গবেষণা তো অনেকেই করেন। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা কিংবা ব্যক্তিগত গবেষণার গঠনশৈলী ভিন্ন হতে পারে। সেসব আলোচনায় যাচ্ছি না। এবার শিক্ষক ও গবেষক জান্নাতুল যূথীও গবেষণায় শ্রম ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প নিয়ে গবেষণা করেছেন। আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে বহুল চর্চিত বিষয়। তাঁকে নিয়ে গবেষণার ব্যাপ্তি বিশাল। এরপরও শুধু রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। তার গবেষণার বিষয় ‘রবীন্দ্রগল্পে সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’। যা বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তার বইয়ের আলোকে রবীন্দ্রগল্পের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত কী হতে পারে বা কেমন ছিল, তা নিয়েই এ লেখার অবতারণা।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সমৃদ্ধ শাখা ছোটগল্প। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) কনিষ্ঠ এ শাখার প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা। তাঁরই হাতে বাংলা ছোটগল্পের পথ সুগম, মসৃণ ও কণ্টকমুক্ত হয়। তাঁর গল্পে উঠে এসেছে মানবজীবনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মানুষ ও প্রকৃতির অপরূপ মেলবন্ধন। তিনিই ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রামীণ জীবন, শহুরে জীবন, সামাজিক নানা অবক্ষয়, জমিদার ও ভৃত্যের সম্পর্ক, পাওয়া না পাওয়ার চিত্র। বহু চরিত্রের সুনিপুণ সমাবেশে বাস্তব অভিজ্ঞতার জীবন্ত রূপ উপহার দিয়েছেন। তাঁর অপরিসীম জীবনবোধ, সমাজ-দর্শন আজও তাঁকে অমর করে রেখেছে।
গবেষক ‘রবীন্দ্রগল্পে সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’ বইটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুলোর বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। গল্পগুচ্ছে কিভাবে তিনি সমাজের মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র দেখিয়েছেন, তার আলোচনা বইটিতে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এ ছাড়া গল্পগুলো থেকে পাঠক কী ধরনের ধারণা লাভ করতে পারে, তাও প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে। বইটির প্রথম অধ্যায়ে ‘বাংলা ছোটগল্পের উন্মেষ ও রবীন্দ্রনাথ’, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘রবীন্দ্রগল্পে নিম্নবর্গ’, ‘তৃতীয় অধ্যয়ে ‘রবীন্দ্রগল্পে মনস্তত্ত্ব’, চতুর্থ অধ্যায়ে ‘রবীন্দ্রগল্পে মানুষ ও প্রকৃতি’, পঞ্চম অধ্যায়ে ‘রবীন্দ্রগল্পে নারী-ভাবনা’, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ‘রবীন্দ্রগল্পে গ্রামীণ ও নগর জীবন’, সপ্তম অধ্যায়ে ‘‘তিনটি গল্প ‘শাস্তি’ : পুরুষতন্ত্রের নিগড়ে নারীজীবন, ‘স্ত্রীর পত্র’ : নারীর প্রতিবাদ, প্রতিবাদী নারী, ‘জীবিত ও মৃত’: সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’ এবং সবশেষে উপসংহার ও গ্রন্থপঞ্জি উল্লেখ করা হয়েছে।
জান্নাতুল যূথী তার প্রতিটি প্রবন্ধে তথ্য ও তত্ত্বের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। গবেষণাকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করতে বিভিন্ন সূত্রের উল্লেখ করেছেন। প্রথম অধ্যায়ে ছোটগল্পের প্রাথমিক পর্যায় ও রবীন্দ্রনাথের আর্বিভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘বাংলা ছোটগল্পের উন্মেষ ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন—
‘ছোটগল্পের জগতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠা সহজ ছিল না। জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ-সূত্রে জমিদারি দেখভাল করার উদ্দেশ্যে তাকে পাড়ি জমাতে হয়। কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে অপরূপ রূপ-মাধুর্যের প্রেমে পড়ে যান তিনি। বাংলার হতদরিদ্র পল্লীর সহজ-সরল মানুষ, পদ্মার উন্মত্ততা, মায়াময় প্রকৃতি, মানুষের নিবিড় মমতা, দুঃখ-কষ্ট তাকে এতটাই আবেগ আপ্লুত করে যে, তিনি গল্পের উপদান হিসেবে এগুলোকেই কাজে লাগিয়েছেন। বাংলার পল্লীচিত্র রবীন্দ্রগল্পে থরে-বিথরে সাজানো।’
বলা যায়, বাংলা ছোটগল্প রবীন্দ্রনাথের হাতেই পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তাই তাকে বাংলা ছোটগল্পের জনকও বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ নির্মিত ছোটগল্প এখনো নির্মাণশৈলীর সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত বলে মনে করা যেতে পারে।
রবীন্দ্রনাথের এই সৃজনশীলতায় মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে জীবন্ত সত্তা খুঁজে পাওয়া যায়। গল্পে মানুষ ও প্রকৃতির অভিন্ন সংযোগ ঘটানো রবীন্দ্রনাথের মতো প্রকৃতিপ্রেমিকের পক্ষেই কেবল সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হলেও তাঁর গল্পে নিম্নবর্গ এসেছে বিভিন্ন উপলক্ষ ও উপাদান হিসেবে। তিনি মাটি ও মানুষের নিকটবর্তী হয়েই জমিদারি পরিচালনা করেছেন। ফলে অন্ত্যজ শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত তার গল্পে উঠে এসেছে আপন মহিমায়। এ অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পে নিম্নবর্গের জীবনকে কীভাবে তুলে ধরেছেন। তাদের জীবনযাপন, টানাপোড়েন। প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সবই স্থান পেয়েছে আলোচ্য অধ্যায়ে। তাই তো ‘রবীন্দ্রগল্পে নিম্নবর্গ’ প্রবন্ধে লেখক বলতে চেয়েছেন—
‘রবীন্দ্র ছোটগল্পে নিম্নবর্গের জীবন একক কোনো গণ্ডিতে বাঁধা নেই। বরং তিনি উচ্চশ্রেণির চেয়ে নিম্নবর্গের প্রতি বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ বাংলার আপামর জনসাধারণ নিম্নবর্গের অন্তর্ভুক্ত। কেউ অর্থের ভিত্তিতে নিম্নবর্গের প্রতিনিধি আবার কেউ ধর্মীয় দৃষ্টভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে মানবসমাজসৃষ্ট নিম্ন শ্রেণি। গল্পে যেমন এসেছে চাষা, ভূমিহীন প্রজা, চাকর, দাসী, মাস্টার, তেমনি এসেছে বোষ্টমী, ডাকাত, চোর, তাঁতি, জেলে, মজুরও। বাদ যায়নি ডোম, মুচি, মেথরের কথাও। রবীন্দ্রগল্প তাই নিম্নবর্গের জীবনচেতনা বাদ দিয়ে নয়। বরং নিম্নবর্গের প্রতিনিধিত্ব করেছে তার প্রায় বেশিরভাগ গল্প। সামাজিক এসব স্তরবিন্যাসে ভারতীয় সংস্কৃতির সামগ্রিক একটি চিত্রও উঠে এসেছে। এসব গল্পের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেছেন সহমর্মিতার বাণী, বাড়িয়ে দিয়েছেন বঞ্চিত মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত। নিঃস্ব-রিক্ত মানুষদের মনে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করেছেন গল্পের ভেতর দিয়ে। তাঁর শ্রেণিচেতনার দ্বারা তিনি ঘুণধরা, পচাগলা সমাজের কুৎসিত চেহরাকে তুলে ধরেছেন।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনস্তত্ত্ব ফুটে উঠেছে তাঁর গল্পে। ফলে মানুষের নানাবিধ জটিলতা, পাওয়া-না পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রাধান্য পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পে মনস্তত্ত্ব কীভাবে এসেছে, মানুষের জীবনযাপন, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বর্ণনা স্থান পেয়েছে। সেসবের বিশদ আলোচনা স্থান পেয়েছে লেখকের গবেষণায়। ফলে ‘রবীন্দ্রগল্পে মনস্তত্ত্ব’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন—
‘রবীন্দ্রগল্পের মূল উপদান মানুষ-প্রকৃতি, গ্রামীণ জীবন, নাগরিক জীবন, অতি প্রাকৃত ঘটনা, রাজনীতি, মনস্তাত্ত্বিক দিক। গল্পের কেন্দ্রে যেহেতু মানুষের বসতি, তাই তার চাওয়া-পাওয়া, না-পাওয়ার বেদনা, দুঃখ-দুর্দশা, সাংসারিক জটিলতা বহুবিধ বিষয়ের সাক্ষাৎ ঘটেছে রবীন্দ্রগল্পে। রবীন্দ্রনাথের একাধিক গল্পে মনস্তত্ত্বের সন্ধান মেলে বিশেষভাবে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘ভিখারিনী’। প্রকাশিত হয়েছিল ১২৮৪ বঙ্গাব্দে। এটি প্রথম গল্প হলেও মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার পূর্ণ সমাগম এখানে ঘটেছে। লেখক সচেতনভাবেই মনের গহীনে ঢুকে বের করতে চেষ্টা করেছেন আত্মিক জটিলতা! যদিও তার সুরাহা করেননি।’
যে কোনো গল্পের প্রধান উপাদান হয়ে ওঠে মানুষ ও প্রকৃতি। এর ব্যতিক্রমও কিছু থাকতে পারে। মিথ, পুরাণ বা অতিপ্রাকৃত গল্পে মানুষ ও প্রকৃতি না থাকলেও গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট হয় না। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পে মানুষ ও প্রকৃতি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে। তিনি বিশেষ গুরুত্বও দিয়েছেন তাতে। সেসবের আলোকেই ‘রবীন্দ্রগল্পে মানুষ ও প্রকৃতি’ প্রবন্ধে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন—
‘রবীন্দ্রগল্পে প্রকৃতি ও মানুষ অভিন্ন। তাঁর প্রায় গল্পে প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধন এতটাই নিবিড় যে, একটি থেকে আরেকটি আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। তার প্রকৃতি প্রেম এক অনবদ্য রূপ পেয়েছে। রবীন্দ্রগল্পের মতো এত নিবিড়তায় খুব কম সাহিত্যিক প্রকৃতি উপস্থাপন করেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এই মেলবন্ধন স্বর্গীয় আবেশ জোগায়। এতটা পরিশীলিত, কোমল ছোঁয়া পাওয়া যায় প্রকৃতি-মানুষের সংযোগে, তাতে মনে হয় হৃদয়ে একটা কোমল পরশ জাগে।’
রবীন্দ্রনাথের গল্পে প্রকৃতি ও মানুষের প্রেম, বন্ধুত্ব বা মেলবন্ধনও ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথের এই সৃজনশীলতায় মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে জীবন্ত সত্তা খুঁজে পাওয়া যায়। গল্পে মানুষ ও প্রকৃতির অভিন্ন সংযোগ ঘটানো রবীন্দ্রনাথের মতো প্রকৃতিপ্রেমিকের পক্ষেই কেবল সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্প সাহিত্যে পরিপূর্ণ পরিচর্যাও করেছেন। তার প্রমাণ আজও রবীন্দ্রচর্চা। একথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, বাঙালি যতদিন পৃথিবীতে টিকে থাকবে, রবীন্দ্রনাথের নামও ততদিন অম্লান ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। কারণ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে।
গল্পের কাহিনি নির্মাণ বা বিন্যাসে নারী যেন অপরিহার্য অংশ। কোনো লেখকের গল্পেই তা অস্বীকার করার উপায় নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তা করেননি। তিনিও নারীকে করেছেন মহিমাময়। ছলনা কিংবা প্রেমের আবর্তে নারীকে উপস্থাপন করেছেন অবিস্মরণীয়ভাবে। তাই তো ‘রবীন্দ্রগল্পে নারী-ভাবনা’ প্রবন্ধে দেখতে পাই—
‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প নারী-অন্তপ্রাণ। তাঁর বেশিরভাগ গল্পই নারীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নারীর জীবনযাপন, অবহেলা, অন্যায়, অবিচার, শোষণ সর্বোপরি নারীর প্রতিবাদ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আবহমান বাঙালি নারীদের চিরন্তন রূপ ব্যক্ত হয়েছে। সৃষ্টিলগ্ন থেকে পুরুষেরা নারীদের ভোগের সামগ্রী হিসেবে গণ্য করে এসেছে।। নারীর নিজস্ব মত-পথের কোনো গুরুত্ব পরিবার-সমাজ কেউ দেয়নি। রবীন্দ্রযুগ বহু আগে পার হলেও আজও সমাজে নারীরা অবহেলিত। নারীর প্রাপ্তি যেন শুধু দুঃখ-কষ্ট। আজীবন পুরুষের আজ্ঞাবহ দাসী হয়ে জীবন পার করা। ‘পতিই সতীর গতি’—এই বাণী বুকে ধারণ করে জীবন নির্বাহ করতে হয় নারীকে। কিন্তু রবীন্দ্রগল্পে নারীদের অবস্থান তারা নিজেরাই তৈরি করতে চেষ্টা করেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব নারী চরিত্র সমান প্রতিবাদী এমন নয়, সবাই আবার নীরব ভূমিকাও পালন করেনি। নারী যেন মূক হয়ে জীবন পার না করে, সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।’
গ্রামীণ ও নগর জীবন রবীন্দ্রগল্পের আরেকটি প্রধান উপজীব্য। তাঁর প্রথম পর্বের গল্পে পল্লিকেন্দ্রিক জীবনের রূপায়ণ ঘটলেও দ্বিতীয় পর্বে তিনি নগর জীবনকে তুলে ধরেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। শিলাইদহ, শাহজাদপুর প্রভৃতি জায়গায় কাজের সূত্রে বসবাস করেছেন কবি। ফলে গ্রামীণ জীবন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বয়স অল্প থাকায় বাংলাদেশের মাঠে-ঘাটে তিনি ভ্রমণ করেছেন। সেই আনন্দের পূর্ণতায় গল্পগুলো রচনা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘রবীন্দ্রগল্পে গ্রামীণ ও নগর জীবন’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন—
‘বাংলাদেশের নদী বেয়ে গ্রামীণ জীবনের ভিন্ন ভিন্ন লীলা অনুভব করেছেন। আর পরবর্তী সময়ে সুখ-দুঃখের এসব বিচিত্র অভিজ্ঞতা তিনি রচনাশালায় কাজে লাগিয়েছেন। গল্পগুচ্ছে কোনো সামন্ততন্ত্র-রাষ্ট্রতন্ত্র আলোচিত হয়নি বরং গল্পে গ্রাম বাংলার প্রাত্যহিক সুখ-দুঃখ প্রতিবিম্বিত হয়েছে। গ্রাম-গ্রামান্তরের পথে ফেরা এসব বিচিত্র চিত্র প্রথম পর্বের গল্পের প্রাণ। আবার দ্বিতীয় পর্ব শহর অভিমুখী। নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবন এই পর্বের গল্পে প্রাণ সঞ্চার করেছে। ফলে রবীন্দ্রগল্পে গ্রামীণ ও শহর জীবন কোনোটারই গুরুত্ব কম নয়। গ্রামীণ জীবনে রোমান্টিকতা বিরাজ করলেও শহরকেন্দ্রিক জীবন ক্রমশ বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক জীবনকে দেখাতে তুলে ধরেছেন কলকাতা মহানগরীকে। মানুষের টিকে থাকার লড়াই, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন টানাপোড়েন, স্বদেশি আন্দোলন প্রভৃতি বিষয়। উনিশ শতকের কলকাতা মহানগরীর কদর্য রূপ। এই অধ্যায়ে রবীন্দ্রগল্পে গ্রামীণ ও নগর জীবন কিভাবে উপস্থিত হয়েছে, তা বিশ্লেষণের চেষ্টা চালাবো।’
সপ্তম অধ্যায়ে তিনটি গল্প বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—‘শাস্তি’, ‘স্ত্রীর পত্র’ এবং ‘জীবিত ও মৃত’। গল্প তিনটিকে বিশ্লেষণ করেছেন সুচারুরূপে। এই অধ্যায়ে তিনটি গল্পের সামাজিক প্রেক্ষাপট, মনস্তত্ত্ব ও নারীবাদ বিশদভাবে বিশ্লেষণের প্রয়াস চালিয়েছেন গবেষক। কেননা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে ছোটগল্পের জগতে সোনা ফলেছে। রবীন্দ্রনাথ বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে সুদর্শন, মনোহর পরিপূর্ণ কাঠামো উপহার দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্প সাহিত্যে পরিপূর্ণ পরিচর্যাও করেছেন। তার প্রমাণ আজও রবীন্দ্রচর্চা। একথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, বাঙালি যতদিন পৃথিবীতে টিকে থাকবে, রবীন্দ্রনাথের নামও ততদিন অম্লান ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। কারণ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। এ গবেষণা শেষ হওয়ার নয়। জান্নাতুল যূথী যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা হয়তো নতুন নয়। তবে তার দৃষ্টিভঙ্গি একং আলোকপাত নতুনত্বের দাবি রাখে।
রবীন্দ্রগল্পে সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত
জান্নাতুল যূথী
প্রচ্ছদ: কাব্য করিম
প্রকাশক: দৃষ্টি
প্রকাশকাল: জুলাই ২০২২
মূল্য: ৩০০ টাকা মাত্র।
মোবাইলফোন নম্বর: ০১৯৪৬ ৮১ ৫১ ২৫