কিশোর নেমেছে পথে
ঘুমের চাদর সরিয়ে কিশোর চোখ মেলে জেগে ওঠে
মহুয়ার বনে বাতাসে নাচের নিটোল মুদ্রা ফোটে;
ভোরের পাপিয়া নিপুণ সুরের
সুরভী ছড়ায়, নদী নুপুরের
মতন বাজায় জলতরঙ্গে নিক্কন দুই তীরে
জাগল কিশোর মায়াবী ঘুমের চাদর সরিয়ে ধীরে।
জেগেছে আকাশ, জেগেছে পৃথিবী সোনালি ভোরের সাথে
আকাশ-পৃথিবী ধরা দিল এসে কিশোরের দুই হাতে;
অবাক দু’চোখে সাগর-পাহাড়
সবুজ বনানী, ঘাসের বাহার
নদী, দিগন্তবিস্তৃত মাঠ-প্রান্তর ছবি হয়ে
ফুলের মতন পাপড়ি মেলেছে কিশোরের বিস্ময়ে।
ওড়ে প্রজাপতি, পাখায় এঁকেছে স্বপ্নের লতাপাতা
ভোমরার গুঞ্জনে বেজে ওঠে জীবনের জয়গাথা;
আকাশ সুনীল সোহাগে ভরিয়ে
বাতাসে চলার ছন্দ ছড়িয়ে
মায়াবী সুতোর চাদর সরিয়ে ঘুমের বিছানা হতে
সূর্যসাথী এ-পৃথিবীর ছেলে কিশোর নেমেছে পথে।
পথ চলে গেছে সীমানা ছাড়িয়ে স্বপ্নের সৈকতে।
যে তুমি আদর করে
যে তুমি আদর করে কাছে ডেকে নিতে পারো আমাকে
সোনায় রাঙাতে পারো আমার যে কষ্টের তামাকে
সে তুমি আপন তাই আমার এ মন ভারী মনোরম
ছন্দে সাজিয়ে নেয় তার বেদনার ওঠা-নামাকে;
যে তুমি আদর করে কাছে ডেকে নিতে পারো আমাকে।
যে তুমি শাসন করে আমার যে দুরন্তপনাকে
বদলে ঢালতে পারো শুভেচ্ছামাখা প্রতি কণাকে
হৃদয়ের তল হতে সোহাগের শত পথে, সংকটে
যে তুমি বরণ করো আমার দুঃখ-যন্ত্রণাকে;
সে তুমি শাসন করো আমার সে দুরন্তপনাকে।
তুমিই বুঝতে পারো আমার কী আনন্দ, আমার কী সাধ
কী আমার অভিমান, কখন ক্রোধের বশে
ভেঙে যেতে চাই সব বাধ
সবাই বাইরে থেকে উদ্ধত কিশোরকে দেয় অপবাদ
তুমিই শাসনে আর সোহাগে ঘুচিয়ে দাও
আমার সকল অপরাধ।
সোনালি রোদের মতো
রাতের আঁধার কেটে ধীরে ধীরে যেই হয় ভোর
সোনালি রোদের মত চোখ মেলে জেগে ওঠে
হাজার কিশোর।
জেগে ওঠে ঘাস, ফুল, প্রজাপতি, বাতাসের মেয়ে
সবুজ পাতারা হেসে আলগোছে মাথা নাড়ে মিটিমিটি চেয়ে
তারপর বলে,
আমরাও জেগেছি গো তোমাদের সাথে, দেখো
ঘুম গেছে চলে
আমাদেরও কেটে গেছে ঘোর।
সবুজ পাতার মুখে মায়াবী আলোর মতো
এক সাথে হেসে ওঠে হাজার কিশোর।
হেসে ওঠে চোখ থেকে মুছে ফেলে ভোরের কুয়াশা
হাজার কিশোর চায় পৃথিবীর দিকে, শোনে দূর হতে আসা
পাহাড়ি ঝরনা আর সীমাহীন সাগরের অনুপম গান
মনের গহীনে দোলা দিয়ে ওঠে ধীরে ধীরে অসীমের টান;
আর অবিরাম
বাতাসে কুজন তুলে কারা যেন ডাকে ধরে প্রিয় এক নাম
ডাকে যেন, কিশোর কিশোর
সোনালি রোদের মত আমাদের কাছে এসো সোনার কিশোর।