খুশি
তোমার খুশি ভালোবাসার
দেখালো পথ আলোর,
আমার খুশি রামধনু রঙ,
মেঘ-পালকের ঝালর।
তোমার খুশি গঙ্গাফড়িং
তিড়িং বিড়িং নাচে,
আমার খুশি হারানো ধন
ঝুলছে মোহর গাছে।
তোমার খুশি টুনটুনি-মন
দাপায় সারা-বনে,
আমার খুশি এক মুঠে রোদ
ছড়ায় সবার মনে।
তোমার খুশি ছন্দ-ছড়ায়
হৃদয়কে দেয় দোলা,
আমার খুশি রূপকথাপুর
যায় না সে-দেশ ভোলা!
তোমার খুশি মিষ্টি সকাল
উঠলো পাখি ডেকে,
আমার খুশি টাপুর-টুপুর
জলছবি দেয় এঁকে।
মা
মা যে আমার কাজলাদিদি শোলক বলা
মা যে আমার সন্ধ্যারতির তুলসীতলা।
মা যে আমার পুণ্যতোয়া শীতলনদী
মা যে আমার গায় সুরে গান নিরবধি।
মা যে আমার গল্প-বলা ঠাম্মা-পিসি
মা যে আমার বক্ষ জুড়ে দিবানিশি।
মা যে আমার স্নেহময়ী, অতুল মায়া
মা যে আমার ধরার বুকে সবুজ ছায়া।
মা যে আমার শিউলি সকাল সোনালি দিন
মা যে আমার উত্তরণের বাজালো বীণ।
মা যে আমার ভুবনডাঙার মনোময়ী
মা যে আমার বাংলাভাষা–বিশ্বজয়ী।
মা যে আমার ভালোবাসার লক্ষ হিরে
মা যে আমার অবলা মন পাখির নীড়ে।
মা যে আমার আলোয় ফেরা খুশির হরষ
মা যে আমার কুসুমকলির কোমল পরশ।
মা যে আমার সুখে–দুখে আছে রবে
মা যে আমার স্বপ্ন-দেখার গান শোনাবে।
তুমি যখন
তুমি যখন ব্যস্ত পড়ায়
আমি তখন আঁকি,
টাপুর টুপুর আষাঢ়ে গান
ব্যাঙমা-মন পাখি।
তুমি যখন খেলছ মাঠে
আমি তখন শান্ত,
মনের খাতায় লিখছি ছড়া
কেই বা সেসব জানতো।
তুমি যখন নৌকো বেয়ে
ইছামতীর বুকে,
আমি তখন মায়ের কোলে
থাকি পরম সুখে।
তুমি যখন সঙ্গী নিয়ে
দাপাও সারা-বনে,
আমি তখন সারেগামা
সাধি আপন মনে।
তুমি যখন খেয়ালখুশি
ঘুরছ রঙিন বিশ্ব,
আমি তখন জানলা দিয়ে
দেখছি সবুজ দৃশ্য।
তুমি যখন ভাঙছ নদী–
বুকটা দুরুদুরু!
আমি তখন গড়ছি জীবন
শেষ থেকে হয় শুরু।
একটা ছেলে
একটা ছেলে কল্পনাতে ছবি আঁকে
আকাশ-পারের পরি আঁকে, তরী আঁকে৷
মনের গভীর দুঃখ আঁকে, সুখও আঁকে
সুখের পাশে আঁকে আলোর ঝর্ণাটাকে৷
একটা ছেলে ঘোরেফেরে দাপায় বনে
স্বপ্ন খোঁজে তারই মাঝে আপন মনে৷
আবার কখন সেই ছেলেটাই খুশির বেশে
যায় হারিয়ে আপনভোলা নিরুদ্দেশে৷
একটা ছেলে মনের খাতায় লিখে কী যে?
লিখছে ছড়া ভাবছে যে সব নিজে নিজে৷
ফুল হয়ে সব ফোটে তারা ছন্দ-গাথায়
খুশির আলো দেয় ভরিয়ে রঙিন পাতায়৷
আলোর পাখি
ভাবছি মনে আঁকব আমি
খুশির আকাশ,
হয় না তেমন; হলো দামাল
ঘূর্ণি বাতাস৷
ভাবি আবার আঁকবো রঙে
জীবন-নদী,
মনের মাঝে বইবে সে তা
নিরবধি৷
ভাবনা আমার কেমনতরো
এলোমেলো,
হঠাৎ খুশি সোনারোদের
রঙ ছড়ালো৷
তারই কিছু রঙের আভায়
দিলেম এঁকে,
হল সে এক আলোর পাখি
উঠলো ডেকে৷
স্বপ্ন ছিল
স্বপ্ন ছিল নীল আকাশে উড়ি
মেঘের সাথে খেলবো লুকোচুরি।
স্বপ্ন ছিল সাতসকালে একা
সূর্য হয়ে টানবো আলোর রেখা।
স্বপ্ন ছিল সেই সাঁকোটার মাঝে
ভাঙবো বিভেদ, মিলবো মধুর সাঁঝে!
স্বপ্ন ছিল শিশির হয়ে পাতায়
টুপ টুপ টুপ আলোর গানে মাতাই!
স্বপ্ন ছিল সঙ্গী ছোটোবেলা
আজ নেই সে,হয়েছি একেলা।
স্বপ্ন ছিল সবুজ খুশির বনে
হাওয়া হয়ে বইবো আপন মনে।
স্বপ্ন ছিল ইছামতির বুকে
জোছনা হয়ে ভাসবো মনের সুখে।
স্বপ্ন–কুসুম হলো মনে আঁকা
এসব নিয়েই আঁকড়ে বেঁচে থাকা।