[পর্ব-১১: চলচ্চিত্র জীবন]
তারেক মাসুদকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলেন, বাংলাদেশের ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম নির্মাণের পথিকৃত। তিনি নতুনদের জন্য ছিলেন সাহস আর অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক বাস্তবতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এক সুতোয় গেঁথেছেন তিনি। তার কাছে চলচ্চিত্র শুধু চলমান চিত্র ছিল না, ছিল জীবনচর্চারও অংশ ছিল। চলচ্চিত্র তার কাছে ছিল সমাজভাবনা, রাজনৈতিক ও দার্শনিক চিন্তা প্রকাশের একটি মাধ্যম।
বিভিন্ন ছোট কাগজে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্য রয়েছে তারেক মাসুদের। যেগুলো নিয়ে ছবি হয়নি। তারেক মাসুদ পাণ্ডুলিপি তৈরিতে বেশ যত্ন নিতেন। অসংখ্য খসড়া করতেন। অনেকবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন। তিনি ভাষা ও উপভাষা (ডায়ালেক্ট) বিষয়ে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন। এজন্য তার পাণ্ডুলিপিকে প্রমিত বাংলায় রূপান্তর না করে তাদের মূল অবস্থায় ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রগুলোকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. প্রামাণ্যচিত্র
২. স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র
৩. পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনীচিত্র
প্রামাণ্যচিত্র
১. সোনারবেড়ি (১৯৮৫)
২. আদম সুরত (১৯৮৯)
৩. আহ আমেরিকা (১৯৮৯)
৪. গণতন্ত্র মুক্তি পাক (১৯৯০)
৫. ইউনিসান (১৯৯২)
৬. মুক্তির গান (১৯৯৫)
৭. শিশুকণ্ঠ (১৯৯৭)
৮. নিরাপত্তার নামে (১৯৯৮)
৯. মুক্তির কথা (১৯৯৯)
১০. নারীর কথা (২০০০)
১১. অন্য শৈশব (২০০২)
১২. কানসাটের পথে (২০০৮)
স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র
১. সে (১৯৯৩)
২. নরসুন্দর (২০০৯)
পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র
১. মাটির ময়না (২০০২)
২. অন্তর্যাত্রা (২০০৬)
৩. রানওয়ে (২০১০)
সোনারবেড়ি
এসএম সুলতানকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ নির্মাণের মধ্যেই তারেক মাসুদ ১৯৮৫ সালে ‘সোনার বেড়ি’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। একইসঙ্গে ছবিটি মুক্তি পায়। এই অর্থে ‘সোনার বেড়ি’ই তারেক মাসুদের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। ‘সোনার বেড়ি’তে নারী নির্যাতনের কিছু চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি এর প্রতিকারও চেয়েছেন তিনি। বাংলা তথা ভারতবর্ষের নারীরা ঐতিহ্যগতভাবেই অলঙ্কার ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। তাদের এসব অলঙ্কার চূড়ি, বালা, বিছা, হার, নথ, পায়েল, নুপুর, মল ইত্যাদি নামে পরিচিত। সোনা থেকে শুরু করে রূপা, তামা, কাঁসা, পিতল, লোহা ও অন্যান্য ধাতু দ্বারা এসব অলঙ্কার তৈরি করা হয়। কিন্তু নারীদের কাছে সোনার অলঙ্কারই সবচেয়ে দামি এবং প্রত্যাশিত। কিন্তু তারেক মাসুদ এগুলোকে অলঙ্কার হিসেবে না দেখে দেখেছেন বেড়ি অর্থাৎ বন্দি করে রাখার এক প্রয়াস হিসেবে। এই সোনার বেড়ি পুরুষতন্ত্র বা পিতৃতন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছে নারীর ওপর। এই ‘সোনার বেড়ি’ চলচ্চিত্র আমাদের বাংলার নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারেক মাসুদের এক শৈল্পিক প্রতিবাদ।
সোনার বেড়ি (Chain of gold)
প্রযোজনা: ডকুমেন্টাল
মুক্তি: ১৯৮৫ সাল
দৈর্ঘ্য: ২৫ মিনিট
ধরন: প্রামাণ্যচিত্র
চলবে…
তারেক মাসুদ: ছবির ফেরিঅলা-পর্ব: ১০॥ শারমিন রহমান