নতুন সাজ
ঝুমকোলতা কানে পরে গাঁয়ের বাড়ি যাচ্ছে মউ
তাকে নিয়ে ইচ্ছে ডানায় উড়বে বুঝি নতুন বউ!
বউয়ের বাড়ি মিষ্টি নিয়ে ইষ্টিকুটুম এলো ওই
বসতে দেবে যত্নে তাকে,কইরে শীতলপাটি কই?
নীলপরিরা করবে বাতাস কুটুম খাবে রসের ক্ষীর
দেখতে তাকে ঘোড়ায় চড়ে আসবে গাঁয়ের মস্ত বীর
বীরের হাতে বকুল মালা কে গেঁথেছে ছন্দা, মুন?
দেখে বউয়ের পায়ে বাজে খুশির নূপুর রুনুঝুন
জল পুকুরে নৃত্য করে শাপলা শালুক সাদা-লাল
তুলতে গিয়ে পিছলে পড়ে খুকু ফোলায় রাঙা গাল
ফোকলা দাঁতে দাদু হাসে জটলা করে পাবদা রুই
ঘাটে বসে গল্পে মাতে শান্তা, রুনি, আন্না জুঁই
কুটুম আহা পড়শি কুটুম না জানি তার কেমন মন
তাকে দেখে ইচ্ছে ওড়ে দোলে সবুজপাতার বন
মেঘপরিরা কলস্বরে গান করে দূর আকাশটায়
স্বপ্ন সুতোর পাল উড়িয়ে পবন মাঝি বৈঠা বায়
গাঁয়ের পথে রাখাল বাজায় মন উদাসী বাঁশির সুর
সুরের দোলায় মগ্ন খুকু, যাবে কোথায়! অচীনপুর?
কে থাকে সেই অচীনপুরে ব্যাঙ্গমী না পঙ্খীরাজ?
তাকে দেখে মুক্তোমালায় করবে খুকু নতুন সাজ!
থাকে বারোমাস
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত
খুকুমণি মেলে দেয় তুলতুলে হাত
রিনতির পায়ে মল বাজে রুনুঝুন
ডালে বসে টুনাটুনি গায় টুনটুন।
রঙতুলি আঁকিবুঁকি খেলা চলে রোজ
পরিদের দেশ কোথা কে বা রাখে খোঁজ?
বাতাসের ছোঁয়া পেয়ে নাচে কুঁড়ি, ফুল
মউ মিতি দোল খায় ওড়ে এলোচুল।
চাঁদ তারা উঁকি দেয় আকাশের গায়
বুড়ি বসে সুতো কাটে মিহি চরকায়
রাখালিয়া বাঁশি সুর শুনি না তো আর
স্মৃতিগুলো মনে পড়ে তবু বার-বার।
ইচ্ছেরা ঘুড়ি হয়ে ওড়ে দেশময়
অজানা কে জেনে মনে জাগে বিস্ময়
মানবতা ভালোবাসা আশা সুখ-দুখ
সব নিয়ে ভরে থাকে সকলের বুক।
মিলেমিশে একতায় হয় যদি বাস
মমতার বন্ধন থাকে বারোমাস।
ফুলি
সোনার চামচ মুখে নিয়ে হয়নি জনম তার
জীবনজুড়ে বয় নিয়ত দুঃখ ব্যথার ভার
বস্তি ঘরে অবহেলায় কষ্টে যে তার বাস
অনাদরেই দিব্যি কাটে দিন ও বছর মাস
ফুলি নামের সেই মেয়েকে ক’জনই বা চেনে
আদর করে বুকে তাকে নেয় না তো কেউ টেনে
নিঃস্ব দুখী মা কাঁদে তার রোগে কাতর দেহ
ক্ষুধায় শোকে জীর্ণ জীবন নেয় না যে খোঁজ কেহ
মাঝে মাঝে ভাবে ফুলি গরীব কেন ওরা
কোন দোষেতে হলো এমন দুঃখী কপাল পোড়া?
কেন ওদের জীবন কাটে কঠিন উপবাসে
কেন ওরা বেঁচে আছে কোন সুদিনের আশে’?
এ-সব কথা ভেবে ফুলির মনটা খারাপ হয়
সোনার হরিণ সুখটা যেন ওদের জন্য নয়!!
কষ্টগাথা শোনার মতো দরদি কেউ নাই
কোনোদিনই হয়না ওদের সুখের ঘরে ঠাঁই