শীত এলো
ধূপছায়া রং মেখে শীত এলো গাঁয়েতে
রিনিঝিন সুরবীণা বেঁধে তার পায়েতে
খেজুরের রসে আর রসপিঠা পুলিতে
শীত এলো শিল্পীর আঁকা রঙ-তুলিতে|
মেঠোপথ নদী, ফুল, সবুজের বনেতে
কিশোরীর এলোচুল চঞ্চল মনেতে
মায়াময় কিষাণীর কুঁড়েঘর বাড়িতে
শীত এলো সখিনার স্বপ্নের শাড়িতে|
সোনারঙ গোধূলির দিঘিজল পুকুরে
রাঙাবউ, নায়রীর আশা-মন মুকুরে
শিশুদের কোলাহল মাছেদের খেলাতে
মাঠভরা সরিষার হলুদাভ মেলাতে
ছায়াময় আঙিনায় গাছপাতা ধূলিতে
শীত এলো বুড়িমার ভিক্ষার ঝুলিতে!
খোকাখুকু স্বপ্নে ভাসে
ইষ্টি কুটুম মিষ্টি হাঁড়ি
আসবে কুটুম আমার বাড়ি
আসলে আসুক তাড়াতাড়ি
নইলে খুকু নেবেই আড়ি।
খুকু আমার ভীষণ ভালো
দুইচোখে তাঁর রঙিন আলো
আলোর ভেতর কুটুমপাখি
নিত্য করে ডাকাডাকি।
ঐ যে দূরে-অনেক দূরে-
বাঁশি বাজে মধুর সুরে
শুনেই খুকুর মন উতলা
বলতে যা চায়, হয় না বলা।
বসে ভাবে ঘরের কোণে
কোথায় যাবে, অচীন বনে?
বন ও তো নেই আগের মতো
বনের বুকে বিশাল ক্ষত!
উড়ছে ডিজিটালের ধোঁয়া
কতকিছু যাচ্ছে খোয়া
লাটাইঘুড়ির ওই আকাশে
মান অভিমান ইচ্ছে ভাসে।
তবু খুকুর কল্পনারা
সুখের আশায় আত্মহারা
ভাবে সুদিন আসবে ফিরে
ব্যস্ততাময় জীবন ঘিরে।
ইষ্টিকুটুম প্রহর নিয়ে
খোকার সময় যায় এগিয়ে
মখমলী দিন যায় ও আসে
খোকাখুকু স্বপ্নে ভাসে।
ঝুম নাচুনি মেঘবালিকা
মেঘবালিকা মেঘের মেয়ে দুষ্টুমিতে নীল
ইচ্ছে হলেই খুনসুটিতে হাসো যে খিলখিল
ধানেরক্ষেতে কদম পাতায় কচি পাটের বন
রিনিঝিনি জলের ঝালর ওড়াও সারাক্ষণ
অলসবেলায় দাও ছড়িয়ে ঝুম বৃষ্টির ফুল
মেঘবালিকা, কোথায় শুকোও রেশমকালো চুল?
পুকুর ডোবায় ঝোপের আড়ে ডাহুক ছানার ঘর
পালকি চড়ে আসবে কি আজ শ্যামলা মেয়ের বর?
নদীর ধারে, বাঁশের ঝাড়ে ভেজে পাখির ঝাঁক
পেখমমেলে ময়ূর নাচে পায়রা বাকুম বাক!
মেঘবালিকা তোমার ছোঁয়ায় কুমড়োলতা চুপ
লক্ষ্মীমতি বধূ জ্বালে পূজার ঘরে ধূপ
ভেজা শালিক জটলা করে পাতায় রোদের নাচ
বিল-বাওড়ে মনের সুখে সাঁতার কাটে মাছ
কুনোব্যাঙের কান্না শুনে চমকে তাকায় বক
বৃষ্টি ভিজে কানামাছি খেলার জাগে সখ
চোখে জাগে ঘুমের আবেশ মনে বাঁশির সুর
নৌকো দোলে, মনমাঝি গায়, যাবে সে কদ্দুর?
মেঘবালিকা ঝুম নাচুনি রুপো রঙের ঢেউ
দস্যিপনায় তোমার সাথে পারবে না তো কেউ!
ইচ্ছে আমার
ইচ্ছে আমার রাঙা গোলাপ দিন বদলের ফুল
ইচ্ছে সুতোয় মালা গেঁথে, দূর করি সব ভুল
ইচ্ছেরঙে জীবন রাঙাই দুঃখ সরে যায়
ইচ্ছে করে খুনসুটি যে, আমার আঙিনায়|
ইচ্ছে আমার ঝিনুক বিকেল শুক-সারিদের গান
ইচ্ছে বাঁশির মিষ্টি সুরে মন করে আনচান
ইচ্ছে নদীর জলস্রোতে নৌকো ভাসাই একা
ইচ্ছে ছাড়া হয় না কারও গল্প-ছড়া লেখা|
ইচ্ছে আমার ধূসর ধূলোয়, মন ছবিটা আঁকে
ইচ্ছে নিয়ে তাইতো হারাই, পড়শি পথের বাঁকে
ইচ্ছে ভাঙে বাধার দেয়াল. বৈরি সময় বেলা
ইচ্ছে আনে স্বপ্ন ঋতু, ফুল-পাখিদের মেলা!
ইচ্ছে নিয়ে আজো সাজাই, সই পুতুলের ঘর
ইচ্ছে নিয়েই ভাবনাগুলো ছুটছে নিরন্তর
ইচ্ছেটা যে রঙিন ঘুড়ি…ওড়ে আকাশময়
ইচ্ছে নিয়েই করছি সবাই বিশ্বটাকে জয়!
বাংলা আমার মা
বাংলা আমার মা-জননী প্রাণের চেয়ে প্রিয়
ও কোকিলা দেশ মাতাকে একটা চিঠি দিয়ো
ভালোবাসার নকশা আঁকা ধূসর রঙের খামে
দাও পাঠিয়ে ভাষার আদর মিষ্টি মায়ের নামে|
ও জোনাকি, জোছ্না, তারা, স্বচ্ছজলের ধারা,
আমার মায়ের রূপটি দেখেই হওকি দিশেহারা?
রাতের আকাশ ঘাস, লতা, ফুল-পলাশ ফোটা বন
তোমরা কি পাও দেখতে আমার মায়ের রাঙা মন?
ও মাঝি ভাই রঙিন পালে যতই দূরে যাও
আমার মায়ের স্নেহের আঁচল সঙ্গে করে নাও
ছেলেবেলার পাঠশালাটা দেখতে যদি পাও
ভালোবাসার নরম রোদে ভিজিয়ে দিও তাও।
ও কিশোরী নূপুর বেঁধে আলতা রাঙা পায়,
করতে এসো নায়র আমার সবুজ-শ্যামল গাঁয়
সঙ্গে এনো পুতুল খেলার সেই সোনালি দিন
বাজবে না হয় স্মৃতির নূপুর আনন্দে রিনঝিন!
ও চাষি ভাই খুব সকালে যাও কি আজও মাঠে
গাঁয়ের রাখাল তোমার কি দিন বাঁশির সুরেই কাটে?
পুকুরঘাটে বসে কিশোর জলছবি কি আঁকো
ইচ্ছে হলেই আকুল হয়ে মাকেই বুঝি ডাকো?
ও কলাবউ তুমি শোনাও লাল পলাশের গান
শুনে ভরে উঠুক মায়ের ব্যথায় ভরা প্রাণ…
অচল নীতি অসঙ্গতি সব হয়ে যাক দূর
বাংলামায়ের বুক শুধু হোক খুশিতে ভরপুর।
ও জেলে ভাই কামার কুমোর পড়শী-স্বজন যাঁরা
মা-জননীর দুখের দিনে তোমরা দিয়ো সাড়া
আঁধার শেষে ঠিক যখনই ফুটবে আলোর রেখা
কথা দিলাম, সবার সাথেই হবে তখন দেখা!
খোকা খুকু নাচরে সবাই
কাঠঠোকরা কাটুস কুটুস কাটছে গাছ
ডোবার জলে হাঁস মাছেরা করছে নাচ
টাক্কুদাদা যাচ্ছে কোথায়, দূরের গাঁও?
স্রোতের টানে চলছে ভেসে পালের নাও।
কলাবতী বউ পরেছে ঘাসের ফুল
কে হারালো কন্যা তোমার কানের দুল
কাঁদছ বসে ঘোর-আঁধারে একলা তাই
চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়ার বন্ধু নাই?
বন্ধু কোথায় কিনতে গেছে সুখ-সুদিন?
সময় বেলা বইছে নিয়ে সুখের ঋণ
কঙ্কাবতী রূপের রানি কোথায় আজ
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীদের নেই কি কাজ?
কাজের ভয়ে দস্যি খোকা একটু চুপ
ঠান-দিদিমা পূজার ঘরে দিচ্ছে ধূপ!
ধূপ-ধোঁয়াতে গন্ধে ভরে ঘরের কোণ
রুমকি রুনি মিষ্টি ভারি দুইটি বোন!
ঝগড়াঝাটি নেইকো তাদের, ভীষণ ভাব
কানকথাতে দুঃখ করে হয় কি লাভ?
লাভ লোকসান হিসাব খাতা বন্ধ থাক
খোকাখুকু নাচরে সবাই ধিনতা-ধাক।
ছন্দ
ছন্দ দিয়ে মালা গাঁথি ছন্দে ফোটাই ফুল
ছন্দ খুকুর গান কবিতা ছন্দ কানের দুল
পুকুরজলে শাপলা হাসে ছন্দে বেলা যায়
ছন্দেতালে রিনতি নাচে সোনার নুপুর পায়।
গাছে গাছে সবুজ পাতা পাখিরা গায় গান
ছন্দে বাজে রাখালবাঁশি খুকুর ভাঙে মান
দুষ্টু খোকার লালঘুড়িটা ওড়ে আকাশময়
ছন্দ দিয়েই খোকাখুকুর নামতা পড়া হয়।
রাতের শেষে নতুন সকাল রোদে ভরা দিন
হলদে সুখের স্বপ্ন ছড়ায় হয় সবই রঙিন
নানা রকম শব্দ ভাষায় মনে লাগে দোল
ছন্দেতে হয় স্বয়ম্ভর এই বাংলামায়ের কোল।
জয় করে বিশ্ব
শিশিরের ফোঁটাগুলো টুপটাপ ঝরছে
খোকাখুকু মন দিয়ে লেখাপড়া করছে
রাঙাবউ আয়নাতে চুল তার বাঁধছে
মামনিটা মজাদার কতকিছু রাঁধছে।
এলোমেলো একাকিনী পথে হাঁটে বিন্নি
সবুজে ও হলুদেতে ছবি আঁকে তিন্নি
আনমনে শাপলার মালা গাঁথে আন্না
ছোটনের চোখে জল, জল নাকি পান্না?
টুনটুনি বুলবুলি সুখে গান গাচ্ছে
বুড়িমাসি চুপিচুপি সাঁচি পান খাচ্ছে
মায়মুনা মঞ্জুরি ঝরাপাতা গুনছে
রাঙাবুবু স্বপ্নের মিহিতাঁত বুনছে।
ঐ দূরে-বহুদূরে! কোন সুর বাজছে?
সবুজের শোভা নিয়ে কেউ কি গো সাজছে!
সাজছে তো! সাজছে যে আমাদের রিনতি
দেখে আহা মিটিমিটি হাসছে যে বিনতি!
বিনতিটা বোকা খুব-স্কুলে যায় না
বাবা-মা’র ভালোবাসা তাই বুঝি পায় না?
পাবে ঠিক! যেদিন সে লেখাপড়া করবে
সকলের ভালোবাসা নিয়ে মন ভরবে
মনোবল আছে তার নয় সে যে নিঃস্ব
হাসবে সে একদিন জয় করে বিশ্ব!
ভালোয় ভরা অনুভব
একটা নদী এপার ওপার দুইপারেতে ঘর
একটা নদী বুকটা ধুধু শুধুই বালুর চর
একটা খুকু রাঙাপায়ে নূপুর ঝুমুরঝুম
একটা পাখি চোখজুড়ে তার স্বপ্নকাতর ঘুম।
একটা মাঠে মিষ্টি হাসে সোনা রঙের ধান
একটা বাঁশি আকুল পরাণ শোনায় সুরে গান
একটা পুকুর জলে ফোটে শাপলা বারোমাস
একটা আকাশ আলোয় ভরা হাজার তারার বাস।
একটা মানুষ নানা কাজে ব্যস্ত কাটায় দিন
একটা সতেজ মনকে নিয়েই চুটি বিরামহীন
একটা বুকে অথই সাগর জল করে টলমল
একটা সকাল নতুন দিনের শক্তিতে উচ্ছল।
জল পড়ে পাতা নড়ে
জল পড়ে আর পাতা নড়ে মেঘেরা নেয় আড়ি
খুকু বলে জলপরি, ‘তুই আসিস আমার বাড়ি’
মাটির থালায় খেতে দেবো মুড়কি মুড়ি দই
শিকেয় রাখা নাড়ু দেবো বিন্নি ধানের খই।
হাত পাখাতে করব বাতাস থাকবি শুয়ে খাটে
বিকেল হলেই তোকে নিয়ে বসব পুকুর ঘাটে
দেখবি তখন ফুলকুঁড়িদের খুনসুটি জলখেলা
দুজন মিলে ভাসাবো যে খুশির রঙিন ভেলা।
জল পড়ে আর পাতা নড়ে মেঘের আড়ি ভাঙে
নৌকো ভাসায় নবীন মাঝি দূরের ভাটি গাঙে
ছইয়ের ভেতর বউটি হাসে জলের ছিটায় ভিজে
খুকু বলে, ‘ও সোনা বউ বলনা করি কী-যে!
লজ্জারাঙা মুখ যে বউয়ের, খুশিতে মন দোলে
নবীন মাঝি ভাটির গানে সুরের কাঁপন তোলে!
জল-পাতাদের সুখের খেলা দেখতে লাগে বেশ
এমনি কত রূপের ভেলায় ভাসে সোনার দেশ।