কিশোর বয়স
কিশোর বয়স, তোমায় আমি ফেলে এলাম বলে
আধখানা বুক, স্নিগ্ধ চিবুক ভাসিয়ে দিচ্ছ জলে
কিশোর বয়স কিশোর বয়স আমার কথা শোনো
তোমায় আমি দেইনি ফাঁকি, দোষ ছিল না কোনো।
দুচোখ তোমার আটকে ছিল বায়োস্কোপের নলে
‘জীবন’ আমায় ডাক দিল যে, তাই তো এলাম চলে
কিশোর বয়স এখন তুমি অনেক অনেক দূর
তোমার জন্য বুকের ভেতর প্রচণ্ড ভাঙচুর
আজও তুমি লাটিম ঘোরাও, ডাংগুলিও খেলো
এই শহরে আমি এখন ভীষণ এলোমেলো!
কিশোর বয়স, তোমায় আমি সঙ্গে নেইনি বলে
চোখ ছলছল, স্নিগ্ধ কপোল ভিজিয়ে দিচ্ছ জলে
আমি তোমার কাটা ঘুড়ি কোথায় যাচ্ছি উড়ে
আমায় তুমি আর পাবে না তপ্ত দুপুরজুড়ে
আর এসো না, দাঁড়িয়ে থাকো রায়গ্রামের বাঁকে
আমার কেবল ছুট চলা, জীবন আমায় ডাকে।
পথ-চাওয়া
হলদি বনে ফুল ফুটেছে দুয়ার খুলে দেখি
কখন যেন মনের পটে নামটি তোমার লিখি
অনেকগুলো শ্রাবণ গেল অনেক বরষা
এক ফোঁটা জল পাইনি কেবল মেটাই পিপাসা
তোমার বুকে কুসুম দোলে, আমার চোখে সুখ
স্বপ্নমাখা ফাগুনবেলা আগুনলাগা দুখ্
জোনাকজ্বলা রাত পোহালে শুকতারাটি হাসে
বরই ফুলের নথ পরেছ, শুধুই মনে আসে
পথের পাশে উঠলে ফুটে হঠাৎ বুনোফুল
যতন করে কার কানেতে পরিয়ে দেব দুল?
সাতসকালে শিউলিতলে অবাক চেয়ে রই
লুটিয়ে থাকা ফুল কুড়োবে এমন মানুষ কই!
আমন ধানের গন্ধ নিয়ে আসলো পুবের হাওয়া
আমার তবু হলো না শেষ পথের পানে চাওয়া।
মায়াবি ভোরের পদ্য
শঙ্খ সুরে রাত পোহালো, মহালয়ার ভোর
দুচোখ জুড়ে ঘুম তখনো দুচোখ জুড়ে ঘোর
স্বপ্নটুকু উসকে ওঠে সামান্য একরোখা
দৌড়ে ছুটি তোদের বাড়ি, আমি এমন বোকা
সাতসকালে দেখব তোকে, ইচ্ছেটা চমকালো
কেমন লাগে তোর গালে ওই আঁধার মাখা আলো
ঠিক তখনই বারান্দাতে করছিলি পায়চারি
আমার পায়ে শেকল আঁটা আমার দু’পা ভারী
সামনে এসে দাঁড়াস যখন এমন কেন হয়
বুকের মধ্যে ভিসুভিয়াস, মনের মধ্যে ভয়।
তোদের বাড়ি যাব দেখিস কোজাগরীর রাতে
যাঁতি দিয়ে আখ কেটে দিস চিবিয়ে খাব দাঁতে
দুগ্গা ঠাকুর দুগ্গা ঠাকুর, এবার যেন পারি…
তাই না হলে তোমার সাথে এক জনমের আড়ি।