প্রবোধ
মেয়ে আমার নয়নমণি সোহাগ জাগা সোনার খনি
আদর ভরে পুষছে মায়ার পুষি বিড়ালছানা
সব কিছুতে তার অধিকার দামি সোনাদানা।
তক্তপোষে দুধের বাটি মণ্ডা মিঠাই ক্ষীরটা খাঁটি
অবলীলায় পায় সে দারুণ মজার খানাপিনা।
ডেটল জলে গা ধোয়ালে, চায় সে মোছার নীল তোয়ালে
মেয়ে আমার বায়না ধরে আদায় করে তাও
বায়নায় আমার কিনতে হলো বনটিয়ার ছাও।
ছা ও ছানা উভয় তারই দরদ দিয়ে বাধা নাড়ি
এত্ত বলি ছা ছানা এক ধরনের নয়
অবশেষে সত্যি হলো আমার মনের ভয়।
স্বভাব দোষে বিড়ার ছানা কামড়ে টিয়ে করল কানা
লোহার শিকের বাড়ি মেরে যখন বাঁচাই ছাকে
অমনি মেয়ের চোখ ফেটে জল, কেন মারি তাকে?
এত্তো বুঝা মেয়ের মনে প্রবোধ মানে না
প্রকৃতির এই কঠিন স্বভাব মেয়ে জানে না।
বায়েস্কোপের পদ্য
বায়েস্কোপের আগমনের ঝুমঝুমাঝুম শত
মনটা আমার কেঁড়ে নিতো হেমিলনের মতো।
ভোঁদৌড় দিয়ে জড়ো হতাম ছেলেছোকড়ার দল
বায়োস্কোপের ছবির নেশায় বাড়তো মনোবল।
একটি সিকির বিনিময়ে নানান বরণ ছবি
দেখে নয়ন ভরে যেতো গীতিময় তার সবই।
চোখের তৃপ্তি কানের তৃপ্তি মনের তৃপ্তি নিয়ে
কিশোর বেলার মনের জগৎ ভরতো যে সুখ দিয়ে।
ছোট্টবাক্সে ঘোড়া হাতি দালান কোঠা দেখে
বিস্ময়ে খুব আলোড়িত হতাম পড়া রেখে।
ভাবনা নদীর নৌকা বাওয়ায় পড়তো নাতো যতি
মনের ভেতর উথাল পাথাল স্বপ্নে নয় বিরতি।
বাদ্য সুরে গীতে বয়ান ফুটতো দৃশ্যপট
কল্পনাতে ভরতো আমার কাব্যরসদ ঘট।
ছোট্টোবেলায় রঙের মেলায় বায়েস্কোপের স্মৃতি
জীবনমাঠে সোনার ফসল গোলায় ওঠায় প্রীতি।
চিঠি
ভগবানের নামে একটা চিঠি ছিল
ডাক পিয়নে বড় কর্তার হাতে দিলো।
গণ্ডগ্রামের খোকার লেখা কচি হাতে
পড়াশোনার খরচা পাঠাও লেখা তাতে।
‘ও ভগবান তুমি হলে দয়ার সাগর
তোমার নামে দ্বীপ জ্বালি আর জ্বালি আগর।
এক বছরের খরচাপাতি হাজার টাকা
পাঠাও যদি পূর্ণ নইলে জনম ফাঁকা।’
বাবা যে তার ছেড়ে গেছে জন্মের আগে
মার ঠিকানা অজানা তাই কর্জ মাগে।
অবুঝ হাতের চিঠি পড়ে কর্তা ডাকে
মায়ার টানে পাঁচশো টাকা পাঠায় তাকে।
পাঁচশো টাকা পেয়ে খোকার আবার চিঠি
বড় কর্তা পড়ে হাসেন মিটি মিটি।
‘ও ভগবান জানি আমি তুমি ঠিকই
হাজার টাকা পাঠিয়েছিলে দেখো দিকি।
সরকারি সব কর্মচারী মেরে খেলো,
পাঁচশো পেলাম পাঁচশো হলো এলোমেলো।
তাইতো আমি বিচার চাইছি তোমার কাছে
তোমার বিচার পেলেই তবে গরীব বাঁচে।’
পাঠশালা
মানুষ গড়ার জায়গাটিকে বড় ভালোবাসি
পাঠশালাটির জন্য সবার মায়া রাশি রাশি।
প্রথম গুরুর কাছে সবার এইখানে হয় দেখা
বড় হওয়ার নিয়মগুলো নির্ভুলে তাই শেখা।
খেলার মাঠের পূর্ব কোণে ছয়টি রুমের দালান
দক্ষিণে তার ফুলের বাগান, উত্তরে তার পালান।
আলোকিত মানুষ হওয়ার সেই সে আঁতুড় ঘরে
লেখাপড়া-খেলাধুলার পুলক ঝরে পড়ে।
পাঠ করেছি বর্ণমালা সুর তুলেছি নামতা
সিলেবাসের বাইরে গিয়ে করছি আমতা আমতা।
গদ্য পদ্য পড়তে শেখার আহা সে কী মজা!
মায়ের হাতের টিফিন বিনা কিনে খাইছি গজা।
পাঠশালাতে না গেলেই হয়ত থাকতাম বন্য
এই জীবনে পাঠশালা কাল করছে আমায় ধন্য।
নায়ের মাঝি
দেশের জন্য লড়ে যারা জীবন দিতে ছিল রাজি
তাদের প্রতি সালাম জানাই তারাই দেশের শহীদ-গাজি।
রক্তনদী পাড়ি দিয়ে আনলো যারা রত্নরাজি
অথৈ সাগর পাড়ি দেয়ার মহাবীর তার নায়ের মাঝি।
দহন রোদন কালোছায়া লুণ্ঠিত জয় আতশবাজি
মুক্তিসেনার কাছে দেনা শুধতে কোনো নয় কারসাজি।
গোঁজামিলে ফাঁদে পড়ে আখেরে পস্তাবে পাজি
জাগ্রত সব জনতারই ঠেলায় কাহিল হলো নাজি।
পরাজয়ে ভাঙা কুলো নয় তো রে ভাই ফুলের সাঁজি
দৃষ্টিনন্দন রূপসচেতন যেন সস্তা সাজে সাজি।
শান্তি প্রিয় দামাল ছেলে ভীম লড়াইয়ে ভীষণ তেজী
মার সম্ভ্রম রাখতে যুদ্ধ যেন সাপের সাথে বেজি।
বুকের ভেতর হৃদয় নামক অস্ত্রখানা উঠছে বাজি
হাতিয়ারে অকুতোভয় ভরসা তাদের নায়ের মাঝি।