চায়ের কাপে ঝড়
বছরটাকেই লাগছে কেমন জানি
পরস্পরের মাঝে দেখি কেবল হানাহানি।
একটু কথা কাটাকাটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে
কেউ জানে না এ জের কখন কোথায় থামে গিয়ে।
কখন কে কী করে বসে এও জানে না ঠিক
সবার নজর কাড়ছে এখন ঈশান কোণের দিক।
ওখান থেকে এই এখনই নামবে ঘূর্ণি-দল,
দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে দেবে অন্য দলের বল।
উড়ে যাবে বাড়ি গাড়ি, ভেঙে পড়বে পথ,
এ সব করে কাল-অকালে পড়বে কারও রথ।
কেউবা আবার মেতে উঠবে আঙুল ফোলা গর্বে
এদিক থেকে ওদিক গিয়ে কথায় কথায় লড়বে।
টেনে আনবে রাজনীতিকে ডান হাতে বাঁ হাতে
এক আছাড়ে লুটিয়ে দেবে কাউকেবা এক ঘা-তে।
বায়ু বেগে ছুটে আসবে তখন ক’জন সঙ্গী
সায় দেবে ওর, দেখিয়ে যাবে পুটুস পাটুস ভঙ্গি।
সাগর থেকে তুলে এনে ঢেউয়ের কতক শব্দ
ছুঁড়ে মেরে করে ছাড়বে ভিন্ন মতকে জব্দ।
তুলো ধুনো করে করে কাঁপিয়ে তুলবে ঘর,
চায়ের কাপে উঠিয়ে ছাড়বে ঝড়।
চায়ের কাপে উঠিয়ে ছাড়বে ঝড়
পাক বা না পাক সমাজ থেকে সত্যিকার কদর।
দেশটাতে
এই কি রে ভাই, সবুজ চাদর
বিছিয়ে থাকা দেশটাতে
কেবল দেখি খোঁচাখুঁচি,
মারামারিও শেষটাতে?
শুনিও অস্ত্রের ঝনঝনানি
একটুখানি কান পেতেই,
বুকে বাড়ে ধুকধুকানি
কথার দু’ চার টান খেতেই।
ফন্দি আঁটে মোটা অংকের,
চোখে দেখি সর্ষেফুল,
লাখ টাকা চায়,পরের মাথায়
লবণ রেখে খেতে কুল।
মাল যোগাবে গৌরী সেনে
আঙ্গুলেও তা জানবে না,
সুযোগ পেলেই হেনতেন
কান বা চুলকে টানবে না।
ভুলবে এসব? খাবে পথেই
জায়গা মতো এক কুটুস,
একটু এদিক সেদিক হলেই
জানবে নিজের জান ফুটুস।
কিংবা যদি ভেবে থাকো
এ ব্যাপারে দেবে ধোঁকা
সঙ্গে সঙ্গেই ওই আকাশের
তারা হবে তোমার খোকা।
কটুখানি স্নেহ মায়া
একের পরে এক
পাখির মতো মারছে শিশু
না পোহায়ে বেগ।
কটুখানি স্নেহ মায়া
ভাবি কোথাও নেই,
মায়ের কোলও আছে কি আর
নিরাপত্তা সেই?
অথচ বাঘ দেয় না থাবা
লাগলে হালকা ভোগ,
জলের কুমির কূলে ঘুমায়
খোলে না তার চোখ।
মানুষ এসব পশুর অধম,
নিজের বেলায় অন্ধ,
একটু এদিক সেদিক হলেই
পতন ঘটায় ছন্দ।
তুড়ি মেরে দেয় উড়িয়ে
সত্যি ভালোবাসা,
হত্যা করে আপনজনের
মনের সকল আশা।
সেই প্রাণীটা
কার না জাগে ইচ্ছে
বন-বাদাড়ের সবুজ ও ফুল
করতে উপভোগ
রঙ-বেরঙের প্রাণীর ওপর
মেলে ধরতে চোখ ?
খোকা সেদিন দেখতে পেলো
সকল পাখি সকল প্রাণী
হাসতে হাসতে মরে
একটি প্রাণীই গোমড়ামুখো
কেবল চোখে পড়ে।
সেই প্রাণীটা একা
উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে,
চামড়া ভীষণ মোটা
হাসির হেতু তাই গুলিয়ে –
বুঝতে পায়নি গোটা।
বুঝলো ঠিকই দু’দিন পরে
ভাঙলো নিজের ভুল
কেউ হাসে না একাই সেদিন
হেসে পায় না কুল।
দ্বন্দ্ব আছে
বাসে-গাছে ধাক্কা খেয়ে অক্কা পেলো গোটা বারো,
দু’দিন পরে হাসপাতালে পটল ওঠে ক’জন আরও।
খাদে পড়ে উল্টে যাওয়ায় লম্বাটে হয় লাশের সারি,
স্থল বা জলে চোখে কেবল দুর্ঘটনার মহামারী।
দ্বন্দ্ব আছে লেনাদেনায় গন্ধ আছে ভিন্ন মতের
ওষুধ ছাড়াই উপশম চাও মুঠোর পাখির সৃষ্ট ক্ষতের?
এতই সোজা? মিটিয়ে দেব মুক্ত বায়ু টানার খেলা
টাকার কাছে তোমার মানিক মশার চেয়েও হেলাফেলা।
এমন দিনেও যে কাছে নেই সে কি নয় সেই ডুমুরের ফুল?
কিংবা ঋতুর কোকিল বলো আধা ইঞ্চিও হবে না ভুল।
শাক দিয়ে মাছ, ছাই দিয়ে ছল অনেক সময় যায় কি ঢাকা?
কালো বিড়াল বেরিয়ে আসে খাটের তলা করলে ফাঁকা।
কিংবা জলের ধারা দেখেই পাপের কথা পড়বে মনে,
তখন কি লুকিয়ে নেবে ঘটে থাকা সত্যি বলা?
উল্টো শিক্ষা
সত্য বললে হাদা হবে মিথ্যে বললে চতুর
ভালোর দিকে যে যাবে তার ধন সকালেই ফতুর।
টিকতে হলে এই সময়ে বুদ্ধি রাখবে আঁতে
দিনে ঘটা ঘটনাকে বলবে ঘটে রাতে!
দিব্যি যে লোক চোখে দেখে বলবে সে লোক অন্ধ
ফুলের মতো পবিত্রকেও ঝিনুক পচা গন্ধ!
প্রয়োজনে খাঁটি দুধে বাছতে হবে কাঁটা
উজান নদী বলতে হবে স্রোতে নাকি ভাটা!
বেপরোয়া বিশ্রিটাকেও বলবে, আছো বেশ,
ভূড়িঅলার টেকো মাথায় কতো সুন্দর কেশ!
হাতেনাতে ধরা পড়া চোরকে বলবে সাধু
মিথ্যে কথার বক্তৃতাকে তাকে খই ফুটানো জাদু!
গাছে কুমড়া ঝুলতে দেখে বলবে এত শসা
জঙ্গি বিমান উড়তে দেখেও এতো পিচ্চি মশা!
ভালোটাকে বাজে বলবে চুলকাবে না চুল
পরের হাতে লবণ রেখে খাবে গাছের কুল!
চোখ পড়া মাল পরের হলেও ভাববে নিজের ভোগ্য
তবেই তুমি এই দুনিয়ায় হবে অধিক যোগ্য!