ভূতপুরে ভোম্বল
১.
ঘুটঘুটে কালো রাত
ঝুলে গাছে সাদা দাঁত
কোত্থেকে এলো?
নেই কারও মাথা হাত
পাশে দেখি আরও সাত
সব এলোমেলো!
২.
দাঁতগুলো কিলবিল খিলখিল হাসে
হাসি রেখে কেউ ফের খুক খুক কাশে
বুকে থুথু মুখে হাত স্যান্ডেল খুলে
গাছটার কাছে যাই ডর-ভয় ভুলে
খপ করে জামা ধরে সাঁই সাঁই তুলে
মগডালে বসিয়ে কেউ হাত রাখে চুলে।
৩.
কিউ কিউ কিউক কিউক শব্দের পরে
ঘরর্র কেঁপে কেঁপে একজন বলে—
‘তুঁই ক্যাঁ র্যাঁ তুঁই ক্যাঁ র্যাঁ এঁই খাঁনে কীঁ?
পাঁন্তায় মাঁখিয়ে তুঁই খাঁস নাঁকি ঘিঁ?’
৪.
বলি, আমি ভোম্বল
চুইংগাম, গাম-বল
ভ্যাসলিন, আটারুটি, চিক্কেন ফ্রাই;
আরো যত খাব্বার কোঁৎ গিলে খাই!
কতো কী যে পারি আমি চিনি আরো ফুটপাথ গলি
মন চায় তোমাদের নিয়ে ভাই দুই লাইন বলি।
‘বঁল বঁল বঁলে ফেঁল’—
‘সক্কাল বিক্কাল আন্ধার রাত্তির
দরকার ক্যান কও ইলেক্ট্রেক বাত্তির?’
৫.
‘ঠিঁক ঠিঁক তুঁই ঠিঁক বঁলেছিস ওঁরে
আঁমাদের এঁই সঁভা চাঁইছে যেঁ তোঁরে
আঁজ থেঁকে ভূঁতপুরে রাঁজা হঁবি তুঁই
আঁয় তোঁর পাঁ দুঁটো সঁব্বাই ছুঁই!’
‘থাক থাক বাদ দাও পা কেন তবে
তারচেয়ে একে একে
নিজ নিজ নাম-কাজ বলে যাও সবে—’
৬.
‘জিঁ মঁশাই,
সঁব্বার আঁগে বঁলি আঁমি কাঁনাভুঁলো
বাঁড়ি ফেঁরা লোঁকদের চোঁখে দিঁই ধুঁলো
দিঁকহারা কঁরে ফেঁর জঁঙ্গলে নিঁয়ে
বঁলি বাঁপু যেঁতে পাঁরো প্রাঁণ হাঁতে দিঁয়ে।
যঁত্তোই চিঁল্লায় কাঁনে গুঁজে তুঁলো
ঘাঁড় ধঁরে মঁটকাঁই তুঁলে ফেঁলি চুঁলও!’
৭.
‘বাহ্ বাহ্ বেশ ভালো তুমি
ঝুলে থাকা বাবুটার নাম ঝুমঝুমি?’
কানাভুলো বলে ফের—
‘কঁথাটথা কঁয় নাঁ সেঁ ঝুঁলে থাঁকে গাঁছে
হেঁলে দুঁলে হাঁওয়া আঁর আঁলো খেঁয়ে বাঁচে।
ঘুঁমে থাঁকা মাঁনুষের বুঁকে ওঁঠে বঁসে
সঁব কঁথা কেঁড়ে নিঁয়ে চঁড় দেঁয় কঁষে।
ঘুঁমঘোরে কেঁউ কেঁউ ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খাঁয়
অ্যাঁই দেঁখে বোঁবা ভূঁত খুঁব মঁজা পাঁয়।’
৮.
‘এইভাবে চলবে না, দেখি তুমি বলো
ছোটদের হাঁটাচলা কে কে করে ফলো?’
৯.
‘ওঁহে রাঁজা আঁমি কঁরি এঁই বুঁড়ি ডাঁইনী
কঁতো দিঁন ছোঁটদের চেঁটেপুটে খাঁইনি
ইঁশকুলে পঁথে-ঘাঁটে ছোঁটদের পেঁলে
তুঁলে এঁনে ছেঁড়ে দিঁই গঁররম তেঁলে
বাঁবা-মাঁর কঁথা শোঁনা যঁতো ছেঁলে-মেঁয়ে
ধঁরে এঁনে পুঁতে ফেঁলি রঁক্তটা খেঁয়ে।
মাঁথা নিঁয়ে খেঁলি আঁরও ফুঁটবল চেঁস
এঁতে কঁরে বেঁড়ে যাঁয় আঁমাদের ‘এঁজ’।’
১০.
কাঁদামাখা পা ফেলে মেছোভূত এসে
বলে ‘আঁমি পঁচা মাঁছ খাঁই হেঁসে হেঁসে
নঁদী-নাঁলা খাঁল-বিঁল পুঁকুরের ধাঁরে
ঘুঁরি ফিরি গাঁন গাই মাঁছ নিঁয়ে ঘাঁড়ে।
যঁদি কেঁউ রাঁত কঁরে মাঁছ নিঁয়ে হাঁটে
ধাঁওয়া দিঁয়ে নিঁয়ে যাঁই বাঁশঝাড়-মাঁঠে
তাঁরপর মাঁছগুলো গাঁপ্পুস খেঁয়ে
লোঁকটাকে তাঁড়া কঁরি ধাঁগেধিনা গেঁয়ে।’
১১.
‘ঠিক আছে ধাগেধিনা নাগেধিন
মাথাকাটা ভূতটাকে এইবার আগে দিন।’
‘দেঁখো রাঁজা—
মাঁথা নেঁই তাঁতে কিঁ আঁছে বাঁকি সঁবই
ঘুঁরি ফিঁরে গাঁন গাঁই আঁকি আঁরো ছঁবি।
রাঁতজাঁগা কাঁউকে এঁকা পেঁলে ভাঁগে
দাঁস কঁরে বঁলি যাঁও খুঁজে আঁনো আঁগে।
কীঁ খোঁজে? কীঁ খোঁজে দঁলে দঁলে তাঁরা?
আঁমাদের মাঁথা খোঁজে আঁমাদের ছাঁড়া!’
১২.
পাশ থেকে বেঘোভূত করে গর্জন
বলে ‘ওঁহে,—জঁঙ্গল আঁমাদের জঁঙ্গল ছাঁড়
বঁনজুঁড়ে আঁমাদের নিঁয়ে তোঁলপাড়
অঁই দূঁর গ্রাঁম আঁর মৌঁওয়াল যঁতো
জাঁমা খুঁলে দেঁখো গাঁয়ে কঁতো শঁতো ক্ষঁতো।
সুঁন্দর বঁন আঁর ডোঁরাকাটা বাঁঘ
মিঁলেমিশে ভাঁলো আঁছি যাঁ তোঁরা ভাঁগ!’
এই বলে বেঘোভূত চলে যায় দহৃরে
এর মাঝে কে যেন আসে হুড়মুড়ে!
১৩.
কে এলো কে এলো কে?
ওমা ফের হাসে হে হে হে!
এই ভূত সেই ভূত যেই ভূত
পানি দিয়ে খেলে কুতকুত
আলো হয়ে পড়ে থাকে জলাভূমি মাঠে
তার সাথে বাহাদুরি কার বলো খাটে?
আলো মাখা আলেয়াকে দেখে
জেলে দল দৌড়ায় সব ফেলে রেখে!
১৪.
যাকে নিয়ে ভূতপুরে খুব কানাঘুষা
চুরি করে ধরা খেয়ে দেয় কিল-ঢুষা
পূর্ণিমা রাত তার খুব খুব প্রিয়
ভূতটার খোঁজ পেলে আমাদের দিও!
১৫.
কানাভুলে বলে ‘রাঁজা
খঁব্বর শোঁনো তাঁজা
আঁজকের এঁই দিঁনে নেঁই পেঁচাপেঁচি
শিঁকারের পিঁছু নিঁলো ফুঁলিয়ে সেঁ পেঁশি
গঁব্বীর জঁঙ্গলে শিঁকারিকে নিঁয়ে
ছিঁড়েফুঁড়ে খাঁবে বঁসে তাঁর কাঁটা দিঁয়ে
দুঁর্ভাগা মাঁনুষেরা তাঁর হাঁতে গেঁলে
কঁখনও সেঁ ভেঁজে খাঁয় জিঁলাপির তেঁলে!’
১৬.
‘বাহ বাহ ঠিক আছে ঠিক
ভয় পেয়ে চলো হাসি হোহো খিকখিক।’
কানাভুলে বলে ফের ‘রাঁজা
দেঁওটাকে দিঁতে হঁবে সাঁজা
কঁষ্টের কঁথা আঁজ বঁলি বঁলো কাঁকে
সঁভা এঁলে নঁদী জঁলে ডুঁবে বঁসে থাঁকে
খাঁল আঁর নঁদী দিঁয়ে পুঁল—ব্রিঁজ চাঁও?
তাঁকে আঁগে ঘঁটা কঁরে টেঁকসোটা দাঁও
টেঁকসোর মাঁনে হঁলে ট্যাঁক্স
মাঁনুষের রঁক্তটা কঁরো তাঁকে ফ্যাঁক্স
কঁখনো সেঁ ট্যাঁক্স-ফ্যাঁক্স বুঁঝে নাঁ তোঁ কিঁছু
নঁদী জঁলে যাঁকে পাঁয় ধাঁওয়া কঁরে পিঁছু!’
১৭.
ভূতসভা যেই গাছে তার ডালে বসে
রোগাসোগা গেছোভূত হাতে হাত ঘষে
কানাভুলো তার কাঁধে হাত রেখে বলে—
‘এঁই হঁলো গেঁছো ভূঁত তাঁর মঁতো চঁলে।
গাঁছে গাঁছে ছঁড়াটাই তাঁর ধ্যাঁন-জ্ঞাঁন
কাঁরো সাঁথে কঁথা নেঁই, নেঁই প্যাঁন প্যাঁন
নাঁরকেল গাঁব আঁর সুঁপারির বঁনে
কীঁসব ভাঁবে বঁসে এঁকা আঁনমনে।
গাঁছে উঁঠে বঁসে থাঁকে গঁব্বীর রাঁতে
পাঁ দুঁটো দোঁলে সেঁকি আঁয়েশের সাঁথে
গাঁছটার নিঁচ দিঁয়ে কেঁউ গেঁলে তাঁকে
ঘ্যাঁস কঁরে চেঁপে ধঁরে আঁঙ্গুলের ফাঁকে।
১৮.
রাঁত্তিরে মাঁনুষের দঁরজায় কেঁ যাঁয় জাঁনো?
ভাঁলো নাঁম নিঁশি তাঁর; নঁয় দেঁও দাঁনো
এঁকবার দুঁইবার নাঁম ধঁরে ডেঁকে
ঘঁর থেঁকে নিঁয়ে যাঁয় কাঁধে হাঁত রেঁখে।
ডেঁকেডুকে ঘঁর থেঁকে যাঁকে নিঁয়ে আঁসে
ঘঁরে আঁর ফিঁরে নাঁ সেঁ সঁপ্তাহ মাঁসে
নিঁশি রাঁতে নিঁশি ভূঁত দঁলছুট ঘুঁরে
পাঁড়া-গাঁ মাঁড়িয়ে সেঁ যাঁয় আঁরও দূঁরে।
১৯.
ভূঁতপুরে আঁরও আঁছে রাঁজ্যের ভূঁত
মাঁনুষের মাঁথা নিঁয়ে খেঁলে কুঁতকুত।
আঁমদো, মাঁমদো আঁছে কাঁনাওয়ালা
তাঁরা ধঁরে মাঁনুষের মুঁখে দেঁয় তাঁলা
যঁক্ষ-পেঁত্নী লেঁগে থাঁকে পিঁছু
বাঁড়ি-গাঁড়ি গাঁছভূত মাঁনে নাঁ তোঁ কিঁছু!’
২০.
ভূত রাজা ভোম্বল সব কিছু শুনে
সেন্সলেস হয়ে ফের গায় পুনপুনে!