দাম্ভিক
দাম্ভিক স্বরে বলেছে টিক্কা
চাই শুধু এই মাটি
মানুষের লাশে সবুজ ভূমিকে
করব খুনের ঘাঁটি
আগুন জ্বেলেছে হত্যা করেছে
টিক্কার সেনাদল
শান্ত নদীকে করেছে সেদিন
রক্তিম স্রোতজল
নদ ও নদীর মাঝি মাল্লার
কেড়েছে গানের সুর
কেড়েছে পাখির বট ছায়াতল
নৃত্যেরও নূপুর
নয় মাস জুড়ে নিযুত মায়ের
আঁচল করেছে খালি
ভষ্ম করেছে বাগানের সাথে
ফুল ফোটাবার মালি
আমরা চেয়েছি
আমরা চেয়েছি একটি স্বাধীন
সবুজ শ্যামল মাঠ
ফুলে ফলে ভরা জীবনের জমি
বাঁধানো পুকুর ঘাট
আমরা চেয়েছি মায়ের আঁচলে
নকশির কারুকাজ
বাবার লাঙলে স্বর্গ আদলে
কোমল মাটির লাজ
আমরা চেয়েছি আকাশের বুকে
শান্ত সফেদ মেঘ
বাউলের মুখে গীতিময় সুরে
সাগরের গতিবেগ
টিক্কা নামের নরাধম এক
দম্ভের রথে চড়ে
আমাদের সব নিয়েছিল কেড়ে
সেদিন একাত্তরে
গেরিলা
সে দিন সমরে যুদ্ধ করেছে
মহান গেরিলা যোদ্ধা
ওদের জন্য রইল সবার
হৃদয় রাঙানো শ্রদ্ধা
ধুলির মতোই উড়িয়ে দিয়েছে
শত্রু সেনার ঘাঁটি
ওদের রক্তে করেছে রঙিন
বাঙলার পলিমাটি
ওরাই এনেছে সবুজ পতাকা
দিয়েছে স্বাধীন দেশ
ওরাই দিয়েছে শান্ত কপোত
উড়বার পরিবেশ
যতদিন এই বাংলার বুকে
শিমুল পলাশ ফুটবে
যতদিন এই পুবের আকাশে
সূর্য সকালে উঠবে
ততদিন এই বীর বাহিনীকে
বাঙালি সালাম ঠুকবে
পঁচিশে মার্চ
পঁচিশের মাঝরাতে দানবের দল
পাশবিক উলাসে কাঁপায় ভূ-তল
কান্নার জলে হয় ভারী পরিবেশ
অসুর অনলে পুড়ে ছাই হয় দেশ
বাবা মা’র লাশ দেখে কাঁদে শিশুমন
ধূসর ধোঁয়াতে ওড়ে কালের পতন
কাপুরুষ সেনাদের ছোঁড়া দাবানলে
সারা দেশ বারুদের উত্তাপে জ্বলে
চারিদিকে শোনা যায় ক্রন্দন ধ্বনি
পথে পথে পশুদের শুনি আগমনি
টিক্কার দানবীয় এই পরিহাসে
কাশবন ভরে যায় তরতাজা লাশে
সেদিনের কালোরাতে কেঁদেছে আকাশ
বোনের আঁচলে বসে কেঁপেছে বাতাস
একাত্তরের বুবু
নিজের বুবু ছিলো নাতো বুবু ছিলো পাড়াতো
সেই বুবুটা রোজ সকালে মিষ্টি হেসে দাঁড়াতো
জ্বর হলে সে জলপটিতে জ্বরটা আমার সারাতো
আদর দিয়ে আঁধার রাতে ভূতের ভয়ও তাড়াতো
মজার মজার কৌতুকে সে রোজ বিকালে হাসাতো
চাঁদ দেখিয়ে পূর্ণিমাতে পরীর দেশেও ভাসাতো
‘ফ’এর সাথে ফুল মিলিয়ে বর্ণমালাও শেখাতো
বড় হবার স্বপ্ন এবং স্বপ্নেরও পথ দেখাতো
জন্ম দিনে কেক বানিয়ে শুভেচ্ছা সে জানাতো
আমার যত মান অভিমান বুবুই এসে ভাঙাতো
আজও আমার ওই বুবুটা হয়তো দু’হাত বাড়াতো
একাত্তরের একটি রাতে না যদি সে হারাতো…