মহাত্মা লালনের মতে, ‘মানুষের মধ্যেই সর্বশাস্ত্রের আধার সে মানুষ রতন’। সেই লালনের ভক্ত কবি এমরান হাসান সিদ্ধ সাধকের মতো পঙক্তি আওরিয়ে ‘হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা’ কাব্য নিয়ে এসেছেন পাঠকদের কাছে। গ্রন্থটি পাঠ করলে বোঝা যায়, এমরান মানুষবেশে বাউল-অন্তর হয়ে আমাদের মাঝে বিরাজ করছেন। কখনো তিনি কবিতায় বলেছেন, ‘রোদ নিভে গেলে ফিরেছ কতটা দূর?’ আবার বলে ওঠেন, ‘কার চোখে স্বপ্নে হানা দেয় লাল পালকের জলপাখির মুখ?’—এ কেমন প্রশ্ন রেখে যান কবি এমরান হাসান! যেমন কখনো তিনি বলে ওঠেন, ‘বোধের দরজা খুলে যায় কবে? এ এক আশ্চর্য বোধ বা চেতন। কারও নেই তো দীর্ঘ ধ্যান মরে যাবার মতোন।’ তবে বলতেই হয় এমরান হাসানের ‘হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা’ কাব্যটি স্বতন্ত্রের দাবিদার।
পৃথিবীর মায়া বড়ই অদ্ভুত। শোকের মায়াও ত্যাগ করা কঠিন ব্যাপার। আনন্দেরও তো মায়া থাকে। এ সকল মায়া কে বা ত্যাগ করতে পারে। আর কেনই বা ত্যাগ করতে হয়। এ বড় বিস্ময় খেলা। এ খেলা তো শুধু একজনই খেলে। তাকে তো ধরা যায় না। দেখা যায় না। শুধু এ ভবের মাঝারে শুধুই খেলা দেখায়। আমরা তো তার খেলনার বস্তু মাত্র। আমরা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য দ্বারা আচ্ছন্ন। এগুলো ছেড়ে গেলে সেই একজনকেই দেখতে পাওয়া যায়। এসব ছাড়তে পারলেই জীবের মুক্তি ঘটে। এমরান হাসানের কবিতায় জীবের মুক্তির একটি অব্যক্ত সুর লক্ষণীয়। এখানে তার ‘মায়াকাল’ কবিতার পঙ্ক্তি তুলে ধরা যাক—
এই মোহ আর ঘুমের আঁচল ছেড়ে যাব কই?
. চোরাচোখের আড়ালে নেচে যাচ্ছে উদ্বাস্তু পায়ের ছায়াক্রমসুখ
দারুণ নষ্ট তার ওড়াউড়িকাল, ধুসর মার্বেলের মতো নিস্প্রাণ
অহেতুক সহ্যের সীমায় রেখে যাওয়া এ অনন্ত সময়।
এমরান হাসানের কবিতায় মরমিবাদ লক্ষ করা যায়। কবি কবিতায় ব্যক্ত করেছেন, কিভাবে এই কায়ায় হাওয়া আসে আর যায়? হাওয়া উড়ে গেলেই কায়া আর থাকে না। কিংবা হাওয়ার এই আসা যাওয়াই জীবের প্রমত্তা নদী বা অনন্ত সময়। কবি প্রশ্ন রাখেন, কে যেন রাত্রি-দিন ডাক দিয়ে যায় চেনা কোনো নামে? এই কে-যেন কে? এর উত্তরই কবি অহর্নিশ খুঁজে চলেছেন তার কবিতার পঙ্ক্তিমালায়। ভাবের সাগরে ডুব দিয়ে কখনো ফেরারি সময়ের কাছে চলে যান। আবার কখনো তিনি নৈঃশব্দ্যের রোদপত্রে তাঁকেই খুঁজে বেড়ান জিরাফের বেশে। তার ‘সুরারোপ’ কবিতায় এ ধরনের ইঙ্গিত লক্ষ করা যায়—
পরম বিস্ময় পাঁজরে নিয়ে আছি হাওয়া আলোর ধাঁধায়
অহেতুক শিহরণের গান ভালোবেসে রৌদ্র পেরুই
আড়াল চোখে জেগে থাকে মোহের ক্লান্তি
মননে মগজে তানপুরা সুর বাজে
প্রাপ্ত হোক অনবদ্য বোধের আরশ তোমার
মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হয়। অমোঘ নিয়তির ঘাড়ে এ এক বিষাক্ত হাওয়ার মতো সকলকে স্পর্শ করে। কবি এমরান হাসান মৃত্যুকে বলেছেন, এ এক অলৌকিক মায়াঘর, অন্ধ অথৈ জল। আবার তিনি মৃত্যুকে নীল কফিনের শাদাটে আকাশ অথবা মর্তের জরায়ুর সাথে তুলনা করেছেন। কখনোবা তিনি পরাজিত পালক, প্রস্থানের শোক, স্মৃতিছায়ার সুদুরপুর হিসেবে মৃত্যুকে আখ্যায়িত করেছেন। সেই মৃত্যু কবি কামনা করেন যে মৃত্যুতে আত্মার শান্তি নেমে আসে, ভোরের আকাশ ঝলসে ওঠে, সেজদারত ছবি ভেসে ওঠে, আলোর বুকে শস্যগন্ধ্যা ছায়া মেলে দোল খায়। তাই তিনি কামনা করেন পৃথিবীর প্রতিটি ঘরের আঙ্গিনায়। কখনওবা তিনি অস্থির রোদ হয়ে পাপক্রান্ত পায়ের ছায়া ধুয়ে দিতে চান রামক্রীর স্বরে। তাঁর ‘মৃত্যু’ কবিতায় এমন আভাস প্রতিভাস হয়ে ওঠে—
মাতালের দ্রোহ থেকে নির্জলা উপাসনালয়ে ফেরে মানুষ
মর্তের জরায়ু ছিঁড়ে অবিন্যস্ত ভূমিতে, জলে-অতলে
পাতাল পাতাল বলে চেঁচাচ্ছে খালাসি।
এমরান হাসান তার কবিতার মধ্যে কখনো মধ্যরাতের তন্দ্রা, কখনো মহাত্মা লালন আবার কখনো কাঙাল হরিনাথের আত্মায় ভ্রমণ করেন। তিনি বলে ওঠেন এ বিশ্বের তাবৎ আঁধার ছাপাখানার অক্ষরে মায়াবী আলো হয়ে স্বপ্ন নিয়ে আসে। যে স্বপ্নে মানুষ বিভোর হয়ে রোদের শহরে উড়ে যেতে চায়। কবি সেই স্বপ্নকে মানুষের মাঝে তুলে ধরেছেন নির্দ্ধিধায়। কখনো মনে হয় এমরান হাসান ভাববাদ আবার কখনো বা মনে হয় মরমির সুরে অচিন পাখির মতো অবলীলায় গান গেয়ে ফেরেন সৃষ্টির রহস্যঘেরা এই ধরাধামে। কবি পাখিডানা ভোর হয়ে অচেনা শহরের পথশিল্পের প্রচ্ছন্ন সংসারে জোঁড়াসাঁকোর রবীন্দ্রনাথের মতো অথবা লাহিনীপাড়ার গগন হরকরা হয়ে বেঁচে থাকতে চান মানুষের অন্তরে। এ-আকুতি তাঁর পলল ভূমির মতোন উর্বরা। হাওয়ার উৎসবের মিছিলে মিছিলে অন্য এক হাওয়ার নাচন। ঘুমরঙা দিনের কালের ডালায় তিনি দেবতার পূজার অর্ঘ্য হয়ে পবিত্রতার প্রতীকরূপে হৃদয়ে ঠাঁই পেতে চান। তার এই আবেদনের স্বরূপ নিদর্শন ‘শোনো বৃষ্টি, পাখিডানা ভোর’ কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়:
কে যেন শেখায় অচেনা শহরের পথশিল্প, নিখুঁত মানচিত্র
পলল ভূমির মতোন মিহি-নিশ্চুপ ছায়ালিপি
কিম্ভূত উদ্ধৃতি পাঠে মন্ত্রমুগ্ধ রোদ তন্দ্রা শোভিত উন্মত্ত অঙ্গার।
তাঁর ‘তীর্থকালের গান’ কবিতা থেকে এ আহ্বান পাই—
কবির আকুল আবেদন, চিঠির সুঘ্রাণ হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান। চিঠি তো মানুষের নতুন খবর নিয়ে আসে। হোক সে ভালো বা সুখের খবর, না হোক যন্ত্রণার খবর। অচেনা শহরের ভালোমন্দ অথবা প্রচ্ছন্ন সংসারের আটপৌরে কথামালা শুনতে কবির অন্তর যেন ব্যাকুল থাকে। রোদ তো সংসারের সুখের উপমা। সেখানে মায়াবী রোদ বলতে বোঝানো হচ্ছে সুখের মধ্যেও যেন আরো উন্মাতাল সুখের জোয়ার বয়। অচেনা শহরগুলো যেন সুখের আরশ নামায়। চিরায়ত ভাতের সৌরভ যেন নেমে আসে মানুষের সংসার নামক মানচিত্রে। এটাই এমরান হাসানের ক্ষুধার্ত শ্লোগান। তাইতো কবি ‘তীর্থকালের গান’ কবিতায় আকুল আবেদন রেখেছেন মানুষের অন্তর-জমিনে,
দৃষ্টি খুঁড়ে পাই যদি পানামের পথ, সুবর্ণ নগর।
দু’হাতে মাটির সুবাস
রোজ রাতে চেতনালয়ে যাই প্রতুল আশ্চর্যের মোহে
আরো কিছু মুগ্ধতা দিয়ো নিরন্ন সংসার;
. বোধের কাঠপেন্সিল ক্ষয়েছে ভুল উপসংহারে।
এসব খোঁজার রঙিন স্বপ্নের মাঝেও ভ্রম এসে কবিকে দ্বিধান্বিত করে তোলেন। তিনি মনের অন্তরে বলে ওঠেন, এগুলো কি আসলেই নিছক চাওয়া! ভাবনার জমিন খুঁড়ে উঠে আসে সবুজ অন্ধকার। যার তরে নিঃসঙ্গ রঙিন রোদ্দুর কখনও পরাজিত পালক কখনও বাসনার ঘর-সংসার হয়ে উড়াল দিতে চান। কবির কাছে জীবনের রহস্য এক সময় মনে হয় মিথ্যে সান্ত্বনা আবার অন্য সময় মনে হয় জীবনের রহস্য মানে মায়ের আঁচল বা প্রজাপতি ফাগুন। যাপিত সময়ের নিস্তরঙ্গ ধারায় জীবন যেন এক অলৌকিক বয়ে চলা নদী। সেখানে বিস্তর স্বপ্ন্নের রঙ খেলা করে, ভেসে যায় চোখের কোণায় ঘাসফড়িংয়ের দল, থই থই জোছনাপ্লাবন, বসন্তের সোনাঝরা রোদ আর নীল নীল আকাশ। অবিরল মায়াবী পালকের আদর যেন সোহাগী স্বপনের সাজঘর, কালের মুখরতার হই হুল্লোড়। তবুও কেঁপে ওঠে হৃদয়ের রক্তধারার শিরা উপশিরা। এসব কি মঞ্চের মুখরতা! তাই তিনি ‘বিভ্রম’ কবিতায় পাঠকের কাছে প্রশ্ন রেখে যান-
গাণিতিক পাঠ ছেড়ে গেছে সজ্জিত মুখের কৌশল।
. দেখা হয়নি দেয়াল ঘড়িটির ছায়া।
. ভ্রমণবৃত্তান্ত শেষে ঢের দূরত্ব নিয়ে গেছে উল্টোপথের রথ। খোঁজা হয়নি কিছুই।
কুয়াশার উচ্চারণ ভুলে গেলে কতোটুকু দীর্ঘশ্বাস থাকে বাকি?
এমরান হাসান স্মৃতির দিনলিপি খুঁজে চলেন। তাঁর বহুকালের পুরোনো কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, রমেশচন্দ্র হল অথবা রাউত ভুসুকু’র পদাবলির সবটুকু মনে পড়ে। মনে পড়ে কর্নিয়া জুড়ে আকাশ দেখা, প্রাচীন পাণ্ডুলিপির অক্ষর, নীল নীল অক্ষরের আলো আর লালন ফকিরের গানের চরণ। এমরান হাসান স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে বাদুড় কালের জোছনা সাঁতার দিতে চান। তিনি স্মৃতিবিজ্ঞানের আলোকধারায় নিজেকে সঁপে দিতে চান প্রেমের অসুখে। পুরোনো কবিতার খাতায় খুঁজে পান ভাতের সৌরভ, ফাগুনের মিষ্টি মধুর সুর ও রঙ আর তুলে নিতে চান ফসলের সৌরভ। সবুজ কিশলয় হয়ে স্মৃতির রাজ্যের রাজার মতো নিজেকে সিংহাসনে বসাতে চান শাদা ভাতের গল্পের অক্ষরে। তিনি ‘দিনান্তের খেরোখাতা’ কবিতায় উচ্চারণ করেন—
চকচকে ধোঁয়াটে কফির মগে তামাকগন্ধী ঠোঁট
নিঃসঙ্গ ডুবুরির মতো ডুবিয়ে
একমনে পড়ে যাবো কালমার্কস, ডিরোজিও কিংবা সিগমুন ফ্রয়েড
মগজের উড়ালপথে চুপচাপ বেজে যাবে রাউত ভুসুকুর পদাবলি।
এমরান হাসানের কবিতা পরাবাস্তবাদী। তাঁর মন-প্রাণ-অন্তর এক অচেনা পৃথিবীর খোঁজে নিরন্তর ছুটে চলে। সেখানে পিদিম জ্বলে থাকে ভালোবাসার সলতেয়। হাওয়াদের ওমে চির ফাগুন বয়ে যায়। কখনও কবির কবিতাকে মনে হয় আলো-আঁধারীর প্রণয়। সেখান থেকে কবিতার রস বের করে নিতে হয় পাঠকদের। কবিতার ভিতর যেন জীবনের আর্তি লুক্কায়িত। কবিতার আঁধারী ভেদ করে আলোয় পৌঁছালে মনে হয়, কবিতার সবটুকু রস পাঠক নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারে। কবি কবিতার অঙ্গে মেখে দিয়েছেন অলঙ্কারের সাজসজ্জা। উপমার বাগানে জড়িয়ে আছে যেন কবিতার দেহ-অঙ্গ। এমরান হাসান কবিতার যাপনদৃশ্যের সঙ্গে ঘর-সংসার সাজিয়েছেন। তাঁর ‘কারুকা-করুণরঙা’ কবিতা পাঠ করলে আমরা এই আহ্বানই পেয়ে থাকি—
. শেখা হলো পরাস্ত বিপ্লবের পাঠ
মুগ্ধ পরমায়ু যতোটুকু ছিল নিকেশের কালে
পারম্পরিক মতবিরোধ কিংবা পরম্পরায়
দূরত্ব যোজন জেনেও সে পথেই নেমেছে জীবন।
কবি এমরান হাসান মৌন শহরকে ভোরবেলার সাথে তুলনা করেছেন। কবি বলেছেন মৌন শহরের পালকের ঢেউ যেন প্রলুব্ধ ছায়া, দোয়েলের ডানা-গদ্য অথবা বাতাসের দোলায় হাওয়াই রুমাল। এ যেন ভোরের রোদের সাথে বাতাসের মিতালী, সবুজ ফসলের সকাল নতুন জীবনের সুরেলা গান। দোয়েল শরীরের পাখিডানা দিন। নতুন ভোরের পাখায় আর এক নতুন জীবন। এ জীবন সতেজ, সবুজ আর স্বপ্ন ও প্রত্যয়ের। আটপৌরে জীবন নয়। স্বপ্নের উড়াল দিন। কবি ‘ভৌরগুলো মৌন শহরে’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন—
মুগ্ধ ভোরের গানেই জাগে প্রাচীন শহর
ঢের আগে ডানা ঝাপটায় দোয়েল শরীর
মুখস্থ গলির বাঁকে নামে রোদের হুল্লোড়
জীবনের গান গাইতে গাইতে আড়মোড়া ভাঙে মধ্যরাতের গণিকা।
এ গ্রন্থের শেষ কবিতার নাম ‘অতলান্তিক’। কবি এ কবিতায় পরাজিত জীবনের প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত করেছেন। জীবনের শেষাংশে এসে মনে হয় জীবন যাপনের সবটুকুই ভুল। এ জীবন শুধু মায়ার জগৎ। নিছক জীবনের ছবি এঁকে কবি এমরান হাসান কবিতায় বলেছেন, যেন কেউ নেই থাকে না কেউ। স্মৃতির কক্ষপথে হেঁটে যাচ্ছে কবে, কোন কালে কেউ। অনন্ত গহিনে যাই যতবার ফিরে দেখি নীল নীল প্রশ্বাসের ভাস্কর্য। ‘অতলান্তিক’ কবিতায় তিনি ব্যক্ত করেছেন—
ভালোবাসা রয়ে যায় মুখোশহীন, রঙহীন বোবা ছায়া ঘিরে
যাপনের জীবন মরে গেছে শুনি
ভালাবাসা পুস্পপ্রহরের শোরগোল মুছে চোখ খোলে সবুজ অজগর।
কবি এমরান হাসান তাঁর এ কাব্যে কবিতাগুলোতে উপমা ও অলঙ্কার হিসেবে কবিতায় জড়িয়েছেন হাওয়াদের ওম, ভালোবাসার রঙ, গল্পের পিদিম, জলের আহ্বান, জলের শপথ, পাহাড়ি মৌনতা, লাটিম-শরীর, সবুজ অন্ধকার, আনন্দিত জোনাকি, গল্পের কুয়াশা, মর্তের জরায়ু, ফুল পোড়াবার দিন, জলের সুবাস, জ্যামিতিক সুর, ঘুমের আঁচল, অন্ধ চড়ুই, অসভ্য সুন্দর, মেঘ-সংসার, বৃক্ষ বয়স, চিঠির সুঘ্রাণ, প্রচ্ছন্ন সংসার, ধুসর শৈশব, ক্ষুধার্ত স্লোগান, ভুল উপসংহার, ঘুমরঙা দিন, ভূমির গান, সোলেমানি চাবুক, সময়ের বিচ্ছেদী প্রাণ, দীর্ঘশ্বাসের ফিরিস্তি, অনুজ্জ্বল চোখের সাহস, রঙহীন বোবা ছায়া, শরীরী সুবাস, আয়েশের পেলব আঁচড়, কালের তানপুরা, দেহান্তরী গান, শিব-সন্ধ্যা ইত্যাদি।
আধুনিক বাংলা কবিতার দিব্যজগতে এমরান হাসান নতুন আঙ্গিকের কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছেন পাঠদের কাছে। তাঁর এ ধরনের কবিতা এই সময়ে নতুন কাব্যস্বরের দাবিদার। তাঁর কবিতায় মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অবচেতন মনের সৌন্দর্য, বাস্তবতা, মনের অব্যক্ত সুর-ছন্দবোধ, কষ্ট, যন্ত্রণা, ভালোবাসা, ঘৃণা, হিংসা, জিঘিংসা, ক্রোধ, ভয়, বিস্ময়, ক্ষোভ প্রধান্য পেয়েছে। তিনি কবিতায় নতুন জগতের সন্ধান করেছেন অহর্নিশ। জীবনবোধের এক অচেনা স্বরূপ উন্মোচন করতে চেয়েছেন বাউলবেশে মরমীসুরের মূর্ছনায় বারংবার। কখনও তিনি ভাবোবেগে আকুল আবার কখনো তিনি কবিতায় অরূপ রতনের সন্ধান করে চলেছেন আলো-আঁধারির সুর ছন্দ খেলায়।