সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ গল্পগ্রন্থকে ঠিক গল্পের বই না বলে জীবনেরই খণ্ড খণ্ড চিত্র বলা যায়। যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে লেখকের নিজস্ব ভাষাশৈলীতে। সালাহ উদ্দিন মাহমুদ জানেন লেখার শুরুতেই পাঠককে লেখার জাদুতে আটকে ফেলার কৌশল। ফলে তার বইয়ের শব্দগুলো নিজে নিজেই কথা বলে পাঠকের সঙ্গে।
গল্প বলার জন্য পরিচিত পথটিকেই বেছে নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, ভাষাকেও রেখেছেন জটিলতাহীন। তার গল্পের বিষয়বস্তু সোজাসাপ্টা। তবে এমন এক আশ্চর্য বুননে কাহিনিকে তিনি ভাষা-দ্রবণে দ্রবীভূত করতে সক্ষম হয়েছেন, যা অভিভূত করবে যে কোনো পাঠককে। কাহিনির বিচারে বিষয়ের অভিনবত্ব তার গল্পে গতানুগতিক কিন্তু ভাবের যে ব্যঞ্জনা তিনি ‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ গ্রন্থে তৈরি করেছেন—তা একজন সুদক্ষ গল্প-কারিগরের পক্ষেই সম্ভব। গল্প পাঠে মনে হয়েছে, মানুষের মনস্তত্ত্ব খুব ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। ফলে প্রতিটি গল্পেই পাঠককে সুনিপুণভাবে একেবারে ভেতরে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্পের বিষয় যেমন বিবিধ; তেমনই গঠন কৌশলও বিচিত্র। প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক অবক্ষয়, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সংকট, সমাজবাস্তবতা, দার্শনিক জিজ্ঞাসা—এরকম নানা প্রসঙ্গকে গল্পের বিষয়বস্তু করে তুলেছেন তিনি। যে গল্পগুলো পাঠ করতে করতে জীবনের নানাবিধ প্রসঙ্গে নিজেকেও নিজে খুঁজে পাবেন পাঠক।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্প পড়তে পড়তে অনুভব করেছি—তার লেখা সরলরৈখিক নয়, বেশিরভাগই বহুমাত্রিক। অর্থাৎ লেখক তার গল্পকে একটিমাত্র বার্তায় সীমাবদ্ধ রাখেননি। সহজভাবে যদি বলি—বড় একটি প্লেটে বিভিন্ন স্বাদের খাবারকে সাজিয়ে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন তিনি। যেখান থেকে পাঠক তার রুচিমতো খাবারের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন।
মোট তেরোটি গল্পে সাজানো হয়েছে ‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ গল্পগ্রন্থটি। প্রথম গল্পটির নামেই গ্রন্থটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি আত্মহত্যাপ্রবণ এক বেকার যুবকের গল্প। এই যুবকের নাম সাবিরুল। গল্পের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই দারিদ্রের কষাঘাতে বিদ্ধ সাবিরুল সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যার। এই ইচ্ছার কথা তিনি ব্যক্ত করেন তার প্রেমিকা নারগিছের কাছে। কিন্তু নারগিছ তার এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে না নিয়ে উলটো উসকে দেন আত্মহত্যা করতে। প্রেমিকার অনুমতি দিয়ে সাবিরুল চলেন আত্মহত্যায়। এই নিয়ে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা।
সমাজের হতাশাগ্রস্ত বেকার যুবকদেরই প্রতিনিধি সাবিরুল, কিন্তু তার চলন, বলন সবকিছুই অন্যরকম। সাবিরুলের প্রতি প্রেমিকা নারগিছ, দোকানদার নুরু মিয়া কিংবা মেসের সদস্য অন্তরের যে আচরণ গল্পে চিত্রায়িত হয়েছে—এটা যে কোনো শিক্ষিত বেকারের প্রতিই সমাজের আচরণের রূঢ় বাস্তবতা গল্পপাঠে সে বার্তাটা পাঠককে স্পষ্ট করেন লেখক। কিন্তু কোন প্রেক্ষাপটে সাবিরুল আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন সেই কাহিনি গল্পে স্পষ্ট করেননি লেখক। বরং পাঠকের ভাবনার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
কম কথায় অনেক কথার ইঙ্গিত। অনেক ঘটনার আবছায়া নিয়ে আসা ছোট কাহিনিতে। গ্রন্থের দ্বিতীয় গল্প ‘হালিমে আঙুলের হদিস’ পড়তে পড়তে আমার এমনটাই মনে হচ্ছিল। কানাইনগর পৌর মেয়রের বখাটে ছেলে রোবায়েতের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে কাহিনির সূত্রপাত। থানা-পুলিশ নিখোঁজ রোবায়েতের হদিস বের বের করতে ব্যর্থ হলে ঢাকা থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা লাল শাহের আগমন ঘটে। তিনি থানার কাছের নদীর পাড়ে বসে হালিম খেতে খেতে রহস্য ভেদ করেন। অল্পকথার গল্প হলেও লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ শুধু পরাবাস্তবতায় বাস করেননি, নারী নিপীড়ন, সমকালীন রাজনীতির হালচালসহ আমাদের সামাজিক বাস্তবতার নিষ্ঠুর চিত্রটিই অঙ্কন করেছেন এখানে। যে ঘটনাকে গল্পে টেনে এনেছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ তা অনায়াসে কোনো রহস্য উপন্যাসও হতে পারত।
তৃতীয় গল্পটির শিরোনাম ‘জলের ভেতরে অনল’। এই গল্পটি ভালোবাসার কিন্তু শেষটা বিয়োগাত্মক। এটিতে দুজন মাঝবয়সী নর-নারীর ভেতরে প্রেম-ভালোবাসার চিরায়ত রূপকে এঁকেছেন লেখক তবে খানিকটা ভিন্ন আঙ্গিকে। মাঝবয়সী গরিব মিনাজদ্দি এবং তার স্ত্রী জরিনার দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে বিবাহিত আর ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এই ছোট মেয়ের জন্মের পর থেকেই স্ত্রী জরিনা অসুস্থ। অসুস্থতা একপর্যায়ে জরায়ু ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। একেবারে অন্তিম মুহূর্তে স্ত্রীকে চিকিৎসা করানোর জন্য গ্রাম থেকে মিনাজদ্দি ঢাকা ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন। ডাক্তার তাদের ফিরিয়ে দেন। পরামর্শ দেন জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো ছেলে-মেয়েসহ নিকটাত্মীয়দের সংস্পর্শে থাকার। ফেরার পথে তারা বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন। সেই লঞ্চটিতে, কয়েক বছর আগে যেটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছিল এবং অর্ধশতাধিক মানুষ নিমেষই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভয়ংকর সেই নৌদুর্ঘটনাকে গল্পের আদলে তুলে এনেছেন লেখক।
গল্প পাঠে জানা যায়—লঞ্চে মাঝরাতে যখন স্ত্রী জরিনা বানুকে বুকে জড়িয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে গভীর ঘুমে মিনাজদ্দি তখন লঞ্চের দোতলায় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে যায়। ধোঁয়ার গন্ধে যখন যখন ঘুম ভাঙে তাদের ততক্ষণে তৃতীয় তলার কেবিন ও নিচতলায় আগুন ছড়িয়ে গেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মিনাজদ্দি প্রাণ বাঁচাতে একা ঝাঁপ দিতে চায় না। জরিনাকে সাথে নিতে চায়। জরিনা রাজি হয় না। জরিনার দাবি করে যেহেতু সে অসুস্থ, বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবনা নেই তাই তার চাওয়া মিনাজদ্দি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষা করুক। তাতে ছোট মেয়েটাকে দেখে রাখতে পারবে। কিন্তু রাজি হয় না মিনাজদ্দি। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে স্ত্রী জরিনাকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে মিনাজদ্দি। জীবনের শেষ আলিঙ্গনে তারা খুঁজে পায় পৃথিবীর সব সুখ। জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে সাহিত্যে রূপান্তর ঘটানো সহজ কোনো কথা নয়। সেই কঠিন কাজটিই সহজভাবে করে দেখানোর সক্ষমতা দেখিয়েছেন এ গল্পে দেখিয়েছেন গল্পকার সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
আরেকটি গল্পের কথা বলতে হয়। গল্পের নাম ‘কাঁচ ভাঙা স্বপ্ন’। গল্পটি প্রথম পুরুষে লেখা। পড়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না— এখানে গল্পের আড়ালে নিজের জীবনের ‘গল্পকেই’ তুলে দিয়েছেন লেখক। আসলে এ গল্প কেবল সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্প নয়, মফস্বল থেকে উঠে আসা কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেরই এরকম কিছু না গল্প আছে। গল্প ঢঙে কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের লেখালেখির সূচনা পর্বের সেই গল্প পড়তে ভালোই লেগেছে।
ভালো লাগার একটি অসাধারণ গল্প ‘একটি মসজিদের ইতিবৃত্ত’। গল্প পাঠে জানা যায়—হাজার মানুষের গ্রাম বরকতপুরে কোনো মসজিদ নেই। গ্রামের বাসিন্দাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে হয়। সমস্যার সমাধানে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ কলিম খাঁ একটি মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। উদ্যোক্তরা গ্রামের মাঝখানে মসজিদ করতে সম্মত হন। কিন্তু সমস্যা বাঁধে মসজিদের জায়গা নিয়ে। মসজিদের জন্য নির্ধারণ করা জায়গার মালিক আব্দুল বারেক প্রথমে বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তীতে এলাকাবাসীর পিড়াপিড়িতে নির্ধারিত দামের চাইতে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করতে রাজি হন। সেই টাকা জোগাড় করতে গ্রামের প্রবাসীরা টাকা পাঠান। কিন্তু দলিল করার দিনে দেখা যায়—জমির মালিক বারেক জমিটি আগেই মসজিদের নামে ওয়াকফ করে নিয়ে এসেছেন। গল্পটি পড়ে পরিষ্কার হওয়া যায়, মূলত মসজিদের ঘর তোলার টাকা ম্যানেজ করতেই বেশি দামে জমি বিক্রির কৌশল অবলম্বন করেছিলেন বারেক।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন—‘মসজিদের উদ্যোক্তারা কাগজ দেখে অবাক। আব্দুল বারেক পুরো জায়গাটা মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। জমির জন্য নেওয়া টাকাটা এবার কলিম খাঁর হাতে দিয়ে বললেন, শুধু জমি দিয়ে হবে কাকা? মসজিদের জন্য ঘর ওঠাতে হবে না? সেই টাকা কোথায় পাবেন? আসেন, এই টাকা দিয়ে সবাই মিলে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করি।’
যৌনতাকেও লেখার অনুষঙ্গ করেছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। যৌনতা তার গল্পে অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে। এরকম একটি গল্প ‘আদিম লালসার খদ্দের’। এই গল্পে একজন যৌনকর্মীর জীবনের বিভিন্ন ট্র্র্যাজেডি যেমন তুলে ধরেছেন পাশাপাশি গল্পের মাসুম চরিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে বার্তা দিয়েছেন—বিষণ্ণতা কাটাতে যৌনতা ভালো নিরাময় হতে পারে। যে বিষণ্ণতা কাটাতে পতিতালয়ে গিয়ে যৌনকর্মী দুলালীর সংস্পর্শে আসে। গল্পটি পড়তে পড়তে একজন যন্ত্রণাক্লিষ্ট নারীর অসহায়ত্ব আর মর্মবেদনা অনুভব করার পাশাপাশি তার হাহাকারে আক্রোশে ফুঁসেও উঠতে পারেন সচেতন পাঠক। এখানে একজন পতিতার জীবনের গ্লানি ও কষ্টকর দিকগুলো তুলে ধরতে গিয়ে লেখক সমাজের নোংরা দিককেও চমৎকারভাবে লেখনীর অনুষঙ্গ করে তুলেছেন। গল্পের বেশিটা জুড়েই যৌনতার বর্ণনায় লেখক যে দ্বিধাহীন অথচ পরিমিত বর্ণনার আশ্রয় নিয়েছেন তা সিদ্ধহস্ত গল্পকারের পরিচয় বহন করে। তবে এটাও সত্যি যে, কিছু কিছু জায়গায় এই বর্ণনা আরও পরিশীলিত হতে পারত। তবে লেখক উৎরে যাবেন বলেই আমার ধারণা।
‘মায়ের হাতের মলিদা’ গল্পটিও প্রথম পুরুষে লেখা। খুব সম্ভবত লেখক তার ফেলে আসা স্মৃতিকে এখানে তুলে দিয়েছেন। গল্পটি পড়তে পড়তে নষ্টালজিক হয়ে উঠবেন পাঠক। ফিরে যাবেন ফেলে আসা শৈশব, কৈশোরে। লেখকের জায়গায় আবিষ্কার করবেন নিজেকেই। এক ধর্ষিতা মেয়ে এবং তার বাবা রমিজের গল্প ‘অন্ধকারের শেষ সীমান্তে’। গরিব বাবার কন্যা ময়না। পড়া জানতে সহপাঠীর বাসায় গিয়ে যে আর ফিরতে পারেনি। তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায় হীরার ভিটা নামক পরিত্যক্ত জায়গা থেকে। মেয়েকে ফিরে পেতে এক নিরুপায় বাবার আকুতিই এই গল্পের মুখ্য ঘটনা। তার বাবা রমিজের উদ্বেগকে লেখক প্রকাশ করেছেন এভাবে—‘কও দেহি কুদ্দস, আমি এহোন কী করি? আমি কিছু ভাইব্বা পাই না। ময়না তো না কইয়া কোনোহানে যায় না।… নাকি মফিজ তুইল্যা লইয়া গেল? একটু খোঁজ নিয়া দেখমু নাকি?
এই গল্পের শেষাংশে ধর্ষিতা মেয়ের রক্তাক্ত লাশ বাবার চোখে নামিয়ে আনে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সে বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে—‘হারিকেনের আলো ধরতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে একটি মুখ। একটি বালিকার নিষ্পাপ মুখ, একজন ধর্ষিতার ভয়ার্ত মুখ। রমিজের অতি পরিচিত একটি মুখ, অতি আদরের ধন ময়না। রমিজ মিয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে ক্রমশ। আচমকা একটা ঝড়ে তছনছ হয়ে যায় রমিজের হৃদয়। বুক ফাঁটা আর্তনাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে ময়নার মায়ের কাছে। কুদ্দুসের চোখে জল এসে যায়। কুদ্দুস মিয়া নির্বাক নেত্রে তাকিয়ে থাকে এক পিতা ও এক ধর্ষিতা কন্যার লাশের দিকে।’
এ ছাড়া ‘রবিতনের অন্তিম সংযম’ একটি অসহায় নারীর গল্প। যিনি প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। ‘নুন আনতে জীবন ফুরায়’ গল্পে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের জটিল-কুটিল জীবন আলোচিত হয়েছে। ‘আঁচলে বাঁধা চিরকুট’ নিরেট প্রেমের গল্প। আবেগ ও বিরহের আখ্যান। ‘কলেরাকালের দিনলিপি’র মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের অসচেতনতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
গ্রন্থটি শেষ হয়েছে, মাকে নিয়ে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের লেখা আরও একটি গল্প ‘মুঠোফোন এবং মমতাময়ী মা’দিয়ে। অতি মূল্যবান জীবন-স্মৃতিকে গল্পে রূপান্তরিত করেছেন লেখক। এখানে নিজের মোবাইল ফোন কেনাকে কেন্দ্র করে যে ব্যঞ্জনার ভিতর দিয়ে তার মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক, আমার কাছে তা-ই এই গল্পের মূল আকর্ষণ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ গ্রন্থের গল্পগুলো ভিন্ন ভিন্ন বিষয় সংশ্লিষ্ট। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত জীবনের প্রাত্যহিকতার অনুষঙ্গকেই গল্পের উপাদান করে তুলেছেন তিনি। গল্পের চরিত্রদের মাধ্যমে তিনি যেমন নিজের মনোভাব, চিন্তা-ভাবনাকে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি তুলে ধরেছেন রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন অবক্ষয়কে। গল্পচ্ছলে কটাক্ষ করেছেন অনাকাঙ্ক্ষিত নিয়মের বেড়াজালকে। এর প্রতিটি গল্প পাঠ শেষে মনে হয়েছে— সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সাধারণ মানুষের ভাষায় গল্প বলতে চেয়েছেন। তাই চিরচেনা এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাষায় বলা গল্পগুলো পাঠকের কাছে ভীষণ চেনা মনে হবে।
বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
প্রকাশনী: কিংবদন্তী পাবলিকেশন
প্রচ্ছদ: সাদিয়া তারান্নুম
মূল্য: ৩৩৩ টাকা।