ন্যায়ের শাসন কই
ফালতু কথায় ফুল ফোটানোর তুমিই মিয়া সেরা
আশেপাশে হাজার লোকে তাই থাকো রোজ ঘেরা।
তাকাও যখন আলো জ্বলে কাঁদলে ভাসে মাটি
সবাই ভাবে মানুষ বটে—লোকটা ভীষণ খাঁটি!
তোমায় ঘিরে লোক সমাগম সকাল-বিকাল-রাতে
ভাবনাখানা এই—একটা ফোনেই সুফল হাতে হাতে!
দিনে রাতে মানুষ ঘোরে ব্যথার ওষুধ তুমি
মহারাজার মতোই যেন তোমার বসতভূমি।
কেউ জানে না তোমার গোমর দাপটেরই কারণ
যারা জানে কুলুপ আঁটা; বলতে আছে বারণ
নষ্ট লোকের পদ লেহনে নষ্ট তোমার মাথা
রোদ যেদিকে সেদিকেতে ধরে থাকো ছাতা।
বাড়ছে ক্রমে তোমাদেরই সংখ্যা দিনে দিনে
বাগাড়ম্বর কথার ভাঁজে যায় না নেওয়া চিনে।
তাই তো মানুষ খাচ্ছে ধরা হচ্ছে প্রতারিত
ন্যায়ের শাসন থাকলে হতো এসব সমাহিত!
হায় নুসরাত
মোটে ভাব ভালো নয়
মানুষ এত নির্দয়
কেমনে যে হয়!
কেমনে যে হয়!
বাতাসে বেশ ঘোর
আটকিয়ে এই দোর
বুকে চাপা ভয়
কী জানি কী হয়
কী জানি কী হয়!
ভাবি, আসবে না ভোর
কাটবে না এ প্রহর
তারই বুঝি জয়
তাই মনে ভয়
কী জানি কী হয়!
আইলসা আমি
আইলসা হয়া শুইয়া ঘরে কত্ত কিছু ভাবি
ভাবার ভেতর আইসা পড়ে না পাওনের দাবি।
যেনতেন সে দাবি নয়, সবকিছু চাই আমার
আইলসা লোকের চাওয়া মানে ঘটি-বাটি তামার!
আমার ঘরে নাই কিছু নাই, শুইয়া তবু থাকি
আইলসা হইছি বইলা তবে দেই না ঘুমে ফাঁকি!
সৎ মানুষের ভাতের অভাব হইল কবে শুনি?
থাকলি ঘুমে হইতে পারে ওই ব্যাটা কি খুনি?
পীপিলিকাও পার পাইয়া যায় কই না কিছু তারে
ভাবি, ব্যাটা চিমটি কাটুক, উঠুক যতই ঘাড়ে
নাইমা যাইব হইলে সময় নাইবা নামুক পরে
দাবড়ানিটা দিলি পরই থাকবি না আর ঘরে
(হাতির ঘরে থাইকা ব্যাটা পড়বে নাকি জ্বরে!)
ঘুম ভাঙে না, ঘুম ভাঙে না, আর ডাকে না পাখি
ঘুমের ভেতর উবু হয়ে স্বপ্ন শুধু আঁকি!
ঘুমের ভেতর দাবড়ানিতে দৌড়ের ওপর আছি
চোখ খুইলাই দেখছি এ কী! নাকে বসা মাছি!
কাঁটা
কইলাম যে পান্তাভাতের সাথে খাবার ইলিশ
খাওয়ার সময় দেইখা শুইনা ভাইবা ভাইবা গিলিস।
আকামডা তো হইল ঠিকই আটকা গলায় কাঁটা
ঘগ ঘগা ঘগ কইরা বাবা দিস কোথা ফের হাঁটা?
কইতেছে তোর মায়ে ঠিকই এত্ত দামের মাছে
একটা কাঁটায় হার মানোনের কী-ইবা এমন আছে?
আমগো দাদা এমন কাঁটা গিলত অনায়াসে
সেই বংশের পোলা হইয়া পড়লি ফাটা বাঁশে!
আব্বা রে তোর মতোই জানি আরও কত পোলা
ইলিশ খাইতে হইছিল বাপ, এমন আত্মভোলা!
কাঁটার আঘাত তুই সইবি ক্যামনে রে বাপ ক তো
এইটা এমন কাঁটা মনা মন করে বিক্ষত!
পদে পদে লাঞ্ছনা আর বঞ্চনারই মাঝে
কাঁটার আঘাত পাই প্রতিক্ষণ হৃদয়ে তা বাজে।
অসভ্য এই কাঁটা রে বাপ, নয় ইলিশের তা যে
সভ্য বলে চেঁচায় যারা, তারাই লাগায় কাজে!
ও বাপ, এখন কী করে তোর বাইর করি কাঁটা
দিলি ঝেড়ে বমি করে মেখে দিলি গা’টা!
হায় মসিবত, ভীষণ কাঁটায় বাপে-পোলায় কাঁদে
আটকে আছে গ্যাঁড়াকলে (সভ্য!) লোকের ফাঁদে।
ও ভাই ও ভাই
তেড়ির পায়ে বেড়ি দিয়া লোকটা ঘুমায়
একটা পীপিলিকা আয়া গালে চুমায়।
খাইয়া চুমা লোকটা ভীষণ বিগলিত
রোদের ভেতর মুখটা ভারি আলোকিত!
নাড়ায় চাড়ায় দুই পা দোলায় কড়া রোদে
দার্শনিকের মতোই চেতন তাহার বোধে
হাইসা হাইসা কইছে কথা আবোল তাবোল
শুনলে মনে হইতে পারে লোকটা পাগল!
কয় কী ব্যাটা, ব্যাবাক লোকে মূর্খ আকাট!
ভণ্ডলোকে ড্রাম বাজায়ে চালায় কনসার্ট
হাততালির ওই লোকগুলা নয় মোটেই ভালো
হারামজাদা, শুয়োরজাদা, কুকুরজাদার যেন পাল ও!
ভাইবা দেখি, নয় মোটে তা মিথ্যা অতি
নিজের ভালোর জন্যি করে পরের ক্ষতি।
সবার স্বার্থ দেখার মতো লোক কনে পাই
ও ভাই ও ভাই লোক কনে পাই লোক কনে পাই?
কোথায় যে পালাই
হায়, গরমের এমন যে তেজ রৌদ্রে গেলেই ভয়
এই বুঝি এই আটকাবে দম বাতাস আগুনময়।
হাঁটব ছায়ার ভেতর ভাবি—পাই না কোথাও গাছ
মরণ বুঝি আসছে ধেয়ে করছ কি কেউ আঁচ?
শ্বাস নিয়ে নিই কষ্ট করে গরম গরম ভাব
ঘাম ঝরছে দুপুর থেকে বুকে ভীষণ চাপ
হায় আল্লাহ, ঘুরছে মাথা পড়ল বুঝি কেউ
তপ্তরোদের ভাঁজে ভাঁজে উথলে ওঠা ঢেউ!
বাঁচার উপায় নাই রে মনা বাঁচার উপায় নাই
বউ-পোলাপান লইয়া এখন কোথায় যে পালাই!