দোষ
আমি যদি সকালের ঘুমভাঙা পিউ পাখি হই
ঘরদোরে ডেকে আনি ভোর,
তোমরা তো এই নিয়ে মুখটিপে লুকিয়ে হাসোই।
আমি যদি আকাশের দিকে কভু চোখ তুলে চাই
এেঁকেবেঁকে প্রান্তরে হাঁটি,
তোমরাই বলো: ছেলে এখনো কি হাঁটা শেখ নাই?
আমি যদি ক্যানভাসে রং-তুলি ছুঁয়ে দিই পোচ
পৃথিবীকে নতুনে সাজাই,
তোমরাই বলো: ছেলে তাড়াতাড়ি এইসব মোছ।
আমি যদি চাঁদ হই, সন্ধ্যার হই ধ্রুবতারা,
মহাকাশে গড়ে তুলি ঘর,
তোমরাই বলো: কিছু হবে না তো এ ছেলের দ্বারা।
আমি যদি মন দিয়ে কাব্যের ভাব-ভাষা খুঁজি
নিবৃতে গান-ছড়া রচি,
তোমরাই বলো শুনি: এই তার মাথা গেলো বুঝি।
আমি যদি মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর বুকটাকে ছিঁড়ি
নিজ নাম খোদাই করি,
তোমরাই বল শুনি: তার লেখা কী যে বিচ্ছিরি।
আমি যদি কাগজের হেলিকাপ্টার দিয়ে খেলি
নৌকা বা রকেট বানাই,
তোমরাই বলো: এই অকেজোকে ছিঁড়ে যেন ফেলি।
আমি যদি খুলে ফেলি আব্বুর ছোট টেলিফোন
যন্ত্রটা করে দেখি বের,
তোমরাই বলো: খুব ভালো নয় তার লক্ষণ।
আমি যদি জ্যামিতির কাঁটা-কম্পাস কভু ছুঁই
নেপচুন-বুধ গ্রহ আঁকি,
তোমরাই বলো: সব নষ্টের মূলে দেখি তুই।
তবে কেন বলো ফের ভালো করে পড়ালেখা করো
তোমাকে তো হতে হবে গবেষক-বিজ্ঞানী বড়ো!
সব কাজে তোমাকেই হতে হবে খুব বেশি পটু
তবে কেন বক শুধু চুন থেকে সরলেই পানের বঁটু?
আমি আর আমরাই নেড়েছেড়ে চারপাশ দেখি
থিসিসের পাঠ করি শেষ,
আমরাই হাসলে যে হেসে ওঠে পৃথিবী স্বদেশ।
আঙুল
মিরার হাতের আঙুল সংখ্যা পাঁচ
হিরার হাতেও তাই,
শিমু রিমু জেরিন হেসে বলে-
সবার হাতের আঙুল তো পাঁচটাই।
শিপলু বলে, থাম তো তোরা ভাই
দেখতে যদি পাঁচটা দেখায়—
. আঙুল কি পাঁচটাই?
. এক যে ছিল শেখ মুজিবুর নাম
. তার আঙুলের ক্যারিশমা দেখলাম-
সেই এক আঙুলই লাখ আঙুলের সমান
. একাত্তোরের ভাষণটা এর প্রমাণ।
৭-ই মার্চের বিশাল সমাবেশে
একটা আঙুল ঝড় ওঠালো দেশে!
সেই আঙুলের এক ইশারায় কতো
ভূত-প্রেতেদের কলজে যেতো ঘেমে,
মুক্তিকামী মিছিল পথে নেমে
অকাতরে প্রাণ বিলাতো লোকে…
একটা আঙুল একটা তো না মোটেই
এক আঙুলের ইশারাতে বাঙলা জেগে ওঠে।
অত্যাচারীরর কম্প ছুটে যেতো-
বিশ্ব খুঁজে এমন একটা আঙুল এনে দে তো।
গল্পের পৃথিবী
তখন আকাশের ডানাতলে সূর্যটা উমে ছিল
তাই এ শহর ঘুমে ছিল, পাড়া-গাঁও ঘুমে ছিল।
. ধীরে ধীরে কুমসুমের মতো হয়ে লাল
. ডিম পেটে বের হয় হলদে সকাল।
তখন গল্পের ঝুঁড়ি খুলে নেমে আসে ভোর
যেন ঘর ছেড়ে নেমে পড়া দস্যি কিশোর।
তরপর কত যে গল্প করে সৃষ্টি ওরা
. কিছু হয় অমৃত ও কিছু অনকোরা।
আর ভোরের স্নিগ্ধ আলো কালি যদি হয়
. সময়-ই হয়ে ওঠে কলমের নিব:
. গল্পতে ভরে তোলে কত-শত পাতা
. ধরি যদি পৃথিবীটা গল্প খাতা।
. আমরা তো কচি প্রাণ-ক’টা জানি আর
. পৃথিবীটা গল্পের মহা-সম্ভার।
তিরতির নড়ে গাছ গল্প বলে
সাগরও গল্প করে ঢেউ তোলা জলে।
সন্ধ্যায় জোনাকিরা গল্পে মাতে
গল্পের শুরু হয় রোজ প্রভাতে।কী নিয়ে গল্প এত? কাহিনি কী? হায়
কে আছে গল্পকার-আমাকে শোনায়?
গল্পের খনি খুঁড়ে কিছু করি বের-
সব সঅব গল্পই শুধু মানুষের।প্রাচীন ইনকা, মায়া, হিব্রু, মিশর
মাটিচাপা গল্পরা করে খুব শোর!
হরপ্পা খুঁড়ে পাই এক যে বুড়ি
তার কাছে ছিল এক গল্পঝুড়ি;
তার চোখে চোখ তুলে তাকালাম যেই
দেখি তার চোখমুখ ভরা গল্পেই!—মুখ টিপে হেসে বলে, কী শুনবে আর?
গল্পরা স্তুপ হয়ে গড়েছে পাহাড়।
কোন-সে গল্প বলো শুনবে তুমি?
খুঁড়ে দেখ আদিম এই বঙ্গভূমি।