‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’ কবি মোশতাক আহমেদের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। এতে সন্নিবিষ্ট কবিতাগুলো বিভিন্ন সময়ের। সময়ের সঙ্গে কবির উপলব্ধির জগৎও নিশ্চয় বদলে যায়।বিচ্ছিন্নভাবে কাব্যগ্রন্থটি পড়ার পরে শুধু অনির্দিষ্ট ভ্রমণের উপলব্ধি হয়। বুঝতে পারা যায় এক গোপন স্রোতের মৃদু প্রবাহিত নিঃশ্বাস। সামাজিক অভ্যস্ত জীবনের অন্তর্মুখী আবেগের বাইরে এক বহির্মুখী তৃষ্ণার উপসর্গ।
প্রথম পাঠে মস্তিষ্কে গেঁথে যায় আরও কিছু শব্দের পৌনঃপুনিক ব্যবহার—পূর্ণিমা, সমুদ্র সৈকত, বৃক্ষ, বৃষ্টি, আকাশ, জল। আর দিক-চিহ্নহীন সীমান্ত জুড়ে জিজ্ঞাসা। এই শব্দের পুনঃব্যবহার দোষণীয় কিছু নয়।বুদ্ধদেব বসু লিখছেন—পুরনো শব্দের এরূপ ব্যবহারে গৌণ কবিরা ভয় পান কিন্ত প্রতিভাবানদের হাত পড়ে সেই শব্দের রূপান্তর ঘটে।
পুনঃপাঠে নির্মোহভাবে দৃষ্টি দিলে ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’তে কবির মনজগতের এক বর্ণিল প্রাসাদের সন্ধান মেলে—যার কক্ষে কক্ষে অমূল্য রতনের মতো চিরকমলের গুপ্তভাণ্ডার সযত্নে রক্ষিত।
আমি চিহ্নিত করেছি মূলত চারটি বৈশিষ্ট্য:
(ক) বিস্মিত চেতনার জাগরণ ও জীবনের আনন্দ সন্ধান।
(খ) প্রেম
(গ) বিষাদ
(ঘ) সংশয়, সন্ধান ও অন্তর্মুখী ভ্রমণ
বলার অপেক্ষা রাখে না প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই আধুনিক কবিতার উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যের স্মারক। আসুন পড়ে দেখি এইসব বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত কবিতায় কবির যাত্রা।
বিস্মিত চেতনার জাগরণ ও জীবনের আনন্দ সন্ধান
এর অন্তর্গত বৈশিষ্ট্যের ধারক—৪টি কবিতা। আজ সারাদিন, কুতুবদিয়া, কৌতূহল, ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি। এই চারটি কবিতার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো কবিতা ‘আজ সারাদিন’।
রোমান্টিক কবিরা দূর প্রেমিক।বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন,‘রোমান্টিক আকাঙ্ক্ষার আসলে কোনো স্থায়ী ঘর নেই। তার পেছনে কোনো আদর্শও থাকে না। উনিশ শতকের শুরু থেকে ফরাসি সাহিত্যকেন্দ্রিক (ইংরেজিও) যে রোমান্টিজমের চল দেখা যায়—তার পুরোটাই দিক্ভ্রান্ত কাতরতা। এর প্রভাব পরবর্তী সময়ে ফরাসি তাত্ত্বিক ও দার্শনিকদের মাঝেও আমরা দেখেছি।’
‘আজ সারাদিন’ কবিতায় আমরা পাই বোধের বিহবল কাতরতার সন্ধান।যেমন ‘বিরহেও আছে অপূর্ব লাবণ্য’। রুশোর ‘যা নেই তা ছাড়া কিছুই সুন্দর নয়’ বা বোদলেয়ারের ‘ভালোবাসি না দেখা প্রেমিকার মুখ’ বা জীবনানন্দের ‘যে আমাকে চিরকাল ভালোবেসেছে অথচ যে নারীর মুখ আমি কখনো দেখিনি’ সব একসূত্রে গাঁথা। অনির্দিষ্ট প্রেমে থাকে প্রাপ্তির স্বাধীন কল্পনার স্বাদ।
কবি যখন বলেন, ‘বুক ভেসে যায় প্রবল বৃষ্টিতে নাকি কোনো এক জোসনার স্মৃতি। মনে হয় যেন কবি অজানা আনন্দে জাগছেন। অনির্বাচনীয় ভালোলাগায় কবি—বৃষ্টির প্রেমে রৌদ্রকে ভুলে থাকা পৃথিবীর মতো আচ্ছন্ন।
‘কৌতুহল’ কবিতায় আমরা দেখি ধমনীর উপকূল প্লাবিত জনপদে দাঁড়িয়ে কবি সবিস্ময়ে যেন জানতে চাইছেন ভালোবাসার সদ্দুত্তর। যখন বলেন, ‘আর কতটা জেনেছ সমুদ্রের জল’, তখন ঝনঝন শব্দে এক আনন্দের দুয়ার খোলে, সব দেওয়া শেষে প্রেমিকের অনুযোগ ভরা চাওয়া; যেন প্রেমিকের চোখে পূর্ণতার ছবি দেখার তীব্র আর্তি।
‘কুতুবদিয়া’ কবিতায় দেখা যায় কবি সাম্পানে করে রঙিন নিশান উড়িয়ে নতুন কবিতার মতো তারাভরা আকাশে ঝিঁঝির সিম্ফনির প্রেরণায় তারাদের কথা শুনতে কান পাতছেন। ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’ ছেলেখেলা কবিতায় কবি যেন মেঘেদের স্নানে ঝিরিঝিরি জল হয়ে ঝরছেন। প্রাপ্তিতে, বোধে অনুষঙ্গে, তৃপ্তিতে এক পূর্ণ সজীব কবিকে পাই। যখন বলেন, ‘ঝরণার চুলে মুখ ডুবিয়ে নষ্ট হতে এসে আমি পবিত্রতার গ্লানি নিয়ে ফিরেছি।’
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘পবিত্রতা’ শব্দটি। আর এই শব্দই কবিকে চেতনাকে বিস্ময়ে জাগিয়ে নিয়ে গেছে জীবনের আনন্দের ফুল্লধারায়। আধুনিক সাহিত্যে দুঃখবাদিতা আছে ‘স্ব-ধারণা’-প্রসূত ‘অদ্ভুত’ এক পাপ বোধের ধারণা থেকে। দুঃখবাদীরা ভাবতেন ‘পাপ বোধের চৈতন্যই’ তাদের চরমতম দুঃখের জন্য দায়ী আর মানুষের পাপবৃত্তি যদি আদিম ও অমর হয়। তবে পূণ্য আর পবিত্রতার প্রতি তার আকর্ষণ ও মৌলিক। ‘নষ্ট হতে এসে আমি পবিত্রতার গ্লানি নিয়ে ফিরেছি’—এই উক্তিতে যেন কবি মরণশীল নশ্বর ভূলোক ছেড়ে অমরত্বের দিকে যাত্রার সূত্রপাত করেন।
প্রেম
কবিতা তো প্রেমের—আবার কবিতা প্রেমহীনতারও। কবিতায় শুধু প্রেমের পূর্ণতাই থাকে না কি প্রেমহীনতায় সংশয়ময় কুণ্ঠিত মননও? কবি মোশতাক আহমেদ ‘চটকদারী কামবাহী কণ্টক যুক্ত’ প্রেমের বাইরে প্রভাতের প্রথম কিরণের রাজযোগ সম্ভাবনাময় প্রেমের জয়গান গেয়েছেন। এই অর্থে কবি আপাদমস্তক রোমান্টিক; জীবন ও ভালোবাসার কবি।
‘লুব্ধক যাত্রায়’ কবি ভালোবাসাকে দেখছেন—‘টারমাকে জলছাপের মতো বিলীয়মান। ‘বিচ্ছেদকে’ সঙ্গে নিয়ে বহু দামে কবি কিনে নিচ্ছেন ফেরার টিকিট।এই যে অনুভবের তাড়াঅন্তরে জাগা হাজারো কথার বুদ্বুদ—তার নিবেদন কার প্রতি? জলের গভীরে রূপালী মাছের মতো তার কথাগুলো ডুবিয়ে দিয়ে কবি যেন নিশ্চিন্ত-নিরুত্তাপ যোগী হয়ে যান। ‘তরুপী পাহাড়ে’ কবির ‘প্রেম মনের কেন্দ্রিকতার’ বাইরে চলে যায়। কবি যখন বলেন, ‘একলা মেয়েটি শুয়ে পাঁচটি বছর’ অথবা তার কিছুটা বদলে যাওয়া চোখ বহু বছরের ব্যবধানে নির্নিমেষ এক পাহাড় দেখে,তখন ‘ভালোবাসার’ গর্বিত সংজ্ঞা স্ফীত হয়। মনে হয় কবির ভালোবাসা তার অস্তিত্বের মতোই ‘অজস্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র’।
‘অভিমান’ কবিতায কবি বিরহ কাতর—বিরহের বিষে কবি এক দুঃস্থ প্রেমিক। কিন্তু আজ শ্রাবণী পূর্ণিমাতে কবি সম্পূর্ণ ‘আলাদা প্রেমিক’। পৃথিবীতে তার আসা-থাকা-অনুভব সবকিছু যেন হৃদয়ের খুব কাছে পেয়েছেন। যখন কবি বলেন, ‘শ্রাবণ তার পূর্ণিমাতে কি আনেনি আজ’, সেই মুহূর্তে কবি পরিপূর্ণ—প্রেমে-দয়ায় ক্ষীণ চাওয়ায় ‘অসহ্য পূর্ণতার গোড়ায়’ পৌঁছে গেছেন। তার বিচরণ ‘সজল দিনের ফাঁকে আলোর অবসরে’। চাঁদের আলোয় বাতাস কেটে কেটে চন্দ্রগ্রস্ত কবি মানুষকে ভুলিয়ে দিচ্ছেন তাদের কর্দম অভিশাপ। ‘ভাষা উপকূলে’ কবির প্রেম ছড়িয়ে আয়—আরও দূরে। তিনি যেন মানুষের যোগাযোগের অসম অবয়বে ফিরিয়ে আনছেন চির মানবের ইতিহাস। তিনি যেন সম্পর্কের ভাঁজগুলো খুলে খুলে হাঁটু গেড়ে প্রবল বিস্ময়ে কান পাতছেন মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন শুনতে। তিনি যেন দেখতে চেয়েছেন—মানুষের অনুভবের স্বার্থ লুকোচুরি ছেড়ে নেমে আসে স্পর্শের সীমায়। যার অনুপস্থিতিতে কবি ব্যথিত-অভিমানী।
কবি মোশতাক আহমেদ ‘জীবনময়তার’ কবি। প্রেম-বিষাদ-আর অন্তর্মুখী দ্বন্দ্বে শিশিরের কাতরতার লাবণ্য তার কবিতায়। এ কারণে তার কবিতা সংশয়,বিষাদের উর্ধ্বে তুলে ধরে জীবনের বিস্মিত জাগরণ। তার সবচেয়ে বড় শক্তি—সকল বোধ চৈতন্যের বাইরে একস্বতঃস্ফূর্ত প্রসন্নতা। কোথাও যেন কোনো অনুতাপ নেই।
কবির অর্জন তার শব্দের শিখরে ‘ঋষিসুলভ’ নির্লিপ্ততা।অনুতাপহীন অবসরে শিল্প শিথিল প্রসন্ন হাওয়ায় সকলকে কবি ডেকেছেন—‘চড়ুইভাতির নিমন্ত্রণে’।
কিছুকাল কবিতা লিখলাম—
কিছুকাল সেজে থাকলাম কবি
বন্ধুগণ!এইতো আমার কবি জন্ম।
বিষাদ
রোমান্টিসিজম যেমন বিশ্ব সাহিত্য ইতিহাসের বাকবদল করা ঘটনা, তেমনি ‘বিষাদ’ বিশ্বসাহিত্যে ‘আবিষ্কৃত’ এক মানসিক লক্ষণের নাম। ইউরোপীয় রেনেসাসের পূর্বে বিশ্বসাহিত্যে বিষাদের উদাহরণ বিরল। বিষাদ সুন্দরের পূর্ণতাহীনতার প্রতি এক আক্ষেপ।
কবি মোশতাক আহমেদের ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’র সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠস্বর এই বিষাদময়ীতা। ‘এ বুকে কান পাতলেও শোনা যাবে নিষিদ্ধ নীলগঞ্জন’—এ কথা বলে কবি এই ‘বিষাদের’ ঝান্ডাই ওড়ালেন। ‘কবিতা বণিতা চৈব সুখদা স্বয়মাগতা’, ‘ঝরাপাতা ঝরাপাতা’, ‘খুন হয়ে যাবার মুহূর্তে’ ‘সান্নিপাতিক’, ‘আসমুদ্র খসড়া’, ‘সেই থেকে আমি আর সমুদ্রে নামিনা পদ্যপুকুর’, ‘শঙ্খ ও বেলাভূমি’—ইত্যাদি কবিতা তাদের আত্মার জারক রসে ধারণ করে আছে বিষাদ। কিন্তু কবির বিষাদময়ীতা জীবনানন্দ থেকে আলাদা—জীবনানন্দের ‘বিষাদ’ ছিল ‘আত্মপীড়ন’ কবির বিষাদ যেন চলে গেছে ‘বোদলেরীয় ধারায়’ এ যেন ‘আত্মপীড়ন’ নয় ‘আত্মপরীক্ষা’ যেন অন্তরের কাতরতা থেকে উঠে আসা এক অপূর্ব ফিনিক্স, নির্মোহ ঋষির মতো সহজাত বয়ান।
মোশতাক আহমেদের কিছু বিষাদের রত্ন দেখি—
কার চোখের ভেতর আমাকে খোঁজো আজ
যাকে একদিন খুঁজেছিলে আমার ভেতর।
যে পায় না সেতো পাবে না কোন কলে
যে পায় সে পায় একদিন অন্তহীন।
(খুন হয়ে যাবার মুহূর্তে)
অথবা
বেলাভূমি ধরে হেটে যেতে যেতে ভাবি
ফিরতি পথেই বালুতে কোনো চিহ্ন দেব এঁকে
ফেরার পথে সে বেলা ফেনার অধিকার।
(অসমুদ্র খসড়া)
অথবা
কোন অমৃত সম্মোহন তবু লিখে লিখে যায়
নেই-দেশ নেই-মানুষ নেই-সম্পর্কের গান
ফাল্গুনের দক্ষিণে কি হুবহু পুনর্জন্মের হাওয়া
বল এই বার ঝরা পাতা, ঝরা পাতা গো।
(ঝরাপাতা ঝরা পাতা)
উল্লিখিত তিনটি উদাহরণের অন্তিম বাক্যগুলোই নির্দেশক বাক্য। কবি যেন জানাচ্ছেন ‘বিষাদ রোগটি দুশ্চিকিৎস্য’ কিন্তু ‘অচিকিৎস্য নয়’। কবি তার হারানোর অর্তির মাকেও দৃঢ়চেতা নাবিকের মতো হলে ধরছেন আবেগের। যখন বলেন—‘যে পায় সে একদিন অন্তহীন’ বা ‘ফেরার পথে সে বেলা ফেনার অধিকার’ বা ‘বল এইবার, ঝরা পাতাগো, ঝরা পাতা গো’—সবটাই কবির নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন দুঃখের দারুণ নিদান।
সংশয় সন্ধান ও অন্তর্মুখি ভ্রমণ
মোশতাক আহমেদের কবিতা—খাঁটি রোমান্টিক কবিদের মতোই সংশয় আক্রান্ত নির্ণেয় গতিতে পরিপ্লাবিত। কবির ‘চন্দ্রগ্রস্ত তরল পয়ার’, ‘সুবর্নভূমিতে পরিচয় সংকট’, ‘মোগল গোধূলিতে’ ‘বাঙলা কবিতা’, ‘পরীরা ছড়িয়ে পড়ে’, ‘মহাদেশে মহাদেশে’, প্রভূতি কবিতার প্রতিটি শব্দে কবির এই অন্তর্মুখী ঘূর্ণনের সন্ধান পাওয়া যায়।তা কখনো সংশয় উত্তীর্ণ। কখনো আরোপিত সংশয়ী। কিন্তু কবির এই সব ভ্রমণের গন্তব্য এক না—পৃথক আর পৃথক; যাত্রায় যেন পৃথক সন্ধান। রোমান্টিক ও আধুনিক কবিতার এই ভ্রমণ কিন্তু এক অর্থে ‘নোঙ্গরের’ পূর্বে বন্দর অবলোকনের মতো বিষয়।কবি যখন বলেন,
যেতে যায় যাক
জগত মিলেছে অন্তর্জাল পাড়ায়
অথবা
আকাশ রেলের অচেনা যাত্রী
পাও নাই, পাও নাই পরিচয়।
এখানে কবি যেন পলায়নপর,এই কদর্য লেনাদেনার জগৎ ছেড়ে কোনো অজানার পথ চেয়ে আছেন।
আবার কবি যখন বলেন,
পূর্ণিমা নেই কিছু
প্রতীক্ষার চোখ তাকে করে তোলে উজ্জ্বল
গভীরে ডুবে দেখা গেলো কবির চোখেই চান্দ্রাদয়।
অথবা,
চান্দের গাড়ি, ও চান্দের গাড়ি!
আমাকে কোথায় পৌঁছে দেবে এই মাঝ রাতে
আকণ্ঠ জোছনার …
অথবা
সঞ্চয়িতার পাতা থেকে এসে
ঢাকিরা ঢাক বাজায় খালে বিলে
হাটবার ফিরে আসে দেহাতি বাতাসে
আমরা বুঝি কবির এই অতৃপ্তিময় ভ্রমণ, মহাকালের বিস্তৃতির অপূর্ণ প্রাপ্তির যন্ত্রণাজাত। বুঝি, কবির এই অন্তমুর্খী ভ্রমণ কাদামাটির পঙ্কল পৃথিবীর প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণজাত।