সংস্কৃত সাহিত্যে মহাকাব্য, গীতিকাব্য, নাটক, গদ্যকাব্য বা পল্পগ্রন্থের কথা অনেকেই জানি। কিন্তু সঙ্গে-সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্যে আরেকটি বিশেষ ধরনের কাব্য খ্রিষ্টীয় দশম শতক থেকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল—সেটি হলো চম্পূকাব্য। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকের আলঙ্কারিক দণ্ডী তাঁর ‘কাব্যাদর্শ’ ১/৩১) বইয়ে বলেছেন- ‘গদ্যপদ্যময়ী কাচিৎ চম্পূরিতাভিধীয়তে’ অর্থাৎ ‘গদ্য ও পদ্যে রচিত কাব্যকে চম্পূকাব্য বলা হয়’। আরেক আলঙ্কারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ তাঁর ‘সাহিত্যদর্পণ’ বইয়ে বলেছেন—‘গদ্য-পদ্যময় কাব্য হলো চম্পূ’। চম্পূ শব্দের ব্যুৎপত্তি হলো— ‘চম্পয়তি যোজয়তি গদ্যেপদ্যে ইতি চম্পূঃ’। অর্থাৎ ‘যে কাব্যে গদ্য ও পদ্য যোজনা করা হয়, সেটিই চম্পূ’।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে—বাংলা সাহিত্যে চম্পূকাব্যের উপস্থিতি সেই দশম দশক থেকেই টের পাওয়া যায়। তবে চম্পূবচন এই প্রথম। প্রশ্ন জাগতে পারে চম্পূবচন আবার কী? উত্তরটা আবু হাসান শাহরিয়ার রচতি ‘চম্পূবচন’-এর ফ্ল্যাপেই দেওয়া হয়েছে। সেখানে চম্পূকাব্যের ধারা অনুসরণ করে বলা হয়েছে, ‘যে কাব্যে গদ্য ও পদ্যের অংশীদারিত্ব থাকে, তাকে চম্পূকাব্য বলে।’ কিন্তু কবি আবু হাসান শাহরিয়ার লিখেছেন চম্পূবচন। বচনগুলো গদ্যাশ্রয়ী হলেও পদ্যের ঢঙে বলা। প্রকরণে চম্পূকাব্যের সমধর্মী। তাই চম্পূবচনকে আমরা কাব্যের মর্যাদা দিতে পারি। তবে বাংলা সাহিত্যে চম্পূকাব্যের পর সমগোত্রীয় আরেকটি ধারার সৃষ্টি হলো—যার নাম ‘চম্পূবচন’। এর স্রষ্টা কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, কথা সক্ষেপ করুন। কিন্তু সব কথাই কি সংক্ষেপে বলা যায়? সেটাই দেখিয়েছেন আবু হাসান শাহরিয়ার। তিনি দেখিয়েছেন, অহেতুক কথা না বাড়িয়ে অল্পকথায়ও ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করা সম্ভব।
‘চম্পূবচনের বিষয় সমাজ ও সাহিত্য। প্রতিটি চম্পূবচন সত্যাশ্রয়ী স্ফুলিঙ্গ। সত্য ও সুন্দরের প্রতি কবির চিরকালীন পক্ষপাত। তাঁর চম্পূবচনে দেশ, রাজনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডুকতা, তিরস্কার, প্রবঞ্চনা- প্রভৃতি সাবলীল ভাষা ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে। কখনো কখনো বিপ্লব বা বিদ্রোহের আভাসও পাওয়া গেছে।’ প্রথম বচনেই তিনি বলেছেন, ‘জনগণ যে-দেশে গ্যালারির দর্শকের মতো আচরণ করে, হত্যালীলা সে-দেশে জাতীয় খেলার স্বীকৃতি পায়।’
তিনি বায়ান্নোর ভাষাশহীদদের দুর্ভাগ্যের কথা বলেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। বলেছেন, কেন ৮ ফাল্গুনকে স্মরণ করা হয় না? কবিতায় দশকচর্চা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। কথা বলেছেন রাষ্ট্রীয় প্রহসন নিয়েও। মাথাপিছু আয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভানসর্বস্ব মানুষ তৈরি করে।’ সে হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিউটি পারলার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ‘রাষ্ট্র শুধু অপরাধীদের অন্নের নিশ্চয়তা দেয়’—বলে মত প্রকাশ করেছেন।
ছন্দে রচিত কবিতা প্রসঙ্গেও বলেছেন। তবে একই বচনে তিনি ছন্দযুক্ত-ছন্দবিযুক্ত কবিতা নিয়ে বলেছেন। এতে ছন্দের প্রয়োজনীয়তা পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা যায়। এরপর সময়ের মূল্য সম্পর্কে অর্থবহ উচ্চারণ তাঁর—‘যে আগামীকালের কাজ আজ করে এবং আজকের কাজ এখনই।’
তিনি সত্যবাদিতা সম্পর্কে অবিচল থেকেছেন এবং সুশীল সমাজ, মিডিয়ার টকশোগুলোকে তিরস্কার করেছেন। ১৯৭৫ সালে মহান নেতাদের হত্যা করায় বাঙালিকে একটি বিলুপ্ত জাতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। কবি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বঞ্চনা করেছেন। তিনি বাঙালি নারী-পুরুষের পরশ্রীকাতরতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে টেনে এনেছেন একই কাতারে।
বিজ্ঞানের চেয়ে রূপকথার কদরে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। অজুহাতের অগণিত কারণের কথা বলেছেন। তিনি গণতন্ত্র, জাতীয় নির্বাচন এবং জাতীয় বাজেট সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। যোগ্যতার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘অযোগ্যের হাটে গণ্ডমূর্খই বড় মহাজন।’ তিনি লেখকের সাধনা পাঠে এবং মানবতাকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাঁর চম্পূবচনে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের ‘দলকানা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ভাঁড়ু দত্তের একুশ শতকীয় নাম দিয়েছেন সরকার। সাহিত্যচর্চায় অগ্রজ-অনুজের সম্পর্ক এবং পার্থক্য নিয়ে চমৎকার তিনটি বচন উপহার দিয়েছেন। নাগরিকের সমান অধিকার প্রসঙ্গে ‘সংখ্যালঘু’ কথাটাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাঙলার বুদ্ধিজীবীরা দলকানা ও উচ্ছিষ্টজীবী। বুদ্ধির ঢেঁকি ওরা। ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে;—বুদ্ধির ঢেঁকিরা ভানে দল।’ কবি যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন কবিতার স্বরূপ নিয়ে। কবির আসল পরিচয় জানিয়েছেন পাঠককে। তিনি দখল-বেদখল, প্রচার-অপপ্রচার, আশা -নিরাশা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি নিয়ে অমৃত বাণী প্রচার করেছেন। ভুলকে মূর্খদের কাজ বলে অভিহিত করেছেন।
লেখক হতে সাধনার বিকল্প নেই। তার আত্মোপলব্ধি ভাগাভাগি করেছেন পাঠকের সঙ্গে। শিল্প-সাহিত্যে তারুণ্যের পরিমাপ নিয়ে কথা বলেছেন। তরুণদের সম্পর্কে প্রবীণদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সতর্কবাণী রচনা করে যাবতীয় অবজ্ঞার বিরুদ্ধে বাতলে দিয়েছেন।
মানুষের সাহচর্য কেমন হওয়া উচিত?—এ প্রসঙ্গে সঙ্গদোষের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। মানুষকে চেনার তিন সহজপাঠ উল্লেখ করেছেন। বটগাছের মহীরূহ হয়ে ওঠার গল্প বলেছেন। কবিতামূর্খদের সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন। কবি-কবিতা-দশক সম্পর্কে তার মত— ‘কবিতার বাজি কবিতাতেই ধরতে হয়। দল, সংঘ বা দশকের ঝাঁপি থেকে নয়, খাঁটি কবি উঠে আসেন কবিতার নিজস্বতা থেকে।’ কবি লেখালেখিকে মস্তিষ্কের খেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আবৃত্তি সম্পর্কে রূঢ় অথচ বাস্তব কথা বলেছেন। অধিকাংশ বাচিকশিল্পী কবিতাকে ধর্ষণ করে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তার অধিকাংশ বচনে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির কথা উঠে এসেছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব কবিকে সংশয়াকুল করে। তিনি এর থেকে পরিত্রাণ চান। তাই শুদ্ধ চর্চার কথা বলেন।
কবি পাঠককে বৃক্ষরোপনে উদ্বুদ্ধ করেন। বাঙালিকে প্রশংসাকৃপণ জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কবি অন্যত্র বলেন, ‘বাঙালির আবেগ আছে; প্রজ্ঞা নেই। ‘ পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে চমৎকার উপলব্ধি ব্যক্ত করেছেন। লেখালেখির জগতে সম্পর্কবিচারই শেষ কথা নয়। এখানে শুদ্ধতাকে বহন করতে হয়। অকবি-অলেখকরা একসময় ঝরে পরে। কবিতা কবিতা-ই খোঁজে। কবিতা ওস্তাদি প্রত্যাখ্যান করে। কারণ পাঠক কবিতাই খোঁজে। কুতর্ককে তিনি অপছন্দ করেন। সেজন্যই কুতার্কিকদের সঙ্গলিপ্সাও তার মধ্যে নেই। তিনি এর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলেছেন।
ঈর্ষা, আস্ফালন, উপেক্ষা ও ঘৃণাকে বরাবরই কবি দূরে রাখতে চান। পাশাপাশি পাঠককেও সতর্ক করে দেন। কবি বলেন, ‘বাঙালি অন্যের ভালো ও নিজের ভুল দেখতে চায় না’। তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালি জানে কম, বোঝে বেশি।’ কিংবা ‘বাঙালি এক চিরবধির জাতি।’ ফলে বাঙালির এসব অযোগ্যতা কবি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চান।
কবি অনায়াসে বলতে পারেন—’কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেলে কবি হওয়া দূরে থাক, দলিললেখকও হওয়া যায় না। ‘ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য কখনো কখনো কবিকে ভাবিয়ে তোলে। ব্যক্তিজীবনের নেতিবাচক দিকগুলো তাকে আহত করে। ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রীয়-শিক্ষাজীবনে যে অনাচার প্রচলিত আছে, তারই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই চম্পূবচন।
ভবিষ্যতের কবিতা নিয়েও কবির ভাবনা অপরিসীম। কবিতার ‘দশক’ নিয়ে তিনি বহুবার কথা বলেছেন। দশকীয়া রাজনীতি মূলত অন্তঃসারশূন্য প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়। এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন। কবির রাজনৈতিক সমালোচনা হয়তো কঠোর চোয়ালে হজম করতে হবে। কেননা কবির বচন বাস্তবতার নিরীখে অকাট্য দলিল হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি তরুণদের ব্যাপকভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। দুষ্টু লোকের নজর থেকে তরুণদের উত্তম আশ্রয় খুঁজে নিতে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি সুন্দর-অসুন্দরের পার্থক্য করতে চেয়েছেন। যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে বিচার করতে চেয়েছেন। বার্ধক্যকে বিদায় জানিয়ে যৌবনকে ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ করেছেন তিনটি পাঠাভ্যাসের কথাও:
১. প্রকৃতিপাঠ
২. মানুষপাঠ
৩. কালজয়ী বইপাঠ
এছাড়া কবিদের পাঁচটি লক্ষণ উল্লেখ করেছেন। গণমাধ্যমকে করেছেন তিরস্কার। কবিদের আমলাতান্ত্রিকতাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবি বলতে চান- কবিতা হচ্ছে প্রজ্ঞাশাসিত আবেগ। কিন্তু বাংলা কবিতা এখন মূর্খদের দখলে। যদিও কবি একজন মোহন বংশীবাদক। বইমেলা সম্পর্কে কবির উক্তি- ‘বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত ৮৫% বই-ই বই নয়। ওগুলো যারা কেনে, তারাও পাঠক নয়।’ বলা যায়, কবি একাধারে রাজনীতি সচেতন, দার্শনিক, পরিশুদ্ধ সাহিত্যিক, বিশুদ্ধ কবি, সরল মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হতে চেয়েছেন। তার চম্পূবচনে পৃথিবীর সব বিষয় নিয়ে আলোচনার নিরলস প্রচেষ্টা বিদ্যমান। মানবজীবনের প্রায় যাবতীয় প্রসঙ্গই এমান্বয়ে প্রতিভাত হয় চম্পূবচনে। চম্পূবচন ব্যক্তিজীবনে অবশ্য পাঠ্য হওয়ার দাবি রাখে। পরিশুদ্ধ মানুষের নিত্যনৈমত্তিক পাঠ হিসেবে চম্পূবচনের গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য।
সমকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যাকে স্ট্যাটাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এই চম্পূবচনের প্রথম প্রকাশ সেই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। যদিও প্রতিটি বচনের শিরোনামে ‘চম্পূবচন’ উল্লেখ করা হয়েছে। যারা ফেসবুকের স্ট্যাটাস ভেবে বচনগুলোকে এড়িয়ে গেছেন, কিংবা বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব বলে অপবাদ দিয়েছেন, তারাই হয়তো চুপিসারে চম্পূবচন গ্রন্থখানা পাঠ করে জীবনের শিক্ষা-দীক্ষা নেবেন। পরিশুদ্ধ মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবেন। এই বইতে এমন কোনো বিষয় নেই, যা কবির চোখ এড়িয়ে গেছে। সমকালীন যাবতীয় অসঙ্গতিও ফুটে উঠেছে সুনিপুণভাবে।
সাম্প্রতিক সাতখুন, শিশুর বুকে গুলি, মেগাসিরিয়াল প্রসঙ্গও এসেছে চম্পূবচনে। প্রেম সম্পর্কে তিনি বলেছেন- ‘গাছ ও সম্পর্ক ধীরে-ধীরে বাড়ে;— উপরন্তু পরিচর্যা চায়। দুম করে আসা প্রেম ঠুস করে গুম হয়ে যায়।’ সঙ্গ নিয়ে কবি বলেছেন, ‘ভুলসঙ্গে ভ্রমণনাস্তি। ভুল বন্ধুত্বে আয়ুর অপচয়।’ দৈনিক পত্রিকা সম্পর্কে এবং সাহিত্য সম্পাদক সম্পর্কে কবি বলেছেন, ‘বাণিজ্যশাসিত দৈনিকের মূর্খ সম্পাদক কোনও গণ্ডমূর্খকেই সাহিত্যপাতার দায়িত্ব দিয়ে থাকে। লেখা ছাপানোর জন্য ওই গণ্ডমূর্খের পেছনে যারা ঘুরঘুর করে, তারা অপগণ্ডমূর্খ।’ এখানে একটা কথা স্মরণযোগ্য যে, কবিও কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ছিলেন। তাই তাঁর পর্যবেক্ষণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
চম্পূবচনের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার অদ্যোপান্ত প্রোথিত। কবি হিসেবে সে দায়বোধ তাকে বাধ্য করেছে হয়তো। বইতে তিনি তিনটি দিবস পালনের প্রস্তাবনা এনেছেন—
১. ছাত্রদিবস
২. মজুরদিবস
৩. কৃষকদিবস।
প্রস্তাবনাটা মন্দ নয়। পালিত হতেই পারে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতেই পারেন। এদিকে কবিদের উদ্দেশে তাঁর অমোঘ বাণী—‘জাতকবিরা কবিতায় বাঁচেন। অল্প-কবিরা সংঘে-দশকে। অকবিরা মূঢ় তর্কে।’ মূলত মানবজীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কিছু অনুভূতি, ক্ষোভ, জিজ্ঞাসা, পরিত্রাণের উপায় বিবৃত হয়েছে এতে। বিশদভাবে এর আলোচনা করার প্রয়াস থাকলেও পাঠকের হাতে ছেড়ে দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য—পাঠক সামনে আয়না নিয়ে বসবে। নিজেকেই নিজে দেখবে। চম্পূবচন মানে নিজেকেই পাঠ করা। এ পাঠ অবশ্য কর্তব্য।
তাঁর চম্পূবচন একাধারে উপদেশ বাণী, অমৃত বচন। যার সাহিত্যমূল্য অপরিসীম, মুনি-ঋষীদের কাতারে নিজেকে শামিল করার ইতিবাচক প্রয়াস। যুগে যুগে চম্পূবচন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে। মহাকালের খাতায় নিজের নাম খোদাই করে রাখার ব্যবস্থা করে গেলেন নিজের অজান্তেই। তাঁর এই উপদেশ-বাণী বহু মানুষের কলুষিত অন্তরকে শুচি-শুভ্র করতে সহায়তা করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
চম্পূবচন
আবু হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশক: নাগরী
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৭
বিনিময় মূল্য: ১৮০ টাকা।