খিচুড়ি
হাঁস ছিল সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেলে ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে ‘বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।’
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি!
জিরাফের সাধ নাই মাঠে ঘাটে ঘুরিতে,
ফড়িঙের ঢং ধরি, সেও চায় উড়িতে।
গরু বলে, ‘আমারেও ধরিলো কি ও রোগে?
মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে?’
হাতিমির দশা দেখ, তিমি ভাবে জলে যাই,
হাতি বলে, ‘এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই।’
সিংহের শিং নেই, এই তার কষ্ট
হরিণের সাথে মিলে শিং হলো পষ্ট।
গানের গুঁতো
গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা—
আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা!
গাইছে ছেড়ে প্রাণের মায়া, গাইছে তেড়ে প্রাণপণ,
ছুটছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভন্ভন্।
মরছে কত জখম হয়ে কর্ছে কত ছট্ফট্—
বলছে হেঁকে, ‘প্রাণটা গেল, গানটা থামাও ঝট্পট্।’
বাঁধন-ছেঁড়া মহিষ ঘোড়া পথের ধারে চিৎপাত;
ভীষ্মলোচন গাইছে তেড়ে নাইকো তাহে দৃক্পাত।
চার পা তুলি জন্তুগুলি পড়্ছে বেগে মূর্ছায়,
লাঙ্গুল খাড়া পাগল পারা বল্ছে বেগে, ‘দূর ছাই’!
জলের প্রাণী অবাক মানি গভীর জলে চুপচাপ্,
গাছের বংশ হচ্ছে ধ্বংস পড়ছে দেদার ঝুপ্ঝাপ্।
শূন্য মাঝে ঘূর্ণা লেগে ডিগবাজি খায় পক্ষী,
সবাই হাঁকে, ‘আর না দাদা, গানটা থামাও লক্ষ্মী।’
গানের দাপে আকাশ কাঁপে দালান ফাটে বিলকুল,
ভীষ্মলোচন গাইছে ভীষণ খোশ্মেজাজে দিল্ খুল্।
এক যে ছিল পাগলা ছাগল, এমনি সেটা ওস্তাদ,
গানের তালে শিং বাগিয়ে মারলে গুঁতো পশ্চাৎ।
আর কোথা যায় একটি কথায় গানের মাথায় ডাণ্ডা,
‘বাপ রে’ বলে ভীষ্মলোচন এক্কেবারে ঠাণ্ডা।
কাঠবুড়ো
হাঁড়ি নিয়ে দাড়িমুখো কে যেন কে বৃদ্ধ,
রোদে বসে চেটে খায় ভিজে কাঠ সিদ্ধ।
মাথা নেড়ে গান করে গুন্ গুন্ সংগীত—
ভাব দেখে মনে হয় না-জানি কি পণ্ডিত!
বিড়্ বিড়্ কি যে বকে নাহি তার অর্থ—
‘আকাশেতে ঝুল ঝোলে, কাঠে তাই গর্ত।’
টেকো মাথা তেতে ওঠে গায়ে ছোটে ঘর্ম,
রেগে বলে, ‘কেবা বোঝে এ-সবের মর্ম?
আরে মোলো, গাধাগুলো একেবারে অন্ধ,
বোঝে নাকো কোনো কিছু খালি করে দ্বন্দ্ব।
কোন্ কাঠে কত রস জানে নাকো তত্ত্ব—
একাদশী রাতে কেন কাঠে হয় গর্ত?’
আশে পাশে হিজি বিজি আঁকে কত অঙ্ক—
ফাটা কাঠ ফুটো কাঠ হিসাব অসংখ্য;
কোন্ ফুটো খেতে ভাল, কোন্টা বা মন্দ,
কোন্ কোন্ ফাটলের কি রকম গন্ধ।
কাঠে কাঠে ঠুকে করে ঠকাঠক্ শব্দ,
বলে, ‘জানি কোন্ কাঠ কিসে হয় জব্দ।
কাঠকুটো ঘেঁটেঘুঁটে জানি আমি পষ্ট,
এ কাঠের বজ্জাতি কিসে হয় নষ্ট।
কোন্ কাঠ পোষ মানে, কোন্ কাঠ শান্ত,
কোন্ কাঠ টিম্টিমে, কোন্টা বা জ্যান্ত।
কোন্ কাঠে জ্ঞান নাই মিথ্যা কি সত্য,
আমি জানি কোন্ কাঠে কেন থাকে গর্ত।’
কাতুকুতু বুড়ো
আর যেখানে যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার,
কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেও না খবরদার!
সর্বনেশে বৃদ্ধ সে ভাই যেও না তার বাড়ি—
কাতুকুতুর কুল্পি খেয়ে ছিঁড়বে পেটের নাড়ি।
কোথায় বাড়ী কেউ জানে না, কোন্ সড়কের মোড়ে,
একলা পেলে জোর ক’রে ভাই গল্প শোনায় প’ড়ে।
বিদ্ঘুটে তার গল্পগুলো না জানি কোন্ দেশী,
শুনলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশি।
না আছে তার মুণ্ডু মাথা, না আছে তার মানে,
তবুও তোমায় হাসতে হবে তাকিয়ে বুড়োর পানে।
কেবল যদি গল্প বলে তাও থাকা যায় সয়ে,
গায়ের উপর সুড়সুড়ি দেয় লম্বা পালক লয়ে।
কেবল বলে, ‘হোঃ হোঃ হোঃ, কেষ্টদাসের পিসি—
বেচ্ত খালি কুমড়ো কচু হাঁসের ডিম আর তিসি।
ডিমগুলো সব লম্বা মতন, কুমড়োগুলো বাঁকা,
কচুর গায়ে রঙ–বেরঙের আল্পনা সব আঁকা।
অষ্ট প্রহর গাইত পিসি আওয়াজ ক’রে মিহি,
ম্যাও ম্যাও ম্যাও বাকুম বাকুম ভৌ ভৌ ভৌ চীঁহি।’”
এই না বলে কুটুৎ ক’রে চিমটি কাটে ঘাড়ে,
খ্যাংরা মতন আঙুল দিয়ে খোঁচায় পাঁজর হাড়ে।
তোমায় দিয়ে সুড়সুড়ি সে আপনি লুটোপুটি,
যতক্ষণ না হাসবে তোমার কিচ্ছুতে নাই ছুটি।
সাবধান
আরে আরে, ওকি কর প্যালারাম বিশ্বাস ?
ফোঁস্ ফোঁস্ অত জোরে ফেলো নাকো নিঃশ্বাস।
জানো না কি সে-বছর ও-পাড়ার ভূতোনাথ,
নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে হয়েছিল কুপোকাৎ?
হাঁপ ছাড় হ্যাঁস্ফ্যাঁস্ ও রকম হাঁ করে—
মুখে যদি ঢুকে বসে পোকা মাছি মাকড়ে?
বিপিনের খুড়ো হয় বুড়ো সেই হল’ রায়,
মাছি খেয়ে পাঁচমাস ভুগেছিল কলেরায়।
তাই বলি—সাবধান! ক’রো নাকো ধুপ্ধাপ্,
টিপি টিপি পায় পায় চলে যাও চুপ্চাপ্।
চেয়ো নাকো আগে পিছে, যেয়ো নাকো ডাইনে
সাবধানে বাঁচে লোকে,—এই লেখে আইনে।
পড়েছ তো কথামালা? কে যেন সে কি করে
পথে যেতে পড়ে গেল পাতকোর ভিতরে।
ভালো কথা—আর যেন সকালে কি দুপুরে,
নেয়ো নাকো কোনো দিন ঘোষেদের পুকুরে;
এরকম মোটা দেহে কি যে হবে কোন্ দিন,
কথাটাকে ভেবে দেখ কি রকম সঙ্গিন!
চটো কেন? হয় নয় কেবা জানে পষ্ট,
যদি কিছু হয়ে পড়ে পাবে শেষে কষ্ট।
মিছিমিছি ঘ্যান্ঘ্যান্ কেন কর তক্ক?
শিখেছ জ্যাঠামো খালি, ইঁচড়েতে পক্ক।
মানবে না কোন কথা চলা ফেরা আহারে,
একদিন টের পাবে ঠেলা কয় কাহারে।
রমেশের মেজমামা সেও ছিল সেয়না,
যত বলি ভালো কথা কানে কিছু নেয় না—
শেষকালে একদিন চান্নির বাজারে
পড়ে গেল গাড়ি চাপা রাস্তার মাঝারে!