সময়ের আলোচিত তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন। অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম চারদিনেই এই লেখকের নতুন উপন্যাস ‘মানবজনম’-এর প্রথম মুদ্রণ শেষ। এখন পাওয়া যাচ্ছে দ্বিতীয় মুদ্রণ। বাংলাদেশে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরুর আগে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় সাদাত হোসাইনের নতুন এই উপন্যাসটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। বইটি বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ভাষাচিত্র-এর স্টলে। স্টল নম্বর ৬১০-৬১১। এছাড়া সাদাত হোসাইনের বেস্টসেলার উপন্যাস ‘আরশিনগর’, ‘অন্দরমহল’, ‘আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই’ এবং ছোটগল্প সংকলন ‘জানালার ওপাশে’ পাওয়া যাচ্ছে এই স্টলে। বইমেলার ব্যস্ততা ও ব্যক্তি সাদাতের সাহিত্যচিন্তা নিয়ে কথা বলেছেন চিন্তাসূত্রের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবারের নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
সাদাত হোসাইন: আমার এবারের বইয়ের নাম মানবজনম। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ভাষাচিত্র থেকে। তবে বইটি একুশে গ্রন্থমেলার আগেই প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলায়। প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ পৃষ্ঠার আখ্যান মানবজনম। অসংখ্য গল্প, চরিত্রের সংমিশ্রণে এই উপন্যাস। উপন্যাসজুড়েই একটা প্রবল কিন্তু চাপা কৌতূহল রয়েছে। বড় উপন্যাসে যেমন হয় যে ধীরে ধীরে এর গল্পের ভেতর ঢুকতে হয়, ঘটনার বাঁক আবিষ্কার করতে হয়। তবে এটি শুরুতেই পাঠককে গল্পের ভেতরে নিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বইমেলার কাছে আপনার প্রত্যাশা কী আর লেখক হিসেবে প্রাপ্তি কেমন?
সাদাত হোসাইন: কলকাতায় এবার দেখেছি বইমেলা নিয়ে স্থানীয় সরকারের কত আয়োজন। শহরজুড়ে পোস্টার, বিশাল বিশাল বিলবোর্ড। সাধারণ মানুষকে মেলায় আসার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে সেইসব পোস্টার এবং বিলবোর্ডে। চমৎকার ভাষায়, উপস্থাপনায় বইমেলার প্রচারণা। কলকাতার বইমেলা যে কলকাতার মানুষের কাছে একটি গর্বের জায়গা, সেটি এইসব প্রচারণায় নানাভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টি আমাকে খুবই আন্দোলিত করেছে। আমার মনে হয়, বই ও বইমেলার প্রচার হওয়া উচিত আর সব কিছুর চেয়ে বেশি। ঢাকা শহরেরে রাস্তায় রাস্তায় আমি বইমেলার প্রচারণা, প্রচার দেখতে চাই। এই সময়ে এসে কোনো কিছুই জনগণের বৃহত্তর অংশের কাছে না পৌঁছাতে পারলে সেটি সেভাবে টিকে থাকবে না বা প্রভাব বিস্তারী হবে না। এখন আপনি যদি আজকে থেকে কুড়ি বা পঞ্চাশ বছর আগের বাস্তবতায় বইমেলা বা বইয়ের প্রচারণার নিভৃতচারী আচরণ বা অনুশীলনকে উদহারণ হিসেবে দেখান, তাকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকেন, তাহলে আমি বলব, সেটি খুবই আত্মঘাতী ভাবনা। কারণ কোনোকিছুই আর কুড়ি বা পঞ্চাশ বছরের আগের বাস্তবতায় নেই। এই অস্থির সময়ে, যখন তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে, যখন চারপাশে হাজারো পণ্যের, বিনোদনের, মাধ্যমের রমরমা প্রচার, প্রসার, বিজ্ঞাপন, তখন আপনি বলছেন বইতো পণ্য নয়, বইয়ের প্রচার করা যাবে না, বিজ্ঞাপন করা যাবে না। করলেও সেটি করতে হবে সংযমী বা বিধিবদ্ধ উপায়ে! এই ভাবনা আমাকে অবাক করে। আমি বরং বলি, এই সময়ে বইয়ের প্রচারণা, বইমেলার প্রচারণা হওয়া উচিত সম্ভাব্য সব উপায়ে সর্বোচ্চ।
আমরা প্রায়ই বলি, বাংলা বইয়ের পাঠক কমে যাচ্ছে। পাঠক বইমেলা বাদ দিয়ে বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই সংস্কৃতি এই অভ্যাস কেন চালু হয়েছে? কিভাবে চালু হয়েছে? বিজ্ঞাপনের, প্রচারণার ভূমিকাকে আপনি এই সময়ে এসে আর অস্বীকার করতে পারবেন না। করলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে যে বাস্তবতায় আমরা বিলং করতাম, এখন আমরা সেই বাস্তবতায় বিলং করি না। এটি আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের চারপাশের সব কিছু বদলে গেছে, অভিনব হয়েছে, আর আমরা কেবল বইয়ের প্রচার, বইমেলার প্রচার-প্রচারণায় এখনো আঁকড়ে ধরে বসে আছি সেই পুরনো ধ্যান-ধারণা।
আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটি সামগ্রিক ক্ষেত্রে আমাদের বই ও বইমেলার জন্য ক্ষতিকর। আমাদের অবশ্যই বই ও বইমেলার ম্যাসিভ প্রচারণার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমি যেমন আরও বিস্তৃত এবং কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে, তেমনি দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে একদম ব্যক্তিপর্যায় থেকে, পাঠক, প্রকাশক, লেখক, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের তাদের জায়গা থেকে। দেশের মিডিয়ারও এখানে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে বলে আমি মনে করি। একটি সিনেমা যেমন শিল্প, একটি সাহিত্যও তেমনি শিল্প। একটি সিনেমা যেমন গল্প বলে, একটি বইও তেমনি গল্প বলে। সুতরাং একটি সিনেমার প্রসারের জন্য যদি সম্ভাব্য সব উপায়ে এর প্রচারণা চালানো যায়, সেটি দেখতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে একটি বইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায় আমায় বুঝি না। আমাদের এই জায়গাটিতে নতুন করে ভাবা উচিত।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে, প্রকাশকরা হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকেন না। এটি তাদের পেশা, ব্যবসা, বই ছাপানো, বিক্রি করা, সুতরাং এটি তাদের রুটি-রুজির বিষয়। একইসঙ্গে লেখকও হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকেন না। যদি কেউ ভাবেন, লেখকের পেশাদার লেখক হওয়ার দরকার নেই, একজন লেখক ন’টা-পাঁচটা চাকরি করবেন, তারপর সময় পেলে লিখবেন, তাহলে তার আর বই বেচে টাকার কী দরকার? আমি বলি, যতক্ষণ না অবধি দেশে পেশাদার লেখক-প্রকাশক গড়ে উঠবেন, ততদিন অবধি এর সামগ্রিক বিস্তার, সামগ্রিক প্রভাব বাড়বে না। কমতেই থাকবে। সুতরাং এখনই সময়, ভাবতে হবে নতুন করে। নাহলে খুব দেরি হয়ে যাবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সমকালীন সাহিত্য নিয়ে আপনার ভাবনা কেমন?
সাদাত হোসাইন: আমি বয়সে তরুণ। তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি। অসংখ্য সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই সম্ভাবনাদের উৎসাহ দেওয়া জরুরি, পরিচর্যা করা জরুরি। কিন্তু কেন যেন আমাদের দেশে একটা নেতিবাচক সংস্কৃতি চালু হয়েছে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। এখানে কেউ কাউকে উৎসাহ দিতে চায় না। অনুপ্রেরণা দিতে চায় না। বরং কেউ ভালো কিছু করলে তা নিয়ে অন্যরা উচ্ছ্বসিত হওয়ার বদলে সংশয় প্রকাশ করতেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই জায়গাটিতে ভাবনার বদল খুব চাই। যারা সাহিত্য চর্চা করবেন, তাদের কাছ থেকে বিশাল হৃদয় চাই, উদার মানসিকতা চাই। চাই তারা পরস্পরকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সমর্থন করবেন, সহযোগিতা করবেন। সেখানে প্রশংসা যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে সমালোচনাও। তবে সেই সমালোচনা যেন এমন না হয় যে, তা কোনো তরুণ সাহিত্যিককে অনুৎসাহিত করে ফেলে তার লেখার ক্ষেত্রে। তাকে যেন অপমান করা না হয়। বরং তার ভুলগুলো শুদ্ধ করে দেওয়া হোক ভালোবেসে, যত্ন করে। যেন এই ভুল থেকেও সে নতুন করে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা পায়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সমকালীন লেখকদের মধ্যে কার কার লেখা ভালো লাগে?
সাদাত হোসাইন: শাহাদুজ্জামান পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। এখনো পড়ছি। এছাড়া একদম তরুণদের মধ্যে ওবায়েদ হক, নাজিমুদ্দৌলা, জান্নাতুন নাঈম প্রীতি, আবদুল্লাহ আল ইমরান, লুৎফর হাসানদের লেখা ভালো লাগছে। ভালো রম্য লেখেন রাসায়াত রহমান জিকো।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাদাত হোসাইন: আমার আসলে আলাদা করে কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি পরকল্পনা করে কোনো কাজ করতে পারি না। লিখতে তো নই-ই। আমি শুধু এটুকু জানি, আমি গল্প বলতে চাই। প্রচুর গল্প। এই গল্প আমি বলে যেতে চাই লেখায় ও সিনেমায়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্যের কোন শাখা আপনার বেশি ভালো লাগে?
সাদাত হোসাইন: গল্প ও উপন্যাস।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা…
সাদাত হোসাইন: আমার সেই অর্থে কোনো অনুপ্রেরণা নেই। কিংবা থাকলেও সেটি আমি আলাদা করে কখনো ফিল করিনি। তবে আমার মনে হয়, একজন লেখকের লেখার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার সংবেদনশীলতা। অনুভব করার ক্ষমতা। যার অনুভূতিপ্রবণতা যত তীব্র, তার লেখক বা শিল্পী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তত বেশি। তবে লেখালেখির ক্ষেত্রে আমার প্রিয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এরপর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও হুমায়ূন আহমেদ। সম্প্রতি অতীন বন্দোপাধ্যায় পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। আর একজন, বিশেষভাবে, তিনি মানিক বন্দোপাধ্যায়। আমার স্বপ্নের লেখক।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনি কি প্রচারবিমুখ থাকতে পছন্দ করেন?
সাদাত হোসাইন: না। আমি প্রচারবিমুখ থাকতে পছন্দ করি না। কেন করি না, সে কথা খানিক আগে বই ও বইমেলার প্রচারণা নিয়ে বলা কথায় অনেকটাই স্পষ্ট করেই বলেছি। তারপরও এখানে আরেকটু বলছি, আসলেই কি কেউ প্রচারবিমুখ? আমি জানি না, হয়তো কেউ রয়েছেন। কিন্তু আমার বাস্তবতা বলে আমি এমন কাউকে দেখিনি। বরং প্রচারবিমুখতার ভান ধরে থাকা, সেই ভানের আড়ালে প্রবল ‘প্রচার-মুখ’ মানুষ আমি দেখেছি। ধরেন একজন একটি সিনেমা বানালেন, একটি বই লিখলেন, সেটি প্রকাশ করলেন, তো এই সিনেমাটি বানিয়ে ফিল্মমেকার কেন সেটি রিলিজ দিলেন? যেন মানুষ দেখে। এখন মানুষ কেন দেখবে? তার সৃষ্টিটা দেখতেই তো? তাই না? তাহলে? তাহলে তিনি কি প্রচারবিমুখ? নিশ্চয়ই নয়।
একজন লেখকও চান তার বই মানুষ পড়ুক। আর প্রচারবিমুখ হলে নির্মাতা তার সিনেমা বানিয়ে সেটি রিলিজ না দিয়ে ঘরে বসে একা একা দেখবেন। লেখক তার বই লিখে সেটি প্রকাশ না করে একা একা নিভৃতে নিরালায় পড়বেন। তাই না? তবে একটা বিষয়, যারা খ্যাতির শীর্ষে উঠে যান, একটা সময় তাদের কাছে প্রচার-প্রচারণা একঘেয়ে লাগে, বিরক্তি লাগে। কিন্তু ওই শীর্ষ পর্যায় অবধি পৌঁছানোর আগে তিনিও কিন্তু চান তার প্রচার হোক। এটি সব বিখ্যাত মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। আমি মনে করি, তরুণদের পক্ষে প্রচারবিমুখ হওয়া কঠিন। কারণ এখনই সময় তার কাজ ছড়িয়ে দেওয়ার, তার আলো ছড়িয়ে দেয়ার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: ‘আরশিনগর’-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর ‘মানবজনম’-এর সাফল্য আপনাকে কেমন পুলকিত করে?
সাদাত হোসাইন: আরশিনগরের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আমাকে যেমন চমকে দিয়েছে, তেমনি থিতুও করেছে। আমাকে এই বার্তা দিয়েছে পাঠক যে, আপনি আপনার মতো গল্প বলে যান। আমরা পড়ব। আপনাকে আরোপিত গল্প বলতে হবে না। যার ফল ‘অন্দরমহল’ এবং সেটির সফলতা আমাকে আরও শক্তি, সাহস এবং আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। যেটির ধারাবাহিকতায় এসেছে ‘মানবজনম’। একজন লেখকের গল্প বলতে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুব জরুরি। তখন পাঠকের ভাবনা না ভেবে নিজের অনুভূতির ভাবনা ভাবাটা জরুরি। কারণ একজন লেখকের পক্ষে হাজার হাজার, লাখ-লাখ পাঠকের কথা চিন্তা করে তাদের মতো করে লেখা সম্ভব নয়।
লেখক লিখবেন তার মনের মতো, ভাবনা ও অনুভূতিতে তাড়িত হয়ে। যদি তার সেই ভাবনা বৃহত্তর পাঠককে স্পর্শ করতে পারে, তাহলে তিনি সফল। কিন্তু স্পর্শ না করতে পারলেই যে তিনি ব্যর্থ তা কিন্তু নয়। আমি মনে করি না, লেখকের ক্ষেত্রে সফল বা ব্যর্থ কিছু আছে! আমি বরং মনে করি, যে একটি বাক্য তৈরি করল, যা তাকে বা অন্য কাউকে ইতিবাচক অনুভূতিতে আন্দোলিত করল, সেই সফল। এজন্যই আরশিনগর আর অন্দরমহলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যারা আমাকে এই বিশ্বাস দিয়েছে যে আমি আমার ভাবনা, আমার অনুভূতি দ্বারাই তাড়িত হব, আন্দোলিত হব। এখানে আমাকে দ্বিধাহীন থাকতে হবে। যার ফল মানবজনম এবং এখন অবধি কলকাতা এবং বাংলাদেশে এর পাঠক সাড়াও বিস্ময়কর।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখালেখির সাফল্যে ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে?
সাদাত হোসাইন: আগে করত। কারো ঈর্ষাপরায়ণতায় গুটিয়ে যেতাম, সঙ্কুচিত হয়ে যেতাম। কিন্তু সেই ভাবনা থেকে উঠে আসতে পেরেছি। এখন আমার মনে হয়, নেতিবাচক ঈর্ষা বা জেলাসির চেয়ে আত্মঘাতী কিছু নেই। তারা যখন আমাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত হন, পরচর্চা করে সময় নষ্ট করেন, তখন আমি হয়তো আমার নতুন গল্পের প্লট নিয়ে ভাবছি। জগতে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হচ্ছে সময়। এই সময় আপনি কোনো কিছুর বিনিময়েই কিনতে পারবেন না। এজন্য এই মূল্যবান সময় আমি অযথা কারও পেছনে নষ্ট করতে চাই না।
আমার মনে হয় আমার বুকের ভেতর অসংখ্য গল্প, কিন্তু হাতে সময় খুব অল্প। ফলে এই অল্প সময়ে যতটা সম্ভব আমি এইসব গল্প বলে যেতে চাই। সিনেমায়, লেখায়, ছবিতে। সুতরাং অন্যের ঈর্ষাপরায়ণতা বা পরশ্রীকাতরতা নিয়ে ভেবে ভেবে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। আসলে কি জানেন, ঈর্ষান্বিত হবার জন্য, কিংবা পরশ্রীকাতর বা পরচর্চাকারী হওয়ার জন্য কিন্তু কোন যোগ্যতা লাগে না, কোন শ্রম বা কঠোর অধ্যবসায় লাগে না। আল্লাহর দেওয়া একখানা মুখ থাকলেই হয়। কিন্তু সেই ঈর্ষার কারণ হতে হলে, সেই পরচর্চার কারণ হতে হলে, সেই পরশ্রীকাতরতার কারণ হতে হলে যোগ্যতা থাকতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অধ্যবসায়ী হতে হবে।
আমি কখনো পরশ্রীকাতর বা পরচর্চাকারী হতে চাইনি, আমি পরশ্রীকাতরতা বা পরচর্চার কারণ হতে চেয়েছি। কারণ আমি কঠিন কাজটি করতে চেয়েছি, সহজ কাজটি নয়। একটা কথা মনে রাখবেন, যুগে যুগে মানুষ পরচর্চাকারী বা পরশ্রীকাতরদের মনে রাখেনি। মনে রেখেছে, সেই সকল পরশ্রীকাতরতা বা পরচর্চার কারণদের। এই জন্যই আমি ‘পরশ্রীকাতর’ বা ‘পরচর্চাকারী’ নয়, পরশ্রীকাতরতা বা পরচর্চার ‘কারণ’ হতে চাই।