ঈশ্বরীপুরের সন্ধ্যায়
ওই দূর অন্ধকারে সাপের চোখে আমি বসে থাকি। রুগ্ণ বিছানায় যখন এলিয়ে দিচ্ছ প্রাকৃতিক শরীর—অবসন্ন স্যাঁতস্যাঁতে বিষাদে তোমার ভরে উঠছে মন! দেখো আমাদের জাফলং গল্পটা কিন্তু শেষ হয়নি—কাঁকড়ার দাঁত নিয়ে গবেষণা এখনো বাকি। সব পাখি কি নদীর কিনারে যায়? যতটা খাদের গভীরে ঘুটঘুটে আঁধারে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি!
সমূহ যাপনের ভার নৌকার গলুই ধরে পাড়ি দিচ্ছে শরীরের পথ। আমি যখন ডুমুরের কথা বলি—ভেসে ওঠে মাকড়ির দুল! সোনালুর ডাল ধরে পাখা নাড়ে বিরহী কোকিল।
আরোগ্য হাওয়ার ভেতর তৈরি করো পরাবাস্তব পথ—ঈশ্বরীপুরের সন্ধ্যায় পুনরায় শিশু হয়ে উঠি…
এ রাত ডানার হলে
সেই এক তরমুজের বন—লালরস রক্তবর্ণ চোখে শুয়ে আছে। উড়ে উড়ে জাঁহাবাজ পাখি ঠোঁটে ধরে কালো বিড়ালের দাঁত—পার হচ্ছে শান্ত নদী। আমাদের তৃষ্ণা মেটানো পথ—ছোট হতে হতে পকেটে ঢুকেছে। মুগ্ধতার গাছজুড়ে ফুটেছে মায়াবতী ফুল।
সমুদ্রে বাতাস হলে নড়ে ওঠে আকাশের চাঁদ!—এ ব্যাখ্যা বাসি ভেবে চোখভর্তি জোছনা নিয়ে হাঁটি। পাতা কুড়ানো রাতে গ্রামে গ্রামে জ্বলে ওঠে কুয়াশার বাতি। ভাপ ওঠা ভাতের মতো দুর্লভ কিছু শ্রুতি কানে কানে বলে যায় হাওয়াদের পরি।
এ রাত ডানার হলে ওড়ার বাসনা আমি মনে পুষে রাখি!
ধানপোঁতা হাতের আঙুল
চোখের খুব কাছে এসে
খুলে দিলে আমার দুচোখ
পাগলও পালক চেনে
তুমি কেন পলক বোঝো না!
ধরো—চোখের পলকে এসে
যে আমাকে দিয়ে গেল
ছাতিমের ছায়ার মতো
স্নিগ্ধ কিছু কথার ফোয়ারা…
মাঠের গল্পের মতো তুমি যদি
শুনতে চাও—ঝরাপাতার ভেতর
কী এমন বার্তা লুকিয়ে ছিল—
বসন্তের চতুর বাহক!
বলতে পারো দৃশ্যের বিপরীতে কখন—
ছুঁয়েছিল ধানপোঁতা হাতের আঙুল!
শিমুলগাছ
একটা শিমুলগাছ একা ভিজে যায়!
আর দূরে রিকশাবন্দি যুগল মেঘের
কাতর চোখ বেয়ে—অঝোর ধারার মতো
ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে যায়—
প্রণয়ের মতো গভীর জলমগ্ন বরষায়।
নির্জন গলির ভেতর পোড়োবাড়ির পাশে
একা, একটা শিমুলগাছ শুধু ভিজে যায়।
বোধ ও ব্যাপ্তিজুড়ে বর্ষণের চলতি হাওয়া
পাহাড় কাটার মতো ধীরে ধীরে ধসে গিয়ে—
মনের অতলে ঢুকে জাগিয়ে রাখে মায়া
বৃষ্টির এই আসা—এই ফিরে যাওয়া…
প্রত্নের মতো একটা শিমুলগাছ—
একা ভিজে যায়…
ঘাসসূত্র
ঘাসফুলে জমে থাকে শীতের শিশির
আলোর চুমুতে মুছে যায় বেদনার রঙ।
এলোচুল লেপের জ্যাকেটে বুলিয়ে দেয়—
গভীর শীতলতা…
আমি কৃষ্ণ বলে কি নেব না চণ্ডীপাঠ!
শীতকাল বুকের ভেতর মোম হয়ে জ্বলে…