বিশ্বপাঠ
আজ কোন কথা নেই, চুপ করে থাকো
অনুভবে একা একা স্বীয় ছবি আঁকো।
কথা বলা মূলত শুধুই অভ্যাস-
এখনো মনের কথা হয়নি প্রকাশ।
এখনো হয়নি লেখা হৃদয়ের তাপ,
ফটোফ্রেমে বাঁধা নেই কোন জলছাপ।
ক’টা বই পড়ে মানুষ? ধারণ করে-
আয়নায় নিজ মুখ দেখে ঘুরে ফিরে।
কতদূর যাওয়া যায়? ছোট্ট জীবন-
কতটুকু দেখা যায়? স্থির নেই ক্ষণ।
মুহূর্ত বদলে যাচ্ছে সময়ের হাতে,
কতটুকু খাওয়া যায়? দু’সারি দাঁতে!
এখনো তো শূন্যতাকেই আকাশ বলি-
জীবন বলতে দু’টি পা, খুঁড়িয়ে চলি।
ইতিহাস
এটা ওটা খুঁটে খাচ্ছে- অচিন পাখিটা,
ক্রমশ দিগন্তে হারায় মূল রেখাটা।
আলোটা নিভু নিভু ছায়াটা সরল,
মধুপায়ী মৌমাছি পান করে গরল।
স্থির বৃক্ষরাজীর, অস্থির পাতাগুলো,
বৃষ্টির আদরে নরম, উষ্ণ পথের ধূলো।
পূবের জানালায় পশ্চিমের ছায়া-রোদ,
পাখিটার দু’ডানায় অস্থির প্রতিরোধ।
লাঠিহাতে বৃদ্ধটার মরাচোখে প্রতিবাদ-
দুর্বল শরীরে তার, মুক্ত ডানার সাধ।
জীবন ঠিক খুঁজে নেয় জীবনের মানে-
পাখিটা সঞ্চয়ী হয় কালের অভিধানে।
কর্মের দায় হয় ভাগ্যের পরিহাস-
পাখিটার ডাক নাম জীবন্ত ইতিহাস।
সামান্য
সামান্য আমি সামান্য তুমি, সবাই সামান্য,
নিজেকে বড় ভেবে, তা হয়না যেন অমান্য।
যদি উপদেশের মতো শুনায় কবির কথা,
আকাশে তাকাও, বন্ধ থাক কবিতার খাতা।
বন্ধ করে দাও, দুই চোখ জানালার মতো,
দৃশ্যপট থেকে তুমি দূরে সরে যাও দ্রুত।
সামান্য আকাশ জানুক দৃষ্টির বিশালতা,
তুমিও সামান্য হও, দূর হোক মলিনতা।
সামান্য অমান্য তোমায়, দিতে পারে শোক,
স্থিতু যদি হতে পারো, হবে অসামান্য লোক।
মহাশূন্যের শূন্য ঘরে তুমি আমি কিছুনা,
সামান্য চাঁদের গর্ভে, অসামান্য জোসনা।
এবার এসো তবে, সামান্যে সামান্যে মিলে-
সুবিশাল সমুদ্দুর বানাই, বিন্দু বিন্দু জলে।
অসাধারণ
অসাধারণ! অ প্রত্যয়ে ভর দিয়ে হাঁটে
অতি সাধারণ। যদি মনের ভার কাটে-
জনারণ্যে হারিয়ে যায় সময় দহন,
গতি পায়না স্থানুবিষয়, লব্ধ দৃশ্যায়ন।
পায়ে পায়ে হেঁটে যায় সময়ের গাড়ি-
সাদা পৃষ্ঠায় আঁকিবুঁকি নাই কমা দাড়ি।
রেখাটা সরল হলে দেখা হয় উৎসমূল,
সবটাই শুদ্ধ তখন, ভুল শব্দটাই ভুল।
মানুষ নাকি সমানে সমান, বলে সকলে!
মানবিক গুন ধারণ, হয়না কেন কালে?
প্রত্যয়ের ব্যত্যয় হলে পথে ধুঁকে মন,
মানুষ সেই- যার মানবিক কার্য-করণ।
সাক্ষ্যদেয় সময় বৃক্ষ, সেই অ-সাধারণ,
বুকের মাঝে আছে যার ঘনসবুজ বন।
গোধূলিবেলা
থেমেছে কোলাহল। স্থির শান্ত জনজীবন,
টানটান উত্তেজনায় ভরা দুরন্ত খেলা—
ছেড়ে পাখিদের দল, ঘিরেছে ভুবন।
দিনের সবচে নির্মল ক্ষণ গোধূলিবেলা।
সবচে কুৎসিত মুখটাও মায়াময় এখন,
অসহ্য মানুষটাও হঠাৎ আপন লাগে।
ঘরহারা মানুষের ঘুমানোর আয়োজন,
রাতের বার্তা আসে সরল অনুরাগে।
দূরে আকাশ ক্রমশ, লাল হতে কালচে
মহাশূন্যের অসীম অন্ধকার গোল গ্রহে।
দিন রাতের সন্ধিক্ষণ মামুলী বিষয়,
আসল ছেড়ে নকল এখন, মূল আগ্রহে।
দূরে দেখি হেঁটে যায় এক বৃদ্ধ একেলা,
কে তুমি? জবাব আসে- গোধূলিবেলা।
কালের অনুভব
যতবার তুমি শব্দ ছুঁয়ে বলো,
কবিকে তুমি আর বাসোনা ভালো।
কবি জানে- ঠিক ততবার তুমি,
খোঁজো কাব্য-গান আপন সত্ত্বা চুমি।
বলতে পারো এসব কথার ছল,
কবি শব্দ নিয়েই খেলছে যে কেবল!
ভাবতে পারো এসব কবির খেলা,
সত্য এটাই- শব্দ স্থির অস্ত গেলে বেলা।
ভালোবাসার উল্টো পিঠেই ভয়,
যতির ফেরে, কবির ছন্দ বদল হয়।
আঁকড়ে ধরে নিজের মনের সব,
শব্দে গাঁথে কবি কালের অনুভব।
তুমি যতই ভাবো শব্দে মগ্ন কবি-
কবি কিন্তু অহোরাত্র, আঁকে তোমার ছবি।
ব্যর্থতা
ব্যর্থতা ছায়ার মতো। ঘুরছে অবিরাম।
কিছুতেই থামেনা সে, যতই বলো থাম।
সামনে পিছে ঘুরে মিছে, কিছু ছায়া স্থির!
কিছু ছায়া ছাড়িয়ে যায় সীমানা প্রাচীর।
আলোর গতি বন্ধ হলে, উৎপত্তি স্ব-ভাবে,
কিছু ছায়া উধাও হয় রোদের অভাবে।
সেই ছায়াময় ব্যর্থতার করাল গ্রাসে,
কালো অধ্যায় লেখা হয় ব্যর্থ ইতিহাসে।
মায়ার মতো ঘুরে ছায়া জড়িয়ে দু’পায়ে,
সখ্যতায় জুড়ি নেই যেমন মায়ে- ছায়ে।
যতই দেখাও আঁধার ভীতি ছাড়েনা পিছু,
ছায়াজাত মানুষ ঘুরে ব্যর্থতার পিছু।
ব্যর্থতা সাফল্যের ছায়া শাশ্বত জয়,
ছায়াটা তুমিই জেনো, অন্য কেউ নয়।
হেরে যাওয়া
হেরে যাওয়ার পাল্লাটা খুব বেশি ভারী,
কমায় হোঁচট খেয়ে, সামনে আসে দাড়ি।
সরল বাক্যেবাক্যে মতানৈক্যের স্লোগান,
হার জিতের ঘরে, অস্থির এক কলতান।
হেরে যাওয়া সময়ে, হেরে যাচ্ছ চৈতন্যে—
হেরে যাচ্ছে মানবিক বোধ, অতি গোপনে।
হারাধনের ছেলে হারায়, গল্পে অভিধানে,
হেরে যাওয়া নিত্যতা। কালের বিনোদনে।
হেরে যায় পবিত্রমুখ, অপবিত্রের জয়গানে,
মৃত মানুষ মন্ত্র আওড়ায়, জীবিতের ভুল কানে।
হেরে যাচ্ছে হিসেবি মন, লেনাদেনার ভিড়ে,
হেরে যাচ্ছ, মরে যাচ্ছো অনায়াস অনাদরে।
সামান্য মাছি মারতে হেরে যাচ্ছো নিয়তো-
কোথায় হারনি তুমি ঠিক করে বলতো?
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
একটা শুন্য পথের যাত্রী তুমি আমি,
শুধু বিশ্বাস নামের ভাইরাস অনুগামী।
জীবাণু নিস্ক্রিয় নির্ভরশীলতা ছাড়া,
বিশ্বাসগুলো নয়, জীবাণুর চেয়ে দামি।
শতমত শতপথের ব্যঞ্জন রাধা হাঁড়িতে,
বিশ্বাসের হাওয়াই মিঠাই, খুব খাচ্ছে সবে।
জন্ম মৃত্যু বিপদে, নিতেনিত্য ব্ল্যাকমেইল
চলে। বিশ্বাস ছাড়া ধর্ম বেঁচেছে কবে?
যুগে যুগে নতুনের জয়গান, কালি কলমে
নিয়ম কানুন, বিধি বিধান আঁকছে কেউ।
নদীর বাঁকে পথের সীমারেখা, আকাশ ছুঁয়ে-
দূর দিগন্তে আছড়ে পড়ে সু-সভ্যতার ঢেউ।
যতই বলি বিশ্বাসী আমি, করণকার্যে ফাঁকি,
না দেখে তবু খুব সুন্দর, নিজের ছবি আঁকি।
কালের ক্যানভাস
তাড়াহুড়া। সময় ধমক দিয়ে উঠলো,
সময়ের আগেই কেন ফুলকলি ফুটলো?
তখনো জল গড়িয়ে যাচ্ছে মাটির বুকে,
দেখি সময় কাঁদছে অসময়ের শোকে।
সময় চিরন্তন সময়ের আগে পরে নাই-
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ স্থানু সবটাই।
সময় স্থির মাছরাঙার জলজ দু’পায়ে,
সময় ধাবমান এই মহাকাল সাথে নিয়ে।
উপস্থিতি সময়ের নিখুঁত পরিমাপক,
সময় এক পায়ে দাঁড়ানো কানা বক।
এই যে ভাবছো, পড়ছো, কাঁপছে হৃদয়!
জেনো সবটাই উপলব্ধ, সময়- অসময়।
সময় নদীর স্রোত নয়, থামেনা সে-
সময়ের ছবি আছে কালের ক্যানভাসে।
- বিশ্বাস শুধুই নিশ্বাস কালের লিখন, বইমেলা ২০১৬, অনুপ্রাণন প্রকাশন, প্রচ্ছদ: আইয়ুব আল আমিন, মূল্য: ১৪০ টাকা