নাচনে বুড়ি মন
মনটা আমার নাচনে বুড়ি—সকাল হওয়ার পর
বই-খাতা সব বন্ধ রেখে লাফিয়ে পালাই ঘর।
আমার পায়ের আওয়াজ শুনে বসুন্ধরা কাঁপে
এক লাফে যাই তেঁতুলিয়া, এক লাফে টেকনাফে।
বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ ঘুরে বেড়াই আমি
কীর্তিনাশা, সুরমা ঘুরে মেঘনা গিয়ে থামি;
পরিয়াজির ঝাঁক উড়ে যায় কোন সুদূরে, হায়!
নাচনেবুড়ি মন ছুটে যায় কৈলাশে, হিমবায়।
বিলের পরে বিল মাড়িয়ে,
খাল-নদী-নাল সব ছাড়িয়ে
তেপান্তরের মাঠ হারিয়ে
. ছুটছি অজানায়
. ছুটছি অজানায়…
ঘরকে আমি পর করেছি, দুপুর রোদের ঘ্রাণে,
তাই অজানা বিশ্ব আমায় আপন করে টানে।
শঙ্খচিলের পালক যদি উড়তে পেতাম ভাই
বৃহস্পতির পৃষ্ঠে যেতাম হাওয়াতে সাঁতরাই;
গাঙশালিকের দলে মিশে হারিয়ে যেতাম, আর—
আমিই হতাম রোজ বিকেলের মেঘেদের পাহাড়।
হায়রে কতো ইচ্ছে পুষে ঘুরে বেড়াই; কেউ
বুঝতো যদি বইছে মনে ইচ্ছেনদীর ঢেউ…
বিড়বিড়িয়ে সন্ধ্যা এলে পাখির পালক পরে
বাধ্য ছেলের মতোই আবার ফিরতে যে হয় ঘরে—
ফিরতি পথে চাঁদ দেখা যায়, তারার মিছিল নামে—
আমায় বুঝি ডাকে তারা রাতপিয়নের খামে।
সন্ধ্যাবেলায় তারার মেলায় হারায় উদাস মন
‘ও গ্রহ, শোন— নে ফিরিয়ে তোদের নিমন্ত্রণ’।
মা বলেছেন, পড়লে শেষে বুঝবো কেমন করে
পৌঁছানো যায় দূরে থাকা গ্রহে-গ্রহান্তরে।
তাই তো বসে অংক কষে হিসেব মিলাই রোজ—
কট্টুকু পথ গেলে পাবো কোন তারাটির খোঁজ;
তাই তো বসে ‘সায়েন্স’ নিয়ে খুব করছি নাড়াছাড়া
গ্রহান্তরের খুটিনাটি ভাবছি—পাগলপারা।
আমাকে আটকিও না
সারাদিন নানান ছুঁতোয় আমাকে আটকে রাখো
সকালে স্কুল শেষে রোজ খামোখা টিচার ডাকো,
কোচিংয়ের বেড়ি পরাও—কী যে হয় মনটা মাঝে!
চাতকের মতো থাকি: কি ছুটির ঘণ্টা বাজে?
পাখিদের পাখার মতো দু’হাতে ঝাপ্টে আমি
নীলাকাশ নীলের কোলে চিলের ঐ ডানায় থামি :
যেখানে রাত নামে না, দিন আসে না নিয়ম করে
বেনামি হাজারো রঙ পড়ে যে ঝরে ঝরে।
আমাকে ঘুমটি পাড়ায় পরীরা গল্প বোলে
তাদের ঐ সুরের লহর বাতাসে কাঁপন তোলে
শালিকে কোরাশ শোনায়, ময়ূরে পুচ্ছ নাচায়
সেখানে কেউ থাকে না লোহাতে বন্ধ খাচায়।
পাওয়ার এই অপার সুখে আমি আজ উথাল-পাতাল
এ-হলে টাকলু মাথা, এই নিই মাথায় মাতাল।
খুশিতে আত্মহারা—কী করি পাই না ভেবে…
ও মেঘের পালকি শোন, আমাকে তোমরা নেবে?
আমি আজ ঘুরবো শুধু— সুদূরে, তেপান্তরে
যতসব খোকন শোন : তোমরা কেন-ই ঘরে?
ওখানে বদ্ধ ঘরে টিভিতে কার্টুন দেখে
পিসিতে কিংবা ফোনে গেমস-টেমস খেলা রেখে
চলো-না ঘুরি; আসো। ঘুরতে ভালোবাসো?
ঘুরবো, উড়বো দূরে— টাট্টুর পিঠে চড়ে
আমাদের খেলা দেখে পৃথিবী হাসবে; পরে
আমাদের ইচ্ছে দেশে আমরা রাজা হবো
নেই তো শাসন-বারণ— ইচ্ছে যা যা হবো।
বাবা নেই, বলবে না সে ধম্কে রক্তগলায়
নিয়মের শিকলও নেই—পরাবে চলায়, কলায়।
মাও নেই, মারবে তেড়ে—আজকে সবাই স্বাধীন
নিয়মের আগল উধাও—নাচবো তাধিন তাধিন।
আমাকে আটকিও না নানাবিধ ছুঁতোয় ছলে
এভাবে আটকালে খুব কী যে হয় মনের তলে!
আমি এক মুক্তপাখি, ভেঙো না ডানা আমার
আমাকে পুরলে খাচায় ভাঙবো নিয়ম-গ্রামার।
চিনতে হলে
মাঠের বুকে স্বর্ণ হাসে—সোনা রোদে নেয়ে;
আকাশ থেকে সুখের ছোঁয়া পড়ছে বেয়ে বেয়ে,
হিমেল বাতাস ক্লান্ত চাষির মনে লাগায় দোল
এমন মধুর দৃশ্য ঘেরা বাংলা মায়ের কোল।
বাংলা মায়ের কোলে শিশু ফোঁকলা দাঁতে হাসে
তার হাসি কি মুক্তা হয়ে শিশির ঝরে ঘাসে?
তার হাসিতে সকাল ফোটে স্বর্ণমিনা গাঁয়
অপার সুখে দস্যি বালক ইশকুলেতে যায়।
দস্যি ছেলের হাতের মুঠোয় গুলতি ও তার টোটা
দুষ্টোমিতে কাটে বেলা—ভাবনা নেই এক ফোঁটা।
দস্যি ছেলের ছোট্ট বুকে হাজার সুখের মেলা
বুক-জমিনে শাদা কাশের বাতাসে দোল খেলা…
দুলে দুলে হয় বড় সে, চিনে রূপের নহর
গাঁয়ের ছেলের মনজমিনে হাজার সুখের শহর।
শহর হলো রং চটাচট গাঁয়ের মতো নয়
চিনতে হলে দেশকে-মাকে, গাঁয়েই যেতে হয়।