২০১৬ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পায় উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’। লিখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ঔপন্যাসিক হান ক্যাং।
এই লেখক ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হান সিউং-ওন একজন ঔপন্যাসিক। তার ভাই হান ডং রিমও লেখক। হান ক্যাং ইয়নসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরীয় সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। তার লেখালেখির শুরু কবিতা ও ছোটগল্প দিয়ে।
১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প সংকলন ‘লাভ অব ইয়েওসা’। প্রকাশিত উপন্যাসগুলো হলো- আ কনভিট্কস লাভ, ফ্রুটস অব মাই উওম্যান, দ্য ব্ল্যাক ডিয়ার, ইওর কোল্ড হ্যান্ড, দ্য ভেজিটেরিয়ান, ব্রিদ ফাইটিং, গ্রিক লেসনস।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক হিসেবে পরিচিত হ্যান ক্যাং। ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার পর দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র এমন এক নারী, যিনি মানব চরিত্রের অন্ধকার দিক থেকে নিষ্কৃতি পেতে উদ্ভিদে রূপান্তরিত হতে চান। এই বর্ণিল উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষ হওয়ার জটিল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি।
হ্যান ক্যাং বলেন, দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসটি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। যার কোনোটি আমার পড়া হয়নি। যখন বইগুলো আমি দেখতাম, তখন আমার ভেতরে ভীতি কাজ করত এই ভেবে যে, এগুলোর মধ্যে আমার নাম ও ছবি আছে। কিন্তু আমি সত্যিই জানতাম না, বইগুলোর মধ্যে কী ছিল। কিন্তু বইটি যখন ইংরেজিতে অনুদিত হলো, তখন আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। আমি ডেবোরার অনুবাদ এবং তার প্রযুক্ত টীকা ও প্রশ্নগুলো পড়ে ফেললাম। এরপর ডেবোরার সঙ্গে আমার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তিনি আমার কাছে যেসব বিষয়ে জানতে চাইতেন এবং আমার কিছু প্রশ্ন নিয়ে তার সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ শুরু হলো। কখনো কখনো আমি পুরো পৃষ্ঠা এক লাইনে পাঠাতাম। এ লাইনগুলোও ছিল খুব সংক্ষিপ্ত এবং মজার। ডেবোরার সঙ্গে ইমেইল আদান-প্রদানও ছিল আনন্দের।
ড্যানিয়েল হ্যান বলেন, বইটির তিন খণ্ড জুড়ে সমাজের সবচেয়ে অপরিবর্তনশীল কয়েকটি কাঠামোর অসহনীয় চাপ পাঠক মনকে বিচলিত করে তোলে। এই উপাদানগুলো হলো চাহিদা ও আচরণ এবং প্রতিষ্ঠানগত কর্মপদ্ধতি, যা একে একে ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়।
উল্লেখ্য, ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০১৬ সালে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। ওই বছর প্রথমবারের মতো পুরস্কারের অর্থ লেখক ও তার অনুবাদকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
বলে রাখা ভালো, গ্রন্থটি অনুবাদের তিন বছর আগে কোরিয়ান ভাষা শিখতে শুরু করেন ব্রিটিশ লেখক ডেবোরা স্মিথ। ১৯৮৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, এই প্রথম কোনও গ্রন্থ অনুবাদ করেছি এবং তার জন্য স্বপ্নাতীত সাফল্য ও সম্মান পেলাম।
ডেবোরা স্মিথ আরও বলেন, এ উপন্যাসটি ছিল আমার প্রথম অনূদিত গ্রন্থ। আমার কোনো ধারণা ছিল না কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় কাজটি (অনুবাদের কাজ) সম্পন্ন করবো। দিনের পর দিন আমি একাই কাজটি করে গেছি। জীবনের অধিকাংশ সময় আমি পড়ার পেছনে ব্যয় করেছি। কিন্তু ভাষান্তর ও ইংরেজি ভাষার মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারিনি। স্নাতকোত্তর শেষ করার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, একটি ভাষা শিখবো, যেন সাহিত্যের অনুবাদক হতে পারি। কারণ দেশে সমসাময়িক সাহিত্যের ছড়াছড়ি রয়েছে কিন্তু তা থেকে আমি কিছুই পড়িনি, কারণ কোনো অনুবাদ ছিল না। এরপরও টুইটারে আমার পরিচয়ে নিজেকে অনুবাদক হিসেবে উল্লেখ করি। এরপর অনুবাদের জন্য ‘দ্য ভেজেটেরিয়ান’ বেছে নিয়ে প্রকাশকের কাছে দেই। এই প্রকাশক আমাকে অনুবাদ করতে বলেছিলেন। যখন আমি কাজ শুরু করি, তখন লেখক-অনুবাদকের সম্পর্ক কী, তা আমার জানা ছিল না। আমি এর স্পর্শেও ছিলাম না, না জানতাম হান কাংয়ের বলা ইংরেজির ধরন। কিন্তু আমি অগ্রসর হলাম এবং পুরো বইটি অনুবাদ করে ফেললাম। লেখা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের তালিকা করলাম এবং অপেক্ষায় রইলাম।
তবে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সমালোচক ড্যানিয়েল হ্যান একটু ভিন্নভাবে উপন্যাসটির মূল্যায়ন করেছেন। যা উপন্যাসটির লেখক হ্যান ক্যাংয়ের জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে। ড্যানিয়েল হ্যান বলেন, বইটির তিন খণ্ড জুড়ে সমাজের সবচেয়ে অপরিবর্তনশীল কয়েকটি কাঠামোর অসহনীয় চাপ পাঠক মনকে বিচলিত করে তোলে। এই উপাদানগুলো হলো চাহিদা ও আচরণ এবং প্রতিষ্ঠানগত কর্মপদ্ধতি, যা একে একে ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়।
ম্যান বুকার নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান বয়েড তংকিন বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী ও মৌলিক’।
তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান, এএফপি, বিবিসি ও ইন্ডিপেনডেন্ট