মা
কোথায় আমার পদ্য বাবুই! কোথায় আমার শিউলি আতর গাঁটি?
খুঁজতে খুঁজতে দিন কেটে যায় তবু আপন মনে একলা চাঁদে হাঁটি।
হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যে যাই আমি, চাঁদের দেশের চরকা কাটা বুড়ি;
কেবল ছড়ায় আলোর আবীর হেসে। পথগুলো তাই আপন মনে জুড়ি।
বুকের ভেতর কত কী ফুল ফোটে! একলা আমি শোনাই যে গান কাকে?
দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে থাকি আমি সেই যে আমার ছেলেবেলার মাকে!
কোথায় আমার পদ্য সানাই! কোথায় আমি সাগরকে ফের ডেকে,
বলতে পারি এই যে আমার ও ভাই; পথ চলি রোজ তোমায় বুকে রেখে।
দাও শুধু ভাই ছোটার সাহস তুমি। পেরুই আবার অচেনা সব সাঁকো।
বাড়িয়ে দিলুম আশার দুই হাত ভোরে। আমায় শুধু আপন করে ডাকো!
খুশির পালক উড়তে থাকে মনে, হারিয়ে যাওয়া বনপথের বাঁকে;
দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে থাকি আমি সেই যে আমার ছেলেবেলার মাকে!
কোথায় আমার পদ্য তিতাস! ময়না, শালিক, তিতির পুরের ছুটি
হয়তো আমি-ই এখন আবার শোনো, ভোর বেলা রোজ পাহাড় চূড়ায় উঠি!
কেউ কি তাকাও একটি বারও? ভাবতে ভাবতে সাতটি পাখির শিসে,
পথ হারিয়ে ওদের সাথে আমি, হঠাৎ করেই কখন যে যাই মিশে।
কী যে মধুর সুর ছড়িয়ে তারা, আপন করে সবাই কাছে ডাকে।
দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে থাকি আমি সেই যে আমার ছেলেবেলার মাকে!
কোথায় আমার পদ্য মাদল! সাঁওতালী গান, পাহাড়তলির বাঁশি
এই যে বুকে ছড়িয়ে আছে দ্যাখো, রূপকথা আর কুরচি ফুলের হাসি!
সবাই ছড়ায় টাপুর-টুপুর খুশি। মোহর দুপুর নামতা শোনায় দুলে!
দোলায় কে যে ছবির ভুবনখানি? গভীর নেশায় পথগুলো যাই ভুলে!
পথ হারাবো কেমন করে আমি? পথ যে শুধুই ছবির ভুবন আঁকে!
দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে থাকি আমি সেই যে আমার ছেলেবেলার মাকে।
মাথা
কী পারো কী? কী পারো কী? কিছুই পারো না যে!
নেই কোনো মান, নেই কোনো হুঁশ। খুব তুমি খুব বাজে!
না পারাটাই তোমার কাছে সহজ বনে গেছে!
কী করে আর রইবে তুমি দোলনা দেশে বেঁচে!
হাড় জির জির তোমার দেহে বসুক আঁধার এসে!
যাও ভেসে যাও, এবার কবি তোমার অলীক দেশে!
আমরা ওড়াই মেধার মগজ। আমরা ঘোরাই লাঠি!
চাই না রুপোর রূপকথাপুর! চাই না সোনার কাঠি!
তাকাই না কেউ গাছের দিকে, ছুঁই না রোদের হাসি!
মেধার মগজ ছড়াই পাড়ায় আমরা ভুবনবাসী!
এই তো তোমার কবির জীবন! জমাও হেলা খালি!
ফুরায় তোমার সকল খেলা। চোখেও পড়ে কালি!
আমরা পারি। আমরা পারি। আমরা অনেক কিছু
নেই ক্ষমতা! দু-হাত আকাশ! কবির মাথা নিচু!
ঘুম
আমি দুললাম মেঘনা পাতায়। আমি ডুবলাম জলে
গান গেয়ে যায় কবিতা দেশ। গান গেয়ে পথ চলে
বাউল সাগর আগুন দিলেন। হেসে বললেন ওহে,
গুন টেনে যাও। গুন টেনে যাও। শুধু বাঁচার মোহে!
ছবি আঁকলাম। উড়িয়ে দিলাম। উড়তে উড়তে তারা
দুলিয়ে দিলো আমার বুকে আকাশমনির চারা!
আকাশ আমার। আকাশ আমার। হাজার বছর শেষে
কেউ কি নেশায় পড়বে ছবি? কেউ কি হাওয়ায় ভেসে
বলবে আবার ও শিউলি দ্বীপ, তোমায় খোঁজা বাকি!
ভাবতে ভাবতে পাথর পুরের পথিক হতে থাকি!
পাথরে রাত। পাথরে রাত। পাথরে রাত পড়ে।
কিশোরী তুই জাগাস আমায় হাজার বছর পরে!
ছুট
ভোর হয়েছে, ভোরের আলোয় আকাশ ঘুড়ি;
নুপুর পরে দোলায় হাতের মোহর চুড়ি।
বুকের ভাষা বিজন সুতোয় আবার জুড়ি
এখন তুমি করছ কী গো চাঁদের বুড়ি?
ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে
ভোর হয়েছে, ভোরের আলোয় কদম বাঁশি;
হৃদয়জুড়ে ছড়ায় সবুজ দিনের হাসি।
বাতাস যেন বাজায় খুশির ঝাঁঝর কাঁসি
এখন তুমি করছ কী গো পারুল মাসি?
ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে
ভোর হয়েছে, ভোরের আলোয় পালক তুলি;
সুজন দ্বীপে সাজায় স্মৃতির দুপুরগুলি।
পাতার ডাকে বাউল মনের দুয়ার খুলি
এখন তুমি করছ কী গো কুমোরটুলি?
ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে।
ভোর হয়েছে, ভোরের আলোয় কিশোরপাড়া;
দোলায় বুকে ক্ষীরের পুতুল, গোলাপ চারা।
পাহাড় থেকে গড়ায় মেঘের বিমল ধারা
এখন তুমি করছ কী গো কুসুম তারা?
ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে, ঘোড়া ছুটছে!