের আড়াল। কাব্যের ন্যাকামি। ছন্দের মূর্ছনা। শৈল্পিক ছাঁচে ঢেলে সে চায় যৌনতাকে ভালোবাসার আদলে গড়তে। এখানেই তার বিশিষ্টতা। স্বার্থকতাও কি? ভাবে রতন। ইদানীং মাধবীকে মাঝে মধ্যে মনে পড়ে তার। খুব করে। ব্যাপারটা তাকে ভাবায়। মনে মনে মাধবীর সাথে কথা বলে সে আজকাল। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যায়। মাধবী বেশিরভাগ সময় নিশ্চুপ, নীরব থাকে। উত্তর দেয় না। হঠাৎ হঠাৎ কথা বলে ওঠে মাধবী। সরব হয়ে ওঠে ভীষণ। রতন তখন দিশেহারাবোধ করে। মাধবীর সাথে সাথে সরব হয়ে ওঠে ঝিঁঝিটাও। ভারি কষ্ট হয় তখন রতনের। তবু মাধবীর সাথে মনে মনে জমে ওঠা এই বাক্যালাপটা চালায় সে যখন তখন। মাধবীকে অনেক প্রশ্ন করার আছে তার, জমে আছে অনেক কৌতূহল।
কেন তাকে ভালোবেসেছিল আসলে মাধবী? কেন? তার প্রতি রতনের বিন্দুমাত্রও আগ্রহ নেই, সেটা জেনেও কেন মাধবী তার সাথে লেগে থাকতো আঠার মতো? রতনের অবহেলার প্রতিশোধ নিতে? যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে, সেখানে কি প্রতিশোধের বোধটা থাকে আসলে? এই প্রশ্নের উত্তরটা খুব করে জানতে ইচ্ছে করে রতনের। মাধবী কি সত্যিই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল? কথাটা বিশ্বাস করতে কেন কে জানে, খুব কষ্ট হয় রতনের। মাধবীর মনের ভেতর ঢুকতে ইচ্ছে করে তার। কী চেয়েছিল আসলে মাধবী? কী-ই বা খাইয়েছিল মাধবী সেদিন তাকে? সামান্য একটা পেয়ারা! ক্ষুধার্ত রতন পেয়ারাটা খেয়েছিল, খুব তৃপ্তি নিয়ে। খাওয়ার পর হঠাৎ কী যে হলো তার! কেন হলো অমন? মাথার ভেতর কেন অমন করে ডেকে উঠল লক্ষ ঝিঁঝি! কী ছিল পেয়ারাটাতে? কী? কী ছিল মাধবী? কী মেশানো ছিল পেয়ারায়? কেন মিশিয়েছিলে? কেন মাধবী? কেন? মাধবী নিশ্চুপ। মাধবী উত্তর দেয় না। রতন তবু প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যায়। ক্লান্তিহীন। বিরক্ত, ত্যক্ত মাধবী একসময় সরব হয়। রতনের মাথার ভেতর সে কথা বলে ওঠে হঠাৎ।
আমি জানি না রতন। পেয়ারায় কী ছিল জানি না।—চিৎকার করে মাধবী।
তাহলে পেয়ারা খাওয়ার পর কেন অমন হলো আমার মাধবী? আমার মাথাটা এলোমেলো হয়ে গেল যে! কেন আমি পাগল হয়ে গেলাম মাধবী?
জানি না! আমি জানি না।
কী মিশিয়েছিলে?
আহ্! বলছি তো কিচ্ছু মেশাইনি আমি! ঐ লোকটা মিশিয়েছিল! সে জানে!
কোন লোকটা মাধবী?
ঐ যে একটা লোক আছে না, বলেছিল ওটা পেয়ারাতে মিশিয়ে তোমাকে খাইয়ে দিলে তুমি ভালোবাসবে আমাকে!
তার কাছে কেন গেছিলে মাধবী? আমাকে পাগল করে দিতে? আমাকে অসুস্থ করে দিতে?
না না না! –সজোরে চিৎকার করে ওঠে মাধবী আবার।
তাহলে? কেন গেছিলে?
তোমার অবহেলা পাগল করে দিচ্ছিল আমাকে! আমি চেয়েছিলাম তুমি ভালোবাসো আমাকে। আর লোকটা বলেছিল ওটা খেলে তুমি ভালোবাসকে আমাকে।
হাহাহা… -উন্মাদের মতো হাসে রতন।
অথচ দেখ, তুমি নও, পাগল হয়ে গেলাম আমি! সত্যিকারের পাগল! উন্মাদ! তুমি খুশি তো মাধবী? এটাই চেয়েছিলে, না?
না রতন! এমনটা চাইনি আমি! সত্যি চাইনি! তোমাকে পেতে চেয়েছি শুধু!
সত্যি চাওনি মাধবী? সত্যি ভালোবেসেছিলে? তুমি তো দিব্যি আছ মাধবী! বিয়ে করেছ, স্বামী, সংসার, সন্তান নিয়ে দিব্যি আছ তো তুমি! অথচ আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে পুরোপুরি! এটা কেমন ভালোবাসা তোমার?
আহ্ রতন! আমি তোমাকে চেয়েছিলাম! তোমার ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলাম! যা করেছি এ কারণেই করেছি! তোমার ক্ষতি করতে চাইনি, বিশ্বাস কর!
হাহাহা… বিশ্বাস! তুমি আসলে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলে, তাই না মাধবী? কেমন পেরেছ দেখ! আমার জন্য পাগল ছিলে তুমি, এখন আমাকে ভুলে দিব্যি সংসার করছ মহানন্দে! আর যে আমি তোমাকে সহ্যই করতে পারতাম না, সেই আমি এখন পাগল হয়ে তোমাকে ভেবে মরি দিনরাত! তুমি খুশি তো মাধবী? প্রতিশোধ নিতে পেরে সুখি তো তুমি?
চুপ করো রতন! –ধমকে ওঠে মাধবী! মাথার ভেতর মাধবীর ধমকটা প্রতিধ্বনি তোলে দারুণ। তখনই তারস্বরে ডেকে ওঠে ঝিঁঝিগুলোও। অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে রতন। অন্ধকার ঘরে তার চিৎকার ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে বেড়ে যায় বহুগুণ। আকাশের তারাগুলো দূর থেকে নির্বাক শোনে রতনের চিৎকার। দীপন, তুলি, রুমকী হুড়মুড়িয়ে নামে। অন্ধকার সিঁড়িতে ফুরিয়ে আসা চার্জার লাইটের আলো ক্ষীণ একটু আলো ছড়িয়ে অন্ধকারের মুখে ম্লান জ্বলে।
কবে থেকে আবার হচ্ছে এমন? -উদ্বিগ্ন, অধীর রতন সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে তুলিকে প্রশ্ন করে। ইউরোপ থেকে ফেরার পর থেকে রতনের সাথে তেমন করে কথা বলা হয়নি তার। যখনই রতনের ঘরে এসেছে, হয় রতন তখন ঘুমাচ্ছে, নয়তো অপরিচিতের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে দীপনের চোখে। দীপন ফিরে এসেছে নিজের ঘরে। ব্যস্ততায় রতনকে ডাক্তারের কাছেও নেওয়া হয়নি আর। তুলির ওপর ভরসা করে সে নির্ভার থেকেছে অনেকটাই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল হয়েছে তার। তুলিকে এতটা ভরসা করা ঠিক হয়নি। তার উচিত ছিল নিজে উদ্যোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। ভাইয়া এবার সাময়িক সুস্থ হওয়ার পর থেকেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছে খুব। একটার পর একটা সমস্যা লেগেই আছে। আগে সুস্থ হলে সবাইকে চিনতে পারত অন্তত। এবার মাঝে মাঝেই ভুলে যাচ্ছে সব। যখন তখন নাকি এমন ভয়ার্তস্বরে চিৎকার করেও উঠছে। এ লক্ষণটা চেনা দীপনের। খুব চেনা। তবে কি রতন এবার খুব তাড়াতাড়িই পাগল হতে যাচ্ছে আবার? কিন্তু এমন তো হয়নি আগে! অন্তত মাসছয়েক তো সুস্থ থাকে রতন প্রতিবার! কপালে ভাঁজ পড়ে দীপনের। দ্রুতপায়ে সে রতনের রুমের দিকে এগোয়। পেছনে তুলি, রুমকী!
চলবে…