রাখছি সবাই ঢেকে
আগের মতো যায় না শোনা দোয়েল পাখির শিশ
বুকের ভেতর স্মৃতির বাঁশি বাজে অহর্নিশ
শালিক চড়ুই বুলবুলি বক টুনটুনি ও চিল
যায় না দেখা, হচ্ছে বিলীন হাওড়-বাওড় বিল
মনের সুখে আর করে না কোকিল কুহুতান
বউ কথা কও, কুটুমপাখির ভীষণ অভিমান
প্যাঁচা ঘুঘু কাঠবিড়ালি ময়না কবুতর
মনের দুখে এই আমাদের করেছে যে পর
নেই তো সবুজ বনবনানী আগের মতো আর
বিশ্বায়নের তাপে পুড়ে সব যেন ছারখার
খুব সকালে পাখির গানে ঘুম ভাঙা সেই দিন
স্মৃতির পাতায় হয়ে আছে আজো অমলিন
কষ্টগুলো বুকে নিয়েই কাটে বছর মাস
ডিজিটালিক ছোঁয়ায় মেতে করছি সবাই বাস
সবুজবীথির মিষ্টি আদর ভাসে কল্পনায়
নেই শিশুদের ঘুড়ি বেলা সুনীল আকাশটাায়
লুকোচুরি গোল্লাছুট ও বউচি কানামাছি
কোথায় গেলো মৌমাছিদের মিষ্টি নাচানাচি ?
যায় না দেখা প্রজাপতি ফুল শোভিত বনে
ঝিঁঝিঁর গানও যায় না শোনা মাটির ঘরের কোণে
ঝোপেঝাড়ে জোনাকজ্বলার সেই সুখী দিনগুলি
কোথায় গেলো! সে সব স্মৃতি কেমন করে ভুলি?
সাদাকালোর সেই শুভক্ষণ ছিল ভীষণ ভালো
এখন চোখে লাগায় ধাঁধা ডিজিটালের আলো
যাচ্ছে বয়ে রোবট জীবন মেকির কাজল মেখে
কষ্টগুলো বুকের ঘরে রাখছি সবাই ঢেকে!
হেমন্তিকা
তেঁতুলপাতায় রোদের খেলা পড়শি বাড়ি ধুম
শীত সকালের ছোঁয়া দিল হেমন্তি মৌসুম
মাঠে মাঠে সোনা ধানের গন্ধে ভরে মন
ঘরে ঘরে পিঠাপুলির নিত্য আয়োজন
শাপলাপাতা কলমিলতা বাতাসে দোল খায়
নবীন মাঝির নৌকোতে বউ কোন সুদূরে যায়?
রন্টু রকির নীলচে ঘুড়ি ওড়ে আকাশময়
আঙিনাতে বউচি খেলে রিংকু মিতু জয়
দাদুর মাথায় লাউয়ের ঝাঁকা যাচ্ছে দূরের হাট
গুরুমশাই সাঙ্গ করে পাঠশালারই পাঠ
হঠাৎ কেন গাঁও কিশোরীর মন উতলা হয়
তাকে দেখে কুটুমপাখি অবাক চেয়ে রয়
দূরের থেকে ভেসে আসে ভাটির গানের সুর
গাঁও কিশোরীর মন ছুটে যায় অচীন উদাসপুর
ইচ্ছে করে ফুল পাখি তার সঙ্গী হয়ে থাক
ওদের ছোঁয়ায় দুঃখগুলো দূরে সরে যাক
হেমন্তিকার হিম বাতাসে মন করে আনচান
গায় সকলে কলস্বরে নবান্নেরই গান
পড়শি বাড়ির পিঠে পুলী মায়ের হাতের ক্ষীর
খেয়ে ভীষণ মন খুশি হয় রিনতি, পিয়ালী’র
ইচ্ছেরা সব যায় যে হয়ে আলোকলতার ফুল
সব মিলিয়ে হয় সকলে আনন্দে মশগুল।
বুনোমালি জমাদার
অল্পতে খুশি নয় বুনোমালি জমাদার
যত পায় তত চায় শুধু চাই চাই তার
বিরিয়ানি নাড়ু মুড়ি সমুচা ও দধি ক্ষীর
দিনরাত খায় যেন মস্ত সে বড় বীর
চাল গম আটা সুজি তাল বেল জামরুল
পাউরুটি পানতোয়া হয় না যে খেতে ভুল
খায় আর গান গায় নাচ করে ধিন তাক
আশেপাশে আছে তার সুখ্যাতি নাম ডাক
চাই চাই করে তার দিন কাটে ভালো বেশ
সবকিছু পেতে চায় হয় না কো চাওয়া শেষ
লোকে বলে বুনোমালি এত কেন চাস তুই?
সবকিছু বাদ দিয়ে বসে থাক দিন-দুই
এতসব চাওয়াটা যে একটুও ভালো নয়
শুধু খাস তোর কি রে অসুখের নেই ভয়?
অবশেষে বুনোমালি ভুল বুঝে হলো ঠিক
দয়া মায়া নিয়ে সে-ও হলো খুব মানবিক
খুশি মনে দিলো সে যে সব কাজে মনযোগ
দূরে সরে গেলো তার খাই খাই দুর্ভোগ ।