চিঠি
করতলে ছিল রেখা আর ছিল সোনামণি সোনা
বাদাবনে ঘুরে বেড়ানোর এক অলীক বাসনা!
সারারাত যথাতথা দিশাহারা কথাগুলো ঝরে,
মিশে গেছে কালি হয়ে নোনা পথ সোনালি পাঁজরে!
নোনা পথ, সোনা পথ দাও পিঠে জুড়ে দেখি ডানা!
আমি জানি বাধাগুলো কেটে গিয়ে পেরুবে সীমানা!
তোড়া বাজা রাঙা ভোরে ঘোড়াগুলো চরে খাবে ঘাস।
অবশেষে ভাষা শিখে আমাদের শোনাবে আকাশ।
ওরা কেউ হাঁস নয়, কোনো এক কিশোরের চিঠি!
হাঁস হয়ে খেলে আর পড়ে শুধু কিশোরী নদীটি!
কবি
প্রিয় ভাষাতরী ভেসে আসে। কবি ঘেমে নেয়ে টানেগুণ।
বুকে অবিরত কড়া নাড়ে এক ভালোবাসা গুনগুন।
দ্যাখো যুযুধান বীর দ্যাখো, দ্যাখো ধুসরিত ধরাতল।
ছোটে হরিণীর দুটি চোখ আর বেধে যায় রসাতল।
কবি ডুব মারে রসাতলে—কবি তুলে আনে ঘোড়াদিন।
কবি ঘাড় গুঁজে লিখে লিখে একা শোধ করে সব ঋণ।
প্রিয় ভাষা তরী ভেসে আসে। কবি ঘেমে নেয়ে টানে গুণ।
বুকে অবিরত কড়া নাড়ে এক ভালোবাসা গুনগুন!
ঢেউ
মন নদীটি একলা তো নয় ওই দ্যাখো একতারাও
আর ঘোরে এক নীল পাখি বন, দেখবে যদি দাঁড়াও!
কী দেখছো কী ফুলের সাগর? আঁকছো ও মুখপাতার?
এমনি করেই রোজ প্রিয় ভোর দেয় জেগে ডুব-সাঁতার!
দাঁড়িয়ে থাকো ছবির মতন, নাচ দ্যাখো নাচ তুলির!
কী খুশি আজ হারিয়ে যাওয় খেলনা পুতুলগুলির!
সে জোছনা ঢেউ ঘর ছুঁয়েছে তোমার এবং আমার!
কাল শিখেছি যার কাছে গান পাহাড় থেকে নামার!
পাগলি তোকে
পাগল বলেই চাঁদের পাহাড়। ছুটছি নেশায়। অবোধ চোখে
তুই বাঁধা থাক। ভুলছি না আর আঁকছি পাতায় পাগলি তোকে।
তোর দেহে যে টগর ভাষা এইতো মনের দুয়ার খুলে—
ভোর থেকে ভোর বেড়ায় নেচে নগর গাঁয়ের পথটি ভুলে।
এইতো আমার মাটির শরীর। এইতো আমার মনের তুলি,
তারায় তারায় ছড়িয়ে রাখে কিশোর বেলার মোহরগুলি!
মাছরাঙা মন বুকের ভেতর ছড়ায় পালক বুঝতে পারি,
তুই যে আমার মেঘপাতা গান তুই যে আমার মেঘনা শাড়ি।
তোর মায়াতেই আকাশ হলুম। তোর মায়াতেই হলুম ঘুড়ি।
উড়তে উড়তে পেলুম খুঁজে সেই হারানো ভূতুমপুরী।
ভুতুম পুরীর চিক চিকে ঢেউ ঘুম এনে দেয় গভীর চোখে।
ঘুমের ভেতর কেবল দেখি—ঠিক বলেছিস পাগলি তোকে!
জয়
রাতের মতন জেগে থাকে চিলেকোঠার ঘর ।
এবং কবির মাথায় বাড়ে কালবোশেখির ঝড়!
চায় কী কবি? নিজেই নিজের ছিঁড়তে থাকে চুল!
চিলেকোঠার ঘরখানি তার দুঃখতে মশগুল!
ঘরের ভেতর শব্দ নাচে, কবির চোখে জল!
ভালোবাসার সেই তারাটি হয়েছে উজ্জ্বল!
সেই তারাটি ভীষণ ভালো, সেই তারাটি বেশ
বললে কবি লিখতে থাকো, এইতো রঙের দেশ!
এইতো আমার খুশির জামা, এইতো আমার চোখ;
ছড়িয়ে দিলাম পাতায়, পাতায় তোমারই জয় হোক!
সুখ
তুমি বললেই থামবে নদী, তুমি বললেই চর;
তোমার হাতের তালুর ওপর বসাবে নাচ ঘর!
তুমি ভাবলেই পাগল আছে, তুমি ভাবলেই নেই।
তোমায় কবি ভালোবেসে উড়ছে তো উড়ছেই!
উড়তে উড়তে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষণ্ন নীল চোখ!
তুমি ভাবছো কল্পনা সব? বেশ তবে তাই হোক!
কল্পনাতেই বাঁচুক কবি, একটু দ্যাখাও মুখ!
কবির কাছে স্বপ্নে হাঁটার এই টুকুই তো সুখ!
চাকা
ভোরের আলো, গানের ঝালর, আর কী কী চাও?
বেশ তো নদী ডাকছে তোমায়, চরকি বানাও!
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে!
চরকি হরিণ ঘুরতে, ঘুরতে জুড়েছে নাচ!
পাগল হয়ে দেখছো কাকে দেবদারু গাছ?
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে!
চরকি পিসি, তুলিটা দাও! আঁকবো কি ফুল?
ওইতো ও ঘাস মালীর বাগান, সোনালি চুল।
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে!
চরকি সাঁকো কেমন আছে সেই ছবি গ্রাম?
একটু বোলো, ওকেও ভালোবেসে ছিলাম!
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে!
ও চরকি বোন তোমার এখন ঢেউ গোনা কাজ?
কেউ কাছে নেই, দাঁড়িয়ে একা! কী লিখবো আজ?
চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে, চরকি ঘোরে!
স্বপ্ন
ঝাউ বুঝি এক গ্রাম?
শুনেই ঘোরে, ঘন সবুজ সাগরে ডুবলাম।
ডুবতে, ডুবতে হাঁস।
ঝিনুক কিংবা ঘোড়াও হচ্ছে, ওড়াচ্ছে নীল ঘাস!
ডুবতে ডুবতে মন,
কুড়াচ্ছে মেঘ, পাহাড় চূড়ো । মল্লিকা নির্জন
শব্দ বুনে ঝুপ!
লাফিয়ে পড়ে স্বপ্ন গুলো যে চরে টুপ্ টুপ্-
ঝরছে এবং ঘর
বানিয়ে দিচ্ছে আলোর রাজা এক থেকে পরপর!
ঝাউ বুঝি এক গ্রাম?
শুনেই ঘোরে, ঘন সবুজ সাগরে ডুবলাম!