আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধাভোগী সমাজে মানুষের বড় অংশটাই ধর্মমূর্খ। একদল আছে, যারা ধর্মের জন্য হানাহানি করে; তারা ধর্মকে দেখে খণ্ডিত দৃষ্টিতে; আরেক দল আছে, যারা ধর্মকে দেখে দূর থেকে ঘৃণার চোখে। এই দুই দলই ধর্মকে দেখে অন্ধের হাতি দেখার মতো করে।
আরেক দল আছে, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, ব্যবসা করে এবং পূর্ববর্তী দুই দলকে ব্যবহার করে কূটকৌশলে। আর এই তিন দলের বাইরে আছে কারও সাতপাঁচে না-থাকা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। অবশ্য তারাও ওই তিন দল কর্তৃক সৃষ্ট টানাটনিতে মাঝে মাঝে বিড়ম্বিত বোধ করে। একধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে অন্যধর্মের মানুষের ঘৃণা এবং ধর্মহীন বা নাস্তিক বলে পরিচিতদের কারেও কারও ধার্মিকদের বিরুদ্ধে প্রচারিত ঘৃণা—এসবের পেছনে কাজ করে মূলত ধর্মবিষয়ক অজ্ঞতা। জ্ঞান নয়, অজ্ঞতাই ঘৃণা ছড়ায়।
প্রসঙ্গত, মানুষ ধর্মকে সমাজজীবন থেকে তাড়াতে পারেনি, নিঃশেষে বিদায় জানাতে পারেনি; হয়তো-বা সে ততখানি চায়ওনি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চূড়ান্ত উন্নতির এই যুগেও পৃথিবীর মানুষ মূলত ধর্মের দ্বারা বিভক্ত এবং চালিতও অনেকখানি। এই সময়ে সবচেয়ে বিতর্ক হয় ইসলাম ধর্ম নিয়ে। কিন্তু যারা বিতর্কে জড়ান অধবা হানাহানিতে, তারাও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী নন, সচেষ্ট তো ননই। এমন প্রেক্ষাপটে রচিত কথাসাহিত্যক জাকির তালুকদারের ‘মুসলমানমঙ্গল’ উপন্যাস।
‘মুসলমানমঙ্গল’ একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস, যা পড়ে হয়তো-বা উপন্যাসের লেখককে নাস্তিক অথবা মুরতাদ খেতাব দিতে চাইবে অল্পবিদ্যায় ভয়ঙ্কর হয়ে থাকা কাঠমোল্লার দল। একইসঙ্গে একইভাবে মৌলবাদের মুখপাত্র বলে ‘ছি’ ‘ছি’ করে উঠবে মুসলমানদের যাবতীয় জীবনাচরণকে মৌলবাদ বলতে অভ্যস্ত ইসলাম বিষয়ে মূর্খ স্বঘোষিত প্রগতিশীলদের একটি অংশ। তুলনায় চলে আসতে পারে কাজী নজরুল ইসলাম; যাকে গোঁড়া মুসলমানরা বলতেন কাফের আর গোঁড়া হিন্দুরা গালি দিতেন যবন বলে। ফলে উপন্যাসটির জন্য নন্দিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন ‘অবরণ্যে বরি’ হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই সচেতনভাবে রচিত ‘মুসলমানমঙ্গল’। এটি একটি সাহসের কাজ, বলা যেতে পারে; অনেকখানি দুঃসাহসেরও। লেখকদেরও দু-একজন মাঝে-মধ্যে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো কাজ করে বসেন। জাকির তালুকদার তেমনটাই করেছেন।
তারপরও পাঠকমন এগিয়ে যেতে চায় সামনের দিকে—কী আছে উপসংহারে তা জানার আগ্রহে ও আকর্ষণে। তিনি ইতিহাস বর্ণনায় ঝুঁকি নিয়েছেন।
বেশ কয়েকবছর আগে আমি জাকির তালুকদারের ‘বিশ্বাসের আগুন’ গল্পটি পড়ে একইসঙ্গে বিস্মিত, ব্যথিত ও আনন্দিত হয়েছিলাম। তবে সবচেয়ে বেশি হয়ে ছিলাম আশান্বিত। লেখালেখির শুরুতে ব্যতিক্রমধর্মী দুঃসাহসী কিছু করতে পারেন যারা, তাদের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করা যায়। জাকিরের অধিকাংশ বই-ই আমার সংগ্রহে আছে কিন্তু সববই এখনো পড়ে উঠতে পারিনি। কয়েকদিন ধরে তার ‘মুসলমানমঙ্গল’ উপন্যাসখানি পড়ছিলাম। পড়া শেষ হয়েছে। কিন্তু উপন্যাসখানি পড়ে মনের মধ্যে এমন উথালপাথাল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে যে, তা পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। তাঁর ‘বিশ্বাসের আগুন’ ছোটগল্প এবং ‘পিতৃগণ’ উপন্যাস পাঠে তার সম্পর্কে একধরনের ভাবনা জমা হয়েছিল। কিন্তু ‘মুসলমানমঙ্গল’ পড়ার পর মনে হয়েছে তিনি আলাদা, অনন্য। তিনি মৌলবাদী যে নন, এটা সবাই জানেন, কিন্তু তিনি যে হুজুগের স্রোতে ভেসে যাওয়া আধাশিক্ষিত প্রগতিশীল নন, এটা হয়তো অধিকাংশ মানুষ জানেন না। তিনি একজন গভীরচারী মানুষ। তার মন পূর্বধারণাজাত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে লক্ষণীয় মাত্রায় মুক্ত।
প্রচলিত শিক্ষা বা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের অন্ধ অনুগামিত্ব তার নয়। তিনি সবকিছু বাজিয়ে দেখেন; তিনি সবকিছুর বাহ্যিক রূপের সঙ্গে তার আড়ালের রূপটিকে খুঁজে বের করেন। প্রথার মুখে ঝাল খাওয়া তার নয়। প্রচারে প্রতিষ্ঠিত পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাস বা দর্শনকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে না দেখা অবধি তাকে গ্রহণ বা বর্জন কোনোটাই করার পক্ষপাতী নন তিনি।
‘মুসলমানমঙ্গল’ নামকরণটি অভিনব না হলেও অভিনব। আমরা অন্নদামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, সূর্যমঙ্গল, গঙ্গামঙ্গল, শীতলামঙ্গল, লক্ষ্মীমঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, সরস্বতীমঙ্গল, রায়মঙ্গল, কালিকামঙ্গল, সারদামঙ্গল, গৌরীমঙ্গল, দুর্গামঙ্গল, বৃক্ষমঙ্গল, মাহফুজামঙ্গল ইত্যাদির নাম শুনেছি। কিন্তু ‘মুসলমানমঙ্গল’! কারও কল্পনাতে ছিল কি—জাকির তালুকদার এই উপন্যাসটি রচনার আগে? যে মধ্যযুগ ইউরোপের জন্য ছিল অন্ধকার সময়, সেই যুগ মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় (?) ছিল তুলনাহীনভাবে সমৃদ্ধ। আর ইউরোপের আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে মুসলমানদের জীবনে নেমে আসে পশ্চাদপদতার অন্ধকার। মুসলমানগণ নিজেরাও ভুলে যায় তাদের জ্ঞানবিজ্ঞানের গৌরবময় সাধনা ও ঐতিহ্যের কথা (?), অন্যেরা তাদের ওপর চাপাতে থাকে যাবতীয় দোষ ও বদনাম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে এখন পৃথিবীর যাবতীয় অন্ধকারের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হয়। তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে থেকে এবং অন্যদের কাছ থেকে গালমন্দ শুনতে শুনতে বিশ্বমুসলমান আজ নিজেরাও মারাত্মকভাবে হীনণ্মন্যতায় আক্রান্ত ।
‘মধ্যযুগীয় অন্ধকার’ বলতে ইসলামকে বোঝানো হয়, অথচ মধ্যযুগে মুসলমানগণ ছিলেন জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চায় অতুলনীয়ভাবে অগ্রগামী ও সফল (?)। তখন ইউরোপের চার্চ পুড়িয়ে মারতো জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চাকারীদের। সেটা ছিল ইউরোপের অন্ধকার যুগ। মৌলবাদ একটি গালিতে পরিণত হয়েছে আজকাল। আর মৌলবাদী বলতে মূলত ধর্মপ্রাণ অথবা ধর্মান্ধ মুসলমানদের বোঝানো হয়ে থাকে। অথচ মৌলবাদের জন্ম ইহুদি-খ্রিষ্ট ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে এবং তারাই এর চর্চা করে এসেছিল সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রদায়িক হানাহানি , হত্যাকাণ্ড, আগুনে পুড়িয়ে মারা এসবের প্রচলন তখন শুরু হয়। সেক্যুলারিজমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কি কেবল ইসলামের? আদৌ কি দ্বন্দ্ব আছে এই দুটির মাঝে? জিহাদ শব্দটির আসল মানে কি জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ? ইসলামে জিহাদ বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে? খ্রিষ্টানদের ক্রুসেড আর মুসলমানদের জিহাদ কি একই জিনিস? ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্মদাতা কি সত্যিসত্যি মুহম্মদ আলী জিন্নাহ? বৃটিশদের দ্বারা উনিশ শ সাতচল্লিশ সালে ভারত বিভক্ত হওয়ার পেছনে কি মুসলমানরাই দায়ী?
মুসলমানদের আজকের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার জন্য মুসলমানরা নিজেরা কতখানি দায়ী এবং কিভাবে দায়ী? আধুনিকতা, বিজ্ঞান, সেক্যুলারিজম, সাহিত্যসংস্কৃতি এবং ইসলাম কি সহাবস্থানে থাকতে অপারগ? আজ বাংলাদেশে কেন এত কালো বোরকা আর হিজাবের রাজত্ব? বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তনে এনজিওদের ভূমিকা কি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কেন অপছন্দ করে বিশ্বের মুসলমানগণ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিসত্যি গণতন্ত্রের সমর্থক হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র ও একনায়কদের ক্ষমতায় রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কেন? ওসামা বিন লাদেনকে বা তালেবানদের কে সৃষ্টি করেছিল, কেন এবং কেনই-বা তাদের ধ্বংস করতে উড়েপড়ে লেগে আছে একই শক্তি? পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমানদের সংস্কৃতির মিল-গরমিল কোথায়? পৃথিবীর সব মুসলমানই কি ধর্মান্ধ বা মৌলবাদী? বাংলাদেশ মৌলবাদীরা কত শতাংশ ভোট পায়? কোরানের প্রতিটি সুরা ও নির্দেশের শানে নজুল জানার প্রয়োজন কেন? হাদিস নিয়ে সংখ্যাগত এবং বাণীগত বিভ্রান্তির শেষ কোথায়? মুসলমানদের বর্তমান অধঃপতিত অবস্থা থেকে উত্তরণ কোন্ পথে? সেই উত্তরণে নেতৃত্বে দিতে পারে সমাজের কোন্ শ্রেণির বা ধরনের মানুষ? এই সব এবং আরও বহু বিতর্কিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নিয়ে রচিত জাকির তালুকদারের ‘মুসলমানমঙ্গল’ উপন্যাস।
পরিচ্ছন্ন জ্ঞানের অধিকারী শহরের যুবক ইউসুফ আহমেদ, উদারপন্থী জ্ঞানী মওলানা আবদুল খালেক, ব্যক্তিস্বার্থে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে অপব্যবহারকারী মাওলানা শামসুল আলম, অসাম্পদায়িক চেতনার গরিব মানুষ হিন্দুধর্মের অনুসারী ধীমান, বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া ইউসুফের প্রেমিকা হিন্দু ধর্মের অনুসারী যুবতি উপমা, বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে প্র্যাকটিক্যাল ধারণা নিতে আসা মার্কিন যুবতি লিসবেথ এবং ইউসুফের মা—মূলত এসব চরিত্র নিয়ে উপন্যাসটির ঘটনার আবর্তন। প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বভূমিকায় শক্তিশালী। ঘটনার বিস্তার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল বিভিন্ন জেলার গ্রাম থেকে শহর—মূলত চলনবিলের বাতাসছোঁয়া ভূগোল। তবে আলোচনার ভূগোল সারা দুনিয়া এবং বর্তমান থেকে স্মরণকালের অতীত। আলোচনার বিষয় সব প্রধান ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাজনীতি, যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি, দেশভাগ , ধর্মযুদ্ধ ও আরও বহুকিছু।
গল্প বুননে , গল্পের প্রেক্ষাপট , ভূগোল, সময় ইত্যাদি নির্মাণে এবং গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে জাকির তালুকদার নিবিড় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সময়নিষ্ঠতা ও সত্যনিষ্ঠতা বজায় রেখে ৩৫০ পৃষ্ঠার মহা- আয়তনিক উপন্যাসটির পরতে পরতে আকর্ষণীয়তা ও মোহনীয়তার ঐশ্বর্য ভরে দিয়েছেন । পড়তে পড়তে কোথাও কোথাও মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে বটে কিন্তু বিরক্তি আসে না। তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বিস্তৃত বর্ণনা তুলে ধরেছেন মাঝে মাঝে, কোথাও কোথাও ধর্মগ্রন্থগুলোর তুলনামূলক ও সাদৃশ্যসূচক উদ্ধৃতি দিয়েছেন পাতার কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী, তখন একটু ক্লান্তি আসতে চায় বটে কিন্তু তারপরও পাঠকমন এগিয়ে যেতে চায় সামনের দিকে—কী আছে উপসংহারে তা জানার আগ্রহে ও আকর্ষণে। তিনি ইতিহাস বর্ণনায় ঝুঁকি নিয়েছেন। ইসলামের খলিফাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনেক কথা তুলে ধরেছেন, যেসব আগে শোনা হয়নি আমাদের; ফলে এসবের অনেকগুলো মেনে নিতে চায় না মন। আবার সেসব বিষয় তিনি এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার সাহসও হয় না।
ঔপন্যাসিক একটি মহৎমন ও আলোকিত উদ্দেশ্য নিয়ে উপন্যাসটি রচনা করেছেন। ফলে কলাকৈবল্যবাদীরা এই উপন্যাসে নেতিবাচক সামলোচনা করার যথেষ্ট অবকাশ পাবেন বলে মনে হয়েছে।
ইসলামের চার খলিফার গোষ্ঠীপ্রীতিও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে ভয়ঙ্কর সব তথ্য উপস্থাপন করেছেন চরিত্রগুলোর মুখ দিয়ে, যা পড়ে আহত হতে পারে–বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে ধর্ম সম্পর্কে হালকা জ্ঞানের অধিকারী এবং ‘শুনেই ওস্তাদ’ প্রকৃতির লোকজনদের অনেকেই।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বা নায়ক ইউসুফ আহমেদ এক অতুলনীয় সৃষ্টি। পরিচ্ছন্ন বৈশ্বিক জ্ঞান, মাটিবর্তী অভিজ্ঞতা, দিগন্তভেদী দূরদৃষ্টি, উদারতা, মহামানবিকতা, প্রেম, সংযম, একাগ্রতা, প্রত্যাশা , পরিশ্রম, মুগ্ধতাসঞ্চারী ব্যক্তিত্ব সব মিলিয়ে এক অনন্যসাধারণ চরিত্র ইউসুফ; আবার তিনি একইসঙ্গে রক্তমাংসের বাস্তব মানুষ। তিনি রোমান্টিক বাসনাজাত কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়। তেমনি আরেকটি উদার , মানবিক ও সমন্বয়বাদী চরিত্র মাওলানা আবদুল খালেক। আবদুল খালেক মসজিদে ইমামতি করেন। ধর্মকর্ম করেন। কিন্তু তিনি উদারপ্রাণ আলোকিত সত্তার মানুষ। তিনি ধর্মের গভীর ও নিবিড় ইতিহাস জানেন, ধর্মের বাহ্যিক অনুষ্ঠানাদি এবং ভেতরের মর্মবাণীর মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে জানেন, ধর্মের নামে এবং হাদিসের নামে ভুল করে চলে আসা অনেক ভ্রান্ত ধর্মোপদেশ ও বিধিবিধানের অযথার্থতা সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান রাখেন। একজন প্রকৃত ধার্মিক মুসলমান কেমন হওয়ার কথা, তার উজ্জ্বল উদাহরণ মাওলানা আবদুল খালেক।
মাওলানা আবদুল খালেকের বিপরীত চরিত্র হচ্ছে শামসুল আলম—ভণ্ড ধার্মিক, অর্থলোভী , প্রতারক এবং নিজের হীন স্বার্থ উদ্ধারে ধর্মকে অপব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। আজ সমাজের সবখানে শামসুল আলমদের কমবেশি দেখা যায়। ইউসুফের দুলাভাই গ্রামের একজন মাতবর গোছের ধর্ম মেনে চলা মানুষ; কিন্তু তিনি ধর্ম বিষয়ে গভীরে জ্ঞানের অধিকারী নন ফলে ধর্ম বিষয়ে তাকে সমাজের মৌলভি-মোল্লাদের কথাই মেনে চলতে হয়। কিন্তু ইউসুফের মা একজন অসাধারণ গুণের অধিকারী সাধারণ সংসারী মানুষ। তিনি বিদেশিনী লিসবেথকে ইউসুফের সাথে দেখে এবং লিসবেথ একজন আমেরিকান খ্রিষ্টান মেয়ে জেনেও এতটুকু বিব্রত বোধ করেননি বরং তাকে নিজের মেয়ের মতো করে আপন করে নিয়েছেন যা দেখে বাংলাদেশের মুসলমান পরিবার ও নারীদের সম্পর্কে লিসবেথের নেতিবাচক পূর্বধারণা দ্রুত পাল্টে গেছে। ইউসুফের মায়ের মধ্যে দিয়ে জাকির তালুকদার বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মুসলমান পরিবারসমূহের যথাযথ ছবি তুলে ধরেছেন।
উপন্যাসের যোগেন চরিত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগেন নিম্নবর্ণের একজন দরিদ্র গ্রামীণ হিন্দু মানুষ। তিনি ধর্মপ্রাণ কিন্তু এতটুকুও ধর্মান্ধ নন। তার মধ্যে সর্বধর্মীয় উদার বিশ্বাসের সম্মিলন ঘটেছে। তিনি কোদালকে কোদাল বলতে পারেন অবলীলায়। তিনি সকল ধর্মের সাধারণ মানুষজনকে সমানভাবে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন এবং ঈশ্বর-ভগবান-আল্লাহ যে একই পরম সত্তা এমনটাই বিশ্বাস করেন গভীরভাবে। গ্রামের সকল ধর্মের মানুষ যোগেনকে ভালো জানে এবং ভালোবাসে। উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র লিসবেথ । তার নিজদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তার। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন একটি মিশন নিয়ে। বাংলাদেশের গণসংস্কৃতি, নারীর অধিকার, ধর্মের প্রভাব; এসব বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাজাত তথ্য সংগ্রহ করা তার কাজ। ঘটনাক্রমে উপন্যাসের নায়ক ইউসুফের সঙ্গে তার পরিচয়। অতঃপর ইউসুফের সঙ্গে থেকে বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম অবধি সবশ্রেণির মানুষের যাপিতজীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন। আসার সময় তিনি নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ এবং বিশেষত ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে নানাবিধ ও বহুবিধ নেতিবাচক ধারণা। কিন্তু গ্রামবাংলায় ঘুরতে ঘুরতে তার অনেক পূর্বধারণা (Prejudice/ Stereotypes ) পালটে যেতে থাকে।
ধর্ম, সভ্যতা, সাম্প্রদায়িকতা, উপনিবেশবাদিতা, সাম্রাজ্যবাদিতা, মৌলবাদ, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, তথ্য সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি বিষয়ে ইউসুফের পরিষ্কার ও গভীর জ্ঞান এবং তার উদার আলোকিত সত্তা ও আকর্ষণীয় যুক্তিপূর্ণ আচরণ লিসবেথকে মুগ্ধ করে তালে। আর ইউসুফ সবটুকু আকর্ষণ ও মাধুর্য নিয়ে অটুট রাখেন তার আলোকিত ব্যক্তিত্ব। এ যেন To know is to love তত্ত্বের সত্যতা প্রতিপন্ন করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির গভীরভাবে প্রাচ্য সংস্কৃতির প্রেমে পড়া। উপন্যাসের স্রষ্টা হিসেবে শিল্পী হিসেবে জাকির তালুকদার অসম্ভব শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেনে এখানে।
‘মুসলমানমঙ্গল’ একটি বৃহদায়তনের উপন্যাস বিধায় প্রত্যাশিতভাবেই নানাবিধ বড় ও খুচরো ঘটনার সমাবেশ ঘটেছে এর জমিনে। লেখকের কৃতিত্ব এই, যেকোনো ঘটনাকেই অপ্রাসঙ্গিক অথবা জোরপূর্বক সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে মনে হয় না। ঘটনাসমূহের মধ্যে আন্তঃস্রোত ও অন্তঃসম্পর্ক বিরাজমান। তবে ইতিহাসের বর্ণনা, ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে একনাগাড়ে অজস্র উদ্ধৃতি প্রদান কিছুটা আরোপিত এবং সৃজনশীল সাহিত্য হিসেবে উপন্যাসের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহের সঙ্গে কিছুটা অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হয়েছে কোথাও কোথাও। গবেষণা এবং সৃষ্টি- পরস্পরবিরোধী এই দুটি সত্তাকে একদেহে প্রকাশের যে বিড়ম্বনা , এই উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায় কিছুটা। ‘মুসলমানমঙ্গল’ যতখানি ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ , তারচেয়ে অনেক বেশি ‘মানুষের জন্য শিল্প’ তত্ত্বের অনুসারী। ঔপন্যাসিক একটি মহৎমন ও আলোকিত উদ্দেশ্য নিয়ে উপন্যাসটি রচনা করেছেন। ফলে কলাকৈবল্যবাদীরা এই উপন্যাসে নেতিবাচক সামলোচনা করার যথেষ্ট অবকাশ পাবেন বলে মনে হয়েছে।
মগজের মধ্যে—অভিজ্ঞতার উঠোনে চুলাচুলি বেঁধে গেলে যুদ্ধে জয়ী হবে সেটাই—যা সত্য ও সুন্দর।
‘আত্মসমালোচনাপর্ব’ এবং ‘মোকাবিলাপর্ব’ এই দুই পর্বে বিভক্ত উপন্যাসের উপসংহারটি অনন্যসুন্দর, অভিনব সুন্দর এবং বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মহাকাব্যিক। ইউসুফের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযেগ্যতা দিনদিন সম্প্রারিত ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে এবং ভণ্ড মাওলানা শামসুল আলম ধর্মের লেবাসে বহুমুখী ধান্দাবাজি হুমকির মুখে পড়লে তিনি মিথ্যার কূটকৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি ইউসুফ আর লিসবেথের আলোকিত নিষ্কলুষ বন্ধুত্বের গায়ে অনৈতিক যৌনাচারজনিত কালিমা লেপন করে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণকারী সরলমনা মুসলমান পাড়াপড়শীদের ক্ষেপিয়ে তোলেন। ইউসুফ আহমেদ একদিন লিসবেথের রুমে বসে গল্প করছিলেন, শামসুল আলম এই সুযোগে মাইক যোগে তাদের ঘেরাও করে বিচার করার জন্য উসকানি দেন। জড়ো হয় মানুষজন। মাইকে প্রচারণা চলতে থাকে:
মুসলমান ভাইরা জাগো! আজ আমাদের শহরে ইসলামকে অবমাননা করা হয়েছে। আজ আমাদের শহরে ইসলাম সম্পর্কে যা খুশি বলা হচ্ছে। আজ আমাদের শহরে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জাগো! মুসলিম জাগো! আওয়াজ তোলো ইসলামের অপমান—সইব না সইব না! ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ—বন্ধ করো করতে হবে ! মুরতাদ ইউসুফের […] ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই! সকালে মিছিল শুরু হলো। একের পর এক মিছিল। হাজার হাজার মানুষ ঘেরাও করল ডিসি অফিস। মুখে একটাই স্লোগান- মুরতাদ ইউসুফের ফাঁসি চাই!
অতঃপর বিকালবেলা বিচার শুরু। কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরেই বিচারসভা। উপন্যাসের বর্ণনা:
একজন রিটায়ার্ড কাস্টমস কর্মী। নন-গেজেটেড পোস্টের কর্মচারী ছিল। বেতন ছিল রিটায়ারমেন্টের সময় সর্বসাকুল্যে দশ হাজার টাকা। এই শহরের সবচেয়ে গর্জিয়াস বাড়িগুলোর একটি তার। ঢাকাতেও নাকি বাড়ি আছে। ব্যাংকে যা টাকা আছে তা তার তিনপুরুষ বসে খেয়েও শেষ করতে পারবে না। কেউ জিজ্ঞেসও করে না তার এই সম্পদের উৎস কোথায়! এইরকম একজন ঘুষখোর লোক তার বিচারক। […] আর পেছনে দাঁড়িয়ে যে শত শত মানুষগুলো, তারা কারা? ভাড়া করা মানুষ। এরা যা বলবে ইসলামের নামে সেই কাজেই ঝাঁপিয়ে পড়বে তারা। সমাবেশের দিকে বিতৃষ্ণ চোখে তাকালো ইউসুফ। চিন্তাশীলতার কোনো চিহ্ন নেই কারও চেহারায়। এরা যদি শামসুলের মতো মানুষদের কথায় না নাচত, তাহলে এই দেশটা কি এতটা নীচে নেমে যেতে পারত!
চোখ বন্ধ করল ইউসুফ। নিজের কী হবে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নয় সে। তবু নিঃশব্দ প্রার্থনায় নড়ে উঠল তার ঠোঁট—আল্লাহ ইসলামকে তুমি বাঁচাও!’
টানটান উত্তেজনাকর এই দৃশ্য রেখে উপন্যাসের সমাপ্তি । এটি সত্যিকার অর্থেই একটি মহাকাব্যিক উপসংহার।
উপন্যাসটি পড়া শেষ কিন্তু পাঠকের মগজে কালবোশেখী ঝড়ের দোলা। Aristotle বলেছেন: Knowing yourself is the beginning of all wisdom. লালন শাহ বলেছেন, ‘ও যার আপন খবর আপনার হয় না/ একবার আপনারে চিনতে পারলে রে যাবে অচেনারে চেনা, যাবে অচেনারে চেনা ।’ আমরা অন্তত যারা জন্মসূত্রে মুসলমান—ধার্মিক অথবা নাস্তিক, মৌলবাদী অথবা প্রগতিশীল, ধর্মে ডিগ্রিধারী অথবা বিজ্ঞানে পিএইডি , তারা কি একবারও মুসলমান হিসেবে নিজেদের চেনার চেষ্টা করেছি? ধর্মকর্ম করা মুসলমান হই অথবা শুধু জন্মসূত্রে মুসলমান, উভয় ক্ষেত্রেই নিজধর্ম সম্পর্কে ‘অজ্ঞতা’ আমাদের নেতিবাচক পুঁজি। সেই পুঁজি থেকে অমরা নিজেরাও ঘৃণা ছড়াই নিজেদের বিরুদ্ধে, ঘৃণা ছড়াই অন্যদের বিরুদ্ধেও । এবং অন্যেরাও ঘৃণা ছড়ালে আমরা তা যথাযথভাবে মোকাবিলা করার মতো জ্ঞাননির্ভর শক্তি রাখি না। ফলে ওয়াক ওভার পেয়ে যায় যাবতীয় মুসলমানবৈরিতা ও বদনাম।
জাকির তালুকদার ‘মুসলমানমঙ্গল’ উপন্যাসটি লেখার জন্য দেশেবিদেশের যত গ্রন্থ পাঠ করেছেন, ইতিহাসের অন্দর-কন্দরে যেভাবে ভ্রমণ করেছেন হাতে নিয়ে অনুসন্ধিৎসার টর্চলাইট, তার তুলনা নেই। উৎস হিসেবে একটি তালিকা উপন্যাসের শেষে সংযুক্ত করা হয়েছে—৬৭ টি গ্রন্থের। কিন্তু তিনি আরও নানা গ্রন্থ পাঠ করেছেন। সবচেয়ে বেশি পাঠ করেছেন মানুষের যাপিত জীবনের অলিখিত অসংখ্য গ্রন্থ। ‘মুসলমানমঙ্গল’ একটি উপন্যাস যেখানে মিলেছে একজন সৃজনশীল গবেষকের শুভবাদী মন এবং খনিসন্ধানী পরিশ্রম ।
আমরা ইসলামকে চিনে আসছি ‘আনন্দমঠ’, ‘লালসালু’, ইত্যাদি ধরনের উপন্যাস আর তসলিমা নাসরিন প্রমুখদের অজস্র কলাম ও স্ট্যাটাস পড়ে। আর দিন দিন যোগ হচ্ছে স্যামুয়েল পি হান্টিংটন—দের The Clash of Civilizations and the Remaking of World Order এবং একের পর এক বলিউডের ‘Padmaavat’, ‘The Kashmir Files’, The Kerala Story প্রভৃতি অজস্র মিথ্যায় জড়ানো ভয়ংকভাবে মুসলমানবিদ্বেষী সিনেমা। এমন প্রেক্ষাপটে পাঠ করতে প্ররোচিত হই জাকির তালুকদার রচিত ‘মুসলমানমঙ্গল’ উপন্যাসটি । কিন্তু এটি কোনোভাবেই ঐসব উপন্যাস বা সিনেমার প্রতিপক্ষ রচনা নয়। জাকির তালুকদার জানেন এবং মানেন যে—সাম্প্রদায়িকতাকে মোকাবিলা করা যায় না সাম্প্রদায়িকতা দ্বারা যেমন ঘৃণাকে মোকাবিলা করা অসম্ভব পালটা ঘৃণা দ্বারা। ‘মুসলমানমঙ্গল’-এ কোনো বিদ্বেষ নেই, কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে সামান্যতম নেতিবাচক বক্তব্য নেই। দু-একস্থানে সমবিষয়ে কিছু তুলনামূলক তথ্যাদি দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে নানিা ডাইমেনশনে দেখার ও বুঝার প্রয়োজনে। জাকির তালুকদারকে সাধুবাদ জানাতে চাই আরেকটি কারণে যে—তিনি এই প্রতিকূল সময়ে বামচিন্তার হাল ছেড়ে না দেওয়া নিত্যসক্রিয় অনুরাগী এবং প্রগতিশীল ঘরানার চিন্তক-লেখক হওয়া সত্ত্বেও প্রায় নিশ্চিত সস্তা জনপ্রিয়তার লাভজনক লোভ সংবরণ করে এবং বাংলার সারস্বত সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি, সমর্থন বা সমাদর পাওয়া যাবে না জেনেও এধরনের উপন্যাস লেখার ঝুঁকি নিয়েছেন।
উপন্যাসটি পড়ে মুসলমান কাঠমোল্লারা হজম করতে পারেবেন না বলেই মনে হয়। উপন্যাসের শেষে তাই তো উপন্যাসের নায়ক ইউসুফ আহমেদের ফাঁসি দাবি টেবিলে নিয়ে বিচার বসেছে । তাহলে প্রগতিশীলেরা হজম করতে পারবেন তো? সে বিষয়েও সংশয় আছে। ঔপন্যাসিকের অবস্থা হচ্ছে; তার জন্য ডাঙায় বাঘ এবং জলে কুমির। তারপরও উপন্যাসটি পরীক্ষার মুখোমুখি হলে ক্ষতি নেই। অন্তত জন্মসূত্রে মুসলমান মানুষদের একবার হলেও উপন্যাসটি পড়ে দেখা সমীচীন। মানুষ ওপরে উল্লিখিত ধরনের উপন্যাসগুলো পড়বে, ছবিগুলো দেখবে, কাঠমোল্লাদের ফতোয়া শুনবে, প্রগতিশীলদের বাণী গলাধঃকরণ করবে, আবার ‘মুসলমানমঙ্গল’ এর মতো উপন্যাসও পড়বে। মগজের মধ্যে—অভিজ্ঞতার উঠোনে চুলাচুলি বেঁধে গেলে যুদ্ধে জয়ী হবে সেটাই—যা সত্য ও সুন্দর।
বর্তমান সময়ে বিরাজিত বাস্তবতায় এবং সৃষ্টিকর্ম হিসেবে উজ্জ্বল অনন্যতার ঐশ্বর্যে উপন্যাসটি ব্যাপকভাবে পঠিত হওয়ার উপযুক্ততা ও গুরুত্ব ধারণ করে।