মেঘের কপোত ॥ সিকান্দার আল মামুন
আকাশেতে মেঘের কপোত সাদা নূপুর পায়
উড়ে উড়ে যাচ্ছে দূরে কোন পাহাড়ের গায়।
কোন পাহাড়ে জিরোবে সে বদ্ধ করে ডানা
কোথায় যাবে,কোন সুদূরে নেই যে তার ঠিকানা।
ও কপোত আজ নেমে এসো আমার সোনার গাঁয়
মাঠে মাঠে ধান পেকেছে নিও তোমার নায়।
হিমের বুড়ি আসলে দিও তার আঁচলে ভরে
খেজুর রসে পায়েস খেতে প্রতি ঘরে ঘরে।
শিশির কন্যা ॥ শম্পা খন্দকার
ভোরের হাওয়া দোল খেলে যায় পাকা ধানের ক্ষেতে
শিশির কন্যা গান গেয়ে যায় আনন্দেতে মেতে।
ঘোমটা টেনে কৃষাণ বধূ হাসি টানা মুখে
অনেক শ্রমের শেষে এবার ভরবে গোলা সুখে।
শিউলি ঝরা পথ হয়ে যাই আকুল করা ঘ্রাণে
কাশবনের সাদা পরী অসীম মায়ায় টানে।
শীত গরমের সন্ধিক্ষণে মিষ্টি পিঠার ধুম
সবুজ শ্যামল বাংলাদেশে হলদে আভার চুম।
কুয়াশা যাপন ॥ তাসলিমা রুবি
হিম কুয়াশা ঝিম কুয়াশা পিতামহের চাদর
মনে পড়ে হিম কুয়াশা দাদি নানির আদর।
পথের মোড়ে বটের তলে বিছিয়ে চটের ছালা
ডুব দিয়েছি রসের ভাঁড়ে বইয়ের পাতা খোলা।
হিম কুয়াশা ঝিম কুয়াশা পোড়ায় মনে প্রাণে
নলেনগুড়ের পায়েশ দারুণ সুস্বাদু আর ঘ্রাণে।
মনে পড়ে হিম কুয়াশা উরুম’ ভাজা রাতে
জমাট ঝোলে আদরমাখা মায়ের হাতের ভাতে।
এখন আমার নগরজীবন কোর্মা পোলাও রোজ
মন উড়ে যায় ছোট্টবেলায় হারিয়েছি তার খোঁজ।
হেমন্তকাল ॥ স্বপন শর্মা
হাপুর-হুপুর সারা দুপুর কাজের পরে কাজ
কৃষক খাটে ধানের মাঠে নেই অবসর আজ।
নেই অবসান ব্যস্ত কৃষাণ দিন কাটে তার মাঠে
ধানের গোলা সাঝেঁর বেলা বেচে গাঁয়ের হাটে।
কার্তিক শেষে অঘ্রাণ আসে নবান্নের সেই সুরে-
গাঁয়ের লোকের দুঃখ-শোকের যন্ত্রণা যায় উড়ে।
সকাল-সন্ধ্যে ধানের গন্ধে বাও-বাতাসে ভরে,
হেমন্ত ঠিক আসে চারদিক গাঁয়ের কুঁড়ে ঘরে।
সোনার রোদে ছড়া ॥ তরণী কান্ত সুমন
ধান পেকেছে সবুজ মাঠে ভরা ক্ষেতে ক্ষেতে,
ভোরের বাতাস বইছে ঘ্রাণ সুখে মেতে-মেতে।
চারদিক আজ সারি-সারি সোঁনার ফসল মাঠে,
পাকা ধান তুলতে ঘরে ব্যস্ত সবাই হাতে।
কৃষকচাষির মুখে-মু্খে ভাসছে সুখের গান,
তুলবে ঘরে ভরবে গোলা সোঁনার ফসল ধান।
মাঠের পরে ধানের ক্ষেতে সোনার রোদে ছড়া,
সুখগুলো আজ ঘরে-ঘরে বাড়ির উঠোন ভরা।
হেমন্তের সুখ ॥ রিয়েল আবদুল্লাহ
হেমন্তের মাঠে মাঠে মুঠো মুঠো সোনা পাকা ধান,
সুখে সুখে ভরে প্রাণ মৌ মৌ ফসলের ঘ্রাণ।
ধান কাটা শুরু হলে ফসলেতে ভরে যাবে ঘর,
সারাটিদেশ জুড়ে বইবে সুখ আনন্দের ঝড়।
কিষাণ-কিষাণীর মুখে ফুটবে সোনারঙ হাসি,
সুমধুর সুরে বাজাবে রাখাল বাঁশরিয়া বাঁশি।
পিঠা পুলির উৎসব হবে পাড়ায় পাড়ায় ঘরে ঘরে,
স্বজনের সমারোহে বাড়ি বাড়ি সবখানে যাবে ভরে।
নাইওর আসবে নাইওর যাবে সঙে যাবে ফসলের চিঠি,
হেমন্তের সুখ বারতা ফিরতি খামে ভালোবাসার দিঠি।
হেমন্ত আসে বিগত দিনের দুঃখ কষ্ট সব ভুলিয়ে দিতে,
বেদনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আনন্দকে ভাগ করে নিতে।
এলো ঋতু হেমন্ত ॥ তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী
শরৎ শেষে সলাজ বেশে এলো ঋতু হেমন্ত,
উদার আকাশ মেঘ কারুকাজ যেমন ছিল তেমন তো।
দিন বদলের চলতি ধারায় ষড় ঋতুর দেশে,
হেমন্ত আজ দিচ্ছে দোলা মিষ্টি মধুর হেসে।
হেমন্তে আজ সারা মাঠে হলুদ সোনার ধান,
চাষির মুখে মিষ্টি হাসি কণ্ঠে মধুর গান।
সাদা সাদা মেঘের ভেলা হিমেল হাওয়ায় ভাসে,
ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির মুক্তো যেন হাসে।
শীত বলে ভাই আসি আসি তবুও নয় শীত,
শীতের এখন অনেক দেরি গাও হেমন্ত গীত ।
নবান্ন ॥ আবু আফজাল সালেহ
খেজুর গুড়ে আখের রসে অলি-মাছি ওড়ে
ধানের দানা ছেড়ে নিতে কৃষাণ ওঠে ভোরে।
ঢেঁকির শব্দে মুখরিত শহর-পাড়া-গাঁয়ে
পিঠা পায়েস বানাতে তোড় খালা-পিসি-মায়ে।
চারিদিকের ম-ম বাসে জানান দেয় নবান্ন
পিঠা-পায়েস খেজুর-রসে সুবাস ছড়ায় অন্ন।
অপরূপ হেমন্ত ॥ সাকিব জামাল
হেমন্তের আগমনে নাঁচেরে বাঙালি,
ফসলের মৌ সৌরভে মেতে ওঠে প্রাণ।
আনন্দ জোয়ারে ভাসে সব মন মালি,
আগামীর সূখ স্বপ্নে গায় শুভ গান।
নবান্নের উৎসব: বাজে ঐকতান,
ঐশ্বর্য, সূখ কামনা করে পুরো জাতি।
সুফলা, শস্য শ্যমলা, এ বাংলা প্রমাণ,
প্রাণের চেয়ে প্রিয় এই সোনার মাটি।
চিরায়ত এ ঐতিহ্য: গ্রোথিত হৃদয়ে,
নব অরুণ আলোয় চিত্রিত অবাক,
এতিহ্যের ধারাপাত সূখ সিক্ত থাক,
কালের প্রবাহে আজ অন্তর্মুখী সবে।
মন ক্যানভাসে তবু গ্রাম বাংলা দীপ্ত,
অপরূপের হেমন্ত, শুভ হোক নিত্য।