একেই বলে স্বাধীনতা
নদীর যেমন ছুটে চলা
শিশুর যেমন কথা বলা
শাপলা যেমন হাসে
একেই বলে স্বাধীনতা—
শিশির যেমন ঘাসে।
চাঁদের যেমন আলো দেয়া
মাটি যেমন ফোটায় কেয়া
পাখির যেমন গান
একেই বলে স্বাধীনতা—
দেশের যেমন টান।
বাবার যেমন আদর থাকে
গ্রামটি যেমন কাছে ডাকে
মায়ের যেমন হাসি
একেই বলে স্বাধীনতা—
ভালবাসাবাসি।
স্বাধীনতার গান
হেসে ওঠে বনবনানী
বাঁশের পাতার শনশনানি
কাঁটালতায় জড়িয়ে থাকে গাছ
ফুলে-ফলে প্রজাপতির নাচ
এমন শোভা বিলিয়ে দিতে বনটা পেরেশান
আমার দেশের পাখিরা গায় স্বাধীনতার গান।
ছলছলছল জলের ধারা
যেমন ঝরনাতলের ধারা
বইছে নদী নিজের ধারায় ওই
মাছ খলবল হেসে ফোটায় খই
কূলে বসেই শুনতে পারি নদীর কলতান
আমার দেশের মাঝির মুখে স্বাধীনতার গান।
মৃদু বাতাস ঝিরঝিরিয়ে
দোলায় ফসল তিরতিরিয়ে
ছড়িয়ে পড়ে সেই ফসলের ঘ্রাণ
খুশির বানে প্রকৃতি পায় প্রাণ
সারা মাঠে ব্যাপক সাড়া গন্ধ অফুরান
আমার দেশের চাষির ঠোঁটে স্বাধীনতার গান।
এই গানে কেউ তুলতে পারো সুর?
চোখের জলে কতো মায়ের বুকটা সমুদ্দুর
স্বাধীনতা আনতে গিয়ে লক্ষ বলিদান
আমার দেশের মায়ের বুকে স্বাধীনতার গান।
একটি বাংলাদেশ
স্বাধীনতা নিয়ে তোমাদের আজ
কত আশা কত গর্ব।
কিন্তু জানো কি কীভাবে শুরুটা
হয়েছে প্রথম পর্ব ?
পাকিস্তানের শাসক এসেছে
বাংলাকে লুট করতে,
বাঙালিকে ওরা দেয়নি শান্তি
ভিতটা দেয়নি গড়তে।
শত চেষ্টায়ও পাকবাহিনীকে
করা গেল নাকো শুদ্ধ,
পাকিদের সাথে তাই বাঙালির
করতেই হলো যুদ্ধ।
অবাক হয়ো না, মাত্র ন মাসে
যুদ্ধ হয়েছে শেষ।
কত ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে স্বাধীনতা—
একটি বাংলাদেশ।
দুষ্টু ছেলে কই
ইনিকবিনিক ফিনিক ফোটা
জোছনা ওঠে ওই—
আঁধার রাতে পালিয়ে যাওয়া
দুষ্টু ছেলে কই?
দুষ্টু ছেলে কই রে আমার
দুষ্টু ছেলে কই?
মিষ্টি ছড়া কাকে শোনাই?
কোথায় ছড়ার বই?
একাত্তরে সব গিয়েছে পুড়ে—
দুষ্টু ছেলে আছে স্বাধীন
মাটির কোলটা জুড়ে।
বিজয়ের গল্প
গল্প শুনে মনে হবে
লাগ ভেলকি খেল—
বাঙালিরা খানের মাথায়
ভেঙেছে নারকেল।
ইয়াহিয়া, টিক্কা খান ও
ভুট্টো নাটের গুরু—
প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানে
গিয়ে নাচায় ভুরু।
লেলিয়ে দিল উগ্র কুকুর
সাথে কামান ট্যাংক।
নির্বিচারে মানুষ মারে,
কে আর এত সইতে পারে?
পোড়ায় তারা ঘরবাড়ি আর
উড়ায় অফিস, ব্যাংক।
রুখতে তাদের গর্জে ওঠে
দেশের জনগণ—
হার মেনে খানসেনা করে
আত্মসমর্পণ।
দেশটা হলো স্বাধীন, তবে
খুব সহজে নয়—
ন মাস ধরে যুদ্ধ করে
লক্ষ প্রাণের রক্ত ঝরে
তারপর বিজয়।
সেই কথাটা
সেই কথাটা বলতে গেলে
ঠোঁট কাঁপে আর বুক কাঁপে আর
মন কাঁপে।
আকাশ কাঁপে সাগর ফাঁপে
পাহাড় টিলা বন কাঁপে।
সেই কথাটা বললে ঠিকই গুটিয়ে রবে কলি—
কেমন করে বলি?
সেই কথাটা লিখতে গেলে
দীপ কাঁদে আর চাঁদ কাঁদে আর
সুরুজ কাঁদে।
আঁধার কাঁদে মেঘের ফাঁদে
মেঘ ও মাটির বুরুজ কাঁদে।
সেই কথাটা লিখতে গিয়ে ভয় পেয়ে যাই ঠিকই—
কেমন করে লিখি?
সেই কথাটা জানার জন্যে
কাল-মহাকাল কেঁদে কেঁদে জানায় আকুলতা—
কেমন করে হয়েছিল
লাল ও সবুজ পতাকার এই দেশের স্বাধীনতা?